মহানবীর আদর্শে ইনসাফভিত্তিক দেশ গড়ার অঙ্গীকার তারেক রহমানের

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, মনগড়া মতবাদ সমাজে শান্তি ও সম্মান দিতে পারবে না। এদেশের ৯০ শতাংশ মানুষ আল্লাহর ওপর ঈমান রাখে। তারা কুরআন মানে, রাসুল (সা) কে শেষ নবী মানে। তাই এদেশের আইন চলবে কুরআনের মতবাদে ইনশাআল্লাহ। তিনি বলেন, যেদিন নামাযের ইমাম সমাজের ইমাম হবেন সেইদিনই সত্যিকারের মুক্তি মিলবে দেশবাসীর। গতকাল রোববার রাজধানীর চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত সম্মিলিত ইমাম-খতিব জাতীয় সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি অংশ নিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেন, তার দল দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পেলে ইমাম খতীবদের জন্য স্থায়ী সম্মানি ভাতা প্রদানের উদ্যোগ নিবে। তিনি বলেন, আলেমরা হ”েছন সমাজ সংস্কারক। আলেম ওলামদের বাদ রেখে স্থায়ী উন্নয়ন সম্ভব না। ইসলামের মৌলিক বিষয় নিয়ে বিএনপি কখনো আপোষ করেনি, ভবিষ্যতেও করবে না।

বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের সিনিয়র ইমাম মাওলান মুহিব্বুল্লাহিল বাকি আন নদভীর সভাপতিত্বে দুপুর ২টায় এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষা, মুসলিম জনগোষ্ঠীর ধর্মীয় অধিকার সংরক্ষণ, ইমাম-খতিবদের সামাজিক নিরাপত্তা, সম্মানজনক ভাতা এবং মসজিদ পরিচালনার আধুনিক নীতিমালা প্রণয়নসহ গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় বিষয়ে একটি সুস্পষ্ট রোডম্যাপ উপস্থাপিত হয়। অনুষ্ঠানে ৭ দফা দাবি তুলে ধরেন আলেমরা। অনুষ্ঠানে দেশের শীর্ষ রাজনীতিবিদ, বিশিষ্টজন ও আলেমগল বক্তব্য রাখেন।

মনগড়া মতবাদ সমাজে শান্তি ও সম্মান দিতে পারবে না উল্লেখ করে জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেন, মসজিদে নববীকে কেন্দ্র করে মহানবী (সা.) যে সমাজ গড়ে তুলেছিলেন, সেই সমাজ ছিল বিশ্বের সবচেয়ে ভাল ও মর্যাদার। সেই সমাজ বাদ দিয়ে মনগড়া কোন মতবাদের গড়া সমাজ শান্তি ও সম্মান কোনটাই দিতে পারবে না। তিনি বলেন, তখন আলাদা কোনো ক্যাবিনেট হাউজ ছিল না এবং আলাদা কোনো রাষ্ট্রপতি অথবা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ছিল না। সমস্ত আঞ্জাম দেওয়া হতো মসজিদে নববী থেকে। বিভিন্ন ধর্মের, মতের মানুষ, সারা বিশ্ব থেকে প্রতিনিধি নিয়ে তার কাছে এসেছেন। তিনি তাদের সবার সঙ্গে মিলিত হয়েছেন মসজিদে নববীতে। রাষ্ট্রের সব কর্মকা-ের পরামর্শ আহলে রায়েদের সঙ্গে করেছেন মসজিদে নববীতে। যুগের যতটুকু সময় মসজিদে নববী এবং মসজিদগুলোকে মর্যাদা দিয়ে চলেছে। আর এই মসজিদকেন্দ্রিক যে সমাজটা দুনিয়ার যে অঞ্চলে ছিল সেই সমাজই ছিল বিশ্বের ভালো সমাজ। আর রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু সাল্লাম যে সমাজ মসজিদে নববীকে কেন্দ্র করে গড়ে তুলেছিলেন সেই সমাজ সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে তিনি সার্টিফাই করে গিয়েছেন, ‘বিশ্ববাসী তোমরা জেনে রাখ আজ আমি যে সমাজ ব্যবস্থা গড়ে তুলেছি আল্লাহর কিতাবের ভিত্তিতে এই সমাজটাই হচ্ছে বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ সমাজ।’ এর আগে এই ধরনের কোনো সমাজ জন্ম নেয়নি। ভবিষ্যতে এ ধরনের কোনো সমাজ জন্ম নেবে না।

