বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় কার্যকরী পরিষদের ২য় সাধারণ অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়েছে। ১৫ ও ১৬ জুলাই রাজধানীর আল-ফালাহ মিলনায়তনে দুই দিনব্যাপী এ অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারি জেনারেল নূরুল ইসলাম সাদ্দামের সঞ্চালনায় অধিবেশনের উদ্বোধন ঘোষণা করেন জুলাই বিপ্লবের শহীদ শাকিল পারভেজের পিতা বেলায়েত হোসেন। এরপর সভাপতির উদ্বোধনী বক্তব্যের মাধ্যমে সভার কার্যক্রম শুরু হয়।

WhatsApp Image 2025-07-16 at 22.40.29_e41b0e50

উদ্বোধনী বক্তব্যের শুরুতেই জুলাই শহীদসহ বিগত ফ্যাসিবাদী সরকারের আমলে গুম-খুন ও নির্যাতনের শিকার ব্যক্তিদের স্মরণ এবং ছাত্রশিবিরের গুম হওয়া ৭ জন নেতাকর্মীর সন্ধান দাবি করেন কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, “২০২৪ সালের জুলাইয়ে আমরা বাংলাদেশের ইতিহাসের প্রলম্বিত এক ফ্যাসিবাদকে বিতাড়িত করতে সক্ষম হয়েছি। ফ্যাসিবাদ বিতাড়নের সে সংগ্রামে দেশ-বিদেশে অবস্থানরত আমাদের দেশের সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ প্রত্যেকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে ভূমিকা রেখেছেন। রক্তক্ষয়ী এই অভ্যুত্থানকে অর্থবহ করতে সকলকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে।”

WhatsApp Image 2025-07-16 at 22.40.28_eea085b6

তিনি আরও বলেন, “১৯৭৭ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ থেকে যাত্রা শুরু করে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই বহুমুখী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে সংগঠনটি আজকের অবস্থানে পৌঁছেছে। ১৯৮২ সালের ১১ মার্চ শহীদ সাব্বির ভাইয়ের শাহাদাতের মধ্য দিয়ে শুরু হওয়া ত্যাগের ধারা আজও অব্যাহত। অগণিত আহত, পঙ্গুত্ব, গুম ও নির্যাতিত হয়েছেন; তবুও আদর্শ থেকে বিচ্যুতি ঘটেনি।”

তিনি অধিবেশন থেকে জুলাই বর্ষপূর্তিতে "জুলাই সনদ", গণহত্যাকারীদের বিচার, ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার আমূল সংস্কার, শিক্ষাব্যবস্থার পুনর্গঠন, ছাত্র সংসদ নির্বাচনসহ বিভিন্ন বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের নিকট ১০ দফা দাবি পেশ করেন—

১. অবিলম্বে দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ছাত্র সংসদ নির্বাচন দিতে হবে।

২. দেশের সবগুলো উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অতি সত্বর আবাসন সংকট নিরসন করতে হবে।

৩. দেশের মাদরাসা শিক্ষাব্যবস্থার প্রতি, বিশেষত ইবতেদায়ি মাদরাসার প্রতি বৈষম্য দূর করতে হবে। আলিয়া মাদরাসায় ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ খুলতে হবে।

৪. শিক্ষায় বাজেট বরাদ্দ ও গবেষণা খাতে বরাদ্দ বাড়াতে হবে।

৫. শিক্ষাঙ্গনে যেকোনো ধরনের সন্ত্রাস ফিরে আসার পথ রুদ্ধ করতে হবে।

৬. আমরা জোরালোভাবে দাবি করছি, ৩৬ জুলাইয়ের মধ্যে জুলাই ঘোষণাপত্র প্রদান করতে হবে; যেখানে জুলাই আন্দোলনে শহীদ, আহত, পঙ্গুত্ববরণকারী ও অংশগ্রহণকারী সকল পক্ষের স্বীকৃতি প্রদান করতে হবে। ফ্যাসিবাদী গোষ্ঠী কর্তৃক সংঘটিত পল্টন ট্র্যাজেডি, পিলখানা হত্যাকাণ্ড, শাপলা গণহত্যা, গুম, অবৈধ নির্বাচনসহ সকল অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড তুলে ধরতে হবে। দেশের সঠিক ইতিহাস ও সংস্কৃতিকে ধারণ করে নতুন বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার ব্যক্ত করতে হবে।

