বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি ড. এ এইচ এম হামিদুর রহমান আজাদ বলেন, বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে প্রতিবারের নির্বাচনের পরই প্রশ্ন থেকে যায়, জনগণের মতামত সঠিকভাবে প্রতিফলিত হয় না। বর্তমান সংখ্যাগরিষ্ঠ ভিত্তিক নির্বাচনী ব্যবস্থা জনগণের একটি বৃহৎ অংশকে প্রতিনিধিত্বহীন করে রেখেছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের একমাত্র পথ হলো প্রোপোরশনাল রিপ্রেজেন্টেশন (পিআর) পদ্ধতি গ্রহণ করা। আমরা পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, দেশের জনগণ আর এই বৈষম্যমূলক নির্বাচন পদ্ধতি মেনে নেবে না। পিআর পদ্ধতি এখন সময়ের দাবি, জনগণের দাবি এবং গণতন্ত্র রক্ষার দাবি। আমি সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি, জনগণের রায়ের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে অবিলম্বে পিআর পদ্ধতি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিন। একই সাথে আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে পিআর পদ্ধতি বাস্তবায়নের বিষয়ে জনগণের মতামত জানতে একটি গণভোট (Referendum) আয়োজন করুন। অন্যথায়, এই দাবি আদায়ের জন্য জনগণকে সঙ্গে নিয়ে রাজপথেই আমরা এর চূড়ান্ত সমাধান করব ইনশাআল্লাহ।

৫ দফা গণদাবী আদায়ের লক্ষ্যে চট্টগ্রাম মহানগরী জামায়াতে উদ্যোগে আয়োজিত চট্টগ্রাম ওয়াসার মোড়ে এক মানববন্ধনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, পিআর পদ্ধতিতে প্রতিটি রাজনৈতিক দল সংসদে আসন পাবে তাদের মোট ভোটের আনুপাতিক ভিত্তিতে। এতে কোনো ভোট নষ্ট হবে না, ছোট-বড় সব দলই জনগণের প্রকৃত সমর্থনের অনুপাতে প্রতিনিধিত্ব পাবে। এটি শুধু ন্যায়সংগত নয়, বরং জাতীয় ঐক্য ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠার জন্য অপরিহার্য। বর্তমান ব্যবস্থায় দেখা যাচ্ছে, অনেক সময় অল্পসংখ্যক ভোট পেয়ে কোনো দল বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে, আর প্রকৃত জনপ্রিয়তা থাকা দলগুলো সংসদের বাইরে থেকে যায়। এই অবিচার যতদিন থাকবে, ততদিন দেশে প্রকৃত গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হবে না।

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্য, চট্টগ্রাম মহানগরীর ভারপ্রাপ্ত আমীর পরিবেশবিদ মুহাম্মদ নজরুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও মহানগরী সেক্রেটারি ও চট্টগ্রাম-২ ফটিকছড়ি আসনের সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী অধ্যক্ষ মুহাম্মদ নুরুল আমিনের পরিচালনায় উক্ত মানববন্ধনে আরও বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্য ও চট্টগ্রাম মহানগরীর এসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি মোহাম্মদ উল্লাহ, ফয়সাল মুহাম্মদ ইউনুস, নগর সাংগঠনিক সম্পাদক, সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও চট্টগ্রাম ১০ আসনের সংসদ সদস্য পদ প্রার্থী অধ্যক্ষ শামসুজ্জামান হেলালী, নগর শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সভাপতি এস এম লুৎফুর রহমান প্রমুখ।

