রেজাউল করিম রাসেল কুমিল্লা অফিস
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেশের অন্যতম প্রাচীন জেলা কুমিল্লায় বইছে নির্বাচনী হাওয়া। ১৭টি উপজেলা, ১৮টি থানা , ৮টি পৌরসভা ও ১টি সিটি কর্পোরেশন নিয়ে এ জেলা গঠিত। ২০০১ সাল পর্যন্ত এ জেলায় সংসদীয় আসন ১২টি থাকলেও ২০০৮ সালে একটি কমিয়ে দেশের জেলার সংসদীয় আসন করা হয় ১১টি।
১১টি আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ৪৯লক্ষ ৩১হাজার ৫শত ৬৪ জন।এর মধ্যে পুরুষ ভোটার সংখ্যা ২৫ লক্ষ ৩৬ হাজার ৬শত ৪৮ জন। মহিলা ভোটার সংখ্যা ২৩ লক্ষ ৯৪ হাজার ৮শত ৩৩জন। তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার সংখ্যা ৩৩জন।
কুমিল্লা জেলা মূলত জাতীয়তাবাদী ও ইসলামপন্থি অধ্যুষিত। রাজনৈতিকভাবে ‘কুমিল্লা উত্তর’ ও ‘কুমিল্লা দক্ষিণ’ জেলায় বিভক্ত। এর মধ্যে কুমিল্লা উত্তর জেলায় ৫টি ও দক্ষিণ জেলায় ৬টি আসন রয়েছে।
এবার কুমিল্লায় রাজনৈতিক সমীকরণ ভিন্ন ভিন্ন রূপ নিচ্ছে। তবে সামগ্রিকভাবে দেখা যাচ্ছেথ সংগঠিত প্রস্তুতি ও মাঠপর্যায়ের সক্রিয়তায় জামায়াতে ইসলামী এগিয়ে প্রাথমিক মনোনয়ন ঘিরে বিভক্তিতে বিএনপি প্রতিটি আসনেই চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ছে।
কুমিল্লার ১১টি সংসদীয় আসনে জামায়াতে ইসলামী ইতোমধ্যে প্রার্থিতা চূড়ান্ত করে পরিকল্পিতভাবে নির্বাচনী কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। দলটির নেতাকর্মীরা নিয়মিত পথসভা, উঠান বৈঠক, লিফলেট বিতরণ ও বাড়ি বাড়ি গণসংযোগ করছেন। ভোটারদের সঙ্গে সরাসরি মতবিনিময়ের মাধ্যমে তারা দলীয় বার্তা ও নির্বাচনী অঙ্গীকার তুলে ধরছেন। এতে শহর ও গ্রাম উভয় এলাকাতেই জামায়াতের উপস্থিতি দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে।
অন্যদিকে বিএনপিতে প্রাথমিক মনোনয়ন ঘোষণার পর থেকেই শুরু হয়েছে অভ্যন্তরীণ কোন্দল। একাধিক আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশী নেতাদের মধ্যে অসন্তোষ প্রকাশ্যে এসেছে। মনোনয়ন বঞ্চিত অংশের নেতাকর্মীরা অনেক জায়গায় নিস্ক্রিয় হয়ে পড়ছেন, কোথাও কোথাও আলাদা গ্রুপিংও তৈরি হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এর ফলে দলীয়ভাবে সমন্বিত প্রচার কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
কুমিল্লা-১ (দাউদকান্দি-মেঘনা)
এই আসনে জামায়াতে ইসলামী নিয়মিত গণসংযোগ, উঠান বৈঠক ও ধর্মীয়সামাজিক প্রভাব কাজে লাগিয়ে শক্ত অবস্থান তৈরি করছে। স্থানীয়ভাবে ব্যাপক পরিচিত হওয়ায় ভোটারদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগের কারণে আস্থা অর্জন করতে পেরেছেন জামায়াতে ইসলামী মনোনিত প্রার্থী কুমিল্লা উত্তর জেলা জামায়াতের কর্মপরিষদ সদস্য ও দাউদকান্দি উপজেলা আমীর এবং সাবেক ইসলামী ছাত্রশিবির কুমিল্লা জেলা উত্তর ও দক্ষিণ সভাপতি মো. মনিরুজ্জামান বাহলুল।
অন্যদিকে এই আসনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের নেতৃত্বে আসনটি বিএনপির দখলে ছিল। দীর্ঘদিন তিনি অসুস্থ থাকায় এলাকায় আসতে পারছেন না।
