দিনাজপুরে বালুমহাল নিয়ে বিএনপি-আওয়ামী লীগের সংঘর্ষের জেরে একজন জামায়াত নেতাকে কুপিয়ে গুরুতর জখম করেছে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা। এ ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় আওয়ামী লীগ দলীয় ইউপি চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মানিককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। চেয়ারম্যান মানিকের নামে পূর্বেই আরো দুটি মামলা ছিল বলে থানা সূত্র জানিয়েছে। ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে অন্যান্য সন্ত্রাসীদেরও দ্রুত গ্রেফতার ও শাস্তি নিশ্চিতের দাবী জানিয়েছে জামায়াতে ইসলামী।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গত ১০ এপ্রিল বৃহস্পতিবার দুপুরের পর স্থানীয় বালুমহাল নিয়ে বিরোধে কাহারোল উপজেলার ৫নং সুন্দরপুর ইউপি চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মানিকের উপর হামলা করে স্থানীয় যুবদল-ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা। এ সময় চড়-থাপ্পড় ও ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটে। গুরুতর আহত না হয়েও চেয়ারম্যান মানিক নিজের নিরাপত্তার জন্য দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন। সেখান থেকে মোবাইলযোগে নির্দেশনা দিয়ে তার সহযোগীদের দ্বারা বিকালে কান্তনগর মোড় এলাকায় সড়ক অবরোধ করান। অবরোধকারী সন্ত্রাসীরা বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে সাধারণ মানুষের উপর এলোপাতাড়ি হামলা চালাতে শুরু করে। সন্ধ্যার কিছু আগে ওই রাস্তা দিয়ে কাহারোল উপজেলা শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সভাপতি ও জামায়াত নেতা শরিফুল ইসলাম (৪০) যাবার পথে আওয়ামী সন্ত্রাসী তার উপর হামলা শুরু করে। চেয়ারম্যান মানিকের মুখচেনা সন্ত্রাসী আ. লীগ নেতা নুরনবী, হিমেল ও মিশুর নেতৃত্বে সংঘবদ্ধ সন্ত্রাসীরা জামায়াত নেতা শরিফুলকে রামদা, হাসুয়া, রড, হকিস্টিকসহ বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্র দিয়ে হাতে-পায়ে ও মাথায় গুরুতর জখম করে। তারা শরিফুল ইসলামের মোটরসাইকেলটি ভাংচুর করে আগুন ধরিয়ে দেয়। সন্ত্রাসীরা শরিফুল ইসলামের কাছে থাকা নগদ ৪৭ হাজার টাকাও ছিনিয়ে নেয়। হামলার পর জামায়াত নেতার অবস্থা আশংকাজনক দেখে অবরোধকারী সেখান থেকে চম্পট দেয়। স্থানীয়রা সাথে সাথে শরিফুলকে উদ্ধার করে দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসে। রাতে জামায়াতের নেতা-কর্মীরা হাসপাতালে উপস্থিত হলে চেয়ারম্যান মানিককে হাসপাতালে ভর্তি নিয়ে রাতভর উত্তেজনা বিরাজ করে। একপর্যায়ে পুলিশের সাথে বাক-বিতন্ডার ঘটনাও ঘটে। গভীর রাতে হাসপাতালে সেনাবাহিনীর সদস্যরা উপস্থিত হয়ে চেয়ারম্যান মানিককে গ্রেফতারের মধ্য দিয়ে পরিবেশ শান্ত হয়। এদিকে গুরুতর আহত জামায়াত নেতা শরিফুলের অবস্থা এখনও আশংকামুক্ত নয় বলে জানান চিকিৎসকগণ।

এ ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে দিনাজপুর জেলা জামায়াতে ইসলামী, শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন, ইসলামী ছাত্রশিবিরসহ সমমনা সংগঠনগুলো। দিনাজপুর জেলা জামায়াতে ইসলামীর আমীর অধ্যক্ষ আনিসুর রহমান, জেলা সেক্রেটারি মুহাদ্দিস ড. এনামুল হক, জেলা শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সভাপতি জাকিরুল ইসলাম, জামায়াতের বীরগঞ্জের-কাহারোলের এমপি প্রার্থী মতিউর রহমান, কাহারোল উপজেলা জামায়াতের আমীর মাওলানা তরিকুল ইসলাম, দিনাজপুর শহর জামায়াতের আমীর সিরাজুস সালেহীন, দিনাজপুর শহর ছাত্রশিবিরের সভাপতি মুশফিকুর রহমান, জেলা উত্তর শিবির সভাপতি রাসেল রানা পৃথক পৃথক বিবৃতিতে এ নিন্দা জানান। বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের গডমাদার পালিয়ে বাঁচলেও তার সন্ত্রাসীরা এখনও বিভিন্ন এলাকায় এমন নৃশংস ঘটনা ঘটাচ্ছে। আওয়ামী সন্ত্রাসীরা সম্পূর্ণ বিনা কারণে জামায়াত নেতা শরিফুলের উপর ন্যক্কারজনক হামলা চালিয়েছে। আওয়ামী লীগকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে নিষিদ্ধ না করায় তারা এমন বর্বরতা চালানো সুযোগ পাচ্ছে। আমরা অবিলম্বে এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তসাপেক্ষে বিচার ও সন্ত্রাসীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবী করছি। নেতৃবৃন্দ জামায়াত নেতা শরিফুলে আশু আরোগ্য কামনা করেন।