বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর (চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনে জামায়াত মনোনীত সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী) সাবেক ভিপি নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগের পাতানো নির্বাচনে জনগণ নয়, বিজয়ীদের প্রশাসন নির্বাচিত করেছিল’। প্রশাসনের রাতের ভোটের ঐ বিজয়, বিজয় নয়। জনগণ ঐ নির্বাচন বর্জন করেছিল।
তিনি বলেন, ২০১৪ সালের একতরফা নির্বাচন, ২০১৮ সালের রাতের ভোট, ২০২৪ সালের আমি-ডামি নির্বাচন ছিল প্রহসনের নির্বাচন। ‘আওয়ামী আমলের নির্বাচনে যারাই নির্বাচিত হয়েছে তাদেরকে প্রশাসন নির্বাচিত করেছিল’। ভোটের আগে প্রশাসনের (ডিসি-এসপির) সঙ্গে কোথায়, কখন, কারা গোপন বৈঠক করেছে তার তথ্য আমাদের জানা আছে। গোপন বৈঠক থেকেই নির্ধারণ করা হয়েছে ‘কে’ নির্বাচিত হবে, ‘কাকে’-‘কিভাবে’ বিজয়ী ঘোষণা করা হবে! প্রহসনের নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে আজকে কেউ কেউ অহংকার আর দাম্ভিকতার সাথে কথা বলতে শুনা যায়। কিন্তু এরা কখনোই জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়নি, হবেও না ইনশাআল্লাহ। কারণ জনগণ জানে কারা দুর্নীতিবাজ, সন্ত্রাসী, দখলবাজ, চাঁদাবাজ। জনগণ কখনোই দুর্নীতিবাজ, সন্ত্রাসী, দখলবাজ, চাঁদাবাজের ভোট দেয় না, দেবে না।
নিজ নির্বাচনী এলাকা চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনের রেহাইচর ভোট সেন্টারে শনিবার রাতে অনুষ্ঠিত যুব সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। এসময় তিনি আরও বলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জের যুব সমাজকে ধ্বংস করতে যারা যুব সমাজের হাতে মাদক ও অস্ত্র তুলে দিচ্ছে তাদেরকে সম্মিলিতভাবে প্রতিহত করতে হবে। যারা যুব সমাজকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে তাদেরকে ব্যালটের মাধ্যমে তাদেরকে বয়কট করতে হবে। তিনি উপস্থিত যুবকদের উদ্দেশ্যে বলেন, জামায়াতে ইসলামীতে মাদক, সন্ত্রাসের স্থান নাই। জামায়াতে ইসলামী যুব সমাজকে আদর্শিক ও নৈতিক মূল্যবোধের মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে কাজ করছে।
নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, জামায়াতে ইসলামী ক্ষমতায় গেলে বেকারত্ব দূরীকরণে যুব সমাজকে উদ্যোক্ত হিসেবে গড়ে তোলা হবে। যুব নারী-পুরুষকে কর্মমূখী প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে প্রত্যেককে জাতীয় সম্পদে রূপান্তরিত করা হবে। তিনি নির্বাচিত হলে, চাঁপাইনবাবগঞ্জের শান্তি-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় ভিলেজ পলিটিক্স বন্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহন করবেন। ঘরে বসেই উর্পাজনের সুযোগ পাবে চাঁপাইনবাবগঞ্জের প্রতিটি মানুষ। জনগণের কল্যাণে চাঁপাইনবাবগঞ্জের শহর ও গ্রামকে সমানভাবে গড়ে তোলা হবে। কৃষক, শ্রমিক, মেহনতি মানুষের কল্যাণে সকল বৈষম্যের শিকল ভেঙে দিয়ে দলমত, ধর্ম-বর্ণ, জাতি-গোষ্ঠী নির্বিশেষে সমান সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করা হবে। বিদেশগামীদের প্রতারণার হাত থেকে রক্ষা করতে রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায় পদক্ষেপ নেওয়া হবে। যেই পদক্ষেপের ফলে কেউ বিদেশে যাওয়ার জন্য অগ্রিম টাকা দিয়ে প্রতারিত হবে না। বিদেশে যেতে না পারলে