এই আসনে ভোটাররা ব্যক্তিগত যোগাযোগকে বিশেষ গুরুত্ব দেন। অতীতে ড. খন্দকার মোশারফ সরাসরি উপস্থিতি ও ব্যক্তিগত গ্রহণযোগ্যতা তার বড় শক্তি ছিল। কিন্তু বর্তমান বাস্তবতায় নিয়মিত গণসংযোগ না থাকায় সেই সুবিধা ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়ছে। বিশেষ করে তরুণ ভোটার ও নতুন ভোটারদের সঙ্গে যোগাযোগ না থাকায় তার অবস্থান প্রতিনিয়ত দুর্বল হয়ে পড়ছে।
ড. খন্দকার মোশারফ এর ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তা থাকা সত্ত্বেও বর্তমান অনুপস্থিতি এই আসনে একটি বড় রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছে।
এই আসনে এবার চমক দেখাতে পারে জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী।
তবে ইসলামী আন্দোলনের কুমিল্লা জেলা পশ্চিমের সাবেক সভাপতি মাওলানা বশির আহমেদকে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে। তিনিও বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে ভোটারদের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা চালাচ্ছেন
এই আসনটি দাউদকান্দি ও মেঘনা ২টি উপজেলা নিয়ে গঠিত। দাউদকান্দি উপজেলা ১টি পৌরসভা ১৫ টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত।মেঘনা উপজেলা ৮টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত।এই আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ৪ লক্ষ ৩৩ হাজার ৯৩৫ ভোট।
কুমিল্লা-২ (হোমনা-তিতাস)
এই আসনে জামায়াত তুলনামূলক নীরব কিন্তু ধারাবাহিক সাংগঠনিক কাজ করছে। তৃণমূল পর্যায়ে নেতাকর্মীদের সক্রিয়তা চোখে পড়ার মতো।
বিএনপিতে প্রাথমিক মনোনয়ন ঘোষণার পর অসন্তোষ বাড়ে। একটি অংশ প্রকাশ্যে প্রচার থেকে সরে দাঁড়ানোয় মাঠ কার্যক্রম দুর্বল হয়ে পড়েছে। ফলে ভোটের মাঠে জামায়াত ধীরে ধীরে সুবিধা নিচ্ছে।
এই আসনে বিএনপি মনোনয়ন পেয়েছেন অধ্যাপক সেলিম ভুইয়া।তিনি মেঘনা উপজেলার বাসিন্দা হওয়া
তাকে কেউ মেনে নিতে পারছে না। তাই মনোনয়ন বঞ্চিতরা এক জোট হয়েছেন। দলিয় গ্রুপিং কারণে এই ভরাডুবি হতে পারে বিএনপি।
তবে এই আসনে এবার চমক দেখাবে জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সহকারী সেক্রেটারি এবং হোমনা-মেঘনা উন্নয়ন ফোরামের চেয়ারম্যান নাজিম উদ্দিন মোল্লা। প্রচারে এগিয়ে আছেন তিনি। ইতিমধ্যে কেন্দ্র কমিটি, উঠান বৈঠক, বিভিন্ন সামাজিক কার্যক্রমে ব্যাপক তৎপর জামায়াতে ইসলামী। এই আসনে বিজয় নিশ্চিত করতে মরিয়া হয়ে মাঠ চষে বেড়িয়েছেন জামায়াত কর্মীরা।
এদিকে ইসলামী আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম মহাসচিব ইঞ্জিনিয়ার আশরাফুল আলমও মাঠে কাজ করছেন।
এই আসনে হোমনা ও তিতাস ২টি উপজেলা। হোমনা ১টি পৌরসভা ও ৯টি ইউনিয়ন পরিষদ নিয়ে গঠিত। তিতাস উপজেলা ৯টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত। এই ২ উপজেলায় মোট ভোটার ৩ লক্ষ ৭১হাজার ১শত ৬৩জন।
উল্লেখ, আসনটি একসময় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এম কে আনোয়ারের আসন ছিল।
কুমিল্লা-৩ (মুরাদনগর)
এই আসনে ভোটের হাওয়া স্পষ্টভাবে পরিবর্তনের দিকে ঝুঁকছে। দীর্ঘদিন ধরে একই নেতৃত্বের পুনরাবৃত্তিতে ভোটারদের মধ্যে তৈরি হয়েছে গভীর রাজনৈতিক ক্লান্তি। বিএনপির প্রার্থী কেন্দ্রীয় বিএনপি ভাইস-চেয়ারম্যান সাবেক মন্ত্রী কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসেইন কায়কোবাদ পাঁচবারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য হলেও বয়সজনিত সীমাবদ্ধতা এবং তার দীর্ঘ মেয়াদে দৃশ্যমান উন্নয়নের অভাব এখন বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
