# জাপা নিষিদ্ধের দাবি জামায়াত এনসিপির # নির্বাচন ফেব্রুয়ারিতেই হবে- আশ্বস্ত বিএনপি

সুষ্ঠু নির্বাচন এবং নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে তিন দলের সাথে বৈঠক করেছেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস। গতকাল বিকাল থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত এই বৈঠক চলে। বৈঠকে অংশ নেওয়া তিন দলের দুই দল বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী এবং জাতীয় নাগরিক পার্টি এনসিপি জুলাই সনদ বাস্তবায়ন করে সুষ্ঠু নির্বাচন দাবি করেছে। এর মধ্যে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী প্রধান উপদেষ্টার প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী মৌলিক সংস্কার দ্রুত শেষ করে বিচার দৃশ্যমান করে নির্বাচনের দাবি করেন। এবিষয়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের বলেন, সরকারের উচিত ছিল জুলাই সনদের ব্যাপারে স্পষ্ট সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর নির্বাচনের রোডম্যাপ এবং তারিখ ঘোষণা করা। অন্যদিকে এনসিপি জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পাশাপাশি গণপরিষদ নির্বাচনের দাবি করে। এ বিষয়ে আরিফুল ইসলাম আদিব বলেন, জুলাই সনদের জুলাই সনদের চূড়ান্ত পর্যায়ে আছে। চূড়ান্ত হয়নি। জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি ও সাংবিধানিক ভিত্তির জন্য আগামীতো যে নির্বাচন হবে সেটি যেন গণপরিষদ নির্বাচন হোক। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয় ফেব্রুয়ারিতেই হবে বলে আশ্বস্থ করা হয়েছে।

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী :

দেশের বর্তমান পরিস্থিতি এবং আগামি ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করেছে দেশের প্রধান তিনটি রাজনৈতিক দল বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপি। গতকাল বিকাল থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত এই বৈঠক গুলো হয় রাজধানীর হেয়ার রোডে অবস্থিত প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনায়।

গতকাল বিকাল ৪টার দিতে যমুনায় প্রবেশ করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর প্রতিনিধি দল। নেতৃত্ব দেন দলের নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের। অন্যদের মধ্যে ছিলেন সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ড. এএইচএম হামিদুর রহমান আজাদ ও মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান।

যমুনা থেকে বের হয়ে সংক্ষিপ্ত প্রেস ব্রিফিং-এ ডা. তাহের বলেন, “বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে করণীয়, নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র এবং দেশের বিরুদ্ধে নানামুখী ষড়যন্ত্রসহ গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের জনগণ দীর্ঘ সংগ্রাম, রক্ত ও আত্মত্যাগের বিনিময়ে পরিবর্তনের আশা করেছিলো। স্বৈরাচার ও ফ্যাসিবাদের পতনের পর মানুষ প্রত্যাশা করেছিলো রাজনীতি, অর্থনীতি ও সংস্কৃতিতে গুণগত পরিবর্তন আসবে। নির্বাচনের মাধ্যমে একটি নতুন সূচনা ঘটিয়ে সমৃদ্ধ বাংলাদেশে পৌঁছানোই আমাদের লক্ষ্য।

ডা. তাহের জানান, প্রধান উপদেষ্টা তিনটি বিষয়ে আশ্বাস দিয়েছেন, ১. সংস্কার (রিফর্মস) করা, যাতে বারবার নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ না হয়, ২. বিচারকে দৃশ্যমান করা, ৩. বিশ্বমানের আনন্দমুখর নির্বাচন আয়োজন। তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, বর্তমান পরিস্থিতিতে এসব প্রতিশ্রুতিই প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়েছে। জামায়াতসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল নির্বাচনী সংস্কার নিয়ে আলোচনায় অংশগ্রহণ করেছে এবং ৩১ দলের মধ্যে অধিকাংশই গুরুত্বপূর্ণ ১৯টি ইস্যুতে ঐকমত্যে পৌঁছেছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো প্রোপোরশনাল রিপ্রেজেন্টেশন (পিআর) পদ্ধতি চালুর দাবি।

