‘বাংলাদেশে এখন অবাধ গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠান এর মত পরিবেশ বিরাজমান নেই। রাজনৈতিক দল গুলোর মধ্যে ঐক্যের পরিবেশ সৃষ্টি হয়নি। সরকারের অনেক অর্জন থাকলেও সরকার রাজনৈতিক ঐক্য প্রতিষ্ঠা করতে ব্যর্থ হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে নির্বাচনের আয়োজন করা গ্রহণযোগ্য নয়।’

মঙ্গলবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া মিলনায়তনে গণশক্তি সভা আয়োজিত ‘জুলাই ঘোষণাপত্রে বঞ্চণা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপমহাদেশের খ্যাতিমান কবি ও দার্শনিক ফরহাদ মজহার এসব কথা বলেন।

তিনি আরো বলেন,আমরা একটি রাজনৈতিক জনগোষ্ঠী। আমাদের বিরুদ্ধে সব সময় ষড়যন্ত্র হবে এটাই স্বাভাবিক।ষড়যন্ত্রের বিপরীতে আমাদের বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে অগ্রসর হতে হবে। জনগণের অভিপ্রায় আমাদের বুঝতে হবে। শালীনতা বজায় না রেখে যদি আমরা অশ্লীল তর্কে জড়িয়ে পড়ি সেটা হবে অনাকাঙ্ক্ষিত। জুলাই ঘোষণাপত্র দেয়ার আইনি বৈধতা এই সরকারের আছে কিনা। শেখ হাসিনার রেখে যাওয়া সংবিধানের অধীনে কোন নির্বাচন জনগণ মেনে নেবে না। আমলা কেনা বেচা করে নির্বাচনী বৈতরণী পার করার পুরনো কৌশল জনগণ মেনে নেবে না। সরকার বার বার জনগণকে প্রতারিত করে। গণ সার্বভৌমত্ব কায়েম না হওয়া পর্যন্ত আমাদের লড়াই চালিয়ে যেতে হবে।

বিএনপির উদ্দেশে ফরহাদ মজহার বলেন, ‘আপনারা কেন এই সংবিধান ধরে রাখতে চান? জিয়াউর রহমান তো বাহাত্তরের সংবিধানকে ধরে রাখতে চাননি। আমি যতটুকু জানি, বেগম খালেদা জিয়াও এই সংবিধান ধরে রাখতে চাননি। তিনিও বলেছিলেন, এই সংবিধান ছুড়ে ফেলে দিতে হবে। তাহলে আপনারা কেন গণঅভ্যুত্থানের ওপরে চাপ দিয়ে এই সংবিধান ধরে রাখলেন এবং একটা প্রতিবিপ্লব ঘটিয়েছেন, যা করার কথা ছিল তা না করে কার জন্য এটা করলেন?’

বিএনপির উদ্দেশে তিনি আরও বলেন, ‘শুরু থেকেই আপনারা নির্বাচন নির্বাচন করতে লাগলেন। জনগণের ক্ষমতা জনগণের কাছে ফিরিয়ে দিতে চাননি কেন আপনারা। নির্বাচন মানেই গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র নয়। শেখ হাসিনাও নির্বাচন করতো। এখন সবার আগে দরকার গণপরিষদ নির্বাচন। সেই গণপরিষদের সবাই মিলে ঠিক করবে কী ধরনের রাষ্ট্র আমাদের লাগবে।’

ফরহাদ মজহার বলেন, ‘গণসার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠা করতে হবে, কেমন সে গণসার্বভৌমত্ব, রাষ্ট্রের সকল সিদ্ধান্তে জনগণের অংশগ্রহণ থাকবে। কোন প্রকল্প নিলে যারা এর দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে এমনকি যারা লাভবান হবে তাদের এ-সম্পর্কে জানার সুযোগ থাকতে হবে। আমলারা সিদ্ধান্ত নিলেই হবে না, কারণ তারা অল্প টাকায় বিক্রি হয়ে যায়।’

তিনি বলেন, ‘একটা নির্বাচন দিলে সব হয়ে যাবে? রাষ্ট্র তো আগের জায়গাতেই আছে, সেনাবাহিনীও আগের জায়গাতেই আছে, কিছু বদল হয়নি।’

অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে ফরহাদ মজহার বলেন, ‘শেখ হাসিনার শাসনামলে সেনাবাহিনীর নৈতিক শক্তি মেরুদণ্ডকে ভেঙে দেওয়া হয়েছে। এই সেনাবাহিনীকে দিয়ে দেশ রক্ষা করার কথা বলেও লাভ নেই। আপনারা সেনাবাহিনীকে নির্বাচন করাতে চাইছেন, কারণ নির্বাচন করার ক্ষমতা আপনাদের নেই। কিন্তু সেনাবাহিনীর কাজ তো নির্বাচন পরিচালনা করা নয়। সেনাপ্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কোনো প্রকার ষড়যন্ত্র আমরা নাগরিকরা সহ্য করবো না।’

জাতীয় প্রেসক্লাব অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন গণশক্তি সভার সভাপতি সাংবাদিক সাদেক রহমান।

প্রফেসর ড. দেওয়ান সাজ্জাদ এর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সভায় অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল অব. এটিএম জিয়াউল হাসান, গণমুক্তি জোটের চেয়ারম্যান বিশিষ্ট আইনজীবী ড. শাহরিয়ার ইফতেখার ফুয়াদ, সাবেক সচিব কাসেম মাসুদ ,কর্নেল (অব.) হাসিনুর রহমান বীর প্রতীক ,লে. কর্নেল অব. ফেরদৌস আজিজ ,মেজর (অব.) রেজাউল হান্নান শাহীন,গণমুক্তি জোটের মহাসচিব আখতার হোসেন, ড. এ আর খান, ড. হুমায়ুন কবির, বিশিষ্ট লেখক গবেষক এমরান চৌধুরী,নতুন ধারা জনতার পার্টির চেয়ারম্যান আব্দুল আহাদ নূর, লেখক, গবেষক আলাউদ্দিন কামরুল, বাংলাদেশ জনতা ফ্রন্টের চেয়ারম্যান আবু আহাদ আল মামুন, জাস্টিস পার্টির চেয়ারম্যান আবুল কাশেম মজুমদার প্রমূখ।