স্থানীয় ভোটারদের অভিযোগ, একাধিক মেয়াদে এমপি থাকা সত্ত্বেও মুরাদনগরে উল্লেখযোগ্য অবকাঠামোগত উন্নয়ন, কর্মসংস্থান বা টেকসই সামাজিক পরিবর্তন হয়নি। রাস্তাঘাট, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও স্বাস্থ্যসেবার মান নিয়ে অসন্তোষ রয়েছে তৃণমূল পর্যায়ে।
কায়কোবাদ আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিদেশে পালিয়েছিলেন। দিনবদলের পর ফিরে এসে নানা সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও মানবিক কর্মসূচি নিয়ে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন।
আসনটিতে জামায়াতে ইসলামী ও বেশ তৎপর। দলটির কুমিল্লা উত্তর জেলা কর্মপরিষদ সদস্য ইউসুফ হাকিম সোহেল এলাকায় পরিচিত মুখ। ২০০৯ সালে তিনি মুরাদনগর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন। এবার তিনি এই আসনে জামায়াত মনোনিত সংসদ সদস্য প্রার্থী। ঘোষনার পর থেকে কেন্দ্র ভিত্তিক গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন।ইতি মধ্য তিনি এলাকায় তরুণ ভোটারের মাঝে স্থান করে নিয়েছেন।
কুমিল্লা-৩ আসনে বিএনপি এবার যে কঠিন পরীক্ষার মুখেতা আর অস্বীকার করার সুযোগ নেই। মুরাদনগর এখন অতীত নয়, নতুন নেতৃত্ব ও নতুন রাজনীতির দিকেই তাকিয়ে আছে।সুষ্ঠ নির্বাচন হলে এই আসনে জামায়াত ইসলামী প্রার্থী চমক দেখাতে পারে।
কুমিল্লার সবচেয়ে বড় উপজেলা মুরাদনগর ২২টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত এই উপজেলা।উপজেলায় মোট ভোটার সংখ্যা ৪ লক্ষ ৯৫ হাজার ১৩২ জন।
কুমিল্লা-৪ (দেবীদ্বার)
আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার ভারসাম্য একদিকে হেলে পড়ছে। সংগঠিত প্রচার, ধারাবাহিক গণসংযোগ ও একক নেতৃত্বের কারণে এ আসনে জামায়াতে প্রার্থী কুমিল্লা উত্তর জেলা সেক্রেটারি ও সাবেক উপজেলা ভাইস-চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম শহিদ এই মুহূর্তে প্রতিযোগিতায় এগিয়ে রয়েছেন বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।
এই আসনে প্রার্থী আগেভাগেই মাঠে সক্রিয় ছিলেন,নিয়মিত উঠান বৈঠক ও বাড়ি বাড়ি সংযোগ
তৃণমূল কর্মীদের ঐক্য ও শৃঙ্খলা,এই তিনটি কারণে জামায়াত ভোটারদের মনে অবস্থান তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে।
এই আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছেন সাবেক এমপি মঞ্জুরুল আহসান মুন্সি। মনোনয়ন পাওয়ায় নিজে কিছু নেতাকর্মী গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন।
মনোনয়ন বঞ্চিত হয়ে কুমিল্লা উত্তর জেলা বিএনপির সদস্য সচিব এএফএম তারেক মুন্সির নেতৃত্বাধীন একটি অংশ আগে মাঠে সক্রিয় থাকলেও, বর্তমানে ভোটের মাঠে নামছে না তার অনুসারী নেতাকর্মীরা।
মনোনয়ন বঞ্চিতকে কেন্দ্র করে বিএনপিতে যে গ্রুপিং তৈরি হয়েছে, তা নির্বাচনী ফলাফলের জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি।
