এয়োদশ সংসদ নির্বাচন ব্যাহত করতে অন্তর্বর্তী সরকার নিজেরাই একটা অবস্থা তৈরি করছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ফেব্রুয়ারির পর যদি নির্বাচন হয়, তাহলে সেটি জনগণ মেনে নিবে না। গতকাল শুক্রবার বিকেলে নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ৭ নভেম্বর উপলক্ষে আয়োজিত র‌্যালিপূর্ব সংক্ষিপ্ত সমাবেশে তিনি এমন অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, দুর্ভাগ্য আমাদের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যাকে আমরা সম্পূর্ণ সমর্থন দিচ্ছি, তারা আজকে নিজেরাই একটা অবস্থা তৈরি করছে যাতে করে নির্বাচন ব্যাহত হয়। যে রাজনৈতিক দলগুলো গণভোট চাচ্ছে তারাও নির্বাচনকে বানচাল করবার ষড়যন্ত্র করছে।

গণভোট আলাদাভাবে একসাথে হতে হবে উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা খুব পরিষ্কার করে বলে দিতে চাই, গণভোট হলে নির্বাচনের দিনই হতে হবে। নির্বাচন ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসেই হতে হবে। অন্যথায় বাংলাদেশের মানুষ কিছু মেনে নেবে না।

৭ নভেম্বর জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষ্যে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ও উত্তরের যৌথ উদ্যোগে এই র‌্যালি অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশ শেষ হওয়ার পরে র‌্যালিটি কাকরাইল নাইটেঙ্গল রেস্তোরার মোড় থেকে বিকাল চারটায় শুরু হয়। র‌্যালিটি শান্তিনগর, মালিবাগ, মৌচাক, মগবাজার, বাংলা মোটর হয়ে সোনারগাঁও হোটেলের মোড়ে এসে শেষ হয়।

একটি খোলা ট্রাকে চড়ে র‌্যালিতে অংশ নেন দলের মহাসচিব, স্থায়ী কমিটির সদস্যসহ কেন্দ্রীয় ও অঙ্গসংগঠনসহ হাজার হাজার নেতাকর্মী। জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া, তারেক রহমানের প্রতিকৃতি, পোস্টারসহ জাতীয় পকাতা নিয়ে আসা নেতা-কর্মীদের হাতে হাতে ছিলো ধানের শীষ ও বিএনপির পতাকা। ‘স্বাধীনতার ঘোষক জিয়া, লও লও লও সালাম’, বাংলাদেশের অপর নাম জিয়াউর রহমান’ ইত্যাদি শ্লোগান দেয় নেতা-কর্মীরা।

মির্জা ফখরুল বলেন, ৭ নভেম্বরের চেতনা গণতন্ত্রের চেতনা, আমাদের বিএনপির জন্ম হয়েছে সংস্কারের মধ্য দিয়ে। আমাদের নেতা প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান সংস্কারের সূচনা করেছেন। আর আজকে তারেক রহমান নতুন সংস্কারের ৩১ দফা দিয়ে জাতিকে সামনে রেখে এগিয়ে দেয়ার একটা ম্যাগনাকাটা দিয়েছেন। আমরা সেই লক্ষে এগিয়ে যাব, আমরা এই নির্বাচনে অংশ নেব। ইনশাআল্লাহ এই নির্বাচনে জয়যুক্ত হয়ে আমরা একটা নতুন বাংলাদেশ গড়ে তুলবো।

গণভোট নিয়ে অন্তবর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের সিদ্ধান্ত এবং কয়েকটি দলের দাবির প্রসঙ্গ টেনে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা যে বিষয়গুলোতে একটা সর্বসম্মতভাবে সিদ্ধান্ত হয়েছিল যে আমরা আমাদের যেগুলো আপত্তি থাকবে অর্থাৎ যেগুলো নোট অফ থাকবে সেখানে তা লিপিবদ্ধ থাকবে। সেটা সেখানে রাখা হয়নি। অসংখ্য টাকা খরচ করে আপনারা যেটা করলেন সেটা রাজনৈতিক দলগুলোর কোন সমাধান হয়নি।