তিনি বলেন, ২৫টি দল পিআর পদ্ধতির পক্ষে। আমরা চাই লোয়ার হাউস ও আপার হাউস- দুই স্তরেই পিআর প্রণয়ন করা হোক। পিআর প্রবর্তিত হলে দিনের ভোট রাতে হওয়ার সুযোগ থাকবে না, ভোট ডাকাতি রোধ হবে এবং একটি আধুনিক ও স্বচ্ছ নির্বাচনী ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হবে। তিনি সতর্ক করে বলেন, অধিকাংশ দলের মতামত উপেক্ষা করে যদি কয়েকটি দলের চাপে পুরনো পদ্ধতিতে নির্বাচন হয়, তবে তা সংকট সৃষ্টি করবে এবং পুরো প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলবে।

ডা. তাহের জোর দিয়ে বলেন, আমরা ফেব্রুয়ারি মাসে নির্বাচন চাই। তবে সে নির্বাচন হতে হবে সকল দলের সম্মতি, অংশগ্রহণ ও সন্তুষ্টি নিশ্চিত করে। তবেই একটি অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও উৎসবমুখর নির্বাচন আয়োজন সম্ভব হবে। তিনি বলেন, আমরা বলেছি, বর্তমানে দেশের পরিস্থিতি অত্যন্ত উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে। নুরুল হক নুরুর ওপর হামলার ঘটনা তারই প্রমাণ। দ্বিতীয় স্বাধীনতা যুদ্ধের অন্যতম নায়ক এবং নতুন বাংলাদেশের আন্দোলনের অন্যতম প্রধান নেতৃত্বের ওপর এ ধরনের ন্যক্কারজনক হামলা দেশের গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রার জন্য বড় ধরনের হুমকি। আমরা এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই এবং দাবি জানাই অবিলম্বে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করে দোষীদের চিহ্নিত করে কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, আমরা স্পষ্টভাবে বলছি, যদি নির্বাচন পূর্ব সময়ে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়, তবে নির্বাচনের সময় আরও ভয়াবহ অবস্থা সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই এখনই সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়ে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের ব্যবস্থা করতে হবে। এ ক্ষেত্রে প্রতিটি রাজনৈতিক দলের পাশাপাশি সরকারেরও দায়িত্ব রয়েছে।

তিনি বলেন, কিন্তু দুঃখজনক হলো, অন্তর্বর্তী সরকার এখনো দখলদারদের বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো ভূমিকা পালন করতে পারেনি। যে সরকার একটি বাসস্ট্যান্ড দখলদারদের উচ্ছেদ করতে পারে না, একটি চাঁদাবাজকে আইনের আওতায় আনতে ব্যর্থ হয়, সে সরকার কীভাবে একটি জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করবে, তা নিয়ে আমরা শঙ্কিত ও উদ্বিগ্ন। তবুও আমরা বলতে চাই, এখনো সময় আছে। সরকার যদি আন্তরিকভাবে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে এবং কার্যকর উদ্যোগ নেয়, তবে এই সংকট থেকে উত্তরণের পথ তৈরি হবে।

তিনি আরও বলেন, প্রধান উপদেষ্টা আমাদের সঙ্গে আলাপচারিতায় আশ্বাস দিয়েছেন যে, আলোচনায় উত্থাপিত বিষয়গুলো তিনি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করবেন এবং প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেবেন।”বিকেল ৫টা ৪০ মিনিটের দিকে তারা যমুনার ভেতরে প্রবেশ করেন এনসিপির চার সদস্যের প্রতিনিধিদল। প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন এনসিপির মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আবদুল্লাহ, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব, যুগ্ম সদস্যসচিব তাসনিম জারা ও সিনিয়র যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসউদ। বৈঠক শেষে কথা বলেন আরিফুল ইসলাম আদীব। তিনি বলেন, বৈঠকে ৫ দাবির কথা বলা হয়েছে। জুলাই আহতদের পুনর্বাসন-চিকিৎসা নিশ্চিতকরণ, গুম কমিশনের প্রতিবেদন আমলে নিয়ে এখানে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে নেয়া, নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা নিশ্চিতকরণ, জুলাই সনদের আইনী-সাংবিধানিক ভিত্তির জন্য আগামীতো যে নির্বাচন হবে সেটি যেন গণপরিষদ নির্বাচন ও জাতীয় পার্টি (জাপা) নিষিদ্ধের দাবি তুলেছে দলটি।

