কবির আহমদ, সিলেট

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রধান দুটি দল বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)-র দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন ইতিমধ্যে দেয়া হয়েছে। সিলেটের ৬টি সংসদীয় আসনে তফসিল ঘোষণার পূর্বে উভয়দল এবং তাদের শরীকরা নির্বাচনি প্রচার-প্রচারণা ব্যাপক হারে চালিয়েছেন। কিন্তু নির্বাচন আচরণবিধি ভঙ্গ করে বিএনপি গত সোমবারও বিজয় দিবসের র‌্যালির নামে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে সিলেট-১ আসনের বিএনপি মনোনীত প্রার্থী খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির শোডাউন করেছেন, কুড়িয়েছেন ব্যাপক সমালোচনা। সিলেটের ৬টি আসনের প্রতিটি আসনে বিএনপির তৃণমূল নেতাকর্মীদের মতামতকে উপেক্ষা করে প্রার্থী মনোনয়ন করেছে দলের হাই কমান্ড। বিশেষ করে সিলেট-৩ আসনে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার প্রার্থী হিসেবে মনোনীত প্রার্থীকে প্রত্যাখ্যান করে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা অন্য প্রার্থীর অপেক্ষায় রয়েছে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীরা দলের হাই কমান্ডের সিদ্ধান্তকে ইতিবাচক স্বাগত জানিয়ে স্থানীয় জনগণকে সাথে নিয়ে সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে। প্রার্থী নিয়ে তাদের মধ্যে নেই কোন মতপার্র্থক্য, নেই কোন কোন্দল।

প্রতিটি আসনে জামায়াতের প্রার্থীর পাশাপাশি বিএনপির প্রার্থীরা অত্যন্ত সক্রিয় হলেও তৃণমূল পর্যায়ে বিএনপির প্রার্থী নির্ধারণে অনিশ্চয়তা থাকায় জামায়াতের প্রার্থীরা রয়েছেন সুবিধাজনক অবস্থানে। অনেক আসনে জামায়াতে’র সমমনা ৮ দলীয় জোটের প্রার্থিকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে বলে বেশ কয়েকদিন যাবৎ সিলেটে প্রচার করা হলেও এটাকে গুজব বলে উড়িয়ে দিয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্ম পরিষদ সদস্য ও সিলেট মহানগর জামায়াতের আমীর মোঃ ফখরুল ইসলাম। তিনি জানান, এখনও জামায়াতে ইসলামীসহ ৮ দলের প্রার্থীদের মধ্যে কোন আসন ভাগাভাগি হয়নি, জামায়াত মনোনীত প্রার্থীরা সিলেটের ৬টি আসনেই জনগণকে সাথে নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। অপরদিকে বিএনপি নেতাকর্মীরা অভ্যন্তরীণ কোন্দলে এখনও জড়িত রয়েছেন।

নির্বাচনকে সামনে রেখে এ আসন গুলোতে বিএনপি ও জামায়াতের পাশাপাশি এনসিপি, জমিয়ত, খেলাফত মজলিস, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশসহ অন্যসব দলের নেতাকর্মীরা মাঠে নেমেছেন। বিভিন্ন ধরনের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, খোলাধুলায় তারা অংশ নিচ্ছেন। জোট বেঁধে নেতাকর্মীরা ভোটারদের দ্বারে দ্বারে যাচ্ছেন। এরপরেও প্রত্যন্ত অঞ্চলের ভোটাররা বলছেন, জামায়াত বাদে সকল দলের প্রার্থীকে তারা বারবার এমপি হিসেবে দেখেছেন, এবারের নির্বাচনের জামায়াতের প্রার্থীদের সংসদে পাঠাতে চান।

সিলেটের ছয়টি সংসদীয় আসনের মধ্যে ইতোমধ্যে প্রার্থী ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী তবে বিএনপি ৫টি আসনে প্রার্থী ঘোষণা করলেও সিলেট-৫ (কানাইঘাট-জকিগঞ্চ) আসনে জমিয়তে উলামা ইসলামের সাথে দেন-দরবার চলছে। সিলেট-১