এনসিপির প্রার্থী দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ।দলীয়ভাবে তাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়।
দেবিদ্বার আসনে এবারের নির্বাচন ব্যক্তি নয়, বরং সংগঠনের পরীক্ষায় পরিণত হয়েছে। বিভক্তি যদি অব্যাহত থাকে, তাহলে এই আসনে ফলাফল জামায়াতের দিকেই যেতে পারে।
কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়ক বুকে আগলে রেখেছে দেবীদ্বার উপজেলা। ১টি পৌরসভা ও ১৫টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত দেবীদ্ধার উপজেলা।মোট ভোটার ৪লক্ষ ৬হাজার ১শত ১০জন।
কুমিল্লা-৫ (বুড়িচং-ব্রাহ্মণপাড়া)
এই আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছেন কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক সদস্য সচিব ও ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি হাজী জসিম উদ্দিন। এই মনোনয়নকে কেন্দ্র করে দলের ভেতরে দীর্ঘদিনের কোন্দল এখনো কাটেনি। একাধিক গ্রুপ মাঠে নিষ্ক্রিয় থাকায় বিএনপির প্রচারণা প্রত্যাশিত গতি পাচ্ছে না।এছাড়া প্রার্থীর বিরুদ্ধে রয়েছে নানা অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ। ভোটারদের মধ্যে নেতিবাচক মনোভাব তৈরি হয়েছে।
এই আসনে জামায়াত মনোনীত প্রার্থী কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও সাবেক ছাত্রশিবির কেন্দ্রীয় সভাপতি ড. মোবারক হোসেন। জামায়াতের প্রার্থী হিসেবে সংগঠিত ও ধারাবাহিক প্রচারণা চালাচ্ছেন। তাঁর শিক্ষিত ইমেজ, সাংগঠনিক অভিজ্ঞতা এবং শৃঙ্খলাবদ্ধ কর্মী বাহিনী এই আসনে জামায়াতকে দৃশ্যমানভাবে এগিয়ে রাখছে।
সব মিলিয়ে কুমিল্লা-৫ আসনে বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও প্রার্থীর ইমেজ সংকট বড় ঝুঁকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিপরীতে জামায়াতের প্রচারণা ভোটের মাঠে শক্ত অবস্থান তৈরি করছে।
জেলার বুড়িচং ও ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা নিয়ে গঠিত এ আসনটিতে মোট ভোটার সংখ্যা ৪ ক্ষ ৭০ হাজর ৯৯৩ জন।
কুমিল্লা: ৬ (সদর-সদর দক্ষিণ)
জেলার প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক কেন্দ্র কুমিল্লা-৬ আসনে মোট ভোটার ৬ লাখ ৩১ হাজার ৮৮৬ জন। এর মধ্যে কুমিল্লা সদর উপজেলায় ২ লাখ ৪০ হাজার ৮০৬ জন, কুমিল্লা সিটি করপোরেশন এলাকায় ২ লাখ ৫২ হাজার ৩১৮ জন, কুমিল্লা সেনানিবাস এলাকায় ৪ হাজার ৭৭ জন এবং সদর দক্ষিণ উপজেলায় ১ লাখ ৩৪ হাজার ৬৮৫ জন ভোটার রয়েছে। বিপুল নগরভিত্তিক ভোটারের কারণে এই আসন বরাবরই বিএনপির শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত।
এই আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছেন মনিরুল হক চৌধুরী। কিন্তু মনোনয়ন বঞ্চিত হাজী ইয়াছিন ইতোমধ্যে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছেন। প্রয়োজনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে নির্বাচন করবে বলে জানা যায়।
এই আসনে সর্বশক্তি দিয়ে মাঠে নেমেছে জামায়াতে ইসলামী। মহানগরী জামায়াতের আমীর কাজী দ্বীন মোহাম্মদকে প্রার্থী ঘোষণা করেছে দলটি।
ক্লিন ইমেজ, সৎ ও গ্রহণযোগ্য প্রার্থী হিসেবে জামায়াতের দাঁড়িপাল্লা প্রতীকের প্রার্থী কুমিল্লা-৬ আসনের ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের কাছে জনপ্রিয় মানুষ হিসাবে ইতোমধ্যে স্থান করে নিয়েছে।
