বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান বলেছেন, সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজদের কাছে জামায়াতে ইসলামী দেশ ছেড়ে দিবে না। জামায়াতে ইসলামী জনগণকে সঙ্গে নিয়ে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজ, দুর্নীতিবাজ, খুনি, ধর্ষক, লুটেরা ও নৈরাজ্য সৃষ্টিকারীদের প্রতিহত করবে। তিনি বলেন, আওয়ামী ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়ে শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদী শাসনের অবসান ঘটিয়েছে। শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর মানুষ নিশ্চিত হয়েছে, সন্ত্রাসীদের হাতে আর কাউকে জীবন দিতে হবে না, কাউকে চাঁদা দিতে হবে না। কিন্তু দেখা গেছে আওয়ামী লীগের মতই আরেকদল সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজি শুরু করেছে। নিজেরাই নিজেদের দলীয় নেতাকর্মীদের নৃশংসভাবে খুন করছে। তারা প্রতিদিন নির্বাচন চাইলেও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে, চাঁদাবাজের বিরুদ্ধে কথা বলছেন না। কারণ সন্ত্রাস, চাঁদাবাজ, ধর্ষক, খুনি তাদেরই পালিত।

মিটফোর্ডে বর্বরোচিত হত্যাকান্ডসহ সারাদেশে খুন, ধর্ষন, সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের প্রতিবাদে ও দোষীদের গ্রেপ্তার করে বিচারের দাবিতে গতকাল শনিবার দুপুরে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেইটে জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের বিক্ষোভ মিছিল পূর্বক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

রফিকুল ইসলাম খান বলেন, জাতির সাথে তামাশা করতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে ক্ষমতায় বসানো হয়নি। সরকারকে মনে রাখতে হবে তারা ক্ষমতায় বসেনি, তাদেরকে জনগণ ক্ষমতায় বসিয়েছে। জনগণের জানমাল, ইজ্জত রক্ষা করতে না পারলে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে ক্ষমতা ছেড়ে দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, থানা থেকে আসামী ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার নৈতিক দায়িত্ব ছিল পদত্যাগ করা। কিন্তু তিনি সেটি করেননি এমনকি আইনশৃঙ্খলার পরিস্থিতি উন্নতিও করতে পারেননি। সন্ত্রাস, চাঁদাবাজ কোন দলের হতে পারে না মন্তব্য করে রফিকুল ইসলাম খান বলেন, সন্ত্রাসী কত বড় নেতা, চাঁদাবাজ কত বড় নেতা, কোন দলের নেতা তা না দেখে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজ, ধর্ষক, খুনিদের গ্রেপ্তার করতে হবে।

কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমীর এডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিন বলেন, মিটফোর্ড - খুলনা - চাঁদপুরের ঘটনা ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবরে আওয়ামী লীগের ‘লগি-বইঠা’ হত্যাকান্ডকেও হার মানিয়েছে। ছাত্র-জনতার অর্জিত নতুন বাংলাদেশে সন্ত্রাসী- চাঁদাবাজ থাকতে পারবে না। সন্ত্রাস, চাঁদাবাজ, খুনি, ধর্ষকদের এখনই প্রতিহত করতে হবে।

কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ বলেন, নতুন বাংলাদেশে একটি দল নির্বাচন নির্বাচন তসবিহ পাঠ করে-করে সারাদেশে নৈরাজ্য সৃষ্টি করে সরকারকে বেকায়দায় ফেলার চেষ্টা করছে। ৯ তারিখে তাদের দলের নেতা হত্যার শিকার হলেও ৪দিন পরে কেন তারা সংবাদ সম্মেলন করে হত্যার বিচার দাবি করে! পৃথিবীর ইতিহাসে এক বিরল ঘটনা যেখানে সারা বিশ্বে মানুষ সরকারের পতন চায়, সেখানে বাংলাদেশে মানুষ একটা দল ক্ষমতায় যাওয়ার আগেই তাদের পতন চায়। তাদের হাত থেকে মুক্তি চায়! একটি রাজনৈতিক দলের জন্য এটি কতটা নিলজ্জতা সেটি বলে শেষ করা যায় না।

জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর মো. নূরুল ইসলাম বুলবুলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও মহানগরীর সহকারী সেক্রেটারি দেলাওয়ার হোসেন এবং মোহাম্মদ কামাল হোসেন। এসময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি ড. আব্দুল মান্নান ও শামছুর রহমান। এছাড়াও মহানগরীর কর্মপরিষদ ও শুরা সদস্যবৃন্দ সহ বিভিন্ন থানা আমীর -সেক্রেটারি ও দায়িত্বশীল নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

