সাম্প্রতিক সময়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশে ফেরাকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক অঙ্গনে জোর আলোচনা চলছে। কেউ বলছেন, শীঘ্রই দেশে ফিরছেন তারেক রহমান, সার্বিক প্রস্তুতিও সম্পন্ন। কেউ বলছেন, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হলে তিনি দেশে ফিরবেন। শীঘ্রই তিনি ফিরছেন এমন বার্তা বিএনপির নেতারা দিলেও তার প্রত্যাবর্তনের নির্দিষ্ট দিনক্ষণ এখনো জানানো হয়নি। দলের শীর্ষ নেতৃত্ব বলছে, প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। তবে সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক বাস্তবতা ও নিরাপত্তা বিবেচনায় নেওয়া হবে।

২০০৭ সালের ৭ মার্চ এক-এগারোর সময় তারেক রহমান গ্রেপ্তার হন এবং ২০০৮ সালে জামিনে মুক্তি পেয়ে চিকিৎসার জন্য লন্ডনে যান। এর পর থেকে তিনি সেখানেই অবস্থান করছেন। দীর্ঘ ১৭ বছর পর তার দেশে ফেরার আর কোনো আইনি বাধা নেই বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।

দলীয় একটি সূত্র জানিয়েছে, তারেক রহমান চলতি বছরের শেষ দিকে দেশে ফিরতে পারেন, যদিও এটি এখনো চূড়ান্ত নয়। আসন্ন জাতীয় নির্বাচন, দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও ব্যক্তিগত নিরাপত্তার বিষয়গুলো তার প্রত্যাবর্তনের সময় নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ বিবেচ্য বিষয় হয়ে উঠেছে। তবে দেশে আসার সার্বিক প্রস্তুতি াতরেক রহমান নিয়ে রেখেছেন বলে দলীয় সূত্র নিশ্চিৎ করেছে।

সূত্র বলছে, তারেক রহমান দেশে আসার বেশ আগেই সেটি জানা যাবে। কারণ দীর্ঘদিন পর দেশে ফেরার কারণে বিএনপি চাইবে ব্যাপক আকারে গণ-অভ্যর্থনার আয়োজন করা। হঠাৎ যদি তিনি এসে পড়তেন তাহলে তাতে প্রস্তুতিতে বিঘ্ন ঘটতে পারে। এছাড়া এখন বর্ষা কাল। বৈরী আবহাওয়ার কারণে এই সমেয় অর্ভত্থানের ক্ষেত্রে সমস্যাও সৃষ্টি হবে। তাই দল ভিন্ন সময় ভাবছে। বশেষ করে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার ঠিক আগে বা পরে, যাতে তার আগমন রাজনৈতিকভাবে কার্যকর হয়।

জানা গেছে, এর মধ্যেই গুলশানের ১৯৬ নম্বর বাড়িতে তারেক রহমানের থাকার প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। একসময় এই বাড়িটি ব্রিটিশ-আমেরিকান টোব্যাকোর কাছে ভাড়া দেওয়া ছিল, তবে তারা সরে যাওয়ার পর সেখানে সংস্কারকাজ শেষ হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, তারেক রহমান দেশে ফিরলে সেখানে থাকবেন।

দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা ইতোমধ্যে ঘোষণা দিয়েছেন, তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তন উপলক্ষে তারা প্রস্তুত। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, তারেক রহমান নিশ্চয়ই দেশে ফিরবেন, অবশ্যই ফিরবেন, শিগগিরই। একই ধরনের বক্তব্য দেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানিও।

বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ এক বিশ্লেষক মনে করেন, তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তন দুটি সম্ভাবনার ওপর নির্ভর করছে। নির্বাচনে জয়ী হয়ে ‘রাজকীয়ভাবে’ ফেরা কিংবা সরকারের ওপর রাজনৈতিক চাপ তৈরির কৌশল হিসেবে ফিরে আসা। লন্ডনে তার সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের বৈঠকের পর ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের কথা উঠেছে। সে অনুযায়ী চলতি বছরের শেষ কিংবা আগামী বছরের শুরুতে তফসিল ঘোষণার সময়কেই দল কৌশলগতভাবে উপযুক্ত বলে বিবেচনা করছে।