আদীব বলেন, গণঅভ্যুত্থানের এক বছরেও আহতদের পুনর্বাসন, চিকিৎসা ইত্যাদি নিশ্চিত হয়নি। আমরা সরকারের কাছে তাদের পুনর্বাসন, চিকিৎসা ও নিরাপত্তার কথা বলেছি। জুলাই অভ্যুত্থানে অংশ নিয়ে প্রবাসী ভাইদের আটকের বিষয়ে বলেছি। এখনও আরব আমিরাতে ২৫ জন আটক রয়েছেন, তাদের বিষয়ে উদ্যোগ নেয়ার জন্য বলেছি। তিনি আরো বলেন, সরকার যেন গুম কমিশনের প্রতিবেদন আমলে নিয়ে এখানে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে যেন ব্যবস্থা নেয়। বিভিন্ন বাহিনী সরাসরি গুমের সঙ্গে জড়িত তাই এ বিষয়ে অভিযোগ উঠেছে। কিন্তু সরকার এ বিষয়ে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নিতে দেখা যাচ্ছে না।

জুলাই সনদের বিষয়ে গণপরিষদ নির্বাচন চায় এনসিপি। এ বিষয়ে আরিফুল ইসলাম আদিব বলেন, জুলাই সনদের জুলাই সনদের চূড়ান্ত পর্যায়ে আছে। চূড়ান্ত হয়নি। জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি ও সাংবিধানিক ভিত্তির জন্য আগামীতো যে নির্বাচন হবে সেটি যেন গণপরিষদ নির্বাচন হোক। সেটা যেন নতুন সংবিধানে প্রণয়ন করে। নির্বাচন কমিশন তাদের সক্ষমতা ও নিরপেক্ষার বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা যাতে অবদান রাখেন। গত কয়দিন আগে সীমানা নির্ধারণ নিয়ে ইসি ভবনে অন্য পক্ষকে যেভাবে হামলা করা হয়েছে, এখানে ইসির সক্ষমতা ও নিরপেক্ষতা নিয়েও প্রশ্ন আসে।

জাতীয় পার্টির রাজনীতি নিষিদ্ধ চায় এনসিপি। দলের পক্ষ থেকে আদিব বলেন, গত তিনটি অবৈধ নির্বাচনে ফ্যাসিস্টের সহযোগী হিসেবে জাতীয় পার্টি সরাসরি অংশ নিয়েছে। জাতীয় পার্টি এবং আওয়ামী লীগের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। নিষিদ্ধ সংগঠনের পক্ষে সুস্পষ্ট অংশ নেয়ায় জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক কার্যক্রম নিষিদ্ধের বিষয়ে যেন সরকার আমলে নেয়, সেটি আমরা বলেছি। তাছাড়া,সরকারের পক্ষ থেকে হত্যা মামলার আসামিদের বিচার বাস্তবায়নের জন্য কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়ায় কথা বলেছি।

সবশেষে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে কথা বলে বিএনপির প্রতিনিধি দল। রাত ৯টার পর যমুনা থেকে বের হয়ে কথা বলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক ‘ফলপ্রসূ হয়েছে’ উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানিয়েছেন, জাতীয় নির্বাচন আগামী ফেব্রুয়ারিতেই অনুষ্ঠিত হবে। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা আমাদের আশ্বস্ত করেছেন, নির্বাচন ফেব্রুয়ারিতেই হবে। আমরাও তা বিশ্বাস করি।’

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘নির্বাচনকালীন সরকার ও রাজনৈতিক পরিবেশ নিয়ে বিএনপির উদ্বেগ ও প্রত্যাশার কথা প্রধান উপদেষ্টার কাছে তুলে ধরা হয়েছে।’ তিনি বলেন, ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে নির্বাচন হবে প্রধান উপদেষ্টা আশ্বস্ত করেছেন। লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে তারেক রহমানের বৈঠক প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, প্রধান উপদেষ্টার এখতিয়ার আছে যেকোনো দলের প্রধানের সঙ্গে বসার। এটা একান্ত তার ব্যক্তিগত বিষয়।