“জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শ্রমজীবী মানুষের ভূমিকা অনস্বীকার্য” দাবি করে বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি ও বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর সাবেক এমপি অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেন, শ্রমজীবী মানুষকে উপেক্ষা করে কোনো দেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে পারে না। বাংলাদেশের ইতিহাসে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধসহ পরবর্তী প্রতিটি গণতান্ত্রিক আন্দোলন সংগ্রামে শ্রমজীবী মানুষের রক্ত ও ঘামের দাগ লেগে আছে। তাদের অবদান অস্বীকারের সুযোগ নেই। সর্বশেষ চব্বিশের ছাত্র-জনতার আন্দোলনে রিকশা-ভ্যান-ঠেলাওয়ালা, গার্মেন্ট শ্রমিক, পরিবহন শ্রমিকসহ সকল শ্রমজীবী মানুষ অংশগ্রহন করেছে। তাদের অনেকে এ আন্দোলনে শহীদ হয়েছে এবং বহু আহত-পঙ্গুত্ববরণকারী জুলাই যোদ্ধা রয়েছেন। রাষ্ট্র সংস্কারে শ্রমিকদের সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়েই “জুলাই অভ্যুত্থানের আকাক্সক্ষার বৈষম্যহীন নতুন বাংলাদেশ গড়তে শ্রম সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বাস্তবানে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে”।
গতকাল শনিবার বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশ আয়োজিত ‘শ্রম সংস্কার কমিশনের সুপারশি বাস্তবায়ন’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। এসময় তিনি আরও বলেন, কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়ন না হলে শ্রম সংস্কারের জন্য কমিশনের নানা আয়োজন, সময় ও শ্রম সবই অনর্থক। রাষ্ট্র সংস্কারের জন্য অবশ্যই কমিশনের সুপারিশ বিবেচনায় নিতে হবে এবং বাস্তবায়ন করতে হবে। শ্রমিকের অধিকার প্রশ্নে সকল শ্রমিক সংগঠনকে ও শ্রমজীবী মানুষকে ঐক্যবদ্ধ ভুমিকা রাখতে হবে। শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেনের সভাপতি ও সাবেক এমপি আ.ন.ম শামসুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভার প্রধান আলোচক শ্রম সংস্কার কমিশন প্রধান ও বিলস'র নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ, শ্রম সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নের দাবিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করায় বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, কমিশনের কাজে সর্বাত্মক সহযোগিতা করেছিল শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন। তিনি বলেন, সমাজের উঁচু শ্রেণির মানুষ ক্ষমতাসীনদের প্রভাবে দায় মুক্তির সুযোগ লাভের কারণে নিচু শ্রেণির মানুষ অর্থ্যাৎ শ্রমজীবীরা শোষিত হচ্ছে। এই শোষণ থেকে মুক্তির জন্য সবার আগে আমাদেরকে নৈতিক মূলবোধ ধারণ করতে হবে। তিনি আরও বলেন, সকল শ্রমিকের স্বীকৃতি, নিরাপত্তা ও জীবনমান উন্নয়নে বৈষম্য দূর করতে হবে। শ্রমিকদের পরিচয় নিশ্চিত না করায় করোনা কালীন সরকারি সহায়তার ৫৭ শতাংশ শ্রমিকের কাছে পৌঁছানো যায়নি। কমিশন সার্বিক দিক মূল্যায়ন করে একটি সার্বজনীন শ্রমনীতির সুপারিশ করেছে। একটি ন্যায় ভিত্তিক সমাজ গড়ে তুলতে হলে শ্রমজীবী মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। একজন ব্যক্তিগত গাড়িচালক বা গৃহকর্মীর চাকুরির একদিনেরও নিশ্চিয়তা নাই। একজন গৃহকর্মীর বেতন নির্ধারিত হয় পাশের বাসার ভাবি তার গৃহকর্মীকে কত দেয় তার উপর। ব্যক্তিগত গাড়িচালকের বেতন নির্ধারিত হয় মালিকের আত্মীয় তার ড্রাইভারকে কত টাকা দেয় তার উপর। শ্রমিক অপরাধ করলে তাকে শাস্তি দেওয়া যায় কিন্তু তার জীবীকার উপকরণ ধ্বংস বা নষ্ট করার নোংরামি ও অন্যায্য আচরণ বন্ধ করতে হবে। শ্রম সংস্কার কমিশনের সুপারিশ কাগজে দলিল হিসেবে রেখে না দিয়ে সুপারিশ বাস্তবায়নের দাবিতে শ্রমিক সংগঠন গুলোর তৎপরতা অব্যাহত রাখতে আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, কমিশনের কাজ কেবল সুপারিশ করা, সুপারিশ বাস্তবায়ন করা সরকারের কাজ। আর সরকার থেকে কাজ বুঝে নেওয়া জনগণের দায়িত্ব।
শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট আতিকুর রহমানের পরিচালনায় রাজধানীর ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনীয়ার্স মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন শ্রম সংস্কার কমিশনের সদস্য ও বাংলাদেশ লেবার ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাকিল আখতার চৌধুরী, শ্রম সংস্কার কমিশনের সদস্য বাংলাদেশ লেবার র্কোর্ট বার এ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট এ.কে.এম নাসিম। বক্তরা বলেন, শ্রম সংস্কার কমিশন মালিক-শ্রমিকসহ অংশীজনদের সঙ্গে মতবিনিময় করে বিভিন্ন সমস্যা চিহ্নিত করেছে এবং চিহ্নিত সমস্যা গুলো সমাধানের করণীয় বিষয়ে সুপারিশ জানিয়েছে। সরকার কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়ন করলে শ্রম সেক্টরের সমস্যা সমাধান সম্ভব ও সহজ হবে।
সভায় আরো বক্তব্য রাখেন শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি অধ্যাপক হারুনুর রশিদ খান, লস্কর মো. তসলিম, কবির আহমেদ, মজিবুর রহমান ভূঁইয়া, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের সহ-সভাপতি আবুল কালাম আজাদ, বাংলাদেশ গার্মেন্টস এন্ড ইন্ডাষ্ট্রিয়াল শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ও টিসিসি সদস্য বাবুল আখতার, বাংলাদেশ শ্রমিক সংহতি ফেডারেশনের সভাপতি ও টিটিসি সদস্য রুহুল আমিন, বাংলাদেশ প্রগতিশীল গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সহ-সভাপতি শাহিদা আক্তার, সাধারণ সম্পাদক কামরুন্নাহার, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের মহিলা সভানেত্রী ফেরদৌসী বেগম, বাংলাদেশ বিপ্লবী গার্মেন্টস শ্রমিক ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের সভাপতি সালাউদ্দিন স্বপন, বাংলাদেশ সংযুক্ত গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক রাশেদুল আলম রাজু , জাতীয় শ্রমিক শক্তির আহ্বায়ক মাজহারুল ইসলাম, বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সহ-সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আলমগীর হোসাইন, কেন্দ্রীয় সহ-সাধারণ সম্পাদক ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সভাপতি আব্দুস সালাম, কেন্দ্রীয় সহ-সাধারণ সম্পাদক ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সভাপতি মহিব্বুল্লাহ, কেন্দ্রীয় সহ-সাধারণ সম্পাদক ও চট্টগ্রাম মহানগরী সভাপতি এস. এম লুৎফর রহমান, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও রেলওয়ে এমপ্লয়ীজলীগের সভাপতি আক্তারুজ্জামান, কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক ও প্রগতিশীল নির্মাণ শ্রমিক ফেডারেশনের সহ-সভাপতি নুরুল আমিন, কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়ন সম্পাদক ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক মো. সোহেল রানা মিঠু প্রমুখ।
সভাপতির বক্তব্যে আ.ন.ম শামসুল ইসলাম বলেন, দেশের বিদ্যামন শ্রম আইনে প্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের অধিকার কাগজে-কলমে লিখা হলেও অপ্রাতিষ্ঠানিক, কৃষি, গৃহকর্মী ও প্রবাসি শ্রমিকদের কোন অধিকার আজ পর্যন্ত স্বীকৃতি পয়নি। সকল পেশার শ্রমিকের সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি লাভ এবং শ্রমিকের মৌলিক ও মানবিক অধিকার সমূহ প্রাপ্তির আইনি সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য শ্রম সংস্কার কমিশনের সুপারিশের আলোকে শ্রম আইনের প্রয়োজনীয় সংশোধনী দ্রুত বাস্তবায়ন ও কার্যকর করত হবে। চব্বিশের জুলাইয়ের রক্ত ঝরা ছাত্র শ্রমিক জনতার গণঅভ্যুত্থানের মূল আকাক্সক্ষা হচ্ছে একটি বৈষ্যম্যহীন ন্যায় ও ইনসাফ ভিত্তিক রাষ্ট্র গঠনের মাধ্যমে বাংলাদেশকে একটি মর্যাদাপূর্ণ আসনে প্রতিষ্ঠা করা। এ জনআকাক্সক্ষাকে ধারণ করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার শ্রমিকের অধিকার ও কল্যাণ নিশ্চিত করতে শ্রম সংস্কার কমিশনের সুপারিশ সমূহ জরুরি ভিত্তিতে বাস্তবায়ন ও প্রয়োজনীয় শ্রম সংস্কারের দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করবে এটাই জাতির প্রত্যাশা।
সভায় বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সহস্রাধিক নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন। প্রেসবিজ্ঞপ্তি।