সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হকের গ্রেফতারে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সাদুবাদ জানিয়েছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে গুলশানে চেয়ারপার্সনের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের কাছে বিএনপি মহাসচিব এই প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, বিলম্বে হলেও যে এতোদিন পরে তার (এবিএম খায়রুল হক) বিরুদ্ধে যে ব্যবস্থা গ্রহণ করছে সরকার (অন্তর্বর্তীকালীন সরকার), সেজন্য সরকারকে আমি আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি। সঠিকভাবে তার তদন্ত হবে সব বিষয়গুলোর এবং সঠিক ভাবে তার বিচার কার্য সম্পন্ন হবে সেটাই আমরা আশা করি। গতকাল সকালে গোয়েন্দা পুলিশ সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হককে ধানমন্ডির একটি বাসা থেকে গ্রেফতার করে।

দেশের একজন বড় শত্রু গ্রেফতার হলো মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আল্লাহর কাছে শুকরিয়া জানাতে চাই যে, বাংলাদেশের একজন বড় শত্রু যিনি বাংলাদেশের একটা বিশাল ক্ষতি করেছেন একটা বিরাট পদে থেকে এবং সেই পদ থেকে তিনি বাংলাদেশের ভাগ্য নির্ধারণ করার ব্যাপারে দায়িত্বে ছিলেন, সেখানে তিনি সেই জায়গায় প্রতারণা আশ্রয় নিয়েছেন, জনগণের সাথে প্রতারণা করেছেন, রাষ্ট্রের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন, সাবেক বিচারপতি খায়রুল হক। তিনি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ব্যাপারে শর্ট যে রায় দিয়েছিলেন সেটা এব্ং পরবর্তীকালে পূর্ণাঙ্গ যে রায় যাতে আকাশ ও পাতাল তফাৎ ছিলো এবং যে রায়টা শর্ট দিয়েছিলেন সেটাও আমরা মনে করি, এই রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে গেছে।

রাজনৈতিক সংকট তৈরিতে নিসন্দেহে খায়রুল হক দায়ী ছিলেন তার কি ধরেন শাস্তি চান জানতে চাইলে বিএনপি বলেন, এরজন্য তিনি শতকরা একশত ভাগ দায়ী। তবে এটা তো (শাস্তির বিষয়টা) আমার বলা ঠিক হবে না আইনগতভাবে যে বিধানগুলো আছে সেই বিধানগুলো দেখে তাকে প্রসিকিউট করে সেই বিধান নিশ্চিত করতে হবে। তবে তাকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে যাতে ভবিষ্যতে কেউ ওই জায়গাটাতে বসে, সেই জায়গা ব্যবহার করে রাষ্ট্রের ক্ষতি করতে না পারে।

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আরও যারা এসব অপকর্মের সাথে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে সরকারের ব্যবস্থা নেবেন বলে আশা করি।

মির্জা ফখরুল বলেন, উনার(এবিএম খায়রুল হক) এর রায়ের পরে পরেই যে হয়েছে যে, আমাদের তত্ত্বাবধায়ক বিধানটা বাতিল হলো এবং যেটা বাংলাদেশে পরবর্তীকালে যতরকমের রাজনৈতিক সংকট তৈরি হয়েছে জাতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আর আমরা মনে করি, বিচার বিভাগ সবচেয়ে বড় জায়গা যেখানে মানুষের আস্থা থাকে সেই আস্থার জায়গাটা উনি ধ্বংস করেছেন। শুধু মাত্র তার রাজনৈতিক চিন্তাভাবনা সেই কারণে যেটা বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ক্ষতি করেছে বলে আমরা মনে করি।

শিশু একাডেমি ভেঙে ফেলায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা জানতে পেরেছি যে, শিশু একাডেমি যে ভবনটি কার্জন হলের উল্টো দিকে হাইকোর্টে পাশে, সেই ভবনটিকে ভেঙে ফেলার জন্য কথা-বার্তা চলছে বা এই ধরনের প্রক্রিয়া বা প্রস্তাব নেয়া হচ্ছে। আমরা এটার বিরোধিতা করি। বিরোধিতা করি এই কারণে যে, এটা একটা শিশুদের বাংলাদেশ সরকারের প্রতিষ্ঠান যেটার মাধ্যমে শিশুদের বিভিন্ন রকমের কার্য্ক্রম তাদের (শিশুদের) গঠন, তাদের বেড়ে উঠা, তাদের মনমানসিকতা তৈরি করা, তাদের এক্সট্টা কারিকুলাম একটিভিটিজ তৈরি করা প্রভৃতি ব্যাপারে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান উদ্যোগ নিয়েছিলেন এবং তিনিই প্রথম শিশু একাডেমি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এটা সারাদেশে শাখা রয়েছে। সুতরাং এই প্রতিষ্ঠাকে এখান থেকে সরানোটা আমি মনে করি একেবারেই সঠিক সিদ্ধান্ত হবে না এবং এই ব্যাপারে আমাদের সুস্পষ্ট বক্তব্য যে, আমরা চাই না যে, শিশু একাডেমি ভবনটি সেই জায়গা থেকে স্থানান্তরিত করা হোক বা অন্য জায়গা দেয়া হোক। এটা আমার মনে হয় জাতি গঠনের ব্যাপারে বাধা হয়ে দাঁড়াবে।

এই সময়ে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত এয়ার ভাইস মার্শাল আলতাফ হোসেন চৌধুরী, সমাজ কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক কামরুজ্জামান রতন, সহ দফতর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

উত্তরা মাইলস্টোন স্কুল এন্ড কলেজ বিমান দুর্ঘটনায় নিহত তিন শিক্ষার্থীর পরিবারের সাথে সাক্ষাৎ করেছেন বিএনপি মহাসচিব। সকাল ১১টায় তিনি উত্তরার দিয়াবাড়ির তারারটেকের কাছে একটি পারিবারিক কবরস্থানে যান। এখানে এক পরিবারের তিন শিক্ষার্থী শায়িত আছে। বিএনপি মাইলস্টোন স্কুলের তিন শিক্ষার্থী আরিয়ান, হুমায়ূরা ও বাপ্পি‘র পরিবারের সদস্যদের নিয়ে তাদের কবর জিয়ারত করেন। এরপর সেখানে আরও দুই শহীদ জুনায়েদ ও শারিয়ার করবও জিয়ারত করেন তিনি। বিএনপি মহাসচিব নিহত শিক্ষার্থীদের পরিবারের সদস্যদের সাথে কথা বলেন এবং তাদের সান্ত¡না জানান।

এই সময়ে মহানগর উত্তরের সদস্য সচিব মোস্তফা জামান, যুগ্ম আহ্বায়ক এসএম জাহাঙ্গীর সদস্য সচিব কফিল উদ্দিন, আফাজ উদ্দিন ও বিএনপি মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান উপস্থিত ছিলেন।