ডা. শফিকুর রহমান বলেন, সুতরাং ওই সমাজকে অনুসরণ করে যেই সমাজ ব্যবস্থা গড়ে উঠবে সেই সমাজ ব্যবস্থায় দুনিয়ায় শ্রেষ্ঠত্বের আসনে বসবে। নবীজির সমাজকে বাদ দিয়ে মন গড়া কোন মতবাদ তন্ত্র মন্ত্র দিয়ে যে সমাজ গড়া হবে সেই সমাজ আল্লাহর কসম দুনিয়াকে শান্তি এবং সম্মান দুটার কোনোটাই দিতে পারবে না। এটি প্রমাণিত সত্য। দুনিয়ার যে কোন মহাদেশে হোক, দেশে হোক, অঞ্চলে হোক এটি প্রমাণিত সত্য। তিনি বলেন, এদেশের ৯০ শতাংশ মানুষ আল্লাহর ওপর ঈমান রাখে। তারা কুরআন মানে, রাসুল (সা) কে শেষ নবী মানে। তাই এদেশের আইন চলবে কুরআনের মতবাদে ইনশাআল্লাহ। এই জায়গায় যতদিন দেশ না আসবে, ততদিন মানবিক সমাজ কায়েম করতে পারব না। জামায়াত আমীর বলেন, মসজিদ কমিটি হবে ইমাম-খতিবদের পরামর্শের ভিত্তিতে। কমিটির প্রাণ পুরষ হবেন খতিব-ইমামরা। তাদের বাদ নিয়ে নয়, সহযোগিতার ভিত্তিতে কমিটি হতে হবে।

তিনি ইমাম-খতিবদের উদ্দেশ্য করে বলেন, আপনারা আমাদের ইমাম। আমরা আপনাদের সম্মান দেখাতে চাই। যেদিন নামাজেযর ইমাম সমাজের ইমাম হবেন সেইদিন সত্যিকারের মুক্তি মিলবে মন্তব্য করে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, আমরা যখন জীবিত আপনারা (ইমাম-খতিব) ইমামতি করেন আমরা পেছনে দাঁড়িয়ে যাই। আমরা যখন দুনিয়া থেকে বিদায় নিই, তখনও আপনারা (ইমাম-খতিব) আমাদের ইমাম। শুধু ব্যতিক্রম এতোটুকু। জীবিত অবস্থায় আপনাদের পেছনে দাঁড়াই। আর দুনিয়া থেকে চলে গেলে আমাদের লাশটা সামনে রেখে আপনারা দাঁড়ান। আপনারা হায়াতেও ইমাম মউতেও ইমাম। আমরা এদিক থেকে কলিজার ভেতর থেকে আপনাদের প্রতি আজীবন সম্মান দেখাতে চাই।

এদেশে অন্য ধর্মের মানুষ যারা আছে তাদের কী হবে? এমন প্রশ্ন তুলে নিজেই উত্তর দেন জামায়াত আমীর। বলেন, কুরআন শুধু মানুষের সম্মানের গ্যারান্টি দেয় নাই। অধিকারের ওয়ারেন্টি দেয় নাই। কুরআন সমস্ত মাখলুকাতের অধিকারের ওয়ারেন্টি দিয়েছে। মানুষ তো অবশ্যই, মদীনায় যেমন সব ধর্মের মানুষ পূর্ণ ধর্মীয় স্বাধীনতা নাগরিক নিরাপত্তা এবং অধিকার ভোগ করেছেন, আল্লাহর দেওয়া আইনের এবং বিধানের ভিত্তিতে আমাদের প্রিয় দেশেও যদি সেই সমাজ ব্যবস্থা কায়েম হয় ইনশাআল্লাহ তাআলা আজিম সেই অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে।

তিনি বলেন, মসজিদ কমিটি হবে ইমাম এবং খতিব সাহেবের পরামর্শের ভিত্তিতে। এই কমিটির প্রাণপুরুষ হবেন খতিব কিংবা ইমাম। তাকে বাদ দিয়ে নয়। তাকে সহযোগিতা করার জন্য এই কমিটি হবে। তিনি বলেন, খতিব এবং ইমাম সাহেবরাও মানুষ। তারাও ভুলের ঊর্ধ্বে নন। ভুল তো হতেই পারে। ভুল যদি হয় এর সমাধান করতে হবে সম্মানজনকভাবে। এই সমাধান এইভাবে নয়। আমার পছন্দ হয়নি, আমি দুপুরবেলা জোহরের নামাযের সময় বলে দিলাম যে উনি কিভাবে ইমাম থাকেন আমি দেখে নেবো। আসরের নামাযের সময় দেখা গেল উনি আর মেহরাবে নাই, আমাদের ইমাম এবং খতিব সাহেবদের জন্য আমরা এমন ফায়সালা চাই না। এমন ফায়সালা বরদাস্ত করবো না। তাদের পূর্ণ মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করতে হবে।

