বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আগামী নির্বাচনকে ঘিরে আমরা কাজ শুরু করেছি। আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আমাদেরকে নির্দেশনা দিচ্ছেন। সে অনুযায়ী আমরা কাজ করছি। আমাদের সঙ্গে যারা রাজপথে লড়াই করেছেন, সংগ্রাম করেছেন, সেই রাজনৈতিক দলের সাথে আমরা সুসম্পর্ক রাখছি। সবাই মিলে আমরা গণতন্ত্র ও দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই। আপনার জানেন, বর্তমান অন্তবর্তী সরকার কর্তৃক গঠিত সংস্কার কমিশনে জুলাই সনদ প্রণয়ন করা হয়েছে। আমরা যারা এর বিষয় বস্তুর সাথে একমত হয়েছি, তারা আগামী ১৭ অক্টোবর শুক্রবার সেই জুলাই সনদে স্বাক্ষর করব। অঅর যেসব বিষয়ে আমরা একমত হতে পারিনি, সেসব বিষয় নির্বাচনের পর সংসদে নির্ধারিত হবে। এবং রাজনৈতিক দলগুলো এ বিষয়গুলোকে নিয়ে জনগণের সাথে কথা বলবে। এবং জনগণের মতামতের ভিত্তিতে সেগুলো নিষ্পত্তি হবে। মঙ্গলবার বিকালে ঠাকুরগাঁও শহরের শিল্পকলা মিলনায়তনে সদর উপজেলা ও রুহিয়া থানা বিএনপির বর্ধিত সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, বিষয় পরিস্কার করে বলতে চাই, গণতন্ত্রের কোন বিকল্প নাই। গণতন্ত্রের বিকল্প গণতন্ত্রই। সুতরাং গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে আমাদের রাষ্ট্র পরিচালনা করার ব্যবস্থা করতে হবে। গণতন্ত্রের সবচেয়ে বড় সৌন্দর্য হচ্ছে, সেখানে শত ফুল ফুটবে, কিন্তু সৌরভ হবে একটাই, তা হলো গণতন্ত্র। অর্থাৎ অনেক মতামত থাকবে, সমস্ত মতামত গুলো একটা জায়গয় এসে মিলিত হবে। আগামী নির্বাচন আমাদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এর মধ্যদিয়ে আবার আমরা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ফিরে আসতে চাই। আমাদের মানুষ নির্বাচন চায়, তারা এ ১৬ বছর যে ভোট দিতে পারেনি, আবার তারা ভোট দিয়ে তাদের নিজেদের প্রতিনিধি নির্বাচিত করতে চায়। নিজস্ব সরকার তৈরী করতে চায়। সেই পার্লামেন্ট এবং সেই সরকারের মাধ্যমে বাংলাদেশের অর্থনীতিকে আবার সচল করে একটা সমৃদ্ধশালী গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ নির্মান করতে চায়। দুর্ভাগ্যক্রমে আমাদের অনেকই যারা লড়াই করেছেন, সংগ্রাম করেছেন, তারা ভিন্নমত পোষন করছেন। গণতন্ত্রে ভিন্নমত থাকতেই পারে। তার সেটাকে লক্ষ্য করে আবার রাস্তায় আন্দোলন করা কোনমতেই গ্রহণ যোগ্য নয়। কারণ দাবি গুলো নির্বাচনের পরে পার্লামেন্ট গঠিত হবে, সেই পার্লামেন্টে এসে জানাতে পারবেন।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমাদেরকে মনে রাখতে হবে যে আমাদের কোন ভূলের কারণে, রাজনৈতিক কোন ভূল পদক্ষেপের কারণে আমরা যেন আবার সেই ফ্যাসিস্টের নির্যাতনের কবলে না পড়ি। অর্থাৎ ফ্যাসিস্টদের আর আমরা ফিরে আসতে দিতে চাই না। মনে রাখতে হবে, আমরা একটা কঠিন সময়ের মধ্যদিয়ে যাচ্ছি। এই সময়টা অত্যন্ত সচেতন এবয় সতর্কতার সাথে পা ফেলতে হবে। বাংলাদেশে একটা বিশাল পরিবর্তন হয়ে গেছে। এই পরিবর্তনের সুবাদে, বিশেষ করে আমাদের দলের নেতাকর্মীরা যারা আছেন, গণতন্ত্রের জন্য যারা লড়াই সংগ্রাম করেছেন, তারা এখন রাতে নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, বিগত ১৫ বছরে আমরা দু:শাসনের যাতাকলে অনেক জুলুম নির্যাতনের শিকার হয়েছি। বিশেষ করে এই ঠাকুরগাঁওয়ের মানুষদের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাই, বিগত সময়ে তারা অনেক নির্যাতন সহ্য করেছেন। অনেকে অসংখ্য মিথ্যা মামলার শিকার হয়েছেন, অনেকেই জেলে গেছেন, আবার অনেকে সাজাপ্রাপ্ত পর্যন্ত হয়েছেন। পরে সেগুলো আমাদের আইনজীবিদের সযোগিতায় তাদের মুক্ত করতে পেরেছি। আমি আপনাদের সাথে দীর্ঘকাল ধরে কাজ করছি। আমার দল যখন আমাকে মনোনয়ন দেয়, তখন থেকে আমি নির্বাচন করছি। কখনো জয়ী হয়েছি, কখনো পরাজিত হয়েছি। কিন্তু আমি আপনাদেরকে ছেড়ে যাইনি। ঠিক একইভাবে আপনারাও বিএনপি ছেড়ে চলে যাননি।
ঠাকুরগাঁও জেলা বিএনপির সভাপতি মির্জা ফয়সল আমিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বর্ধিত সভায় জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক পয়গাম আলী, পৌর সভাপতি শরিফকুল ইসলাম শরিফ, সদর উপজেলা সভাপতি আব্দুল হামিদ, সাধারণ সম্পাদক মাহবুব হোসেন তুহিনসহ অন্যান্য নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।