বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এটিএম মাসুম বলেছেন, জাতীয় ঐক্যমত কমিশন দেশের সকল রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে ও তাদের প্রতিনিধিদের সাথে বহুবার বৈঠকে মিলিত হয়েছে। পয়েন্ট সবগুলোকে সামনে রেখে প্রায় ৮০টার পয়েন্টের উপর সকল রাজনৈতিক দল ঐক্যমত পোষন করেছেন। এইভাবেই একটি জাতীয় সনদ ও এর খসরা তৈরী হয়েছে। গত শুক্রবার এই জাতীয় সনদ সরকারের পক্ষ থেকে দেশবাসীর কাছে তুলে ধরা হয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলো এই সনদে স্বাক্ষর করেছেন। অন্তবর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা এই সনদে স্বাক্ষর করেছেন। এর মধ্যে দিয়ে জুলাই আন্দোলনের যে প্রত্যাশা ছিল তার একটি বাস্তবায়ন হয়েছে। আলহামদুলিল্লাহ। এখন এই সনদের আইনিভিত্তি দিতে হবে। এইটা আমাদের মুল দাবি। সনদ স্বাক্ষরের পর এটা যদি এইভাবে পড়ে থাকে তাহলে এইটার দুই পয়সার মুল্য নাই। এই জন্য এটাকে আইনিভিত্তি দিতে হবে। আইনিভিত্তির জন্যে সংবিধানের চেয়েও শক্তিশালী মেগনেট হচ্ছে গনভোট।
তিনি বলেন, পিআর পদ্ধতি বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হবে। বিগত সনাতনি পদ্ধতি এদেশের কোন কল্যাণ বয়ে আনতে পারেনি। দু্র্ভিসন্ধির কারণে তারা পিআর বোঝেন না, কিন্তু জনগণ ঠিকই বোঝে আমরা ‘পিআর পদ্ধতি’র মাধ্যমে এমন একটি নির্বাচন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে চাই, যার মাধ্যমে দেশে প্রকৃত বহু দলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হবে। এই পদ্ধতির মূল উদ্দেশ্য হলো কর্তৃত্ববাদী রাজনীতি ও একদলীয় আধিপত্য চিরতরে দূর করা ।
শনিবার (১৮ অক্টোবর) সকালে জামায়াতে ইসলামী চাঁদপুর জেলা শাখার উদ্যোগে রোকন সম্মেলন-২০২৫ আল আমিন একাডেমীর মাঠে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
কেন্দ্রীয় মজলিসের শুরার সদস্য ও জেলা জামায়াতের আমীর মাওলানা বিল্লাল হোসাইন মিয়াজীর সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট শাহজাহান মিয়ার পরিচালনায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন কুমিল্লা-নোয়াখালী অঞ্চল টিম সদস্য কাজী নজরুল ইসলাম খাদেম, জেলা জামায়াতের নায়েবে আমীর এডভোকেট মাসুদুল ইসলামীর বুলবুল।
এ টি এম মাসুম আরো বলেন, পিআর পদ্ধতির নির্বাচন হলে সমাজের শিক্ষিত, মার্জিত ও যোগ্য ব্যক্তিরা নেতৃত্বে আসার সুযোগ পাবেন। এতে করে ছোট ছোট রাজনৈতিক দলগুলোও ন্যায্যভাবে মূল্যায়িত হবে এবং তাদের মতামত জাতীয় রাজনীতিতে প্রতিফলিত হবে।
এই ব্যবস্থায় নির্বাচনের দিন দলীয় আধিপত্য, কালো টাকার প্রভাব, কেন্দ্র দখল, মারামারি এসব অন্যায় কর্মকাণ্ডের অবসান ঘটবে। পিআর পদ্ধতি একটি নিরপেক্ষ, গঠনমূলক ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন ব্যবস্থা, যেখানে প্রত্যেক নাগরিক নিজের পছন্দের দল বা প্রার্থীকেই ভোট দিতে পারবেন। এতে ভোটারদের নিরাপত্তা ও স্বাধীনতা নিশ্চিত হবে।

তিনি আরো বলেন, যারা গত পঞ্চাশ বছর ধরে ভোট ডাকাতি করে, জনগণের আমানতের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করে সংসদ সদস্য হয়েছেন, তারাই এখন এই পদ্ধতির বিরোধিতা করছেন। আসলে তারা পিআর পদ্ধতি বুঝেন না, তা নয় তারা ভালো করেই বোঝেন, কিন্তু নিজেদের স্বার্থে না বোঝার ভান করেন।
আরও উপস্থিত ছিলেন সহকারী সেক্রেটারি অধ্যাপক আবুল হোসাইন, জাহাঙ্গীর আলম প্রধান, হারুনুর রশীদ। দারসুল কুরআন পেশ করেন মুহাদ্দিস আবু নছর আশ্রাফী। চাঁদপুর শহর আমীর অ্যাড. শাহজাহান খান, সদর আমীর মাও. আফসার উদ্দিন।
তিনি আরো বলেন এই পদ্ধতি কোনো জটিল বিষয় নয়। এটি নির্বাচন কমিশন ও রাজনৈতিক দলগুলোর সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমে কার্যকর করা সম্ভব। সাধারণ ভোটারদের ওপর কোনো বাড়তি বোঝা চাপবে না। আগের মতোই তারা ভোটকেন্দ্রে গিয়ে পছন্দের দল বা প্রার্থীকে ভোট দেবেন। পার্থক্য শুধু এতটুকু এবার ভোটের মূল্য ও ফলাফল সঠিকভাবে প্রতিফলিত হবে।
তিনি বলেন, পিআর পদ্ধতির নির্বাচনের মাধ্যমে আমরা এমন একটি রাজনৈতিক সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠা করতে চাই, যেখানে সব দল, সব মানুষ মিলেমিশে দেশটাকে গঠন করবে। এই ব্যবস্থাই পারে বাংলাদেশকে একটি সুশাসনভিত্তিক, অংশগ্রহণমূলক ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পরিণত করতে।