বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, দেশের শিক্ষাব্যবস্থা নি¤œমানের জন্য আমলাতন্ত্র ও রাজনীতিবিদরা দায়ী। গতকাল সোমবার দুপুরে কাকরাইলের ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটের মুক্তিযোদ্ধা মিলনায়তনে ‘বিশ্ববিদ্যালয় পরিক্রমা’ মাসিক ম্যাগাজিনের উদ্যোগে এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ প্রাপ্ত ছাত্র-ছাত্রীদের সংবর্ধনায় আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি একথা বলেন। পরে বিএনপি মহাসচিব শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেন ক্রেস্ট ও সনদপত্র।
মির্জা ফখরুল বলেন, ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পরে রাজনীতিবিদরা ঐক্য হারিয়ে ফেলছেন। বর্তমানে এত বড় একটা অভ্যুত্থানের পরে দেশটাকে আবার সুন্দর করার, গড়ে তোলার এত বড় একটা সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু আমরা যখন চারদিকে দেখছি আমাদের রাজনীতিবিদরা ঐক্য হারিয়ে ফেলছেন, অনেকে চলে যাচ্ছেন। চারদিকে দেখছি যে, একটা অনৈক্যের সুর। তখন আমরা অনেকেই হতাশ হচ্ছি। তিনি বলেন, আমাদের দুর্ভাগ্য যে, আমাদের দেশের শিক্ষাব্যবস্থা সেইরকম তো নয়ই, বরং অত্যন্ত নি¤œমানের। এর জন্য দায়ী রাজনীতিবিদরাই, এর জন্য দায়ী আমরাই, এর জন্য দায়ী আমাদের আমলাতন্ত্র।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, এখানে শিক্ষার ওপরে খুব কম গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। কেউ বিএ পাস করে, এমএ পাস করে চাঁদপুরের গ্রাম থেকে অথবা ঠাকুরগাঁওয়ের গ্রাম থেকে, সে ঘুরে বেড়ায়। কোনো কাজ পায় না। কারণ বিএ পাস-এমএ পাসকে চাকরি দিতে পারেন না। কিন্তু সে যদি বিএসসি পাস করতো অথবা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে একটা ডিপ্লোমা নিতে পারতো ইলেকট্রিসিটির ওপরে অথবা সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ওপরে অথবা অন্য বিষয়ের ওপর তাহলে কিন্তু তার চাকরি কেউ আটকাতে পারতো না। এই যে নীতির ব্যাপারটা এখানেই রাজনীতিবিদদের ব্যর্থতা।
মির্জা ফখরুল বলেন, যদি আমরা শুধু অতি মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য উচ্চশিক্ষা এবং আমাদের বেশিরভাগ সাধারণ শিক্ষার্থীর জন্য আমরা যদি ভোকেশনাল অ্যান্ড টেকনিক্যাল ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করতে পারতাম তাহলে আমরা সবচেয়ে লাভবান হতে পারতাম।আজকে কারিগরি শিক্ষার ব্যবস্থা নেই, তার কোনো ইনস্টিটিউট নেই। ভোকেশনাল সেন্টারগুলো নেই। আমরা এগুলো তৈরি করি না। আমরা বিএ পাস, এমএ পাস তৈরি করছি। তাহলে এই তরুণরা বিকশিত হবে কীভাবে?