ফখরুল বলেন, আজকে একটা রাজনৈতিক দল তারা কয়েকটা দলকে নিয়ে একটা জোট বানিয়েছে, তারা চাপ সৃষ্টি করছে বিভিন্নভাবে যে নির্বাচনের আগেই গণভোট হতে হবে। কেন নির্বাচনের আগে গণভোট হতে হবে? আমরা বলেছি যে, আমরা গণভোট মানছি সেই গণভোট নির্বাচনের দিনই হতে হবে। কারণ দুটো ভোট করতে গেলে অনেক টাকা খরচ হবে। তাছাড়া মূল যে নির্বাচন জাতীয় নির্বাচন সেটা ক্ষুন্ন হয়ে যাবে।

বিএনপি মহাসচিবের সভাপতিত্বে ও প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাহউদ্দিন টুকুর সঞ্চালনায় সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, আবদুল মঈন খান, মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক রফিকুল আলম মজনু, উত্তরের আহ্বায়ক আমিনুল হক বক্তব্য রাখেন।

সমাবেশে মির্জা আব্বাস বলেন, বিএনপি মাঠে নামলে আপনাদের কাউকে খুঁজেও পাওয়া যাবে না। ৭১ সালে যেমন জাতিকে বিভ্রান্ত করেছিলেন, এখনো তাই করছেন। সময় থাকতেই জাতির কাছে ক্ষমা চান।

জিয়ার মাজার জিয়ারত : এদিকে গতকাল সকালে বিপ্ল ও সংহতি দিবসে শেরে বাংলা নগরে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবরে পুস্পমাল্য অর্পণ করেছে বিএনপি। এতে অংশ নিয়ে বিএনপি মহাসচিব গণঅভ্যুত্থানের পরে আবারও গণতন্ত্র ধবংসের চক্রান্ত হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, গণঅভ্যুত্থানের পরে আজকে বাংলাদেশে বিভিন্ন রকমভাবে একটা প্রচেষ্টা চলছে, একটা চক্রান্ত চলছে গণতন্ত্রকে আবারও ধ্বংস করার জন্যে। সেই মুহুর্তে ৭ নভেম্বর জাতীয় বিপ্লব ও সমৃদ্ধি দিবস আমাদেরকে সেই পথেই যেতে হবে।

জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের গণভোট প্রশ্নের বিএনপির সঙ্গে আলোচনার যে প্রস্তাব বিএনপিকে দিয়েছে সে বিষয়ে জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা এ বিষয়ে আমাদের বক্তব্য বৃহস্পতিবার দলের স্থায়ী কমিটির মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত খুব পরিস্কার জানিয়ে দিয়েছি। ওটাই আমাদের বক্তব্যে । স্থায়ী কমিটির বৈঠকের পর বিএনপি মহাসচিব স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিএনপি দৃঢ়ভাবে মনে করে যে, দীর্ঘ আলোচনায় উপনীত ঐকমত্যকে বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট সকল রাজনৈতিক দল ঐক্যবদ্ধ থাকবে এবং কোন মতেই নিত্য নতুন প্রশ্ন উত্থাপন কিম্বা সংকট সৃষ্টি করে গণতন্ত্র পুণঃপ্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আয়োজিতব্য নির্বাচন অনুষ্ঠানে বাধা সৃষ্টি করবে না। বিএনপি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি জুলাই জাতীয় সনদের যে সকল বিষয় ঐকমত্য হয়েছে তার আইনানুগ বাস্তবায়নের জন্য এবং যথাসময়ে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের আন্তরিক ও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানাচ্ছে।

৭ নভেম্বর জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টায় বিএনপি মহাসচিব দলের স্থায়ী কমিটির মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, সালাহ উদ্দিন আহমদ, এজেডএম জাহিদ হোসেনকে নিয়ে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের কবরে যান এবং পুস্পমাল্য অর্পণ করে তার প্রতি শ্রদ্ধা জানান। এ সময়ে দলের চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিন খায়রুল কবির খোকন, আবদুস সালাম আজাদসহ মহানগর উত্তর আমিনুল হক, দক্ষিন রফিকুল আলম মজনু, তানভীর আহমেদ রবিন, অঙ্গসংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

বিএনপির পুস্পস্তবক অপর্ণের পরে মহানগর বিএনপি, মুক্তিযোদ্ধা দল, মহিলা দল, যুব দল, স্বেচ্ছাসেবক দল, ড্যাব, এ্যাব, ছাত্র দল, তাঁতী দল, মস্যজীবী দলসহ বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতৃবৃন্দ আলাদা আলাদাভাবে জিয়াউর রহমানের কবরে পুস্পস্তবক অপর্ণ করে।