বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, জুলাই বিপ্লবের ছাত্র-জনতার ত্যাগ ও কুরবানির বিনিময়ে অর্জিত সফলতা ধরে রখতে হলে ফ্যাসিবাদীদের বিচার ও সংস্কার তরান্বিত করতে হবে। তাই ইতিবাচক ধারায় দেশের রাজনীতিকে নিয়ে যেতে সকল রাজনৈতিক দলকে ঐক্যবদ্ধ ভূমিকা রাখতে হবে। গতকাল শুক্রবার বিকালে নগরীর দেওয়ান বাজারে চট্টগ্রাম মহানগরী জামায়াতের কার্যালয়ে (বিআইএ) মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত দায়িত্বশীল সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্য ও চট্টগ্রাম মহানগরী জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমীর মুহাম্মদ নজরুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত দায়িত্বশীল সমাবেশে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর এসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আবুল হাসনাত মুহাম্মদ আব্দুল হালিম ও মাওলানা মুহাম্মদ শাহজাহান। উক্ত দায়িত্বশীল সমাবেশে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও চট্টগ্রাম অঞ্চল জামায়াতের টিম সদস্য অধ্যাপক আহসান উল্লাহ ভুঁইয়া, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও সাবেক এমপি শাহজাহান চৌধুরী, চট্টগ্রাম মহানগরী সেক্রেটারি অধ্যক্ষ মুহাম্মদ নুরুল আমিন প্রমুখ।
এতে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম অঞ্চল টিম সদস্য মুহাম্মদ জাফর সাদেক, অধ্যক্ষ মাওলানা আমিরুজ্জামান, চট্টগ্রাম মহানগরী জামায়াতের মজলিসে শূরার সদস্য প্রফেসর ড. আবু বকর রফিক আহমদ ও অধ্যক্ষ মুহাম্মদ তাহের, নগর এসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি অধ্যক্ষ মাওলানা খাইরুল বাশার, মোহাম্মদ উল্লাহ, ফয়সাল মুহাম্মদ ইউনুছ ও মোরশেদুল ইসলাম চৌধুরী, নগর সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর অধ্যক্ষ শামসুজ্জামান হেলালী ও ডা. এ কে এম ফজলুল হক, ডা. মুহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান, নগর শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের মহনগরী সভাপতি এস এম লুৎফর রহমান, অধ্যক্ষ মাওলানা জাকের হোছাইন, নগর কর্মপরিষদ সদস্য হামেদ হাসান ইলাহী, আমির হোছাইন, ফখরে জাহান সিরাজী সবুজ, মাওলানা এবিএম ছিদ্দিকুল্লাহ, অধ্যাপক মাওলানা লিয়াকত আক্তার ছিদ্দিকী, অধ্যক্ষ মুহাম্মদ সাইফুল্লাহ, অধ্যাপক মুহাম্মদ নূর প্রমুখ।
আগামী নির্বাচনে দেশপ্রেমিক শক্তিকে বিজয়ী করতে হবে: বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র রক্ষায় আগামী নির্বাচনে দেশপ্রমিক শক্তিকে বিজয়ী করতে হবে। বাংলাদেশ আর কোন বিদেশী প্রভুর কথায় দেশ চালাবে না। নিজেরাই নিজেদের শক্তি নিয়ে দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে, ইনশাআল্লাহ। গতকাল জুমাবার সকাল ৯.০০ টায় সাতকানিয়ার কেরানীহাট হোটেল সী ওয়ার্ল্ড কনভেনশন হলে সাতকানিয়া লোহাগাড়ার সর্বস্তরের দায়িত্বশীল সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। তিনি বলেন, ফ্যাসিস্ট সরকারের বিচার সময়ের দাবি। তিনি যেভাবে মানুষ হত্যা করেছে। তার বিচার এ সরকারের অধীনে হওয়া উচিত।
সংস্কার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দেশের সব সেক্টরে সংস্কার প্রয়োজন। তবে নির্বাচনের জন্য যেসব সংস্কার প্রয়োজন, সেসব সেক্টরে অবশ্যই সংস্কার করতে হবে। অন্যথায় আরেকটি ফ্যাসিস্ট হাসিনা তৈরি হবে। সরকারের কাছে আমাদের কয়েকটি প্রস্তাব জানিয়েছিলাম, স্থানীয় সরকার নির্বাচনের মাধ্যমে প্রত্যন্ত অঞ্চলে প্রতিনিধি নির্বাচিত করে ক্ষমতা হস্তান্তর করা দরকার। পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন করার দাবি জানানো হয়েছে। প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্য করার জন্য প্রস্তাবনা পেশ করা হয়েছে।
“বাংলাদেশে ২টি সমস্যা বিদ্যমান ছিল। এক, ফ্যাসিবাদ, কর্তৃত্ববাদ কায়েম হয়েছিল। দুই, দিল্লীর তাবেদারী করে হাসিনা দেশকে চালিয়েছে। আমাদের শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে হত্যা করে বিদেশের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করেছে। সচেতন দেশবাসীর কাছে বলতে চাই, একটা স্বাধীন ভূখন্ড, একটি মানচিত্র পেয়েছি। স্বাধীনতা সার্বভৌম, অর্থনীতি, রাজনীতির নীতিকে হাসিনা ধূলিসাৎ করেছে। ২০১৪ সালের নির্বাচনের কোন বিরোধী দল যায়নি, ভোটকেন্দ্রে ভোটাররা যায়নি। এমনকি এরশাদও নির্বাচনে যেতে চায়নি। ভারত তাকে জোর করে নির্বাচনে পাঠিয়েছে।”
এমপি প্রার্থীর নাম ঘোষণায় তিনি বলেন, চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া- লোহাগাড়া) আসনের আগামী পার্লামেন্ট নির্বাচনের জন্য আলহাজ্ব শাহজাহান চৌধুরীকে মনোনীত করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, জামায়াতের ইতিহাস ঐতিহ্য, আনুগত্য করার ক্ষেত্রে সংগঠনের অনেক অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে সংগঠনকে এগিয়ে নিতে হবে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একে অপরের প্রতি হিংসা-বিদ্বেষ পোষণ করে মন্তব্য করা এই সংগঠনের ঐতিহ্য নয়।
“তাই আশাকরি সংগঠনের ইতিহাস ঐতিহ্য রক্ষার্থে সবাইকে কাদা ছোড়াছুড়ি বন্ধ করে সবাইকে সংগঠনের সিদ্ধান্তকে বাস্তবায়নে ঐক্যবদ্ধভাবে ঝাপিয়ে পড়ি। নিয়মতান্ত্রিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখলে আল্লাহ আমাদের সহায় হবেন, আল্লাহ আমাদের বিজয় দান করবেন, ইনশাআল্লাহ।” Ñ বলেন সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জনাব মাওলানা আব্দুল হালিম বলেন, এ আসনের বৈঠকের জন্য আমীরে জামায়াত মকবুল আহমদ সাহেব ও গ্রেফতার হয়েছে। জাতির স্বার্থে, দ্বীনের স্বার্থে ও সমঝোতার স্বার্থে বিভিন্ন জায়গায় আমাদের প্রার্থী পরিবর্তন হতে পারে। সেজন্য আমীরে জামায়াত নিজের আসনও জাতির স্বার্থে ছেড়ে দিতে পারেন বলে ঘোষণা করেছেন। বৈঠকে সব শুনে ময়দানে গিয়ে বিপরীত দিকে চলা ইসলামের সৌন্দর্য নয়। আমাদের কয়েকজন সেটা নিজেদের চরিত্রে লালন করেছে। তাই আমাদের চিন্তা চেতনা সবসময় সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে থাকা দরকার। কোন অবস্থায় দ্বিমুখী আচরণ করা যাবে না। সত্যকে সত্য, ন্যায়কে ন্যায় ও অন্যায়কে অন্যায় হিসেবে ঘোষণা দেয়াই সর্বোত্তম জিহাদ। সারাদেশের জনশক্তিরা সাতকানিয়া লোহাগাড়ার কথা বললে অন্তর থেকে দোয়া করে। কিন্তু এ সংগঠনের জনশক্তিকে ঠিক সেভাবে নিজেদের মূল্যায়ন করে নিজেদের মানকে উন্নত করে ময়দানে ঝাপিয়ে পড়তে হবে। আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে এ আসন সহ সকল আসনে বিজয় দান করবেন, ইনশাআল্লাহ।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মুহাম্মদ শাহজাহান বলেন, এ আসনের জন্য সাবেক এমপি শাহাজাহান চৌধুরী অনেক বেশি পরিচিত। এ আসনের অতীতের সকল ত্যাগের চেয়ে আরও বেশি ত্যাগ স্বীকার করে ইতিহাস সৃষ্টি করার জন্য একটি সুন্দর বিজয়ের রোডম্যাপ তৈরি করতে হবে। এবারে আমাদের স্বপ্ন সম্ভাবনার বাংলাদেশ। এবারে আমাদের স্বপ্ন ফ্যাসিবাদের চূড়ান্ত পরাজয়। তাই সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে ময়দানে ঝাপিয়ে পড়তে হবে। ইনশাআল্লাহ, বিজয় আমাদের সুনিশ্চিত।
