ঠাকুরগাঁও সংবাদদাতা: বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বিভাজন নয়, আমরা ঐক্যের বাংলাদেশ গড়তে চাই। হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান সকল ধর্মের, সকল মতের মানুষ মিলে একটি সুখী সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলতে চাই। একটি ভালবাসার বাংলাদেশ দেখতে চাই। প্রতিহিংসা নয়, পারস্পরিক সম্পর্কের ভিত্তিতে সকলে মিলে মিশে সমাজে বাস করতে চাই। আপনারা জানেন ৫ আগস্ট যেদিন শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যায়, তার কয়েকদিন পর আমরা ঢাকায় একটি মিটিং করেছিলাম। সে মিটিংয়ে আমাদের দেশনেত্রী খালেদা জিয়া হাসপাতাল থেকে জাতির উদ্দেশে ভিডিও বার্তায় বলেছেন, আপনারা অনেকে রক্ত দিয়েছেন, ছেলেরা প্রাণ দিয়েছে, আমরা অনেকেই কারাগারে গেছি, অনেক কষ্ট হয়েছে আমাদের। আমরা এ কষ্টকে ভুলতে চাই। প্রতিহিংসা চাই না, আমাদের ওপর যারা অত্যাচার করেছে তাদের ওপর আমরা প্রতিশোধ নিতে চাই না। মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল বিকালে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার চিলারং ইউনিয়নের মোলানী উচ্চবিদ্যালয় মাঠে আয়োজিত এক সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি আরো বলেন, আল্লাহ্র শুকরিয়া যে, আমরা একটা ডাইনীর হাত থেকে রক্ষা পেয়েছি। শেখ হাসিনা সে ছিল একজন ভয়াবহ ডাইনী। যে দেশটাকে ধ্বংস করে দিয়েছে। যাকে মনে করেছে আওয়ামী লীগের জন্য হুমকি, সরকারের জন্য হুমকি, যার পিছনে জনগণ আছে তাকেই পুলিশ পাঠিয়ে তুলে নিয়ে গেছে। মা জানে না ছেলে কোথায়, স্ত্রী জানে না স্বামী কোথায়, সন্তান জানে না বাবা কোথায়। এমন অসংখ্য ঘটনা সে ঘটিয়েছে। আমরা মনে করেছিলাম এমন ঘটনা আটশ নয়শ হবে, হাসিনা পালানোর পরে জাতিসংঘ টিম এসে বললো সতেরো শ এমন ঘটনা ঘটিয়েছে আওয়ামী লীগ। কয়েক জনকে ছোট্ট একটি ঘরের মধ্যে আটকে রাখছে, যেখানে দরজা জানালা নেই, আলো বাতাস নেই। দিনের পর দিন, বছরের পর বছর, সাত আট বছর পর্যন্ত সেখানে আটকে রাখা হয়েছে। গোলাম আযম সাহেবের ছেলে, সেনাবহিনীর একজন ব্রিগেডিয়ার যে পরীক্ষায় প্রথম হয়েছিল। সেনাবহিনীর ভাষায় যাকে বলে সোর্ড অব অনার, একটা তরবারি দিয়ে তাকে পুরস্কৃত করে, সেই আমান আযমীকে তুলে নিয়ে আট বছর বন্দী করে রেখেছিল। আবার অনেকের খবর এখনো পাওয়া যায়নি। আমাদের নেতা ইলিয়াস আলীকে তুলে নিয়ে গেলো, আজ পর্যন্ত তার কোন খবর নেই। এমন খারাপ কাজ হাসিনা করেছে বলেই তাকে পালাতে হয়েছে। এতা ঘৃণা তার প্রতি, যদি তাকে পাইতো, তাকে চিরে খাইতো। এমন তো হওয়ার কথা ছিল না। ১৫ বছর দেশ শাসন করছে। তার বাবা ছিল বিখ্যাত মানুষ শেখ মুজিবুর রহমান, তার এ অবস্থা হবে কেন?
বিএনপি মহাসচিব বলেন, বিএনপি হলো দেশের মানুষের নির্ভরতার দল। আমরা ক্ষমতায় গেলে হিন্দু সম্প্রদায়সহ সংখ্যালঘু ভাই বোনেরা বেশি নিরাপদে থাকবে। আমরা সব সময় আপনাদের পাশে আছি। হাসিনা পালানোর তারা একটা কথা প্রচার করেছে, বাংলাদেশে নাকি হিন্দুদের মেরে ফেলা হচ্ছে। শুধু দেশেই না, সারা বিশে^ তরা এটা প্রচার করেছে। আসলে কি কোন হিন্দু মারা গেছে? যায়নি। আমাদের ঠাকুরগাঁও একটি শান্তিপূর্ণ এলাকা এখানে কারো যেন কোন ক্ষতি না হয় সে দিকে আমরা লক্ষ্য রাখবো।
ফখরুল বলেন, আপনাদের সাথে আমার দেখা হয় খুব কম। কারণ, আমাকে দলের মহাসচিবের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। চেয়ারপার্সন জেলে, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বিদেশে। আমাকে সারাদেশে দলকে দেখতে হয়েছে। বিভিন্ন সংগঠনকে একতাবদ্ধ রাখতে হয়েছে। কতটুকু সফল হয়েছি, কতটুকু ব্যর্থ হয়েছি সেটা আপনারাই বিচার করবেন।
দলীয় নেতাকর্মীদের সতর্ক করে মির্জা ফখরুল বলেন, কেউ আওয়ামী লীগের মতো আচরণ করবেন না, তাহলে জনগণ যেভাবে আওয়ামী লীগকে ছুড়ে ফেলেছে, আপনাদেরও সেভাবে ছুড়ে ফেলবে।
এ সময় জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মির্জা ফয়সল আমিন, সহসভাপতি সুলতানুল ফেরদৌস ন¤্র, আল মামুন আলম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পয়গাম আলী, সদর থানা বিএনপির সভাপতি আব্দুল হামিদ, সাধারণ সম্পাদক মাহবুব হোসেন তুহিনসহ অন্যান্য নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।