মর্যাদাপূর্ণ সিলেট-১ আসনে তফসিল ঘোষণার আগে দিনরাত প্রচারণায় ব্যস্ত ছিলেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসের শূরা সদস্য ও সিলেট জেলা জামায়াতের আমীর মাওলানা হাবিবুর রহমান। তিনি সিলেট নগর ও সদর এলাকায় নির্বাচন করবেন। মাওলানা হাবিবুর রহমান ছিলেন সিলেট সরকারি আলিয়া মাদরাসার নির্বাচিত ভিপি, নগরীর মিরাবাজার জামেয়া ইসলামিয়া স্কুল এন্ড কলেজের সাবেক শিক্ষক এছাড়া বর্তমানে তিনি বৃহত্তর সিলেটের চিকিৎসা ক্ষেত্রে আলোড়ন সৃষ্টিকারী মানবসেবার ব্রত প্রতিষ্ঠান ইবনে সিনা হাসপাতাল সিলেট লিমিটেড এর ম্যানেজম্যান্ট কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োজিত আছেন। এক্ষেত্রে নগর ও সিলেটজুড়ে রয়েছে তার ব্যাপক পরিচিতি। নগরবাসী মনে করছেন এধরনের লোক নির্বাচিত হলে সিলেট জুড়ে উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাবে। তাই নগরবাসীকে প্রথমবারের মতো নির্বাচনের মাঠে মাওলানা হাবিবুর রহমানকে যেভাবে সক্রিয় দেখছে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তাকে নির্বাচিত করে সিলেট-১ আসনকে উন্নয়নের রোলমডেল হিসেবে দেখতে চায় সিলেটের ভোটাররা।

পক্ষান্তরে, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার আবদুল মুক্তাদির প্রচার প্রচারণায় সক্রিয় থাকলেও দীর্ঘদিন থেকে এ আসনে নির্বাচন করবেন বলে ঘোষণা দিয়ে আসছিলেন বিএনপির চেয়ারপার্সনের আরেক উপদেষ্টা সিলেট সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। তার সাথে অনেক সিনিয়র নেতা ও সিলেটের বিশিষ্টজনেরা ছিলেন। আরিফুল হক চৌধুরী মনোনয়ন না পাওয়ায় এসমস্ত বিশিষ্টজনকে খন্দকার আব্দুল মুক্তদিরের সাথে দেখা যাচ্ছে না। ফলে সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছেন জামায়াতের প্রার্থী মাওলানা হাবিবুর রহমান। বিশেষ করে গত সোমবার বিজয় দিবসের র‌্যালির নামে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে শোডাউন করায় তোপের মুখে পড়েছেন বিএনপি প্রার্থী ও তাদের নেতাকর্মীরা।

এ আসনে জমিয়ত থেকে দলের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আব্দুল মালিক চৌধুরী, খেলাফত মজলিস থেকে সিনিয়র নেতা মাওলানা তাজুল ইসলাম, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস থেকে দলের সিলেট জেলার সাধারণ সম্পাদক প্রিন্সিপাল ফখরুল ইসলাম ও ইসলামী আন্দোলনের একাংশ থেকে প্রার্থী হয়েছেন মুফতি ফয়জুল হক জালালাবাদী প্রার্থী হিসেবে মাঠে রয়েছেন। তবে তাদের প্রচার প্রচারণা চোখে পড়ছে না।