সভাপতির বক্তব্যে নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, একটি দল ৫ আগস্ট পরবর্তী দেশ গড়ার পরিবর্তে চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী, ছিনতাই, ধর্ষণ, নৈরাজ্য সৃষ্টি করে আসছে। দ্রুত নির্বাচন না দিলে দেশের অবস্থা আরো খারাপ হবে বলে তারা ঘোষণা দিয়ে এসব সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজি, ছিনতাই, ধর্ষণ, খুনের মাধ্যমে পরিকল্পিতভাবে নৈরাজ্য সৃষ্টি করে আসছে। তারা সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে, চাঁদাবাজের বিরুদ্ধে, ধর্ষকের বিরুদ্ধে, খুনির বিরুদ্ধে কথা বলছে না; বরং পক্ষ নিচ্ছে। নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজ প্রশয় দেওয়া পরিহার করতে তিনি আহ্বান জানিয়ে বলেন, এসব সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজদের দিয়ে নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়া যাবে না, ক্ষমতায় যাওয়া যাবে না। জনগণ আগামীতে কোন সন্ত্রাস, চাঁদাবাজ দলের হাতে দেশ তুলে দিবে না। তিনি সরকারকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নতি করতে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজ, মাদক, ধর্ষক, খুনিদের বিরুদ্বে জিরো টলারেন্স নীতি অবলম্বন করার আহ্বান জানান।

সমাবেশ শেষে, মিটফোর্ডে বর্বরোচিত হত্যাকান্ডসহ সারাদেশে খুন, ধর্ষন, সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের প্রতিবাদে ও দোষীদের গ্রেপ্তার করে বিচারের দাবিতে এক বিক্ষোভ মিছিল বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর গেইট থেকে জাতীয় প্রেসক্লাব হয়ে শাহবাগ গিয়ে শেষ হয়

মহানগরী উত্তর জামায়াতের বিক্ষোভ-সমাবেশ

যারা কর্মীদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না, তাদেরকে এদেশের শান্তিপ্রিয় মানুষ কোন ভাবেই গ্রহণ করবে না বরং আগামী নির্বাচনে জনগণ তাদেরকে প্রত্যাখান করবে বলে মন্তব্য করছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সেক্রেটারি ড. মুহাম্মদ রেজাউল করিম।

গতকাল শনিবার রাজধানীতে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী উত্তরে আয়োজিত মিটফোর্ডে নির্মমভাবে ব্যবসায়ীকে হত্যার প্রতিবাদ ও অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবীতে এক বিক্ষোভ পরবর্তী সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। বিক্ষোভ মিছিল তেজগাঁও সাতরাস্তা থেকে শুরু হয়ে নগরীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে মগবাজারে এসে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়। সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সহকারী সেক্রেটারি নাজিম উদ্দীন মোল্লা, ডা. ফখরুদ্দীন মানিক ও ইয়াছিন আরাফাত প্রমূখ।

ড. রেজাউল করিম বলেন, অপশাসন-দুঃশাসন এবং জনগণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা আওয়ামী লীগ ১৫ বছর ক্ষমতায় টিকে ছিলো। তারা নিজেদের অবৈধ ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করার জন্য জনগণের ওপর দীর্ঘ পরিসরে জুলুম-নির্যাতন চালিয়েছিলো। কিন্তু তাদের শেষ রক্ষা হয়নি বরং ছাত্র-ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধের মুখে তাদেরকে লজ্জাজনকভাবে ক্ষমতা থেকে বিদায় নিতে হয়েছে। আজ যারা ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য দিবাস্বপ্নে বিভোর, তারা যদি পতিত স্বৈরাচারের পরিণতি থেকে শিক্ষা গ্রহণ না করে, তাহলে তারা ১৫ মাসও ক্ষমতায় টিকতে পারবে না। পতিত ফ্যাসীবাদীরা ২৮ আক্টোবর প্রকাশ্য দিবালোকে রাজপথে পিটিয়ে হত্যা করে লাশের ওপর পৈশাচিক নৃত্য চালিয়েছিলো। তাদের শাসনামলে জনগণের ওপর হেলমেট বাহিনী লেলিয়ে দেওয়া হয়েছিলো। কিন্তু এখন তাদের অনুপস্থিতিতে রড ও পাথর বাহিনী আবির্ভাব ঘটেছে। তারাই মিডফোর্টে ব্যবসায়িকে পাথর মেরে হত্যা করে নিজেদের বর্বরতার জানান দিয়েছে। তিনি অবিলম্বে সকল প্রকার বর্বরতা বন্ধ, গণহত্যার বিচার, রাষ্ট্রের প্রয়োজনীয় সংস্কার ও নির্বাচনে সবার জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড প্রস্তুত করতে অন্তঃবর্তী সরকারের প্রতি আহবান জানান। অন্যথায় আবু সাঈদ-মুগ্ধের উত্তরসূরীরা ঘরে বসে তামাশা দেখবে না।

