বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, রাজনীতিতে তিনটা মৌলিক জায়গাতে পরিবর্তন না আসা পর্যন্ত জাতি শক্ত হয়ে মজবুত হয়ে দাঁড়াতে পারবে না। তিনটি উপাদান হলো ভিশন, নৈতিকতা এবং জবাবদিহিতা। তিনি বলেন, বাংলাদেশকে মুখে নয় বুকের ভাষায় ভালবাসতে হবে। তিনি যুবকদের ঠান্ডা মাথায় রাজনীতির ময়দানে টিকে থাকারও আহ্বান জানান।

গতকাল সোমবার রাজধানীর একটি হোটেলে বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টি বিডিপি আয়োজিত ইফতার মাহফিলে অংশ নিয়ে দেওয়া বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। ইফতার মাহফিলে সভাপতিত্ব করেন বিডিপির চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আনোয়ারুল ইসলাম। অনুষ্ঠান সঞ্চলনা করেন জেনারেল সেক্রেটারি মো. নিজামুল হক।

ডা. শফিকুর রহমান বলেন, আভিধানিক অর্থে দুই দুইবার স্বাধীনতা লাভের পরেও সত্যিকার অর্থে স্বাধীনতার স্বাদ ভোগ করার সুযোগ হয়নি। তার অনেকগুলো কারণ থাকতে পারে। তার মধ্যে আমার কাছে সবচেয়ে বড় কারণ মনে হয় একটা জাতিকে বিল্ডআপ করার জন্য তিনটা কমপোনেন্ট (উপাদান) লাগবেই। তিনি কলামিস্ট আব্দুল লতিফ মাসুমের কথার রেফারেন্স টেনে বলেন, যিনি পলিটিশিয়ান তিনি আগামি নির্বাচন নিয়ে চিন্তা করেন। এই নির্বাচনটায় কিভাবে চিতবো। আর একজন স্টেটম্যান (ক্ষমতায় যিনি আছেন) তিনি চিন্তা করেন আমি আমার জাতিকে কিভাবে বড় করবো। এই গড়ার ভিশনের বড় অভাব। আমরা যেন ক্যাজুয়াল পলিটিক্স করে চলছি। দ্বিতীয় যে সমস্যাটা আমার কাছে মনে হয়, নৈতিক মূল্যবোধের চরম অবক্ষয়। রাজনীতিবিদরা যদি নিজে রাজা হয়ে থাকে তাহলে নিশ্চয় তারা ককপিটের পাইলট। পাইলট যখন ককপিটে শারীরিক মানসিক সুস্থতার সাথে বসে, তিনি তার ক্রাফট চালাবেন, তখন আশা করা যায় যাত্রী সাধারণ আল্লাহ তায়ালার ইচ্ছায় যথাসময়ে নির্দিষ্ট সময়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারবে। কিন্তু যদি পাইলটের সমস্যা থাকে, যদি তিনি নিজেই দুবৃর্ত্ত, হাইজ্যাককারী, বিদ্রোহী হন অথবা মাথা তার বিগড়ে যায়, তাহলে তিনিসহ যাত্রী সাধারণের যেকোন সময় বড় ধরনের বিপর্যয় ঘটতে পারে। তিন নম্বর যে সমস্যাটা আমার কাছে মনে হয়, আমরা নিজেদের কোন জায়গা অ্যাকাউন্টেবল মনে করি না। আমরা আমাদের নিজেদের জবাবদিহিতার উর্ধ্বে মনে করি। বিশেষ করে আমি যদি বিজয়ী হয়ে যাই তাহলে সাতখুন মাফ হয়ে যায়। মনে করি যে, আমাকে কে ধরে আর কে ছুঁয়। আমার কোন পতন বা পরিবর্তন দেখি না। কারণ আমার আশপাশে যারা থাকে; তারা খালি হাততালি দেয়। আমি ভুল বললেও সাধুবাদ শুদ্ধ বললেও বলে স্যার অসম্ভব কাজ আপনি সাধন করেছেন। এমন পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হয় আমি আর মানুষ থাকি না। রাজনীতিবিদরা আমরা অতি মানব হয়ে যাই।