বিএনপির একাধিক নেতা জানান, দলের দ্বিতীয় শীর্ষ নেতাকে দেশের মাটিতে গণ-অভ্যর্থনা জানাতে তারা প্রস্তুত। তিনি যখনই আসবেন, তাকে ইতিহাসের স্মরণীয়ভাবে বরণ করে নেয়া হবে। তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনকে স্মরণীয় করে রাখতে চায় বিএনপি। সেদিন বিমানবন্দরসহ রাজধানীতে বৃহত্তম জমায়েত করার পরিকল্পনা রয়েছে দলের। কিন্তু তিনি কখন ফিরবেন সে বিষয় চূড়ান্ত হয়নি। এ ক্ষেত্রে আগামী জাতীয় নির্বাচনের দিনক্ষণ, দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং ব্যক্তিগত নিরাপত্তাসহ নানা দিক বিবেচনায় নিতে হচ্ছে। তাই কোন সময় দেশে ফিরলে বিএনপির রাজনৈতিক অর্জনের পাশাপাশি ব্যক্তি তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তনটা উজ্জ্বল হয়, সেটি দেখা হচ্ছে।

বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় একটি স্লোগান ছিল বিএনপির নেতা-কর্মীদের মুখেমুখে। এই স্লোগান দিয়েই নেতারা বক্তৃতা শেষ করতেন। সেটি হচ্ছে, ‘তারেক রহমান বীরের বেশে, আসবে ফিরে বাংলাদেশে’। বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত একজন রাজনীতিবিদ তারেক রহমানের দেশে ফেরার ক্ষেত্রে দুটি বিষয় দেখেন। তার মতে, একটি ফেরা হতে পারে রাজসিকভাবে লালগালিচায়। সেটি হতে পারে নির্বাচনে জয়ী হয়ে অথবা সরকার গঠনের আগে-পরে। আরেকটি হতে পারে, নির্বাচনের জন্য সরকারের ওপর চাপ তৈরি করতে বিশেষ প্রয়োজনে। তবে বিএনপির অধিকাংশ নেতাকর্মীরা চান, জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার ঠিক আগে অথবা তফসিল ঘোষণার পরপর তারেক রহমান দেশে আসুক। এ সময়ে দেশে ফিরে তিনি দলের পক্ষে নির্বাচনে ভালো ফল আদায়ে ভূমিকা রাখতে পারেন।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহিউদ্দিন আহমদ মনে করেন, তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তনটা হয়তো নির্বাচনী শোডাউনের একটা অংশ হবে। হয়তো সেইভাবে প্রস্তুতি নিয়েই তিনি দেশে ফিরবেন।

তারেক রহমানের পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা হুমায়ুন কবির গণমাধমে বলেছেন, জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা অনুযায়ী দেশে ফিরতে প্রস্তুতি নিচ্ছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এর মাধ্যমে দীর্ঘ ১৭ বছর পর দেশের মাটিতে ফিরতে যাচ্ছেন তিনি। নির্বাচনের পুরো কৌশল ও পরিচালনার কেন্দ্রবিন্দুতে তিনিই থাকবেন। তিনি আমাদের প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী। এখানে কোনো যদি-কিন্তু নেই। হুমায়ুন কবির জানান, এবার আর অপেক্ষা নয়, তফসিল ঘোষণার পরপরই তারেক রহমান দেশে ফিরে আসবেন এবং নির্বাচনী লড়াইয়ে নামবেন।

তারেক রহমানের উপদেষ্টা মাহদী আমিন বলেন, কোনো সুনির্দিষ্ট দিনক্ষণ চূড়ান্ত হয়নি, তবে নির্বাচনের আগে তিনি দেশে আসবেন। এ ব্যাপারে তারেক রহমান নিজেই সিদ্ধান্ত নেবেন। যথোপযুক্ত আইনি এবং রাজনৈতিক পরিবেশ যখন সৃষ্টি হবে, যেটা বাংলাদেশের জন্য ভাল, সবার জন্য ভাল উনি অবশ্যই নির্বাচনের আগে সেই সময়টাতে আমাদের মাঝে উপস্থিত হবেন।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী তারেক রহমানের দেশে ফেরার প্রসঙ্গে বলেন, বাংলাদেশে যে ওনার প্রয়োজন, দলের প্রয়োজন, দেশের প্রয়োজন- এটাতো উনিও অনুভব করেন, আমরাও অনুভব করি। তবে অনেক টেকনিক্যাল ইস্যু আছে। ওইগুলো বলা যাচ্ছে না। আমাদেরকেতো সবদিক থেকে বিবেচনা করেই উনার আসার বিষয় ঠিক করতে হবে। অনেকগুলো বিষয় থাকতে পারে এখানে। সবগুলো বিবেচনায় এনে উনার সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে।