জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা জাপানে গিয়ে যে বক্তব্য দিয়েছেন তা নিয়ে হতাশা ব্যক্ত করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। তিনি বলেন, দেশে বর্তমানে যে সংকট সৃষ্টি হচ্ছে, তা কিন্তু নির্বাচনের কারণেই হচ্ছে। আমরা কিন্তু অনেক বিশ্বাস করে ড. ইউনূসকে ক্ষমতায় বসিয়েছি। কিন্তু উনি জাপানে গিয়ে যে বক্তব্য দিয়েছেন, আমরা তাতে হতাশ। তিনি বলেছেন, একমাত্র বিএনপিই নাকি নির্বাচন চায়। অথচ আমরা বোঝাতে চেয়েছি, ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন দিলে সবদিক দিয়েই তা ভালো হবে। আমি আশা করবো, প্রধান উপদেষ্টা দেশের মধ্যে আর কোনো বিভ্রান্তি সৃষ্টি করবেন না। গতকাল রোববার জাতীয় প্রেস ক্লাবে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ আয়োজিত আলোচনায় প্রধান অতিথি এসব কথা বলেন।

ড. মোশাররফ বলেন, শুধুমাত্র বিএনপি নয়, দেশের ৫২টি রাজনৈতিক দলই চলতি বছরের ডিসেম্বরেই সংসদ নির্বাচন চায়। সে দলগুলোর নাম, নেতাদের নাম, তাদের বক্তব্য পত্রিকায় প্রকাশ হয়েছে। প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, এখন যদি প্রশ্ন উঠে যে, আপনার (অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস) ওপরে যেখানে আমাদের এতোবড় বিশ্বাস আপনি কেনো বাংলাদেশের জনগণকে বা বিদেশের নাগরিককে ভুল পথে পরিচালিত করবেন। কেনইবা আমাদের মধ্যে একটা বিভ্রান্তি সৃষ্টি করবেন।

তিনি বলেন, উপদেষ্টারা যারা অতিরিক্ত কথা বলে তাদের কর্মকান্ডের মাধ্যমে বিতর্কিত, আমরা সেটাও দাবি করেছি, বিতর্কিত উপদেষ্টাদেরকে বাদ দিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আদলে যদি একটি ছোট উপদেষ্টা পরিষদ গঠন করে, তাদের পক্ষেই সেই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান করা সুন্দর হবে।

সোমবারের বৈঠকের বিষয়ে মোশাররফ বলেন, প্রধান উপদেষ্টা সোমবার দ্বিতীয় দফা বৈঠক ডেকেছেন। আমরা যাব। গেলেও আমরা কি বলব? আমরা তো আগেই সংস্কার কর্মসূচি দিয়ে রেখেছি, এই সংস্কার কর্মসূচি তাদের প্রস্তাবের সাথে মিলে। আমরা মনে করি, মিনিমাম সকল দল একমত হবে সেটাকে ঐক্যমত্য ঘোষণা করে নির্বাচনের দিকে যাওয়া উচিত। বাংলাদেশে যে সংকট-আলোচনা এটা কিন্তু নির্বাচনকে নিয়ে। আমাদের প্রধান উপদেষ্টা অত্যন্ত সম্মানীয় ব্যক্তি, যিনি এনজিও করে বিদেশে বাংলাদেশের সুনাম করেছেন এবং তিনি একটি নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন। বাংলাদেশে কিন্তু আর কেউ নাই। আমরা অনেক বিশ্বাস নিয়ে উনাকে প্রধান উপদেষ্টা পদে বসিয়েছি। কিন্তু তিনি (প্রধান উপদেষ্টা) জাপানে গিয়ে যে বক্তব্য রেখেছেন এতে আমরা হতাশ।

জুনে নির্বাচন সম্ভব নয় উল্লেখ করে খন্দকার মোশাররফ বলেন, নির্বাচন যত বিলম্ব হবে পতিত স্বৈরাচার তারা ষড়যন্ত্র করবে। ডিসেম্বরে নির্বাচন প্রয়োজন। আপনারা যে বলছেন জুনে নির্বাচন দেবেন। এর আগে কি হয়? ডিসেম্বরের পর জানুয়ারি মাসে এরপরে ফেব্রুয়ারি মাসে রোজা। এই রোজাকে তো আমরা পিছিয়ে দিতে পারব না, এই রোজা ও ঈদ নিয়ে ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাস চলে যায়। তারপরে আসবে এপ্রিল-মে এসএসসি ও এইচএসসি পাবলিক পরীক্ষা, এগুলো পেছানোর সুযোগ নেই। এসব পাবলিক পরীক্ষায় যেসব স্কুল-কলেজে সেন্টার হয় সেগুলোতে কিন্তু ভোটের সেন্টার হয়। সরকার এপ্রিল-মে মাসে নির্বাচন করতেই পারবেন না। আর জুন মাসে পুরোপুরি বর্ষাকাল চলে আসে। এবার তো দেখলাম মে মাসে কি পরিমাণ বৃষ্টি এবং সারাদেশে বর্ষার অবস্থা। জুন মাসে নির্বাচন সম্ভব না। তাই আমরা মনে করি ডিসেম্বরে নির্বাচন সম্ভব এবং আমরা দাবি করেছি যে, আপনি ডিসেম্বরের মধ্যে যেদিন সুইটেবল মনে করেন, সেদিনটি আপনারা ঘোষণা করেন।

এই বিএনপি নেতা বলেন, জিয়াউর রহমানকে হত্যার পর অনেকে বলেছিল তিনি ছাড়া বিএনপি ইজ জিরো। কিন্তু খালেদা জিয়া সাহসিকতার সঙ্গে বিএনপির হাল ধরেছিলেন। জিয়াউর রহমানের আদর্শিকতায় তিনি দেশ পরিচালনা করেছিলেন। এই বিএনপিকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার জন্য ১৬ বছর ধরে আওয়ামী লীগ সরকার খালেদা জিয়া, তারেক রহমানসহ বিএনপির অসংখ্য নেতাকর্মীর ওপর নির্যাতন-নিপীড়ন চালিয়েছিল। কিন্তু এত নির্যাতন সত্ত্বেও বিএনপিকে দমানো সম্ভব হয়নি।

তিনি বলেন, আমরা সংস্কারের পক্ষে। অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পূর্বেই তারেক রহমান ৩১ দফা সংস্কারের ঘোষণা দিয়েছেন। আমরা ক্ষমতায় এলে সেসব সংস্কার বাস্তবায়নও করবো।

সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের আহ্বায়ক বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেনের সভাপতিত্বে এবং সদস্য সচিব কাদের গণি চৌধুরীর সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় পেশাজীবী নেতা অধ্যাপক আবদুল লতিফ মাসুম, অধ্যাপক শামসুল আলম সেলিম, আনহ আখতার হোসেন. অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল একেএম শামসুল ইসলাম শামস, সৈয়দ আলমগীর, সেলিম ভুঁইয়া, জাকির হোসেন, আশরাফ উদ্দিন আহমেদ উজ্জল, শামীমুর রহমান শামীম, একেএম মহসিন, রাশেদুল হক, আবেদ রেজা, ফখরুল আলম, সাইফুজ্জামান সান্টু, জিয়াউল হায়দার পলাশ, জাহানারা বেগম, একেএম মুসা, তানভীরুল আলম, মির্জা লুৎফুর রহমান লিটন প্রমূখ বক্তব্য রাখেন।