তিনি বলেন, এই তিনটা জায়গার মৌলিক পরিবর্তন এবং দর্শনগত পরিবর্তন না আসা পর্যন্ত জাতি শক্ত হয়ে মজবুত হয়ে দাঁড়াতে পারবে আমি অন্তত বিশ্বাস করি না। দেশ ও সমাজের স্বার্থকে সবার উর্ধ্বে রেখে কিছু বিষয়ে আমাদের একমত হতে হবে। কিছু মতবিরোধ থাকবেই। এটাই গণতন্ত্রের সৌন্দর্য্য। তিনি বলেন, ডেমোক্রেসিতে একটা কথা আছে আসো একমত হই দ্বিমত পোষণ করার জন্য। মতের পার্থক্য হউক কিন্তু মতবিরোধ না হউক। আমরা পার্থক্যে যেন আটকে থাকি। এরপর যেন আর পা বাড়াই না। কিন্তু দু:খের বিষয় আমরা পার্থক্যে থাকি না। বিরোধী জড়িয়ে যাই।

যার কারণে এতো বড় পরিবর্তনের পর শ্বাস ফেলতে পারছি, এটার শুকরিয়া আদায় স্বরূপ যেভাবে রাজনৈতিক দল ও নেতৃবৃন্দের মধ্যে ঐক্যের ও দেশ গড়ার পরিবেশ চিন্তার আদান প্রদান হওয়ার কথা ছিল, আমি ম্বীকার করছি আমি লজ্জিত আমরা এটা মেইনটেন করতে পারছি না।

জামায়াতের আমীর বলেন, আমাদের যুবদের প্রত্যাশা আমাদের কাছে অনেক ছিল। তারাতো আমাদের প্রত্যাশার বাইরে অপ্রত্যাশিতভাবে বিশাল এক কাজ করে দিয়েছে। এখন তাদের প্রত্যাশা পূরণের দায়িত্ব আমাদের। তাদের হতাশ করা ঠিক হবে না।

তিনি যুবকদের উদ্দেশ্যে বলেন, রাজনীতির কাজটা বড় জটিল। তোমাদের এখানে মাথা ঠিক রেখে চলতে হবে। হাজার লোভ লালসা, তোমাদের সামনে বহু ধরণের আতংক আসবে। এই জায়গায় যারা স্থির থাকতে পারবে, তারা ভাল কিছু করতে পারবে। আর এখানে যারা হেরে যাবে, তারা নিজেরে হেরে যাবে এবং জাতিকে হারিয়ে দিবে। আমরা দোয়া করি যুবকরা যেন কোনভাবেই পথ হারা না হয়।

ডাক্তার শফিকুর রহমান বলেন বাংলাদেশ ভাল থাকলে আমরা ভাল থাকবো। আসুন আমরা মুখের কথায় নয় বুকের ভাষায় বাংলাদেশকে ভালবাসি। যদি রিয়েল ভালবাসা বাংলাদেশকে দিতে পারি তাহলে অবশই দেশ তার সঠিক পথ ফিরে পাবে। তিনি একজন স্বেচ্ছাসেবী নারীর উদাহরণ টেনে বক্তব্য শেষ করেন। তার নাম ‘ভ্যালরি’। তিনি সিআরপি গড়ে তুলেছিলেন। তাকে সাংবাদিক প্রশ্ন করেছিল, হো হম ইউ ম্যারিড, সে বলেছিল ‘টু বাংলাদেশ। তাকে প্রশ্ন করা হয়েছিল তোমার হাসব্যান্ড কে ? সে বলেছিল বাংলাদেশ। আমরা এটা থেকেই বোঝার চেষ্টা করি।

ইফতার মাহফিলে অংশ নেওয়া অন্য রাজনীতিবিদদের মধ্যে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আমীর নূরুল ইসলাম বুলবুল, মহানগর উত্তরের সেক্রেটারি ড, রেজাউল করিম, বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, জাগপার সহসভাপতি রাশেদ প্রধান, সৈয়দ এহসানুল হুদা, আবু হানিফসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা।

বিশিষ্ট ব্যক্তিদের মধ্যে অংশ নেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আবু আহমেদ, বিশিষ্ট কলামিস্ট শিক্ষাবিদ অধ্যাপক জনপ্রিয় অভিনেতা ও নিরাপদ সড়ক চাই’র কর্ণধার নায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ওবায়দুর রহমান শাহীন ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি শহিদুল ইসলাম, সেক্রেটারি খুরশিদ আলম জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আইয়ুব ভূঁইয়া ঢাকা রিপোর্টাস ইউনিটির সাবেক সভাপতি রফিকুল ইসলাম আজাদ, ঢাকা সাব এডিটর্স কাউন্সিলের সভাপতি মোক্তাদিক অনিক, সাধারণ সম্পাদক জাওহার ইকবাল প্রমূখ।