৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের পর খুলনায় এই প্রথম মিছিল করেছে আওয়ামী লীগ। যা নিয়ে মহানগরজুড়ে চলছে ব্যাপক সমালোচনা। খুলনার সড়কে আওয়ামী লীগের সরব হওয়া নিয়ে জনমনে সৃষ্টি হয়েছে চরম আতঙ্ক। এছাড়া মিছিলের ঘটনায় দেশব্যাপি রাজনৈতিক বিতর্ক তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনগুলোর এ ধরনের মিছিল বন্ধ করার নির্দেশ দেওয়ার পরপরই যেন সরব হয়েছে আওয়ামী লীগ। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী ১৯ এপ্রিল সতর্ক করে দিয়েছিলেন, আওয়ামী লীগের কার্যক্রম ও ঝটিকা মিছিলের বিরুদ্ধে । পুলিশের কোনো নিস্ক্রিয়তা পেলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে স্পষ্ট বার্তা দেন তিনি। তবে খুলনায় বেশ কিছুদিন ধরে গোপনে আওয়ামী লীগের উপস্থিতি থাকলেও নির্বিকার আইন শৃঙ্খলা বাহিনী।
সূত্রে জানা যায় , খুলনা মহানগরীর সোনাডাঙ্গা আবাসিক এলাকা, নিরালা আবাসিক এলাকা, দৌলতপুর, খালিশপুর, লবণচরাসহ বেশকিছু স্থানে গোপনে অবস্থান করছে আওয়ামী লীগসহ অঙ্গ সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীরা। এছাড়া তথ্য পাওয়া গেছে, পাশবর্তী জেলাগুলোর মধ্যে গোপালগঞ্জ, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, নড়াইল, যশোর, ঝিনাইদহ, মাগুরা, চুয়াডাঙ্গার আওয়ামী সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীরা খুলনায় বিভিন্ন আত্মীয়-স্বজনের বাড়ি ও আবাসিক হোটেলে লুকিয়ে রয়েছেন । একদিনে চার স্থানে আওয়ামী লীগের এই ঝটিকা মিছিল নিয়ে বিএনপি, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, এনসিপি সহ রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে চলছে তুমুল উত্তেজনা। রোববার সকাল ৭ টার দিকে খুলনার জিরোপয়েণ্ট এলাকায়, দুপুর ৩ টায় বয়রা মহিলা কলেজ মোড় , বিকেল ৪ টায় দৌলতপুরে ও সন্ধ্যার পর খুলনার সাতরাস্তা মোড়ে ঝটিকা মিছিল করেছে আওয়ামী লীগ।
রোববার দিনের বিভিন্ন সময়ে খুলনার কয়েকটি পয়েন্টে ঝটিকা মিছিল করে আওয়ামী লীগ। এ ঘটনায় পৃথক তিন থানায় তিনটি মামলায় আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের ৪০ জন নেতার্কর্মীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে খুলনা সিটি কর্পোরেশনের লাইসেন্স অফিসার রবিউল আলম রবি রয়েছেন। তাকে নগর ভবন থেকে গোয়েন্দা পুলিশ আটকের পর খুলনা থানায় হস্তান্তর করে। এছাড়া খালিশপুর থানায় ৭ জন, হরিণটানা থানায় ২২ জন এবং আড়ংঘাটা থানায় ১০ জন গ্রেফতার হয়েছেন।
সোমবার দুপুর ২টায় বিষয়টি নিশ্চিত করে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের (কেএমপি) এডিসি (মিডিয়া) মোহাম্মদ আহসান হাবিব বলেন, রোববার খুলনায় বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগের ঝটিকা মিছিলকে কেন্দ্রে করে খালিশপুর, হরিণটানা ও আড়ংঘাটা থানায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে পৃথক তিনটি মামলা দায়ের করা হয়। এই সব মামলায় দুপুর ২টা পর্যন্ত মোট ৪০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতারের মধ্যে নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগ এবং যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মী রয়েছেন। পুুলিশের পাশাপাশি গোয়েন্দা বিভাগও অভিযান চালাচ্ছে। পুলিশের এ অভিযান অব্যাহত রয়েছে। তবে তিন মামলায় কতোজনকে আসামি করা হয়েছে তা তিনি কাগজপত্র না দেখে বলতে পারেননি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গ্রেফতারের মধ্যে উল্লেখযোগ্যরা হলেন ডুমুরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী আলমগীর হোসেন, ফুলতলা উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আশরাফুল আলম, শিরোমনির ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি কাজী জাকারিয়া রিপন, ১৭নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. নুর ইসলাম, ১৭ নং ওয়ার্ড কৃষক লীগের সভাপতি মো. আসিফ হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান, ১৬নং ওয়ার্ড গাবতলা ইউনিট আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ আবুজার অনিক, যুবলীগের সদস্য মো. রকিবুল ইসলাম, ১৯ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ মেহেদী হাসান এবং যুবলীগ সদস্য রুহুল আমিন, নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের কর্মী মো. ওয়ালিদ হাসান ইমন।
ঘটনাস্থল থেকে পাওয়া ছবিতে দেখা যায়, বিক্ষোভকারীরা শেখ মুজিবুর রহমান ও শেখ হাসিনার ছবি সংবলিত একটি ব্যানার ধরে আছেন। এ সময় তারা ‘শেখ হাসিনার বাংলাদেশ’, ‘শেখ হাসিনার ভয় নাই, রাজপথ ছাড়ি নাই’, ‘নেতা মোদের শেখ মুজিব’, ‘আমরা সবাই মুজিব সেনা’সহ আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্লোগান দেন। কেন্দ্রীয় নির্দেশনার অংশ হিসেবে খুলনায় ঝটিকা মিছিল করেছে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। তবে এ নিয়ে জেলা বা মহানগর পর্যায়ের শীর্ষ নেতারা আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। এর মধ্যে জিরো পয়েন্টে প্রায় ৩শ নেতাকর্মী উপস্থিত ছিল। জিরোপয়েন্টের মিছিলের পরই খুলনা বয়রা মহিলা কলেজ রোডে ৩০ থেকে ৩৫ জনের একদল মধ্যবয়সী যুবক কালো পতাকা নিয়ে মিছিলের চেষ্টা করে।