৭. প্রয়োজনীয় রাষ্ট্রীয় কাঠামো সংস্কার এবং জনমনে শান্তি ও স্বস্তি ফিরিয়ে আনতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি জোরদার করতে হবে।

৮. জুলাই গণহত্যাসহ সকল অপকর্ম, গুম-খুন ও দুর্নীতির বিচার নিশ্চিত করতে হবে।

৯. একটি দক্ষ ও নৈতিকতাসমৃদ্ধ জাতি গঠনে আধুনিক ও আদর্শিক শিক্ষাব্যবস্থা প্রণয়ন করতে হবে।

১০. জুলাই অভ্যুত্থানকে বিপ্লবে রূপান্তর করতে এই সরকারকে একটি বিপ্লবী সরকারের ভূমিকা পালন করতে হবে।

WhatsApp Image 2025-07-15 at 21.46.39_e11c66aa

সমাপনী বক্তব্যে তিনি পরিষদ সদস্যদের উদ্দেশ্যে বলেন, “কেন্দ্রীয় কার্যকরী পরিষদের শপথ একটি পবিত্র আমানত। এই দায়িত্ব পালনের পথে ব্যক্তি হিসেবে নিজেকে যোগ্যতাসম্পন্ন করে গড়ে তোলা অন্যতম দায়িত্ব। পরিশুদ্ধ আমল, আত্মশুদ্ধি, চিন্তার গভীরতা, প্রজ্ঞা ও রাজনৈতিক দূরদৃষ্টি, দক্ষ সংগঠক এবং আল্লাহর খাঁটি গোলাম হওয়ার জন্য সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালাতে হবে। সর্বোপরি, কার্যকরী পরিষদ সদস্যদের সমৃদ্ধশালী দেশ গঠন ও আদর্শিক নাগরিক তৈরিতে অঙ্গীকারবদ্ধ থাকতে হবে।”

কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলাম অধিবেশনে ২০২৫ সেশনের কার্যকরী পরিষদের উপনির্বাচনে নির্বাচিত ১০ জনের নাম ঘোষণা করেন এবং কার্যকরী পরিষদের সাথে পরামর্শ করে ১ জন ভাইকে মনোনয়ন দেন। পরে তিনি নবনির্বাচিত ও নবমনোনীত কার্যকরী পরিষদ সদস্যদের শপথবাক্য পাঠ করান।

WhatsApp Image 2025-07-16 at 22.40.29_e801ac2c

এছাড়াও অধিবেশনে কেন্দ্রের ষাণ্মাসিক রিপোর্ট পর্যালোচনা, জেলা সংগঠনের সেটআপ প্রণয়ন, দেশের বিদ্যমান পরিস্থিতি পর্যালোচনাসহ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। সমাপনী সেশনে কার্যকরী পরিষদের বিদায়ী ভাইদের বক্তব্য, কেন্দ্রীয় সভাপতির সমাপনী বক্তব্য, দোয়া ও মুনাজাতের মাধ্যমে অধিবেশন সমাপ্ত হয়।

আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আমীরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমান, সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার, সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, নূরুল ইসলাম বুলবুল, মঞ্জুরুল ইসলাম এবং ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ফেডারেশন অব স্টুডেন্ট অর্গানাইজেশনস (IIFSO)-এর সেক্রেটারি জেনারেল ড. মোস্তফা ফয়সাল পারভেজ।