সিটি এলাকা থেকে শুরু করে ইউনিয়ন, ওয়ার্ড এমনকি গ্রাম পর্যায়ে নেতাকর্মীরা গণসংযোগ উঠান বৈঠকে সরাসরি গণসংযোগ করছেন তিনি। এরই মধ্যে নির্বাচন পরিচালনা কমিটি গঠন করা সম্পন্ন করেছে। এ আসন থেকে অতীতে জামায়াত প্রার্থী হয়ে সংসদে যাননি। জামায়াত মনোনীত প্রার্থীকে সংসদে পাঠাতে ব্যাপকহারে জনসংযোগ করছেন জামায়াত কর্মীরা। প্রতিদিন কাক ডাকা ভোর থেকে রাত পর্যন্ত চলে নির্বাচনী সভা সমাবেশ। চালাচ্ছে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কার্যক্রম। বিভিন্ন এলাকা ঘুরে মানুষকে আকৃষ্ট করার চেষ্টা করছেন তারা। কুমিল্লা নগরীর অধিকাংশই স্কুল কলেজ মাদরাসা হসপিটাল সামাজিক প্রতিষ্ঠান জামায়াত নেতৃবৃন্দ দ্বারা পরিচালিত হওয়ায় সাধারণ মানুষের মাঝে গ্রহণযোগ্যতা বেশি।
কুমিল্লা-৬ আসনে লড়াই এখন আর জনপ্রিয়তার নয়, বরং ঐক্যের। বিএনপি যদি শেষ মুহূর্তেও অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব সামাল দিতে ব্যর্থ হয়, তাহলে শক্ত ভোট ব্যাংক থাকা সত্ত্বেও এই গুরুত্বপূর্ণ আসনে তাদের বিজয় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়ে উঠতে পারে—এবং সেই সুযোগটাই কৌশলে কাজে লাগাতে প্রস্তুুত জামায়াতে ইসলামী। তবে এই নির্বাচনে ব্যাপক গণসংযোগ করছেন এবি পার্টির মিয়া মোহাম্মদ তৌফিক।
কুমিল্লা-৭ (চান্দিনা)
আসন্ন জাতীয় নির্বাচন ঘিরে কুমিল্লা-৭ (চান্দিনা) আসনে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ক্রমেই ঘনীভূত হচ্ছে। এখনো এই আসনে বিএনপি আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো প্রার্থী ঘোষণা না করায় মাঠপর্যায়ে দলটির অবস্থান দুর্বল হয়ে পড়ছে। স্থানীয় রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রচলিত ধারণা, জোটসঙ্গী এলডিপির মহাসচিব রেদোয়ান আহমেদের জন্যই আসনটিতে বিএনপি এখনো প্রার্থী চূড়ান্ত করেনি। এই জোট-নির্ভর সিদ্ধান্তে স্থানীয় বিএনপির ভেতরে স্পষ্ট অসন্তোষ দেখা দিয়েছে।
বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে রাজনীতির মাঠে সক্রিয় রয়েছেন আতিকুল আলম ওরফে শাওন। তিনি এলাকায় নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন এবং নেতাকর্মীদের সঙ্গে বৈঠক করছেন। তবে দলীয় মনোনয়ন না পেলে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেবেনÑ এমন ঘোষণা স্থানীয় রাজনীতিতে নতুন উত্তেজনা তৈরি করেছে। শাওনের স্বতন্ত্র করলে বিএনপির ভোট ব্যাংকে বড় ধরনের বিভাজন সৃষ্টি করতে পারে।
জামায়াতে ইসলামীর মনোনীত প্রার্থী মাওলানা মোশাররফ হোসেন ইতোমধ্যে সংগঠিতভাবে মাঠে নেমেছেন। নিয়মিত উঠান বৈঠক, মতবিনিময় ও বাড়ি বাড়ি গণসংযোগের মাধ্যমে তিনি চান্দিনায় শক্ত সাংগঠনিক অবস্থান তৈরি করছেন।
একই সঙ্গে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী মুফতি এহতেশামুল হক কাসেমীও মাঠে সক্রিয় রয়েছেন। নির্দিষ্ট ধর্মভিত্তিক ভোট ব্যাংক ও ব্যক্তিগত গ্রহণযোগ্যতার ওপর ভর করে তিনি আলাদা একটি অবস্থান গড়ে তুলছেন, যা ভোটের সমীকরণকে আরও জটিল করে তুলছে।
