মুসলমানদের অন্যতম বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আযহা এখন সমাগত। দীর্ঘ এক বছর পর আমাদের মাঝে ফিরে এসেছে পবিত্র হজ্বের এ মাস। এবারই প্রথম সরকারি ছুটি থাকছে দশ দিনের। তাই মা-বাবা, ভাই-বোন, ছেলে-মেয়েসহ আপনজনদের সাথে ঈদ করতে ইতোমধ্যেই ধর্মপ্রাণ মানুষ ফিরছেন নিজ নিজ এলাকায়। সাধারণ মানুষের ন্যায় দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলের কেন্দ্রীয় নেতারাও ছুটছেন আপনজনের সাথে ঈদ করতে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশের প্রধান দুটি বড় দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নেতাদের অধিকাংশই এবার ঢাকার বাইরে ঈদ উদযাপন করবেন। যারা ঢাকায় ঈদ করবেন তারাও নিজ নির্বাচনী এলাকায় ঈদের পর শুভেচ্ছা বিনিময় করতে যাবেন। ঈদের ছুটি বেশি থাকায় গ্রামে নির্বাচনী আড্ডাও জমবে বেশি।
সূত্র মতে, ফ্যাসিস্ট সরকার না থাকায় সাধারণ মানুষ দীর্ঘদিন পর মনখুলে দ্বিতীয়বার ঈদের আনন্দ ভাগ করে নিতে পারবে। সেই সাথে এবার নেই ট্রেনসহ যানবাহনে সিড়িউল বিপর্যয়। সড়কে ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করতে হচ্ছে না। টিকিটের জন্য নেই কোনো হাহাকার। চলতি বছরের শেষের দিকে অথবা আগামী বছরের মাঝামাঝি সময়ে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনুস। তাই এবারের ঈদটা তাদের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই অনেকেই নেতাকর্মীদের নিয়ে শো ডাউনেরও আয়োজন করেছেন। মনোনয়ন প্রত্যাশী যে সব নেতা গেল কয়েকবার এলাকায় যাননি তারা এবার খুবই সরব। অনেকেই এলাকায় ব্যানার-পোস্টার টাঙ্গিয়ে নিজেদের অবস্থানের জানান দিচ্ছেন। সব মিলিয়ে এবারের ঈদটা হবে নির্বাচনের আমেজে ভরা।
বিএনপি : দেশের প্রধান বিরোধী রাজনীতিক দল বিএনপির জন্য এবারের ঈদটা অন্যরকম। দীর্ঘদিন পর দলটির নেতাকর্মীরা আপন ঠিকানায় ঈদ উদযাপন করতে পারবেন। দীর্ঘ দেড় দশক ধরে ফ্যাসিস্ট সরকারের মামলা-হামলা নির্যাতনের কারণে তারা ঈদ করতে পারেন নি। দলটির চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া গেল এক দশকে কখকনো ঈদে ছিলেন কারাগারের আবদ্ধ। আবার কখনো বাসায়, আবার কখনো হাসপাতালে। তবে এবার তিনি মুক্ত পরিবেশে দেশের মাটিতে ঈদ করবেন। তাই এবারের ঈদটা জিয়া পরিবারের জন্য একটি বিশেষ ঈদ। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডনে মেয়েকে নিয়ে ঈদ করবেন। তারেক রহমানের সহধর্মীনি ডা. জুবাইদা রহমান দেশে শাশুড়ি বেগম খালেদা জিয়ার সাথে ঈদ উদযাপন করবেন।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর চিকিৎসার জন্য থাইল্যঅন্ডে রয়েছেন। দলের স্থায়ী কমিটির অধিকাংশ সদস্য নিজনিজ নির্বাচনী এলাকায় যাবেন। নির্বাহী কমিটির সিনিয়র সদস্যদের অধিকাংশই এবার নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকাতে ঈদ করবেন জানা গেছে। আসন্ন সংসদ নির্বাচনের সম্ভাব্য মনোনয়ন প্রত্যাশীরা ইতিমধ্যে নিজনিজ এলাকায় পৌছেছেন। বাকিরা আজ-কালের মধ্যেই চলে যাবেন বলে জানা গেছে। ঈদের দিন সকালে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান স্যারের মাজার জিয়ারত করবেন স্হায়ী কমিটি সদস্য সিনিয়র নেতৃবৃন্দ ও অঙ্গ সংগঠন নেতৃবৃন্দ।
জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ (জি এম) কাদের এবার ঈদ করবেন রাজধানীতে। খেলাফত মজলিসের মহাসচিব অধ্যাপক আহমদ আবদুল কাদের ঈদ করবেন ঢাকায়। বিকল্প ধারার মহাসচিব মেজর অব. আবদুল মাম্নান, এলডিপি চেয়ারম্যান কর্নেল অলি আহমদ, জাসদ সভাপতি আ স ম আবদুর রব, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর আমীর মুফতী সৈয়দ মোহাম্মদ রেজাউল করীম পীর সাহেব চরমোনাই, মুফতী সৈয়দ মোহাম্মদ ফয়জুল করীম, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, কল্যাণ পার্টির সভাপতি মেজর জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ ইবরাহীম, এনপিপি চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জমান ফরহাদ, এনডিপি চেয়ারম্যান খন্দকার গোলাম মর্তুজা, বাংলাদেশ ইসলামিক পার্টির চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার ছাইদুল হাসান ইকবাল, ন্যাপের জেবেল রহমান গানি, মুসলিম লীগের এএইচএম কামরুজ্জামান খান, পিপলস লীগের গরীবে নেওয়াজ, ন্যাপ-ভাসানীর আজহারুল ইসলাম, বিজেপি‘র সালাহউদ্দিন মতিন প্রকাশ, ডিএল‘র সাইফুদ্দিন মনি ও সাম্যবাদী দলের সাঈদ আহমেদ ঢাকায় ঈদ করবেন। তবে অধিকাংশ নেতাই ঈদের নামাজ শেষে নিজ নিজ এলাকায় সর্বস্তরের মানুষের সাথে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময়ে অংশ নেবেন বলে জানা গেছে।
এবারের ঈদে সবার দৃষ্টি নতুন দল জাতীয় নাগরিক পার্টির দিকে। দলটির নেতারা কোথায় ঈদ করবেন এটাই অনেকে জানতে চাচ্ছেন। জানা গেছে, আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ঢাকায়, দলের সদস্যসচিব আখতার হোসেন রংপুর, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব তাসনিম জারা ঢাকায়, মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী চাঁদপুর, যুগ্ম সদস্যসচিব আকরাম হুসেইন ঢাকায় মোহাম্মদপুরে ঈদ করবেন। দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসউদ নিজ নির্বাচনী এলাকা নোয়াখালী-৬ (হাতিয়া) এলঅকায় ঈদ করবেন। এনসিপির মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম পঞ্চগড়, মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আবদুল্লাহ কুমিল্লায়, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন ভোলায়, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব ঢাকায়, যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার নরসিংদী, নুসরাত তাবাসসুম কুষ্টিয়া, অনিক রায় সুনামগঞ্জ, আশরাফ উদ্দীন মাহাদী ব্রাহ্মণবাড়িয়া, মীর আরশাদুল হক চট্গ্রামের বাঁশখালী, উত্তরাঞ্চলের যুগ্ম মুখ্য সংগঠক অলিক টাঙ্গাইলে নিজ নির্বাচনী এলাকায় ঈদ উদযাপন করবেন বলে জানা গেছে।