শাপলা চত্বর: শাহাদাতের রক্তে রাঙা অবিনাশী চেতনা শীর্ষক কনফারেন্স সফলভাবে হয়েছে। শনিবার বিকাল ৪টা থেকেরাজধানীর কাকরাইল ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স মিলনায়তনে কনফারেন্স শুরু হয়ে রাত ৯ টা পর্যন্ত চলে। শাপলা স্মৃতি সংসদের আহ্বায়ক ও বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমীর মাওলানা মামুনুল হক সভাপত্বি অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব, জাজীয় নেতৃবৃন্দ ও শহীদ পরিবারের প্রতিনিধিগণ। প্রোগ্রামে হেফাজতে ইসলামের আন্দোলনে চালিত রাষ্ট্রিয় গণহত্যার উপর প্রামাণা ডকুমেন্টারি প্রদর্শন করা হয় ও শহীদদের জীবনভিত্তিক স্মারকগ্রন্থ ‘শহীদনামা’র মোড়ক উন্মোচন করা হয়।
কনফারেন্স বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক মাওলানা আবুল হাসানাত জালালী, মাওলানা হাসান জুনাইদ ও মাওলানা আল আবিদ শাকির এর যৌথ পরিচালনায় কনফারেন্সে বক্তব্য রাখেন, হেফজতে ইসলাম বাংলাদেশ এর মহাসচিব মাওলানা সাজিদুর রহমান, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ, জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ড. হামিদুর রহমান আজাদ, আমার দেশ সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দিন আহমাদ, গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা বশিরউল্লাহ, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা ফজলুল করিম কাসেমী, খেলাফত মজলিস নায়েবে আমীর মাওলানা আহমদ আলী কাসেমী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মহাসচিব, অধ্যক্ষ ইউনুস আহমদ প্রমুখ।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন আহমেদ বলেন, আমার জীবনে কিছু সময় কেটেছে আয়নাঘরে। কিছু সময় জেলখানায়। কিছু সময় কেটেছে প্রবাসে।এভাবেই কেটেছে আমার জীবনের দীর্ঘ দেড় যুগ সময়। আল্লার কাছে প্রার্থনা করি যেন তিনি আরো কয়েকদিন বাঁচিয়ে রাখেন শাপলার বিচার দেখার জন্য।
জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ড. হামিদুর রহমান আজাদ বলেন, এই শাপলার ইতিহাস যদি মুছে ফেলা হয় তাহলে আমাদের জাতীয় জীবনের অনেক কিছুই মুছে ফেলা হবে, তাই এই চেতনা শুধু আমরা লালন করলেই হবে না, প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে ছড়িয়ে দিতে হবে। তের দফা কর্মসূচি হল এদেশে যারা ইসলাম কায়েম করতে চাই তাদের সকলের দাবি। সেই জন্য আন্দোলন চলাকালীন তিন মাস আমরা আমাদের সাংগঠনিক কার্যক্রম স্থগিত রেখেছিলাম।
আমার দেশ সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান, শাপলা চত্বর ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনের মূল অনুপ্রেরণা। ভারতীয় আধিপত্যবাদী চাপিয়ে দেয়ার জন্য বিগত ফ্যাসিস্ট সরকার আলেমদের উপর জুলুম নির্যাতন এবং কারাবরণ করিয়েছে। ভারতীয় আধিপত্যবাদ মোকাবেলা করাই সবচেয়ে বড় প্রেম। আর এই কাজটি করেছে দেশের ওলামায়ে কেরাম।
গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর জুলাই অভ্যুত্থানে আলেম সমাজের ভূমিকা তুলে ধরে বলেন, আমরা ইউনাইটেড পড়ি গরু তুলতে না পারি তাহলে আমরা ব্যর্থ। এই আন্দোলন যদি আলেম-ওলামারা শরিক না হতেন তাহলে হয়তো এটা আন্দোলন সফল হতো না।
কনফারেন্স থেকে সাত দফা দাবি উপস্থাপন করা হয়,
(১) রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি ও পুনর্বাসন: শাপলা গণহত্যার শহীদ ও আহতদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিতে হবে। শহীদ পরিবারকে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ, আহতদের চিকিৎসা এবং পূর্ণাঙ্গ পুনর্বাসনের দায়িত্ব সরকারকে নিতে হবে। বিশেষত শহীদ পরিবার ও পঙ্গুত্ব বরণকারীদেরকে ভাতা প্রদান করতে হবে।
(২) পাঠ্যপুস্তকে ইতিহাস সংযোজন: শাপলা গণহত্যার সত্য ইতিহাস জাতীয় শিক্ষাক্রমে অন্তর্ভুক্ত করে নতুন প্রজন্মকে সঠিক ইতিহাস জানাতে হবে।
(৩) জুলাই ঘোষণাপত্রে জাতীয় স্বীকৃতি: ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’-এ শাপলা গণহত্যাকে জাতীয় ট্রাজেডি হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে রাষ্ট্রীয় অবস্থান সুস্পষ্ট করতে হবে।
(৪) সরকারিভাবে শহীদ তালিকা প্রণয়ন: রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে যাচাইকৃত শহীদ তালিকা প্রস্তুত করে তা জাতীয় নথিতে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
(৫) দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি: মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘনকারী এই গণহত্যার দায়ীদের দ্রুত বিচারের আওতায় এনে কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
(৬) মিথ্যা মামলার প্রত্যাহার: হেফাজতে ইসলাম ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দায়ের করা সকল মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলা অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে।
(৭) স্বাধীন তদন্ত কমিশন গঠন: আইনজ্ঞ ও নিরপেক্ষ নাগরিকদের সমন্বয়ে ‘শাপলা গণহত্যা তদন্ত কমিশন’ গঠন করে ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত ও সুপারিশমালা প্রকাশ করতে হবে।
কনফারেন্স থেকে ঘোষণা করা হয়, আগামী ৩০ আগস্ট ২০২৫, শনিবার, শাপলা গণহত্যা নিয়ে যাঁরা সংবাদ প্রতিবেদন ও গবেষণা, সাহিত্য-রচনা, চিকিৎসা সহায়তা, আইনগত লড়াই কিংবা স্মৃতি সংরক্ষণমূলক উদ্যোগে বিভিন্নভাবে অবদান রেখেছেন তাঁদের সম্মাননা প্রদানের মাধ্যমে “শাপলা কেন্দ্রিক বিভিন্ন কাজে অংশিজনের সম্মাননা ও সম্মিলনী ২০২৫’আয়োজন করা হবে।