বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সাবেক ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল মজলুম জননেতা এটিএম আজহারুল ইসলাম বিগত ফ্যাসিবাদি সরকারের আজ্ঞাবহ আদালত কর্তৃক মৃত্যদণ্ডাদেশের ফলে ১৪ বছর কারাদণ্ড ভোগ করতে বাধ্য হন।

অবশেষে জুলাই বিপ্লবের পর আইনি লড়াইয়ের মাধ্যমে তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হওয়ায় অব্যাহতি লাভ করেছেন। এই ঐতিহাসিক বিজয়টি পরম করুণাময় আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের শোকর গুজারের মাধ্য দিয়ে উদযাপন করেছে জামায়াতে ইসলামী।

মঙ্গলবার (২৭ মে) বাদ জোহর বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে আমীরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমান সংগঠনের নেতাকর্মী ও মুসল্লীদের সাথে নিয়ে শোকরানা নামাজ আদায়ের মাধ্যমে আল্লাহর নিকট কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

এ সময় আমীরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমান বলেন, মহান আল্লাহ তায়ালার শুকরিয়া। আল্লাহ তায়ালা তার প্রিয় মসজিদে হাজির হয়ে সালাতুল জোহর জামায়াতে আদায় করার তাওফিক দান করেছেন আলহামদুলিল্লাহ। মসজিদের আদব হচ্ছে মসজিদের ভিতরে কোন শোরগোল হবে না। সবাই শান্ত থাকবেন এবং মনোযোগ দিয়ে বক্তব্য শুনবেন।

তিনি আরও বলেন, সম্মানিত মুসল্লিয়ানে কেরাম, আমরা মহান আল্লাহর দরবারে অসংখ্য শুকরিয়া আদায় করছি। আমাদের একজন ভাই সুদীর্ঘ ১৪ বছর কারাগারের ভিতরে আছেন। মাথার উপরে মৃত্যুর পরওয়ানা। আল্লাহর এই বান্দা সব সময় আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল ছিলেন। তিনি কখনো আল্লাহর উপর থেকে তাওয়াক্কুল হারাননি। এই বয়সে তিনি চরম ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছেন। তিনি বাংলাশে জামায়াতে ইসলামীর তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল ছিলেন। তাকে পায়ে বেড়ি পরিয়ে ও হাতে হ্যান্ডকাফ দিয়ে কারাগার থেকে আদালতে নেওয়া হয়েছে। তাকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা সত্ত্বেও তিনি সবসময় হাসিমুখে থাকেন। সব জুলুম নির্যাতন তিনি সন্তুষ্টিচিত্তে কবুল করেছেন। তিনি জানতেন তার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগগুলো ষোলআনা মিথ্যা। তার মত দ্বীনের একজন খাদেমকে মানবতার কল্যাণ থেকে বিরত রাখার মানবতাবিরোধী মিথ্যা অপরাধের দায়ে বন্দি করে রাখা হয়েছে।

তিনি বলেন, আমাদের শীর্ষস্থানীয় ১১ জন দায়িত্বশীলের কয়েকজনকে ফাঁসি দিয়ে এবং কয়েকজনকে কারাগারে কষ্ট দিয়ে ঠান্ডা মাথায় খুন করা হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা বিশেষ মেহেরবাণী করে প্রিয় ভাই এটিএম আজহারুল ইসলামকে বাঁচিয়ে রেখেছেন। এটি আল্লাহ তায়ালার কুদরত। এভাবে জুলুমের শিকার হয়ে জেলখানায় আমাদের নেতৃবৃন্দ, সহকর্মী, সাধারণ জনতা, আলেম-ওলামাসহ যাদেরকেই হত্যা করা হয়েছে সকলের জন্য আল্লাহর দরবারে দোয়া করি, তাদের পরিবারের জন্যও দোয়া করি।

তিনি বলেন, এই মামলাগুলো যে মিথ্যা ছিলো আজকে মহান রব সেটাই প্রমাণ করলেন। এখানে আমাদের কোনো কৃতিত্ব নেই, সমস্ত কৃতিত্ব মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের। এ রায়কে কেন্দ্র করে আমরা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করবো না। এখানে যারা হাজির আছেন সকলের প্রতি এটাই আমার অনুরোধ। আমরা মহান আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করব। এ কাজ করতে গিয়ে আমাদের যেসব ভুলভ্রান্তি হয়েছে, আমরা তার জন্য আল্লাহর দরবারে পানাহ চাই। আমাদের এই ধৈর্যকে জান্নাতের উছিলা বানিয়ে দিন। যে ধরনের পরীক্ষাই আমাদের সামনে আসুক, সেই পরীক্ষায় যেন আমরা ধৈর্য ধারণ করতে পারি। আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে ধৈর্য ধারণ করার তাওফিক দান করুন।