তিনি বলেন, আবু সাঈদ-মুগ্ধের দেশে কোন প্রকার সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, দখলদার, হেলমেট বাহিনী, রড বাহিনী ও পাথর বাহিনীর স্থান নেই বরং জনগণ এদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ গণপ্রতিরোধ গড়ে তুলবে। তিনি দৃঢ় প্রত্যয়ের সাথে ঘোষণা করেন যে, ‘আমরা কোন বিশেষ দল বা গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে নই বরং আমরা সকল প্রকার অপরাধ ও অপরাধীদের বিরুদ্ধে’। তিনি প্রশাসনের প্রতি আহবান জানিয়ে বলেন, ‘অপরাধ দমনে ও জনগণের জানমালের নিরাপত্তা বিধানে জনপ্রশাসনকে জিরো টলারেন্স দেখাতে হবে। এতে যদি আপনারা ভয় পান তাহলে দায়িত্ব ছেড়ে দিয়ে পদত্যাগ করুন। বিপ্লবীরা নতুন করে জনপ্রশাসনকে গণবান্ধব করে ঢেলে সাজাবে, যাতে নতুন প্রশাসন খুনী, চাঁদাবাজ ও দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারে’। তিনি বিপ্লবীদের স্বপ্নের নতুন বাংলাদেশ গড়তে দলমত নির্বিশেষে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানান।

উত্তরায় জামায়াতের বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত: পুরান ঢাকার মিটফোর্ডে যুবদলের কিছু সন্ত্রাসী কর্তিক ভাঙ্গারি ব্যবসায়ীকে হত্যা আইয়ামে জাহিলিয়াতের বর্বরতাকেও হার মানায়। দিন-দুপুরে প্রকাশ্যে একজন মানুষ আরেকজন মানুষকে এভাবে হত্যা করতে পারে এটা আমরা বিশ্বাস করতে পারি না। এই নারকীয় হত্যাকান্ডের সাথে যুবদলের যারা জড়িত, তাদেরকে গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় আনতে হবে। অল্প সময়ের মধ্যে বিচার শেষ করে,প্রকাশ্যে শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। বর্তমান সরকারকে অপরাধ দমনে আরও কঠোর হতে হবে। দেশকে মৃত্যু উপত্যকায় পরিণত হতে দেওয়া যাবে না।

জামায়াতে ইসলামী উত্তরা পশ্চিম জোনের এক বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশে বক্তারা এসব কথা বলেন। উত্তরা পশ্চিম জোনের সহকারী পরিচালক মাহাবুবুল আলম এর সভাপতিত্বে ও উত্তরা মডেল থানা আমীর ইব্রাহিম খলিলের পরিচালনায় সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগরী উত্তরের মজলিশে সূরা ও কর্ম পরিষদ সদস্য এবং শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের ঢাকা মহানগরী উত্তর সভাপতি মুহিবুল্লাহ, ঢাকা ১৮ আসনের সংসদ সদস্য প্রার্থী অধ্যক্ষ আশরাফুল হক, উত্তরা পশ্চিম থানা আমীর মাজহারুল ইসলাম, উত্তরা পূর্ব থানা আমীর মাহফুজুর রহমান, খিলক্ষেত পশ্চিম থানা আমীর হাসনাইন আহমেদ, তুরাগ দক্ষিণ থানা আমীর আবু বকর সিদ্দিক, তুরাগ মধ্য থানা আমীর গাজী মনির হোসাইন, জামায়াত নেতা হারুনুর রশীদ তারিক, মকবুল আহমেদ, বদিউজ্জামাল, ফিরোজ আলম, মুহিবুল্লাহ বাচ্চু ও আতিক হাসান রুবেল প্রমূখ।

উত্তরা ১১ নং সেক্টর জমজম টাওয়ার থেকে বিক্ষোভ মিছিলটি শুরু হয়ে বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে জসিমউদ্দীন সমাবেশের মধ্য দিয়ে শেষ হয় প্রেসবিজ্ঞপ্তি।