সিলেট-২

গুম হওয়া বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহসিনা রুশদীর লুনা এ আসনে প্রার্থী হয়েছেন। তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী জামায়াতের কেন্দ্রীয় শূরা সদস্য ও সিলেট জেলা জামায়াতের নায়েবে আমীর অধ্যাপক আব্দুল হান্নান যার ছাত্র ও দলীয় নেতাকর্মীর পাশাপাশি প্রবাসী অধ্যুষিত বিশ^নাথ, ওসমানীনগর ও বালাগঞ্জ একাংশের জনগণ মাঠে ব্যাপক সক্রিয় রয়েছেন। জনগণ আশা করছে নির্বিবাধী স্বজ্জ্বন মানুষ অধ্যাপক আব্দুল হান্নান এ অঞ্চলের মানুষের সুখ দুখের কথা জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করে জনগণের কল্যাণে কাজ করতে পারবেন। এছাড়াও খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় যুগ্ম-মহাসচিব মুহাম্মদ মুনতাসির আলীও প্রচারণায় যুক্ত রয়েছেন।

এ ছাড়াও ইসলামী দলের মধ্যে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম সংগঠনের যুক্তরাজ্য শাখার সহ সভাপতি মাওলানা হোসাইন আহমদ, ইসলামী আন্দোলন সংগঠনের বিশ্বনাথ উপজেলা শাখার সভাপতি মাওলানা মোহাম্মদ আমীর উদ্দিন, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস মনোনীত প্রার্থী যুক্তরাজ্য প্রবাসী ডক্টর মুফতি হাফিজ লুৎফুর রহমান ক্বাসিমী, নতুন নিবন্ধিত দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) থেকে প্রার্থী হচ্ছেন যুক্তরাজ্য প্রবাসী ব্যারিষ্টার আব্দুস শহিদ, বাংলাদেশ আমজনগণ পার্টির সিলেট জেলা শাখার আহবায়ক রোটারিয়ান মিছবাহ উদ্দিন এবং গণঅধিকার পরিষদের নেতা জামান সিদ্বিকী প্রার্থীতার জোর গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। যদিও এদের কেউ এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে প্রার্থিতা ঘোষণা করেননি, তবুও সম্ভাব্য প্রার্থীদের নিয়ে ভোটারদের মাঝে আলোচনা চলছে।

সিলেট-৩

সিলেট-৩ আসনে জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী দক্ষিণ সুরমা উপজেলা পরিষদের প্রথম নির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যান মাওলানা লোকমান আহমদ মনোনয়ন পেয়েছেন। তিনি আবার সিলেট বাস-মালিক সমিতির সভাপতিও। তাকে নিয়ে সাধারণ মানুষের পাশাপাশি শ্রমিকরাও পুরোদমে নির্বাচিত করার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছেন। তারা মনে করছে মাওলানা লোকমান আহমদ একজন আলেমে দ্বীন পাশাপাশি শ্রমিকবান্ধব মানুষ। তিনি এমপি নির্বাচিত হলে দক্ষিণ সুরমা, ফেঞ্চুগঞ্জ ও বালাগঞ্জের একাংশের জনগণের কল্যাণে কাজ করতে পারবেন। এ অঞ্চলের মানুষ তাকে এমপি নির্বাচিত করতে বদ্ধ পরিকর। পক্ষান্তরে এ আসনে বিএনপির দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি এম এ মালিক, তবে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা তাকে মানতে নারাজ। তার সমাবেশে ভুয়া ভুয়া স্লোগান দিয়ে সমাবেশ পন্ড করার এমন নজীরও রয়েছে ফেঞ্চুগঞ্জে। এ আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের উপদেষ্টা ব্যারিষ্টার আব্দুস সালাম ও সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী। তৃণমূল নেতাকর্মীদের এমন চাওয়াও ছিলো দলীয় হাই কমান্ডের কাছে। নেতাদের ২ জন থেকে ১ জনকে মনোনয়ন না দেয়ায় চরম হতাশা বিরাজ করছে এ অঞ্চলের বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে। ফলে মাওলানা লোকমান আহমদই এ অঞ্চলে আগামী দিনের কান্ডারী।