চান্দিনা উপজেলা ১টি পৌরসভা ও ১৩টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত। এই উপজেলা মোট ভোটার সংখ্যা ৩ লক্ষ ২৫ হাজার ৪৮৪ জন। এরমধ্য পুরুষ ১ লক্ষ ৬৬ হাজার ৯শত। মহিলা ১ লক্ষ ৫৮ হাজার ৫৭৮ জন।
কুমিল্লা-৮ (বরুড়া) আসনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পেয়েছেন কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির সভাপতি জাকারিয়া তাহের সুমন। তবে স্থানীয় পর্যায়ে দলীয় নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে নানা অপরাধ ও অনিয়মে জড়িত থাকার অভিযোগে সাধারণ ভোটারদের আগ্রহ কমে গেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এর প্রভাব পড়েছে মাঠের রাজনীতিতেÑ বিএনপির গণসংযোগ সীমিত, প্রচারণায় দৃশ্যমান গতি নেই।
ভোটারদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ দুর্বল থাকায় বিএনপির ঐতিহ্যগত ভোট ব্যাংক পুরোপুরি সক্রিয় হচ্ছে না। স্থানীয়রা বলছেন, নেতৃত্বের প্রতি আস্থা সংকট ও মাঠপর্যায়ের নিস্ক্রিয়তা বিএনপিকে বরুড়ায় কোণঠাসা করে ফেলছে।
অন্যদিকে পুরো বরুড়া এলাকা চষে বেড়াচ্ছেন জামায়াতে ইসলামীর মনোনীত প্রার্থী, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ড. অধ্যাপক শফিকুল আলম হেলাল। শিক্ষাবিদ হিসেবে তার পরিচিতি, পরিচ্ছন্ন ইমেজ এবং ধারাবাহিক গণসংযোগ তাকে সাধারণ ভোটারদের কাছে গ্রহণযোগ্য করে তুলেছে। তিনি বরুড়ার প্রতিটি গ্রাম ও পাড়া-মহল্লায় নিয়মিত উঠান বৈঠক ও মতবিনিময়ের মাধ্যমে ভোটারদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করছেন।
স্থানীয়দের মতে, বরুড়াবাসীর জন্য তার প্রতিষ্ঠিত একাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তার পক্ষে বড় ইতিবাচক বার্তা হিসেবে কাজ করছে। উন্নয়ন ও শিক্ষাকে অগ্রাধিকার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি ইতোমধ্যে সাধারণ ভোটারদের মন জয় করতে শুরু করেছে।
এই আসনে বরুড়া উপজেলাটি ১টি পৌরসভা ১৫টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত। এই আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ৩ লক্ষ ৭৭হাজার ১শত ৬০ জন। এর মধ্যে পুরুষ ১ লক্ষ ৯৩ হাজার ৯১৩ জন। মহিলা ভোটার ১ লক্ষ ৮৩ হাজার ২৪২ জন।হিজড়া ভোটার ৫ জন।
কুমিল্লা-৯ (লাকসাম-মনোহরগঞ্জ) সংসদীয় আসনে বিএনপির দীর্ঘদিনের অন্তর্দ্বন্দ্ব ও প্রার্থী মাঠে সক্রিয় না থাকায় ভোটারদের মধ্যে ভিন্ন চিত্র দেখা যাচ্ছে। স্থানীয়দের মতে, বিভক্ত বিএনপির দুর্বল সাংগঠনিক অবস্থার সুযোগ নিয়ে জামায়াতে ইসলামী মনোনীত প্রার্থীকে আপন করে নিচ্ছেন সাধারণ ভোটাররা। ফলে এই আসনে জামায়াত প্রার্থীর গলায় জয়ের মালা ওঠার বাস্তব সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।
এই আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছেন দলের কেন্দ্রীয় কমিটির শিল্প বিষয়ক সম্পাদক এবং লাকসাম উপজেলা বিএনপির সভাপতি আবুল কালাম। তবে মনোনয়ন ঘোষণার পর থেকেই দলটির মধ্যে একাধিক গ্রুপে বিভক্তি প্রকাশ্যে আসে। মনোনয়ন বঞ্চিত হয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন সাবেক সংসদ সদস্য মরহুম কর্নেল (অব.) এম আনোয়ার উল-আজিমের কন্যা সামিরা হোসেন দোলা। মনোনয়ন না পেয়ে তিনি বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে