দেড় দশকেরও বেশি সময় ধরে নাগরিক হিসেবে সব গণতান্ত্রিক-রাজনৈতিক অধিকার হারানোর কারণে অনেকের মনে এক ধরনের অসহিষ্ণুতা জন্ম নিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি বলেন, এই অসহিষ্ণুতা কাটিয়ে একজন মানবিক মানুষ হয়ে ওঠার জন্য মনুষ্যত্ব অর্জন আর পশুত্ব বর্জনই হোক আমাদের অঙ্গীকার। গতকাল শনিবার রাজধানীর চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে ‘প্রাণী ও প্রাণের মিলন মেলা’ শীর্ষক প্রদর্শনীতে ভার্চুয়ালি যোগ দিয়ে তারেক রহমান এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ অ্যানিমেল ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন এই প্রদর্শনীর আয়োজন করে।
তারেক রহমান বলেন, মানুষ যখন প্রাণীদের প্রতি সহানুভূতিশীল হয়, প্রাণীদের নিরাপদ আবাসস্থল নিশ্চিত করে, তখন এটা মানবসমাজের পরিপক্বতা এবং উন্নত নৈতিকতারই কিন্তু প্রতিফলন ঘটায়। সুতরাং মানুষ তার নিজের প্রয়োজন প্রাণীদের বাঁচিয়ে রাখা দরকার। প্রাণীদের আবাস অক্ষত রাখা দরকার। তিনি বলেন, ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি, গণতন্ত্রের সঙ্গে মানুষের অধিকারের সম্পর্কটা তেমন, বাস্তুতন্ত্রের সঙ্গে পশুপাখি এবং বন্যপ্রাণীর অধিকারের সম্পর্কটা যেমন। সুতরাং রাষ্ট্র-রাজনীতিতে গণতন্ত্র এবং শুদ্ধাচার প্রতিষ্ঠিত থাকলে বাস্তবিকভাবেই বাস্তুতন্ত্র নিরাপদ থাকে। এ সময় ‘প্রাণ বাঁচাও , প্রাণী বাঁচাও, দেশ হোক সব প্রাণের নিরাপদ আশ্রয়স্থল’ এই প্রত্যাশা রেখে স্লোগান দেন তিনি।
আন্তর্জাতিক সংস্থার জরিপ তুলে ধরে তারেক রহমান বলেন, দেশে ১ হাজার ৬০০’র বেশি প্রজাতির প্রাণী ছিল। এই ১ হাজার ৬০০’র মধ্যে প্রায় ৩০০ প্রজাতি কিন্তু বিলুপ্তির মুখে চলে গেছে। এটা শুধু বাংলাদেশেই নয়, বিশ্বের আরও অনেক দেশেই কিন্তু মানুষের সৃষ্ট পরিস্থিতির কারণে অনেক প্রজাতির অস্তিত্ব হুমকিন সম্মুখীন আজ। আশির দশকে বাংলাদেশে সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা ছিল খুব সম্ভবত ৪০০’র বেশি। সর্বশেষ যে জরিপটা হয়েছে, বাঘের সংখ্যা কমতে কমতে কমতে এখন একশ’র কাছাকাছি এসে দাঁড়িয়েছে । হাতির সংখ্যাও এখন কমে ২০০’র নিচে চলে এসেছে।
তিনি বলেন, প্রাণীকল্যাণ আইন ২০১৯, বন্যপ্রাণীর সংরক্ষণ নিরাপত্তা আইন, জীব বৈচিত্র্য রক্ষা আইন, পরিবেশ উন্নয়ন আইন, পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট আইন, সংশ্লিষ্ট বিষয়ে দেশের অনেকগুলো আইন রয়েছে। ইনশাআল্লাহ, জনগণের রায় বিএনপি রাষ্ট্র পরিচালনার সুযোগ পেলে পশুপাখি বন্যপ্রাণী তথা বাস্তুতন্ত্রের নিরাপত্তার জন্য এই আইনগুলোকে সময়োপযোগী করবো।
তারেক রহমান বলেন, প্রাণী অধিকারের যে বিষয়টি শুধুমাত্র প্রাণীদের প্রতি মানবিক দায়িত্বই নয় বরং জীব বৈচিত্র্যের সংরক্ষণ বাস্তুতান্ত্রিক ভারসাম্য রক্ষা এবং মানব জাতির নিজেদের সুস্থ এবং টেকশই ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করাও কিন্তু অত্যাবশ্যক। মানুষ যখন প্রাণীদের প্রতি সহানুভূতিশীল হয়, প্রাণীদের নিরাপদ আবাসস্থল নিশ্চিত করে, তখন এটা মানব সমাজের পরিপক্কতা এবং উন্নত নৈতিকতারই প্রতিফলন ঘটায়।
সংগঠনের আহ্বায়ক আদনান আজাদের সভাপতিত্বে এবং মুস্তাকিম বিল্লাহ ও লোভা আহমেদের যৌথ সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, কোষাধ্যক্ষ রাশিদুজ্জামান মিল্লাত, কবি আবদুল হাই শিকদার, শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক আবদুল লতিফ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মনোয়ার হোসেন তুহিন, জাতীয় ক্রিকেটের সাবেক অধিনায়ক তামিম ইকবাল খান, চিত্র নায়িকা আইরিন সুলতানা, জাতীয় চিড়িয়াখানার কিউরেটর আতিকুর রহমান মিঠু, প্রাণী প্রেমী আবু হানিফ, রহিমা আনজুম পুস্প, দিপান্বিতা রিদি, আবুল হাসনাইন মঞ্জুর মোর্শেদ ইমন, অ্যানিম্যাল ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের প্রধান সমন্বয়ক আতিকুর রহমান রুমন, কেন্দ্রীয় নেতা নিশাত তামান্না জামান, বাপ্পী খান প্রমূখ বক্তব্য রাখেন।