ভারতের ভাব কথা-বার্তার মধ্যে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ দেখা যাচ্ছে বলে অভিযোগ বিএনপির। একইসঙ্গে দেশের জেলা হাসপাতালগুলোতে করোনা-ডেঙ্গু মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেই বলেও অভিযোগ দলটির। গতকাল বুধবার দুপুরে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ ব্রিফিঙে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এই অভিযোগ করেন।
রিজভী বলেন, জেলা শহরের হাসপাতালগুলো করোনার প্রয়োজনীয় সাপোর্ট দিতে পারছে না। বরিশাল বিভাগে অনেক করোনা আক্রান্ত রোগীকে বরগুনা ও পটুয়াখালীর থেকে বরিশাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসতে হচ্ছে। পটুয়াখালী, বরগুনা জেলা শহর এখানে কেনো সরকারের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা থাকবে না করোনা মোকাবিলার জন্য, ডেঙ্গু মোকাবিলার জন্য হলেও সেখানকার জেলা হাসপাতালগুলোতে কেনো অক্সিজেন থাকবে না এবং অন্যান্য সরঞ্জাম থাকবে না এটা তো হতে পারে না। ২/৩ বছর আগে করোনার যে ভয়াবহতা ঘটেছে এতো মানুষ মারা গেছে তারপরে আর তো সরকারের বসে থাকা উচিত ছিল না।
রিজভী বলেন, নতুন ধরনের করোনার যে ভেরিয়েন্টের আগ্রাসন শুরু হয়েছে সেখান থেকে খুব ভালো লক্ষণ ফুটে উঠছে বলে আমাদের কাছে মনে হচ্ছে না। এক্ষেত্রে সরকার ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় খুব দ্রুত গতিতে করোনা মোকাবিলায় যা যা করণীয় দরকার এখন থেকে প্রস্তুতি গ্রহন করতে হবে।
তিনি বলেন, আমরা এখন পর্যন্ত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বা সরকারের দিক থেকে করোনা মোকাবিলায় জনগণকে সচেতন করা এবং এই ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় যে সুরক্ষামূলক ব্যবস্থার কোনো কথা শুনিনি। মানুষের যেকোনো দিক থেকে সুরক্ষা বা নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব হচ্ছে সরকারের। এটা সরকারকে পালন করতে হবে।
ডেঙ্গুর বিস্তারে উদ্বেগ প্রকাশ করে রিজভী বলেন, ডেঙ্গুও মারাত্মক রুপ নিয়েছে। প্রায় ৬০% মানুষের মধ্যে এর সংক্রামণ বেড়েছে। বরিশাল বিভাগে অত্যন্ত তীব্র মাত্রায় ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়েছে। গতকাল আমি শুধু বরগুনাতেই বলেছিলাম ১৪‘শ মানুষ আক্রান্ত হয়েছে আজকে সেটা ১৮‘শ উপনীত হয়েছেৃ এই তথ্য আমি গণমাধ্যমের রিপোর্ট থেকে বলছি। এই তথ্য কিন্তু অত্যন্ত ভয়ংকর ব্যাপার।