সক্রিয় থাকেন, যা বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দলকে আরও দৃশ্যমান করে তোলে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে এই আসনে বিএনপি অন্তত তিন ভাগে বিভক্ত। একাংশ মনোনীত প্রার্থীর পক্ষে থাকলেও অন্য অংশগুলো নীরব কিংবা বিরূপ অবস্থানে রয়েছে। পাশাপাশি মনোনীত বিএনপি প্রার্থীর নিয়মিত মাঠপর্যায়ের গণসংযোগ ও জনসম্পৃক্ততা তুলনামূলকভাবে কম থাকায় ভোটারদের মধ্যে আগ্রহ সৃষ্টি হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে।
অন্যদিকে, এই আসনে জামায়াতে ইসলামীর মনোনয়ন পেয়েছেন দলের কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি, সাবেক লাকসাম উপজেলা পরিষদের নির্বাচিত ভাইস-চেয়ারম্যান ড. সৈয়দ একেএম সরওয়ার উদ্দিন ছিদ্দিকী। মনোনয়ন ঘোষণার পর থেকেই তিনি লাকসাম ও মনোহরগঞ্জ উপজেলার প্রতিটি এলাকায় সাংগঠনিক কার্যক্রম জোরদার করেছেন।
জামায়াত প্রার্থী সরওয়ার উদ্দিন ছিদ্দিকীর নেতৃত্বে ইতোমধ্যে প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে কমিটি গঠন, উঠান বৈঠক, নির্বাচনী দায়িত্বশীল সমাবেশসহ ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চালানো হয়েছে। নিয়মিত গণসংযোগের মাধ্যমে তিনি সাধারণ মানুষের কাছে নিজের অবস্থান তুলে ধরছেন।
স্থানীয়দের মতে, রাজনীতির বাইরে শিক্ষা ও মানবসেবামূলক কর্মকা-ে তার ভূমিকা তাকে আলাদা পরিচিতি দিয়েছে। লাকসাম এলাকায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতালসহ বিভিন্ন জনকল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠায় তার অবদান রয়েছে। মানবিক মানুষ হিসেবে তার সুনাম ও খ্যাতি এলাকায় ব্যাপক, যা নির্বাচনী মাঠে ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
সব মিলিয়ে বিএনপির অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব, সাংগঠনিক দুর্বলতা ও মাঠে নিস্ক্রিয়তার বিপরীতে জামায়াত প্রার্থীর সুসংগঠিত প্রচার ও জনসম্পৃক্ততা কুমিল্লা-৯ আসনের নির্বাচনী সমীকরণ পাল্টে দিচ্ছে বলে মনে করছেন সচেতন মহল। ভোটের দিন যত এগিয়ে আসছে, ততই এই আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার পাল্লা জামায়াতের দিকেই ভারী হচ্ছে।লাকসাম-মনোহরগঞ্জ ২টি উপজেলা নিয়ে গঠিত কুমিল্লা-৯ নির্বাচনী আসন। লাকসাম উপজেলা ১টি পৌরসভা ও ৮টি ইউনিয়ন এবং মনোহরগঞ্জ উপজেলা ১১টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত। এই আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ৪লক্ষ ৭৩ হাজার ৭৫ জন।
কুমিল্লা-১০ (লালমাই-নাঙ্গলকোট) আসনে বিএনপির ভেতরের দ্বন্দ্ব এখন প্রকাশ্য সংকটে রূপ নিয়েছে। সাবেক এমপি আবদুল গফুর ভুঁইয়াকে মনোনয়ন দেওয়ার পর কেন্দ্রীয় নেতা মোবাশ্বের আলম ভুঁইয়ার সড়ক ও রেললাইন অবরোধে দল কার্যত বিভক্ত। চূড়ান্ত মনোনয়ন না পেলে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা বিএনপির ভোটব্যাংকে বড় ধাক্কার আশঙ্কা তৈরি করেছে।