মির্জা ফখরুল বলেন, ওদের (জেন-জি) চিন্তা, ওদের ভাবনা এবং আমাদের চিন্তা-ভাবনার মধ্যে আকাশ-পাতাল তফাৎ।কারণ বয়স, প্রজন্মের যে পার্থক্য এটা অস্বীকার করার তো উপায় নেই। তিনি বলেন, রাশেদা বেগম হীরা যখন প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সঙ্গে হিজবুত বাহারে সমুদ্র ভবনে গিয়েছিলেন এবং তাকে সমুদ্র সম্পর্কে জানানো হয়েছে সেখানে। তখনকার সময় আর এখনকার সময় তো এক নয়। এখন ওরা ওই যে ছোট্ট সেট (মোবাইল সেট) সেই সেটের মধ্যে গোটা পৃথিবীকে পেয়ে যায়। ওরা অনেকেই আমাদের চেয়ে অনেক বেশি জানে- এটা আমাদের বুঝতে হবে।
তিনি আরও বলেন, এই জানাটা, এটাকে ব্যবহার করাটা- এটা কিন্তু সুনির্দিষ্ট মঙ্গল খাতে যেতে হবে মঙ্গলের জন্য, ধ্বংসের জন্য নয়। আজকে গোটা পৃথিবীতে কিন্তু অস্থিরতা। আমরা যদি মানব কল্যাণে কাজ করি, সব মিলিয়ে আমরা যদি সুন্দর পৃথিবী তৈরির জন্য কাজ করি সবাই মিলে তাহলেই আমরা সেটাকে সুন্দর করে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবো। তোমাদের জন্য আমাদের দোয়া, তোমাদের জন্য আমাদের সার্বক্ষণিক প্রার্থনা। আল্লাহতাআলা তোমাদের যেন সঠিকভাবে মানুষ হওয়ার মতো তৈরি করেন। একটা দেশে এই মানুষ হওয়াটাই সবচেয়ে বড় কাজ।
বিএনপির প্রশিক্ষণবিষয়ক সম্পাদক রাশেদা বেগম হীরার সভাপতিত্বে বিশ্ববিদ্যালয় পরিক্রমার ব্যবস্থাপনা সম্পাদক মোবারক হোসেনের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির চেয়ারম্যান মো. সবুর খান, বিএনপির সমাজ কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক কামরুজ্জামান রতন, বিশ্ববিদ্যালয় পরিক্রমার প্রধান সম্পাদক হারুন অর রশিদ, শিক্ষাবিদ এম এ সাজ্জাদ, জমিরুল আকতার, ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটের আহ্বায়ক কবীর হোসেন, সদস্য সচিব কাজী শওকত হোসেন, ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশনের ঢাকা মহানগর উত্তরের অধ্যাপক সরকার মাহবুব আহমেদ শামীম, মুন্সিগঞ্জ বিএনপির সদস্য মোশাররফ হোসেন পুস্তিসহ কৃতি শিক্ষার্থীরা বক্তব্য রাখেন।
বিএনপিতে যোগদান : এদিকে গতকাল গুলশানে চেয়ারপার্সনের কার্যালয়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের বিশিষ্ট নেতা সোমনাথ দে, কপিল কৃষ্ণ ম-ল ও সমেন সাহার নেতৃত্বে ৫০ জন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের হাতে ফুল দিয়ে বিএনপিতে যোগদান করেন। এসময় তিনি বলেন, আমরা কোনো বিভাজনে বিশ্বাসী নই, সব ধর্মের মানুষকে সঙ্গী করে অসাম্প্রদায়িক দেশ গড়ে তোলাই বিএনপির দর্শন।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমাদের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ২০১৬ সালেই রেইনবো স্টেটের বিষয়ে বলেছেন। যেখানে সব ধর্ম, মত ও পেশার মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা হবে। বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের আদর্শ নিয়েই আমরা সবাইকে নিয়ে এগিয়ে যেতে চাই। তিনি বলেন, দেশে অনেক বিভাজন-ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি করা হয়েছে। রাষ্ট্র কাঠামো ভেঙে ফেলেছে আওয়ামী লীগ সরকার। কিন্তু মানুষ প্রতিশোধ ও প্রতিহিংসার চিত্র দেখতে চায় না, ঐক্যের রাজনীতি সৃষ্টি করাই মূল কথা।
এ সময় সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি আরও বলেন, সংখ্যালঘুদের সঙ্গে বিএনপি আছে, ভবিষ্যতেও থাকবে।