রিজভী বলেন, কি কারণে জানি পার্র্শ্ববতী দেশ এক ধরণের ক্ষোভে বেদনায় বাংলাদেশের প্রতি এক ভয়ংকর বিদ্বেষ পরায়ন হয়ে উঠছে।এর কারণ কি আমরা জানি না। হাসিনা ক্ষমতায় নেই এই কারণেই কি তারা বেশি বিদ্বেষ পরায়ণ হয়ে উঠছেন? প্রতিদিন পুশইন হচ্ছে হয় ঠাকুরগাঁও সীমান্ত না হয় মৌলভীবাজারের সীমান্ত না হলে আপনার কুড়িগ্রামের সীমান্ত, না হলে সাতক্ষীরার সীমান্তৃ. ২০ জন, ৩০জন, ৪০ জন, ৫০ জন করে পুশইন চলছে। এটা তো মনে হচ্ছে যে, কেনো জানি পায়ে পাড়া দিয়ে ঝগড়া লাগানোর একটা প্রচেষ্টা কিনা এই প্রশ্ন আজকে সারা দেশের মানুষের মধ্যে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যেও উঠেছে। হঠাৎ করে এই যে পুশইনের হিড়িক শুরু হয়ে গেলো, বিভিন্ন মানুষ বিদেশী বলে বাংলাদেশের ভেতরে পুশইন করলো।
তিনি বলেন, ভারতের আসাম রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, যাকেই বিদেশী মনে হবে তাকেই পুশইন করানো হবে বাংলাদেশে। আপনি আমেরিকার বা ইংল্যান্ডের, বা সুইজারল্যান্ডের বা সুইডেনের বা ডেনমার্কের বা মধ্য প্রাচ্যের কোনো দেশের অথবা এশিয়ার কোনো দেশের নাগরিক আসামে ভিজিট করে.. উনি বিদেশী মূখ্যমন্ত্রী বলেছেন, বিদেশী যাকেই আমরা দেখব তাকেই পুশইন করব। তাহলে আপনারা বিদেশী যাকেই পাবেন তাকেই বাংলাদেশে পুশইন করাবেন? বাংলাদেশ কি বর্জ্য ফেলার একটা জায়গা হয়ে গেছে। তাদের ভাব-কথা-বার্তার মধ্যে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ। বাংলাদেশ যে স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব অক্ষুন্ন রাখার অঙ্গীকার নিয়ে এদেশের মানুষ তারা যে বসবাস করছে, তারা যে অঙ্গীকারবদ্ধ এটা বোধহয় তারা ভুলে গেছে। বাংলাদেশের মানুষ অনেক কিছু সহ্য করে কিন্তু একবার যখন রুখে দাঁড়ায় সেই পরিণতি কিন্তু খুব ভালো নয়। এর প্রমাণ হচ্ছে শেখ হাসিনার পতন, তাকে দিনে দুপুরে পালিয়ে যেতে হয়েছে।
রিজভী বলেন, আমি পার্শ্ববর্তী দেশের ভাইদেরকে সুস্পষ্টভাবে বলতে চাই, আপনারা একটি স্বাধীন রাষ্ট্র, আমরা একটি স্বাধীন রাষ্ট্র। কিন্তু পায়ে পাড়া দিয়ে আপনারা যদি ঝগড়া করতে চানৃ আপনারা আপনাদের দেশের লোককে বিদেশী বানিয়ে বাংলাদেশে পুশইন করতে চান এর বিরুদ্ধে আমাদের যেমন প্রতিবাদও থাকবে, প্রতিরোধও থাকবে।।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে রিজভী বলেন, গোটা জাতি আজ লন্ডনের দিকে তাকিয়ে। তিনি বলেন, প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মধ্যে বৈঠকটি একটি ঐতিহাসিক বৈঠক হবে এবং এ বৈঠকের মাধ্যমে দেশের রাজনীতিতে সুবাতাস বইবে বলে বিশ্বাস করি। এরইমধ্যে ডিসেম্বরে নির্বাচনের যৌক্তিকতা তুলে ধরেছে বিএনপি। যৌক্তিক সময়েই নির্বাচন হবে বলে জাতি প্রত্যাশা করে। আলোচনার মধ্য দিয়ে নির্বাচনসহ সব সমস্যার সমাধান সম্ভব।
ঈদযাত্রাকে ঘিরে সড়ক দুর্ঘটনায় অর্ধশতাধিক মানুষের মৃত্যুর সংবাদে উদ্বেগ প্রকাশ করে রিজভী বলেন, বেপরোয়া গাড়ি চালানোর জন্য এই দুর্ঘটনা বেড়েছে। এছাড়াও ঈদে সমাজবিরোধীদের দৌরাত্ম্যও ছিল। নির্ভয়ে ফ্যাসিবাদমুক্ত ঈদ উদযাপন আনন্দের ছিল। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি দেখা গেছে। প্রশাসন আরও তৎপর হলে তা কমানো সম্ভব হতো।