জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি বন্ধ করতে একটি দল গোপন ষড়যন্ত্র করছে -- ড. হেলাল উদ্দিন
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেছেন, বিদ্যমান পদ্ধতিতে নির্বাচনের মাধ্যমে দেশকে কলঙ্কিত করা হয়েছে। এই পদ্ধতিতেই ২০১৪ সালে ভোটারবিহীন একতরফা নির্বাচন, ২০১৮ সালে দিনের ভোট রাতে এবং ২০২৪ সালে আমি-ডামি নির্বাচন হয়েছে। সেই পদ্ধতি বহাল রেখে কোনভাবেই সুষ্ঠু নির্বাচন আশা করা যায় না, জনগণের সরকার গঠিত হতে পারে না। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, অংশগ্রহণমূলক ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের সর্বোত্তম পদ্ধতি হচ্ছে পিআর পদ্ধতি। পিআর পদ্ধতিতে ভোট হলে কেউ ভোট চুরি করতে পারবে না, কেন্দ্র দখল দিতে যাবে না, মনোনয়ন বাণিজ্য হবে না। ফলে কালো টাকার ছড়াছড়িও বন্ধ হয়ে যাবে। জনগণ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবে এবং প্রতিটি ভোটের মূল্যায়নের মাধ্যমে জনগণের সরকার গঠিত হবে।
গতকাল শনিবার বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী শাহবাগ পশ্চিম থানার উদ্যোগে জাতীয় জাদুঘর গেইটে ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্পের উদ্বোধনী সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। এসময় তিনি আরও বলেন, মানুষের মৌলিক ৫টি অধিকার রাষ্ট্র নিশ্চিত করতে হবে। কিন্তু অতীতের কোনো সরকার মানুষের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করেনি। তারা তাদের নিজেদের সুটকেস ভর্তি করার কাজে ব্যস্ত ছিল। জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবির সৎ, যোগ্য, আল্লাহভীরু, নৈতিক ও আদর্শিক নেতৃত্ব তৈরি করছে। যার দৃষ্টান্ত ঢাবির শিক্ষার্থীরা সহ পুরো দেশবাসী দেখতেছে। ডাকসুতে ইসলামী ছাত্রশিবির মনোনীত প্যানেল বিজয়ী হওয়ার পর মাত্র ২ মাসে যা করেছে বিগত ৫৪ বছরে তা কেউ ঢাবি শিক্ষার্থীদের জন্য করেনি, করতে পারেনি। জামায়াতে ইসলামী রাষ্ট্র ক্ষমতায় গেলে একই ভাবে রাষ্ট্রের অভাবনীয় পরিবর্তন ঘটিয়ে দেশকে একটি কল্যাণ ও মানবিক রাষ্ট্র হিসেবে বিশ্ব দরবারে উপস্থাপন করবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমীর (ঢাকা-৮ আসনে জামায়াত মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী) এডভোকেট ড হেলাল উদ্দিন বলেন, জামায়াতে ইসলামী ক্ষমতার রাজনীতি করে না; জামায়াত মানুষের কল্যাণে নিবেদিত সংগঠন। জামায়াতে ইসলামী ৪ দফা কর্মসূচিতে দলীয় কার্যক্রম পরিচালনা করে। তারমধ্যে অন্যতম একটি সমাজ সংস্কার ও সমাজ সেবা। সামাজিক সেবামূলক যেকোন কাজ জামায়াতে ইসলামী দলমত, ধর্ম বর্ণ, জাতি-গোষ্ঠী নির্বিশেষে পরিচালনা করে আসছে। জামায়াত ক্ষমতায় গেলে এই ধারা অব্যাহত রেখে প্রতিটি নাগরিকের সমান অধিকার, মর্যাদা ও স্বাধীনতা নিশ্চিত করবে। ‘যারা এখন বলে ক্ষমতায় গিয়ে এই করবে, সেই করবে; তারা বিগত সময়ে যখন ক্ষমতায় ছিল তখন কী করেছে জনগণ তা জানে’। আওয়ামী অপশাসনের ১৫ বছর তাদের নেতারা বিদেশে নিরাপদে উন্নত জীবনযাপন করেছে। কিন্তু জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মী দেশের মানুষের অধিকার আদায়ে আপোষহীন সংগ্রাম চালিয়েছে। জামায়াতে ইসলামীর কোনো নেতাকর্মী বিদেশে চলে যায়নি। জীবন