বিএনপির বিভক্তির কারণে জামায়াতে ইসলামী মনোনিত প্রার্থী কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও সাবেক ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি মাওলানা ইয়াছিন আরাফাত তরুণ প্রার্থী শুরু থেকেই মাঠে সক্রিয়। নিয়মিত উঠান বৈঠক, গণসংযোগ ও সাংগঠনিক প্রস্তুতিতে তিনি লালমাই ও নাঙ্গলকোটে শক্ত অবস্থান গড়ে তুলছেন। ৫ লাখ ২৯ হাজারের বেশি ভোটারের এই আসনে বিএনপির কোন্দল আর জামায়াতের সংগঠিত প্রচারণা মিলিয়ে ফলাফলে বড় চমকের ইঙ্গিত দিচ্চে।
কুমিল্লা-১১ (চৌদ্দগ্রাম)
কথিত আছে, চৌদ্দগ্রামের মাটি, জামায়াতের ঘাঁটি। এই আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ৪ লক্ষ ১৬, হাজার ৭৯৬ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ২লক্ষ ১৩, হাজার ৬৮৩ জন, মহিলা ভোটার ২ লক্ষ ৩১ হাজার ৯জন। তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার ৪ জন।
ভিআইপি আসন হিসেবে পরিচিত। আসন্ন নির্বাচনে এ আসনে হেভিওয়েট প্রার্থী জামায়াতে ইসলামী প্রার্থী দলের নায়েবে আমীর ও ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি সাবেক সংসদ সদস্য ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের। এর আগে তিনি বিএনপির নেতৃত্বাধীন চার দলীয় জোট সরকারের আমলে বিপুল ভোটে এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন। চৌদ্দগ্রাম বিভিন্ন শে্িরণ পেশার ধর্ম বর্ণ সকল মানুষের কাছে একটি নাম ডা. তাহের।স্বাধীনতার পরে চৌদ্দগ্রামে উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন করেছেন তিনি। তাছাড়া চৌদ্দগ্রামে নির্বাচনের জন্য অপেক্ষা কিংবা এমপি না হয়ে ও জনগণের দুর্ভোগ লাগবের জন্য
স্থানীয় উন্নয়নকে অগ্রাধিকার দিয়ে ইতোমধ্যে প্রায় ২০০ কোটি টাকার রাস্তা প্রশস্তকরণ, সংস্কার ও মেরামতসহ নানা প্রকল্প সরকারের কাছে দাখিল করেছেন। বিশাল উন্নয়ন পরিকল্পনায় উপজেলার অধিকাংশ সড়কই অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, চৌদ্দগ্রামের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নতুন ভবন নির্মাণ এবং বহু প্রতিষ্ঠানের এমপিও ভুক্তির জন্যও উদ্যোগ নিয়েছেন তিনি।
তাছাড়া তিনি বৃহত্তর কুমিল্লার মানুষের স্বাস্থ্য সেবায় কুমিল্লা মেডিকেল সেন্টার ও সেন্ট্রাল মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করেন।
জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে চৌদ্দগ্রামের প্রতিটি কেন্দ্র ভিত্তিক নির্বাচনী সমাবেশ, নির্বাচনী দায়িত্বশীল সমাবেশ, পাড়া ভিত্তিক কমিটি, বাড়ি ভিত্তিক কমিটি, বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সাথে মত বিনিময় ও মহিলা সমাবেশ করছেন তিনি। আগামী নির্বাচনে দাঁড়িপাল্লার পক্ষে চৌদ্দগ্রামে এক উৎসব মুখর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে।
অপরদিকে চৌদ্দগ্রাম উপজেলা বিএনপির সভাপতি কামরুল হুদা দলের মনোনয়ন পেয়েছেন। তিনি এলাকা সভা-সমাবেশ ও প্রচার-প্রচারণা অব্যাহত রেখেছেন। ইতোমধ্যে নানারকম বক্তব্য দিয়ে আলোচনায় আছেন তিনি। তবে তাদের পক্ষে এলাকায় প্রচার-প্রচারণা এখনো লক্ষ্য করা যায়নি।
সবমিলিয়ে কুমিল্লার অধিকাংশ আসনেই এখন মূল লড়াই নির্ভর করছে মাঠে থাকা ও সাংগঠনিক ঐক্যের ওপর। জামায়াত আগেভাগে প্রার্থী চূড়ান্ত করে সেই সুবিধা নিচ্ছে। বিপরীতে বিএনপি বিভক্তি নিরসন করে ঐক্যবদ্ধভাবে মাঠে নামতে না পারে, তাহলে কুমিল্লার ভরাডুবির আশঙ্কা তৈরি হতে পারে।