জামায়াতে ইসলামীর শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত এই আসনে বিএনপির প্রতিদ্বন্দ্বী মাওলানা লোকমান আহমদ। তিনি দক্ষিণ সুরমা উপজেলা চেয়ারম্যান হিসেবে দুই মেয়াদে দায়িত্ব পালন করেছেন। তার রয়েছে পরিবহন সেক্টরে প্রভাব, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় ভূমিকা এবং নিজস্ব একটি বড় ভোট ব্যাংক। রাজনৈতিক মহলের বিশ্লেষণ অনুযায়ী, দক্ষিণ সুরমা ও ফেঞ্চুগঞ্জে জামায়াতের তৃণমূলভিত্তি এখন আগের চেয়ে শক্তিশালী।

এ আসনে অন্যান্য দলগুলোরও তৎপরতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের কেন্দ্রীয় সংখ্যালঘু বিষয়ক সম্পাদক মাওলানা নজরুল ইসলাম, খেলাফত মজলিসের মাওলানা দিলওয়ার হোসাইন, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মাওলানা লুৎফুর রহমান কাসেমী এবং ইসলামী আন্দোলনের মাওলানা রেজাউল হক চৌধুরী রাজু নিজ নিজ দলের প্রার্থী হিসেবে মাঠে কাজ করছেন। তারা প্রত্যেকেই স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী এবং নিজেদের রাজনৈতিক অবস্থান দৃঢ় করতে মাঠে সক্রিয় রয়েছেন। এছাড়া এ আসনে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-এর কেন্দ্রীয় সদস্য ব্যারিস্টার নুরুল হুদা জুনেদ-এর নামও সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় রয়েছে। তিনি স্থানীয়ভাবে তরুণ প্রজন্মের কাছে পরিচিত মুখ।

সিলেট-৪

সিলেটের সীমান্তবর্তী জৈন্তাপুর, গোয়াইনঘাট ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নিয়ে সিলেট-৪ আসন। এই অঞ্চলের মানুষ তারই এলাকার সন্তানকে জনপ্রতিনিধি বানাতে খুবই পছন্দ করে। বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আরিফুল হক চৌধুরী এই আসনের প্রার্থী হওয়ায় বিএনপির নেতকর্মীরা তার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। আরিফুল হক চৌধুরীর বাড়ি মৌলভীবাজারে হওয়ায় এবং তিনি সিলেটের সাবেক মেয়র হওয়ায় তাকে ভালো চোখে দেখছেন না সীমান্তবর্তী তিন উপজেলার জনগণ। পক্ষান্তরে এই অঞ্চলের জনপ্রতিনিধি হিসেবে সংসদে পাঠাতে চাচ্ছেন জৈন্তার রাখাল রাজা, জৈন্তাপুর উপজেলা পরিষদের দুই বারের নির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যান, সিলেট জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি আলহাজ¦ জয়নাল আবেদীনকে। আর এই আসনেই সবচেয়ে বেশি সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছেন জামায়াত প্রার্থী জয়নাল আবেদীন। গত সপ্তাহে আরিফুল হককে ভুয়া ভুয়া আখ্যা দিয়ে স্থানীয় জনগণ তার গাড়ি বহরে হামলা করেছে। তবে এই ধরনের হামলাকে ন্যক্কারজনক বলে অভিহিত করেছেন জামায়াত প্রার্থী জয়নাল আবেদীন। এই আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন গোয়াইনঘাট উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান, বিএনপি নেতা আব্দুল হাকিম চৌধুরী। তাকে বিএনপির মনোনয়ন না দেয়ায় বিএনপি পরিবারে দেখা দিয়েছে চরম হতাশা। বিএনপি মনোনীত প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরীর সাথে দলীয় নেতাকর্মীদের দেখাই যাচ্ছে না। পক্ষান্তরে সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছেন জামায়াত প্রার্থী জয়নাল আবেদীন। সম্প্রতী কোম্পানীগঞ্জে তার সমাবেশে ডাকসু ভিপি আবু সাদিক (সাদিক কায়েম) প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখায় সীমান্তবর্তী এলাকায় জামায়াত প্রার্থীর জনপ্রিয়তা বেড়েছে আরও ব্যাপক হারে।