দিয়েছে, রক্ত দিয়েছে তারপরও জামায়াতের কোনো নেতা আধিপত্যবাদের কাছে মাথানত করে দেশের মানুষকে রেখে বিদেশে চলে যায়নি। জামায়াত নেতারা জেল-জুলুম, নির্যাতনের শিকার হয়েছে, খুন- গুম, আয়না ঘরের অমানবিক টর্চারের শিকার হতে হয়েছে। এতো জুলুম-নির্যাতনের পরও জামায়াতে ইসলামী একদিনের জন্যও কার্যক্রম বন্ধ রাখেনি, রাখবে না। কোনো ষড়যন্ত্র জামায়াতে ইসলামীর অগ্রযাত্রা বন্ধ করতে পারেনি, পারবে না। জামায়াতে ইসলামীর সবচেয়ে বড় শক্তি জনগণের আস্থা ও ভালোবাসা।
ড. হেলাল উদ্দিন বলেন, জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি বন্ধ করতে একটি দল গোপন ষড়যন্ত্র করছে। তারা প্রথমে গণভোটের পক্ষে সমর্থনই দেয়নি। পরবর্তীতে জনগণের চাপে পড়ে গণভোটের পক্ষে সমর্থন দিলেও গণভোটের সময় নিয়ে নানারকম টালবাহানা করছে। গণভোটের মাধ্যমে জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি হয়ে গেলে ফ্যাসিবাদী শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে না পারার ভয়ে তারা কোনভাবেই গণভোট মেনে নিতে পারছে না, চাচ্ছে না। তাদের মনে রাখতে হবে, জুলাই আন্দোলনের দুই হাজার শহীদ পরিবার এবং ৫০ হাজারের অধিক আহত জুলাই যোদ্ধা জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি ছাড়া কোনো নির্বাচন মেনে নেবে না। জামায়াতে ইসলামী ফেব্রুয়ারিতেই নির্বাচন চায় উল্লেখ করে তিনি বলেন, তবে জনগণ যেভাবে নির্বাচন চায় জামায়াতে ইসলামীও সেভাবে নির্বাচন চায়। অবশ্যই নভেম্বরের মধ্যে গণভোট এবং ফেব্রুয়ারিতে জুলাই সনদের ভিত্তিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হতে হবে।
শাহবাগ পশ্চিম থানা নায়েবে আমীর ডা. মেসবাহ উদ্দিন সায়েমের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী সভায় আরও বক্তব্য রাখেন ডা. মো. আনোয়ারুল হক, ডা. হাফিজুর রহমান প্রমুখ। শাহবাগ পশ্চিম থানা সেক্রেটারি এম. লোকমান হোসেনের পরিচালনায় এবং ২১নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদপ্রার্থী অধ্যাপক আবদুল্লাহ আলফেসানী'র সার্বিক তত্ত্বাবধানে পরিচালিত মেডিকেল ক্যাম্পে বিনামূল্যে স্বাস্থ্য সেবা ও পরামর্শ প্রদানের পাশাপাশি প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং ঔষধ সরবরাহ করা হয।
এদিকে ড. হেলাল উদ্দিন, ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন লালমনিরহাটের কাজিউল ইসলামকে হাসপাতালে দেখতে গিয়ে ১ লাখ টাকার আর্থিক অনুদানের চেক প্রদান করেন। উল্লেখ্য কাজিউলের ব্রেইন টিউমার অপারেশনের জন্য অনেক টাকার প্রয়োজন জানতে পেরে ড. হেলাল উদ্দিন তাকে এই সহযোগিতা করেন।
ঢাকা -১৬ আসনের শ্রমিক সমাবেশ: নিজেদের সকল শক্তি-সামর্থ, যোগ্যতা, প্রজ্ঞা ও প্রচেষ্টা কাজে লাগিয়ে আল্লাহর জমীনে আল্লাহর আইন ও সৎ লোকের শাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে দেশকে কল্যাণ রাষ্ট্রে পরিণত করার সংগ্রামে সকলকে আপোষহীন থাকার আহবান জানিয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর ও সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক মুজিবুর রহমান।