চট্টগ্রাম মহানগরী আমীর ও চট্টগ্রাম-১৫ আসনের মনোনীত প্রার্থী সাবেক এমপি শাহজাহান চৌধুরী বলেন, আমি ইসলামী আন্দোলনের পূর্বসূরীদের শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি। আল্লাহ তাদের এ ত্যাগকে কবুল করুন। আমরা শহীদের এ ময়দানে সম্মিলিতভাবে কাজ করে দ্বীন প্রতিষ্ঠার আন্দোলনকে এগিয়ে নিতে আল্লাহর সাহায্য কামনা করছি।
বিশেষ অতিথি অধ্যাপক আহসান উল্লাহ বলেন, আমলে সালেহ হিসেবে নিজেদের যোগ্যতার পরিচয় দিয়ে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আগামী নির্বাচনে এই আসনের বিজয় নিশ্চিত করতে হবে। আপনারা আগে থেকে কাজ করে আসছেন, আজকে প্রার্থী পেয়েছি তাই নতুনভাবে আবার ময়দানে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। ফ্যাসিস্ট হাসিনা ভারতের কাছে দেশকে বন্ধক রেখে আজ দেশকে তলাবিহীন ঝুড়িতে পরিণত করেছে। আওয়ামীলীগ যেভাবে গণতন্ত্র ধ্বংস করেছে, এখন সংস্কার ছাড়া দেশে গণতন্ত্র ফিরে আনা অসম্ভব।
বিশেষ অতিথি অধ্যাপক জাফর সাদেক বলেন, আমাদের আজ অগ্নিপরীক্ষা শুরু হয়েছে। আমরা বছরের পর বছর সংগঠনের ভিত্তি মজবুত করার জন্য কাজ করে এসেছি। আজকে নির্বাচনকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়ে আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল করে দিনরাত নির্বাচনের জন্য কাজ করে বিজয় নিশ্চিত করতে হবে। জামায়াতে ইসলামীর লক্ষ্য অনুযায়ী একটি কল্যাণ রাষ্ট্র গঠন করার জন্য আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করি। আল্লাহ আমাদের বিজয় দান করবেন।
সভাপতির বক্তব্যে আনোয়ারুল আলম চৌধুরী বলেন, সাতকানিয়া লোহাগাড়া রক্তস্নাত ময়দান। শহীদের এ ময়দানে সবাইকে জীবন বাজি রেখে এ আসনের প্রার্থীকে বিজয়ী করার উদ্বাত্ত আহ্বান করছি।
কেন্দ্রীয় মজলিশে শূরার সদস্য ও চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলার আমীর জননেতা আনোয়ারুল আলম চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন শ্রমিক কল্যাণের কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি মুহাম্মদ ইসহাক।
চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা সেক্রেটারি অধ্যক্ষ মাওলানা মুহাম্মদ বদরুল হকের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সম্মেলনে আরও বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা নায়েবে আমীর অধ্যাপক মুহাম্মদ নুরুল্লাহ, ড. হেলাল উদ্দিন মুহাম্মদ নোমান, সহকারী সেক্রেটারি মুহাম্মদ জাকারিয়া, এডভোকেট মোহাম্মদ নাছের, সাংগঠনিক সেক্রেটারি মাওলানা নুরুল হোসাইন, জেলা কর্মপরিষদ সদস্য মাওলানা কামাল উদ্দীন, নুরুল হক, মাওলানা আবুল ফয়েজ, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা শিবিরের সভাপতি আসিফুল্লাহ মুহাম্মদ আরমান, লোহাগাড়া উপজেলা আমীর অধ্যাপক আসাদুল্লাহ ইসলামাবাদী ও সাতকানিয়া উপজেলা আমীর মাওলানা কামাল উদ্দিন, সাতকানিয়া পৌরসভার আমীর অধ্যক্ষ হামিদ উদ্দীন আজাদ প্রমুখ।