তিনি বলেন, দেশে ও বিদেশে যারা আছেন তাদের অনুরোধ করি তাসবীহ ও ইস্তেকফার মাধ্যমে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করবেন। আল্লাহর শুকরিয়া আদায় স্বরূপ অভাবী মানুষের মুখে খাবার তুলে দিন। আল্লাহর শুকরিয়া আদায়ের এটা একটা বিশাল মাধ্যম। নিজ নিজ তাওফিক অনুযায়ী এতিম ও মিছকিনদের মুখে খাবার তুলে দেওয়ার চেষ্টা করি।

তিনি আরও বলেন, আগামীকাল ২৮ মে বুধবার দেশে ও প্রবাসের সকলকে অনুরোধ করবো সকলে বিশেষভাবে দোয়া করবেন। আপনারা দোয়া করবেন আমাদের ভাই যেন মুক্তি পেয়ে আমাদের মাঝে ফিরে আসেন। দোয়া করবেন আল্লাহ যেন তাঁকে দীর্ঘ হায়াত দান করেন। দোয়া করবেন আল্লাহ তায়ালা যেন তাঁকে শেফায়ে কামেলা দান করেন। দোয়া করবেন তিনি যেন ফিরে এসে তাঁর রূহানি শক্তি দিয়ে মজবুতভাবে দ্বীনের কাজ করতে পারেন । আল্লাহ তায়ালা যেন তাঁর দ্বারা এদেশের মানুষের কল্যাণ সাধন করান। আমরা যেন সবাই হাতে হাত রেখে ঈমানদার মুসলমান হিসেবে আমাদের এই ভাইয়ের জন্য যারা দোয়া করেছেন, বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করেছেন আইনজীবী, সাংবাদিকসহ সকলের কাছে আমরা কৃতজ্ঞ। বিশেষভাবে কৃতজ্ঞ জানাই জুলাই বিপ্লবে আত্মদানকারীদের, আহত ও পঙ্গুত্ববরণকারীদের; যাদের কারণে আজ বিচারটা সহজ হয়ে গেছে। আমরা তাদের সকলের কাছে কৃতজ্ঞ। যারা নিহত হয়েছেন আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে শহীদ হিসেবে কবুল করুন। আর যারা পঙ্গুত্ববরণ করেছেন, আহত হয়েছেন আল্লাহ তায়ালা সবাইকে ক্ষমা করে দিন।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন নায়েবে আমীর সাবেক এমপি অধ্যাপক মুজিবুর রহমান ও সাবেক এমপি ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোঃ তাহের, ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এটিএম মা’ছুম, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, সাবেক এমপি ড. হামিদুর রহমান আযাদ, মাওলানা আবদুল হালিম, মাওলানা মোয়ায্যম হোসাইন হেলাল, এড. এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য জনাব আবদুর রব, সাইফুল আলম খান মিলন, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য এবং কেন্দ্রীয় প্রচার ও মিডিয়া সেক্রেটারি অধ্যক্ষ শাহাবুদ্দিন, জনাব মোবারক হোসাইন, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর জনাব নূরুল ইসলাম বুলবুল, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমীর জনাব মোঃ সেলিম উদ্দিন, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও লইয়ার্স কাউন্সিলের সভাপতি এড. জসিমউদ্দীন সরকার, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ, ঢাকা মহানগরী উত্তরের সেক্রেটারি ডা. রেজাইল করিম, শহীদ মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর পুত্র মাসুদ সাঈদী, শহীদ মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর পুত্র ব্যারিস্টার নাজিবুর রহমান মোমেন, শহীদ আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদের পুত্র আলী আহমাদ মাবরুর, জনাব এটিএম আজহারুল ইসলামের পুত্র তাসনিম আজহার সুমন, শহীদ আব্দুল কাদের মোল্লার পুত্র হাসান জামিল এবং জনাব এটিএম আজহারুল ইসলামের মামলার আইনজীবীগণসহ প্রমুখ। ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন।