ফেব্রুয়ারিতে সুষ্ঠুভাবে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানই বিএনপির সামনে এখন একমাত্র চ্যালেঞ্জ বলে মন্তব্য করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গতকাল সোমবার সকালে শেরে বাংলা নগরে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবরে পুস্পমাল্য অর্পনের পরে সাংবাদিকদের কাছে দলটির মহাসচিব এই অভিমত ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, এখন আমাদের সামনে চ্যালেঞ্জ হচ্ছে আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা আছে, সেই নির্বাচন অনুষ্ঠান সুষ্ঠভাবে করতে সর্বতোভাবে সহযোগিতা করা, সাহায্য করা।

বিএনপির ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে সকাল ১১টায় মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দলীয় নেতা-কর্মীদের নিয়ে জিয়াউর রহমানের সমাধিস্থলে যান। সেখানে তার কবরে পুস্পমাল্য অর্পন করেন এবং মরহুম নেতার রুহের মাগফেরাত কামনা করে বিশেষ মোনাজাতে অংশ নেন।

এই সময়ে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান, সালাহ উদ্দিন আহমদ, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, আবদুস সালাম আজাদ, কেন্দ্রীয় নেতা মীর সরফত আলী সপু, সাইফুল আলম নিরব, মহানগর বিএনপির উত্তরের আমিনুল হক, দক্ষিণের তানভীর আহমেদ রবিনসহ অঙ্গসংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। পরে বিএনপি মহাসচিব সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন।

সংস্কার প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব বলেন, যে সংস্কার প্রস্তাবগুলো নিয়ে এসেছিল, সেই সংস্কারগুলোর বাস্তবায়নে বিএনপি সর্বাত্মক সহযোগিতা করেছে। বিএনপির ৩১ দফা কর্মসূচি প্রবর্তনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতিতে সম্পূর্ণ আমুল একটি পরিবর্তন আনার ব্যবস্থা করেছে।

মির্জা ফখরুল প্রত্যাশা ব্যক্ত করে বলেন, জনগণের সমর্থনের মধ্য নিয়ে বিএনপি যদি রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পায়, তাহলে নিঃসন্দেহে আমাদের নেতা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে বিএনপি একদিকে রাজনৈতিক পরিবর্তন ঘটাবে অন্যদিকে অর্থনৈতিক পরিবর্তনও ঘটাবে।

জিয়াউর রহমানের কর্মময় জীবন এবং তার শাসনামলে নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরে বিএনপি মহাসচিব বলেন, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের রাজনীতির মূল যে আদশর্, মূল যে লক্ষ্য সেই আদর্শ ও দর্শনটি ছিল বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ যা বাংলাদেশের রাজনীতিতে আমুল পরিবর্তন হয়েছে। অল্প সময়ের মধ্যে তিনি (জিয়াউর রহমান) রাজনীতিতে যেমন গুনগত পরিবর্তন এনেছিলেন তিনি মিডিয়া-গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করেছিলেন, তিনি মানুষের মৌলিক অধিকারগুলো নিশ্চিত করেছিলেন, তিনি বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করেছিলেন এবং একই সঙ্গে অর্থনীতিতে গতি আনতে তিনি মুক্তবাজার অর্থনীতি প্রবর্তন করেছিলেন যার ফলে অর্থনীতির আমূল পরিবর্তন হয়েছিল।

বিগত ১৫ বছরে বিএনপির নেতা-কর্মীদের ওপর সরকারের নিপীড়ন-নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, বিএনপিকে ধ্বংস করার জন্য প্রায় ৬০ লক্ষ মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে, প্রায় ২০ হাজার মানুষকে হত্যা করা হয়েছে, ১৭‘শ নেতাকর্মীকে গুম করা হয়েছে, খুন করা হয়েছে। অবিশ্বাস্য রকমের একটা ফ্যাসিজিম এখানে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল, যার মূল লক্ষ্যই ছিল বিএনপিকে নিশ্চিহ্ন করা। আল্লাহর অশেষ রহমতে ছাত্র জনতার আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আমরা সেই ভয়াবহ হাসিনা থেকে মুক্ত হতে পেরেছি, ফ্যাসিবাদ থেকে মুক্ত হতে পেরেছি।

নেতাকর্মীদের ঢল : বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালনে চন্দ্রিমা উদ্যানে জিয়াউর রহমানের কবরে শ্রদ্ধা জানাতে নেতাকর্মী ও সমর্থকদের ঢল নামে। সকাল থেকে রাজধানীর বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র মিছিল নিয়ে নেতাকর্মীরা এখানে আনেন। ‘শুভ শুভ জন্মদিন, বিএনপির জন্মদিন’, ‘লও লও লও সালাম, জিয়া তুমি লও সালাম’, এক জিয়া লোকান্তরে লক্ষ জিয়া ঘরে ঘরে’, ‘আজকের এই দিনে জিয়া তোমায় মনে পড়ে’- এ ধরনে স্লোগানে বিজয় সরণি থেকে চন্দ্রিমা উদ্যান সরব করে রাখেন নেতাকর্মীরা। হাতে রঙিন ব্যানার, মাথায় বিএনপির পতাকা বেঁধে নিয়ে এসেছিলেন তারা। গেল বছরের ধারাবাহিকতায় গতকালও চন্দ্রিমা উদ্যানে জিয়াউর রহমানের কবর জিয়ারত ঘিরে হাজার হাজার মানুষের উপস্থিতি দেখা গেল। আওয়ামী লীগ আমলে নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে মিছিল নিয়ে সেখানে প্রবেশে কড়াকড়ি আরোপ করে রাখত পুলিশ। অনেক সময় কয়েকজন গিয়ে ফুল দিয়ে আসতে হতো। গত দুই বছর দিনটিকে ঘিরে নেতাকর্মীদের মাঝে উৎসাহ উদ্দীপনা দেখা গেছে।