আগামী নির্বাচনকে বিএনপির জন্য অগ্নিপরীক্ষা অভিহিত করে দলটির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর অবসরপ্রাপ্ত হাফিজউদ্দিন আহমদ বীর বিক্রম বলেছেন, জনগণ আমাদেরকে হয়তো ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবে। কিন্ত ক্ষমতায় গিয়ে আওয়ামী লীগ যা করেছে আমরাও যদি তা করি, তাহলে ১৫ দিনও ক্ষমতায় টিকতে পারবো না। শনিবার (৯ আগস্ট) দুপুরে জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দল মহানগর শাখা উদ্যোগে খুলনা প্রেসক্লাবের ব্যাংকুয়েট হলে ‘৭১র মহান মুক্তিযুদ্ধ ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় শহীদ জিয়া’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন। বিএনপির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চলছে অভিযোগ করে তিনি মুক্তিযোদ্ধাসহ সকলকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহবান জানিয়ে বলেন, যে দলের প্রতিষ্ঠাতা মেজর জিয়াউর রহমান, যে দলের প্রধান বেগম খালেদা জিয়া এখনো জীবিত, যে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে দলটি এখনও ঐক্যবদ্ধ রয়েছে, কোন ষড়যন্ত্র সেই দলকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারবেনা।
জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দল খুলনা মহানগর শাখার সভাপতি শেখ আলমগীর হোসেনের সভাপতিত্বে সভায় প্রধান বক্তা ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা দলের কেন্দ্রীয় সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ উলফত। বিশেষ অতিথি ছিলেন বিএনপির তথ্য বিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল, মহানগর বিএনপি সভাপতি শফিকুল আলম মনা, জেলা আহবায়ক মনিরুজ্জামান মন্টু, মহানগর সাধারণ সম্পাদক শফিকুল আলম তুহিন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে মেজর হাফিজ অন্তবর্তী সরকারের প্রধান ড. ইউনুসকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, লন্ডনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সাথে অনুষ্ঠিত বৈঠকের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী আগামী ফেব্রুয়ারীতে তিনি জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি বলেন, কেউ কেউ নির্বাচন ছাড়াই ক্ষমতায় স্বাদ পেতে শুরু করেছে। যে কারণে তারা নির্বাচন প্রলম্বিত করতে চায়। তারা জানে সুষ্ঠু নির্বাচন হলে বিএনপি ক্ষমতায় যাবে। এ কারণে তারা পিআর পদ্ধতিতে ভোটের কথা বলছে। প্রফেসর ইউনুসের সৃষ্টি এনসিপি নামে একটা দল আমাদেরকে জ্ঞান দেয়। আর একাত্তরে যাদের ভূমিকা স্বাধীনতার বিপক্ষে ছিল তারা দেশে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চায়।
উপদেষ্টা পরিষদের সমালোচনা করে মেজর হাফিজ বলেন, এক বছরে এই উপদেষ্টা পরিষদ কোন সংস্কার করতে পারে নাই। এক আসিফ নজরুল ছাড়া আর কেউ আন্দোলনে অংশ নেয় নাই। পুলিশ-মিলিটারি সরাসরি গুলি করে দেড় হাজার ছাত্র জনতাকে হত্যা করেছে। এই পুলিশ বাহিনীর অধিকাংশ সদস্যকে বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া দরকার ছিল। আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ নেওয়াদের মধ্য থেকে রিক্রুট করে পুলিশ বাহিনী রিফর্ম করা দরকার ছিল। সেনাবাহিনীর ভূমিকায় দু:খ প্রকাশ করে মেজর হাফিজ বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে এই বাহিনী আমরা গঠন করেছিলাম। কিন্ত হাসিনার পতনের সময় পলায়নরত মসজিদের খতিব, প্রধান বিচারপতি, পুলিশ অফিসার সহ অন্যান্য দুর্নীতিগ্রস্তদেরকে তারা আশ্রয় দিয়েছিল। হাসিনার শাসন প্রলম্বিত করতে তারা অনেক অন্যায় সুবিধা পেয়েছে।
বক্তব্যের শুরুতে মেজর হাফিজ বলেন, আমার বয়স এখন ৮১। শারীরিকভাবেও অসুস্থ। কিন্ত মুক্তিযোদ্ধাদের সামনে যখন কথা বলার সুযোগ আসে, আমি অনেক কথা বলে ফেলি। তিনি বলেন, নির্বাচনে বিজয়ী দল হিসেবে আওয়ামী লীগ পাকিন্তানের শাসন ক্ষমতায় যেতে চেয়েছিল। শেখ মুজিব কখনোই স্বাধীনতার কথা চিন্তা করে নাই। আওয়ামী লীগ নেতারা কলকাতার সার্কাস আর থিয়েটারে ব্যস্ত থেকেছে। মেজর জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণা শুনে এ দেশের ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট, ইপিআর এর সাথে সাধারণ লুঙ্গি পড়া, খালি গায়ে, মাতায় গামছা বাঁধা মানুষেরা জীবনবাজি রেখে মুক্তিযুদ্ধ করেছে। অথচ দেশ স্বাধীনের পর শহরের ফিটফাট পোশাকের সাহেবরা মুক্তিযোদ্ধা সেজে বসে। আওয়ামী লীগের দ্বারা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত হয়েছে। রাজনীতিবীদরা মুক্তিযোদ্ধাদের কখনো স্বীকৃতি দিতে চায়নি বলে অভিযোগ করেন তিনি।
বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় আজিজুল বারী হেলাল বলেন, তারেক রহমানের সাথে ড. ইউনুসের বৈঠকের পর নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা কেটেছে। কিন্ত কিছু কিছু রাজনৈতিক দল এখনও নির্বাচন নিয়ে গুপ্ত ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। তিনি বলেন, ২৬ সালের নির্বাচন যদি অংশগ্রহণমূলক না হয় তাহলে গণতন্ত্র স্বাধীনতা আবারও অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। ঢাকা বিশ্বদ্যিালয়ের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ডাকসু নির্বাচন হবে। সেখানে ছাত্রদল অংশ নেবে বলে ১৯ টি হলে ছাত্রদলের কমিটি ঘোষণা হয়েছে। ছাত্রদলের জনপ্রিয়তায় যারা ভীত, সেই গুপ্ত সংগঠন গত রাতে সেখানে চরম অশ্লীল ভাষায় মিছিল করেছে। তিনি ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনে যারা অংশ নিয়েছিলেন সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহবান জানান।