বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক সংসদ সদস্য এ এইচ এম হামিদুর রহমান আযাদ বলেছেন, বাংলাদেশকে যদি সত্যিকারের কল্যাণরাষ্ট্রে পরিণত করতে হয়, তাহলে সৎ ও নৈতিকতাসম্পন্ন নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে হবে। জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ সেই লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, একটি আদর্শ রাষ্ট্র তখনই গড়ে উঠবে, যখন প্রত্যেক নাগরিকের মধ্যে নৈতিকতা ও সততা জাগ্রত হবে। কিন্তু দুঃখজনকভাবে, আমরা নির্যাতিত হওয়ার পরও নিজেদের মধ্যে ঐক্য ধরে রাখতে পারছি না। ক্ষমতার লোভে যেকোনোভাবে নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় যাওয়ার চেষ্টা চলছে, যা রাষ্ট্রের প্রকৃত কল্যাণে কোনোভাবেই সহায়ক নয়। এজন্য প্রয়োজন সত্যিকারের ন্যায়ভিত্তিক নেতৃত্ব, যেখানে আইনের শাসন, নৈতিকতা ও সামাজিক সুবিচার প্রতিষ্ঠিত হবে।

গাজীপুর মহানগর জামায়াতে ইসলামীর উদ্যোগে সাংবাদিকদের সম্মানে আয়োজিত এক ইফতার মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

গাজীপুর জেলা পরিষদ অডিটরিয়ামে অনুষ্ঠিত এ মাহফিলে সভাপতিত্ব করেন গাজীপুর মহানগর জামায়াতের আমীর অধ্যাপক জামাল উদ্দিন, এবং সঞ্চালনা করেন মহানগর সেক্রেটারি আবু সাইদ মোহাম্মদ ফারুক। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর গাজীপুর জেলার সাবেক আমীর আবুল হাশেম খান।

এছাড়াও অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও গাজীপুর মহানগর নায়েবে আমীর খায়রুল হাসান, মাওলানা হোসেন আলী, মহানগর সহকারী সেক্রেটারি আফজাল হোসেন, গাজীপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান টিটো, প্রেসক্লাবের সেক্রেটারি শাহ শামসুল হক রিপন, গাজীপুর সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি দেলোয়ার হোসেন, প্রেসক্লাবের সহ-সভাপতি মোঃ রেজাউল বারী বাবুল, টঙ্গী প্রেসক্লাবের সভাপতি শেখ মোঃ আজিজুল হক, সাংবাদিক সমিতি গাজীপুরের সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ হেদায়েত উল্লাহ, গাজীপুর টেলিভিশন সাংবাদিক সমিতির সভাপতি ফজলুল হক মোড়লসহ অন্যান্য সিনিয়র সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ।

প্রধান অতিথি আরও বলেন, রমজান মাসে অপরাধীদের অপরাধপ্রবণতার মূল কারণ হলো তারা তাকওয়া অর্জন করতে পারেনি। আল্লাহ মানুষকে আলোকিত করার জন্য রোজাসহ বিভিন্ন ইবাদত ও কর্মসূচি দিয়েছেন, যা তাদের চরিত্র গঠনে সহায়তা করে। কিন্তু যখন সমাজজীবনে আল্লাহর বিধান অনুপস্থিত থাকে, তখন অনৈতিকতা ও বিশৃঙ্খলা বৃদ্ধি পায়।

তিনি আরও বলেন, সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ড থেকে শুরু করে অসংখ্য বিচারহীন ঘটনার ফলে অপরাধীরা আরও উৎসাহিত হচ্ছে। সাংবাদিক রুহুল আমীন গাজী, সংগ্রামের সম্পাদক আবুল আসাদসহ অনেকেই বিচারহীনতার শিকার হয়েছেন। এর প্রধান কারণ হলো নেতৃত্বের আসনে থাকা ব্যক্তিদের অসৎ ও দুর্নীতিগ্রস্ত আচরণ।

তিনি বলেন, ইসলামী শাসনব্যবস্থায় ন্যায়বিচার ও জবাবদিহিতা গুরুত্বপূর্ণ। খলিফারাও সেখানে আইনের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়েছেন, কারণ ইসলামে সকল নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান। অথচ আমাদের দেশে আইন করে শেখ মুজিবুর রহমানের পরিবারকে আইনের ঊর্ধ্বে রাখা হয়েছে। গোষ্ঠীতান্ত্রিক রাজনীতি নির্মূল না হলে দেশের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন সম্ভব নয়, ইনসাফও প্রতিষ্ঠিত হবে না।

অনুষ্ঠানে বক্তারা সাংবাদিকদের ভূমিকা, স্বাধীন সাংবাদিকতার গুরুত্ব এবং সমাজ গঠনে গণমাধ্যমের অবদানের বিষয়ে আলোচনা করেন। তারা বলেন, পবিত্র রমজান মাসের শিক্ষাকে ধারণ করে সবাইকে মানবতার কল্যাণে কাজ করতে হবে।

এছাড়াও, দেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট, গণমাধ্যমের চ্যালেঞ্জ এবং সত্য ও ন্যায়ের পথে সাংবাদিকদের অবিচল থাকার প্রয়োজনীয়তা নিয়েও আলোচনা হয়।

ইফতার মাহফিলে সাংবাদিকদের কল্যানে বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত পরিচালনা করা হয়।