সভাপতির বক্তব্যে মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম বলেন, জুলাই সনদকে আইনী মর্যাদা দিতে জাতীয় নির্বাচনের আগেই গণভোট দিতে হবে। বাংলাদেশে আলাদাভাবেই গণভোট আয়োজনের নজির রয়েছে। একসাথে জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট আয়োজনের দাবি বিভ্রান্তিমূলক। ১৯৭৭ সালে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়া ‘রাষ্ট্রপতি আস্থা গণভোট’ এবং ১৯৯১ সালে বেগম খালেদা জিয়ার আমলে সংসদীয় পদ্ধতির সরকার প্রবর্তনের লক্ষ্যে ‘সাংবিধানিক গণভোট’ আয়োজন করেছিলেন। এছাড়া স্বৈরাচারী এরশাদ শাহীও ১৯৮৫ সালে ‘প্রেসিডেন্ট আস্থাভোট’ এর গণভোট করেছিলেন। ডক্ট্রিন অব নেসেসিটি বা সময়ের প্রয়োজনে প্রভিশনাল সাংবিধানিক আদেশের সুযোগও রয়েছে। ১৯৭০ সালে পাকিস্তানের সংহতি রক্ষার ওয়াদা দিয়ে নির্বাচিত ন্যাশনাল এসেম্বলী এবং প্রভিশনাল এসেম্বলীতে নির্বাচিত সদস্যদের নিয়ে গণপরিষদ গঠন করে ১৯৭২ সালের ৪ নভেম্বর বাংলাদেশের সংবিধান সত্যায়ন করা হয়েছিল। ডক্ট্রিন অব নেসেসিটি অনুযায়ী বিচারপতি শাহাবুদ্দিন এর নেতৃত্বে গঠিত কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে ১৯৯১ সালের নির্বাচনও অনুষ্ঠিত হয়েছিল। কাজেই জাতীয় ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে প্রভিশনাল সাংবিধানিক আদেশে জুলাই সনদকে আইনী মর্যাদা দেয়ার সুযোগও রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, ফ্যাসিস্ট আওয়ামীলীগের সহযোগী জাপা ও ১৪ দলের রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে হবে। পালিয়ে যাওয়া স্বৈরাচার বা দোসররা ভিন্ন নামে বা অন্য কোন দলের প্রার্থীদের উপর সওয়ার হয়ে আসার পথও রুদ্ধ করতে হবে। নমিনেশন বাণিজ্য, কালোটাকা ও পেশিশক্তির ব্যবহার রোধ করতে উভয় কক্ষে সংখ্যানুপাতিক হারে (পিআর) নির্বাচন করতে হবে। প্রতিটি ভোট, প্রত্যেক প্রার্থী এবং ছোট-বড় প্রতিটি দলের মর্যাদা নিশ্চিত করতে পিআর সিস্টেমই একমাত্র বিকল্প। এস আলমের সরাসরি সহযোগী প্রেসিডেন্ট শাহাবুদ্দিন চুপ্পু সংবিধানের ৫২ ধারার ১ নং উপধারা মতে গুরুতর অপরাধ করেছেন। প্রেসিডেন্টকে অপসারণ এবং অনুপ চেটিয়াকে ফেরত দেয়ার প্রত্যাবাসন চুক্তি বলে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনাকে ফেরত আনতে হবে। খুনি ও লুটেরাদের বিচার দৃশমান করার ধারাকে আরো জোরদার করতে হবে। এরপর, নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী কোনো একটি দল বা প্রার্থীর প্রতি বিশেষ পক্ষপাতিত্ব বা বৈষম্য করা চলবে না। সকল প্রার্থীর জন্য নির্বাচনি আচরণবিধি, সুযোগ-সুবিধা এবং নিরাপত্তা সমানভাবে নিশ্চিত করে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করেই জাতীয় নির্বাচন করতে হবে।

মানববন্ধনে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্য চট্টগ্রাম মহানগরীর এসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি অধ্যক্ষ মাওলানা খাইরুল বাশার, নগর কর্মপরিষদ সদস্য আবু হেনা মোস্তফা কামাল, হামেদ হাসান ইলাহী, মাওলানা মমতাজুর রহমান, প্রফেসর মুহাম্মদ সাইফুল্লাহ, অধ্যক্ষ মাওলানা জাকের হোসাইন, আমির হোছাইন, ফখরে জাহান সিরাজী প্রমুখ।

উল্লেখ্য, মানববন্ধনটি মুরাদপুর থেকে শুরু হয়ে ২নং গেইট, জিইসি মোড়, ওয়াসা মোড়, লালখানবাজার, টাইগারপাস, দেওয়ানহাট মোড় হয়ে আগ্রাবাদ বাদামতলা মোড় পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। এই কর্মসূচিতে জামায়াতে ইসলামী নেতাকর্মীদের পাশাপাশি বিপুল সংখ্যক সাধারণ জনগণও স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করেন।