এ ছাড়া মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মিফতাহ সিদ্দিকীও জেলা বিএনপির উপদেষ্টা হেলাল উদ্দিন আহমেদ। অন্যান্য মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক এডভোকেট শামসুজ্জামান জামান, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের কেন্দ্রীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার কামরুজ্জামান সেলিম ও যুক্তরাজ্য প্রবাসী বিএনপি নেতা আবদুল হক, এনসিপি নেতা প্রকৌশলী রাশেল উল আলম, খেলাফত মজলিস সংগঠনটির কেন্দ্রীয় নেতা মুফতি আলী হাসান উসামা, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম এডভোকেট মোহাম্মদ আলী, ইসলামী ঐক্যজোট মাওলানা নাজিম উদ্দিন কামরান ও ইসলামী আন্দোলন সাঈদ আহমদ এ আসনে সক্রিয় রয়েছেন।

সিলেট-৫

জকিগঞ্জ, কানাইঘাট সীমান্তবর্তী এই দুই উপজেলা নিয়ে সিলেট-৫ আসন। ৪ দলীয় জোট সরকারের সময় এই আসনের নির্বাচিত সংসদ সদস্য ছিলেন মাওলানা ফরিদ উদ্দিন চৌধুরী। বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের সময় এই আসনে এমপি ছিলেন হাফিজ আহমদ মজুমদার। তবে জনগণ থেকে তিনি ছিলেন বিচ্ছিন্ন। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামী তাদের এই আসন ফেরত পেতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। এই আসনে জামায়াত প্রার্থী করেছে এই অঞ্চলের মাটি ও মানুষের নেতা সিলেট জেলা জামায়াতের নায়েবে আমীর ও কেন্দ্রীয় মজলিসের শূরা সদস্য হাফিজ মাওলানা আনোয়ার হোসেন খানকে। তিনি একজন স্বজ্জ¦ন নির্বিবাদী আলেমে দ্বীন। এই আসনে খুবই ভালো অবস্থানে রয়েছেন আনোয়ার হোসেন খান। পক্ষান্তরে এই আসনে বিএনপি এখনও প্রার্থী ঘোষণা করেনি। দলীয় নেতাকর্মীদের প্রত্যাশা জোট হলে আসনটি জমিয়তে উলামায়ে ইসলামকে ছাড়তে পারে বিএনপি। জমিয়তের কেন্দ্রীয় সভাপতি মাওলানা উবায়দুল্লাহ ফারুক ইতোমধ্যেই প্রচারণা শুরু করেছেন। জামায়াতের মনোনীত প্রার্থী মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন হাফিজ মাওলানা আনোয়ার হোসেন খান। বিএনপি কিংবা জোটের প্রার্থী এখন ঘোষণা না করায় এ আসনে এককভাবেই কাজ করে যাচ্ছে জামায়াতে ইসলামী। এ আসনেই বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকুর রহমান পাপলু, জেলা বিএনপির সহসভাপতি মামুনুর রশিদও (চাকসু মামুন) বেশ আলোচনায় রয়েছেন। চাকসু মামুন দলীয় কর্মকান্ডের পাশাপাশি স্থানীয় বিভিন্ন জনগুরুত্বপূর্ণ ইস্যু নিয়ে নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন। সড়ক সংস্কার, নদী ভাঙনরোধ ও বেড়িবাঁধ নির্মাণসহ বিভিন্ন ইস্যুতে সরব হয়ে তিনি নির্বাচনী এলাকার মানুষের মনজয়ের চেষ্টা করছেন।

আসনটিতে মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে কাজ করে যাচ্ছেন সিলেট জেলা বিএনপির উপদেষ্টা আশিক উদ্দিন চৌধুরী, সংযুক্ত আরব আমীরাত বিএনপির আহ্বায়ক জাকির হোসেন, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক মাহবুবুল হক চৌধুরী, জেলা কৃষক দলের আহ্বায়ক ইকবাল আহমদ তাপাদার, যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির সহসভাপতি শরীফ আহমদ লস্কর, আবুল হারিছ চৌধুরী কন্যা ব্যারিস্টার সামিরা তানজিন চৌধুরী ও কেন্দ্রীয় মহিলা দলের প্রচার সম্পাদক লুৎফা খানম চৌধুরী স্বপ্না, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমীর মাওলানা রেজাউল করিম জালালী, খেলাফত মজলিস সিলেট জেলা শাখার উপদেষ্টা মুফতি আবুল হাসান, ইসলামী আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নেতা রেজাউল করীম আবরার।