গত শুক্রবার সন্ধ্যায় রাজধানীর পল্লবীতে ঢাকা-১৬ সংসদীয় আসনে এক শ্রমিক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। ঢাকা মহানগরী উত্তরের কর্মপরিষদ সদস্য ও পল্লবী জোন পরিচালক নাসির উদ্দীনের সভাপতিত্বে সমাবেশে বিশেষ অতিথি ছিলেন শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন ঢাকা মহানগরী উত্তরের সভাপতি মাওলানা মুহিব্বুল্লাহ ও ঢাকা-১৬ সংসদীয় আসনে জামায়াত মনোনীত সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী কর্ণেল ( অব.) আব্দুল বাতেন। উপস্থিত ছিলেন ২নং ওয়ার্ডের ওয়ার্ড কাউন্সিল পদপ্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার মোজাম্মেল হোসেন, ৬নং ওয়ার্ডের কাউন্সিল পদপ্রার্থী এডভোকেট হাসানুল বান্না চপল, পল্লবী মধ্য থানা আমীর রইসুল ইসলাম, পল্লবী উত্তর থানা আমীর সাইফুল কাদের, শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের পল্লবী জোন পরিচালক আবুল কালাম পাঠান, রূপনগর থানা আমীর আবু হানিফ ও পল্লবী দক্ষিণ থানা আমীর আশরাফুল আলম প্রমুখ।
অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেন, সৃষ্টি আল্লাহর। তাই সকল ক্ষেত্রেই আইনও চলবে আল্লাহর। মূলত, জামায়াত আল্লাহর দেওয়া নির্দেশনা মোতাবেক দেশে আল্লাহর আইন ও সৎলোকের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য দীর্ঘ পরিসরে আপোষহীন আন্দোলন-সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে। স্বাধীনতার পর একটি দল ৪ বার, অপরটি ৩ বার সরকার গঠন করলেও তারা জাতীয় সংসদে কুরআনের আইন পাশ করেনি। বস্তুত, আল্লাহর আইনের প্রতিষ্ঠার মধ্যেই রয়েছে ইহকালীন কল্যাণ ও পরকালীন মুক্তি। আর মানুষের তৈনি আইন কখনো নির্ভুল নয়। তাই কোন সমাজে যতদিন মানুষের তৈরি আইন প্রতিষ্ঠিত থাকবে, ততদিন সে সমাজ থেকে অশান্তি, দুর্নীতি, অপরাধ ও অস্থিরতা দূর হবে না। দেশে সুশাসন ও আইনের শাসন ফিরে আসবে না। তাই ক্ষুধা, দারিদ্র্য ও বৈষম্যমুক্ত নতুন বাংলাদেশ গড়তে সকলকে ইসলামী আদর্শের দিকে ফিরে আসতে হবে। তিনি ন্যায়-ইনসাফের সমাজ প্রতিষ্ঠায় আগামী নির্বাচনে দাঁড়িপাল্লার বিজয় নিশ্চত করতে সকলকে ময়দানে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, দল মাত্র দু’টি। একটি হিজবুল্লাহ তথা আল্লাহর দল, আর অপরটি হিজবুত শায়াতিন বা শয়তানের দল। যারা আল্লাহর আইনের বিরোধীতা করে তারা শয়তানের দল। আর যারা আল্লাহর জমীনে আল্লাহর আইন ও কুরআনের সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য চেষ্টা করে তারা আল্লাহর দল। তাই একজন মোমিন হিসাবে আমাদের প্রত্যেককেই আল্লাহর দলের অন্তর্ভুক্ত থেকে দ্বীন বিজয়ে প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা চালাতে হবে। তিনি জামায়াতের চলমান আন্দোলনের দাবি সমূহের কথা উল্লেখ করে বলেন, নির্বাচনে যাতে চুরি, ডাকাতি ও কালো টাকার অপব্যবহার না হয়, যে জন্য পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন করতে হবে। সবার আগে প্রস্তুত করতে হবে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড। একই সাথে স্বাক্ষরিত জুলাই সনদের পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নের জন্য অনতিবিলম্বে গণভোটের আয়োজন এবং গণহত্যাকারীদের বিচারের পরই জাতীয় নির্বাচন হতে হবে। তিনি আগামী নির্বাচনে ঢাকা-১৬ আসনে কর্নেল বাতেনের পক্ষে গণজোয়ার সৃষ্টি করতে সকলকে ময়দানে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার আহ্বান জানান।