বিদেশগামীর টাকা অটোমেটিক ভাবে সে ফেরত পাবে। মহানন্দা ও পদ্মা নদী ভাঙ্গন রোধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহন করে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলা হবে৷ বিশুদ্ধ পানির অভাব দূর করা হবে। ছাত্র ও তরুণ যুব সমাজের নেতৃত্বে নতুন বাংলাদেশের রোল মডেল হিসেবে চাঁপাইনবাবগঞ্জকে গড়ে তোলা হবে। এজন্য যুব সমাজকে জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্বে এগিয়ে আসতে তিনি আহ্বান জানান।
এর আগে বিকেলে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার ১৩ নং ওয়ার্ডের রেহাইচর ভোট সেন্টারে অনুষ্ঠিত নারী সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় নারী সমাজ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। নারীদের ভোটের মাধ্যমেই সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, দখলবাজ, অস্ত্রবাজ, দুর্নীতিবাজদের পরাজিত করতে হবে। তিনি উপস্থিত নারীদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘‘যারা রাজনীতির নামে আপনার সন্তানের হাতে অস্ত্র তুলে দেয়, মাদক তুলে দেয়, আপনার সন্তানের রক্ত ও লাশ নিয়ে রাজনীতি করে আপনি তাদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখনই সময়’’। সন্তানের ভবিষ্যৎ ও আগামীর নিরাপদ বাংলাদেশের জন্য নিরাপদ চাঁপাইনবাবগঞ্জ গড়তে তিনি চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনের মা-বোনদের ইসলামের পক্ষে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ইসলামী সমাজ বিনির্মাণ হলে সমাজের প্রতিটি মানুষ নিরাপদ ও স্বাধীনভাবে বেঁচে থাকার সুযোগ পাবে। ইসলামী সমাজ প্রতিষ্ঠা হলে সামাজিক কলহ দূর হবে। সমাজে শান্তি ফিরে আসবে। মানুষের মৌলিক অধিকার ও ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা হবে।
তিনি আরও বলেন, বিগত ১৭ বছর আওয়ামী সরকারের জুলুম নির্যাতনের পরেও তাঁকে একদিনের জন্যও জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন করা যায়নি। সবসময় নিজে জনগণের সামনে হাজির হতে না পারলেও জনগণের যেকোনো প্রয়োজনে তিনি নিজেকে ভিন্নভাবে, ভিন্ন কায়দায়, ভিন্ন কৌশলে জনগণের সামনে হাজির করেছে, জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছি। জনগণের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে বিভিন্ন মেডিকেল ক্যাম্প পরিচালনা করে বিনামূল্যে স্বাস্থ্য সেবা এবং ঔষধ সরবরাহ করা হয়েছে। উন্নত চিকিৎসার জন্য রোগীদের হাসপাতালে নিতে নিজস্ব ১০ টি এ্যাম্বুলেন্সের মাধ্যমে সার্ভিস দেওয়া হচ্ছে। বেকারত্ব দূরীকরণে যুবকদের কর্মমূখী প্রশিক্ষণ প্রদান এবং নারীদের উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলতে বিনামূল্যে সেলাই মেশিন বিতরণ, গবাদি পশু বিতরণ করা সহ ব্যাপক ভিত্তিক কর্মসূচি চলমান রয়েছে। খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসা মানুষের মৌলিক অধিকার। এই মৌলিক অধিকার রাষ্ট্র কর্তৃক নিশ্চিত করার কথা থাকলেও স্বাধীনতার ৫৪ বছরেও মানুষের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত হয়নি। জামায়াতে ইসলামী ক্ষমতায় গেলে সবার আগে মানুষের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করা হবে। তাই তিনি স্থানীয়দের জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্বে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।