সিলেট-৬

শিক্ষা দীক্ষায় উন্নত প্রবাসী অধ্যুষিত গোলাপগঞ্জ ও বিয়ানীবাজার দুটি উপজেলা নিয়ে সিলেট-৬ আসনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি, ঢাকা মহানগরী উত্তর জামায়াতের আমীর মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন। তাকে নিয়ে এ অঞ্চলের মানুষ খুবই আশাবাদী। দীর্ঘদিন এ অঞ্চলে সংসদ সদস্য ছিলেন ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার মনোনীত প্রার্থী বহুল সমালোচিত সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। এই ফ্যাসিস্টের জন্য এই এলাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ এই অঞ্চলের জনপদ বিনষ্ট হয়েছে। এই অঞ্চলের মানুষ মনে করছে কারা নির্যাতিত জামায়াত মনোনীত প্রার্থী সেলিম উদ্দিনই এই এলাকার উন্নয়নের জন্য যোগ্য ব্যাক্তি। আর তাকেই নির্বাচিত করতে চায় গোলাপগঞ্জ ও বিয়ানীবাজার অঞ্চলের মানুষ। ইতিমধ্যে বিশ^ ইসলামী আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা আমীরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমান বেশ কয়েকবার সমাবেশ করে মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিনের জন্য ভোট চেয়েছেন দাঁড়িপাল্লার সমর্থনে সমাবেশ করে ব্যাপক আলোচনায় এনেছেন জামায়াত প্রার্থীকে। পক্ষান্তরে সিলেট জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এমরান আহমদ চৌধুরীকে বিএনপি মনোনয়ন দিলেও এ অঞ্চলের মানুষের প্রিয় নেতা ৩ বারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা ডা. এনামুল হক চৌধুরীকে মনোনয়ন না দেয়ায় নাখোশ রয়েছেন এ অঞ্চলের নেতাকর্মীরা। সাবেক এমপি প্রার্থী বিএনপি নেতা ফয়ছল আহমদ চৌধুরী ধানের শীষের মনোনয়ন না পাওয়ায় তার গ্রুপও বিএনপি মনোনীত প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছে না। তবে ২০১৮ সালের বিএনপি প্রার্থী ফয়সল আহমদ চৌধুরীর অনুসারীরা এখনও মনোনয়ন পুনর্বিবেচনার দাবি করছেন।

এ আসনে জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগর উত্তরের আমীর মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিনকে দলীয় প্রার্থী মনোনীত করেছে। তিনি দাঁড়িপাল্লা প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তিনি বলেন, ‘কুরআন-সুন্নাহর আলোকে আদর্শ সমাজ গঠনে আমরা কাজ করছি। বিজয়ী হলে বিয়ানীবাজার-গোলাপগঞ্জকে আধুনিক ও আদর্শ জনপদে রূপান্তরিত করব।” এ আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশি হিসেবে ফয়সল আহমদ চৌধুরী, ড. এনামুল হক চৌধুরী, আবুল কাহের চৌধুরী শামীম, ওহিদ আহমদ, সৈয়দা আদিবা হোসেন, তামিম এহিয়া ও হেলাল খান এলাকায় কাজ করছেন।

এ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন জমিয়তের মাওলানা ফখরুল ইসলাম, খেলাফত মজলিসের প্রার্থী মাওলানা সাদিকুর রহমান, গণঅধিকার পরিষদ থেকে জাহিদুর রহমান ট্রাক প্রতীকে নির্বাচন করছেন।