জামায়াত আমীর বলেন, আপনাদের (ইমাম-খতিব) দাবিগুলা খুব ছোট। কিš‘ এত ছোট জায়গায় পড়ে থাকলে হবে না। আপনাদের এই সমাজের দায়িত্ব নিতে হবে। নামাযের ইমাম যেদিন সমাজের ইমাম হবেন সেইদিন ইনশাআল্লাহ আমরা সত্যিকারের মুক্তি পাব। প্রচলিত কোনো তন্ত্রমন্ত্র দিয়ে শান্তি ফিরবে না। নবীজী (স.) এর দেখানো পথে ফিরে যেতে হবে। তিনি আরও বলেন, আমরা যখন জন্মগ্রহণ করি তখন আপনারা আমাদের ইমাম, আমরা যখন মৃত্যুবরণ করি তখনও আপনারা আমাদের ইমাম। সমাজের ফয়সালা মিম্বার থেকে আসবে ইনশাআল্লাহ।

তিনি বলেন, দেশের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রকৃত আলেমদের পরামর্শে পরিচালিত হতে হবে এবং সমাজ গঠনের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকতে হবে ইমাম-খতিবদের মতামত। ইমামরা যেদিন সমাজের ইমাম হবে সেদিন আমাদের মুক্তি হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

ডা. শফিকুর রহমান বলেন, মসজিদভিত্তিক কমিটি গঠনে ইমাম-খতিবদের বাদ দিয়ে সিদ্ধান্ত নিলে তা ইসলামের রীতি ও নীতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। নবীজির সমাজ ব্যবস্থা অনুসরণ করে একটি ঈমানদার সমাজ গড়ে তুলতে হলে আলেম-ওলামাদের মতামতকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। মসজিদ শুধু ইবাদতের স্থান নয় এটি সমাজ পরিচালনার মৌলিক ভিত্তি।

বক্তব্যে জামায়াত আমীর ইমাম ও খতিবদের বিভিন্ন নৈতিক দাবির প্রতি একাত্মতা প্রকাশ করে বলেন, দেশের মুসলমানদের আধ্যাত্মিক দিকনির্দেশনা যারা দেন, তাদের সম্মান ও ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করা রাষ্ট্র ও সমাজ উভয়ের দায়িত্ব। ইমামদের মানোন্নয়ন, নিরাপত্তা, প্রশিক্ষণ এবং ন্যায্য পারিশ্রমিক নিশ্চিত করা সময়ের দাবি। এ সময় তিনি আরও বলেন, ধর্মীয় নেতৃত্বের মর্যাদা রক্ষায় যেকোনো নৈতিক দাবির পাশে জামায়াতে ইসলামী থাকবে। তিনি বলেন, এই উম্মাহর নেতৃত্ব দিয়েছেন নবীজির শিক্ষায় গড়ে ওঠা আলেমগণ। তাই বর্তমান সমাজে নৈতিকতা, মানবিকতা ও সত্যভিত্তিক নেতৃত্ব গড়তে হলে ইমাম-খতিবদের আরও শক্তিশালী ভূমিকা রাখতে হবে। তিনি আরও বলেন, আজও আপনাদের সাথে আছি, আগামীতেও থাকবো। আপনারাই এই সমাজকে সত্য, ন্যায় ও কল্যাণের পথে নিয়ে যেতে পারবেন। আপনাদের নেতৃত্বে সোনালী সমাজ গড়ে উঠার প্রত্যাশাই আমাদের।

বক্তব্যের এক পর্যায়ে তিনি দৃষ্টি আকর্ষণ করেন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত ও নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার দিকে। ডা. শফিকুর রহমান বলেন, মসজিদ-মাদরাসা পরিচালনায় রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বা প্রশাসনিক চাপ কখনো কল্যাণ বয়ে আনে না। তিনি ইসলামবিরোধী চিন্তাধারা থেকে মসজিদকে দূরে রাখতে এবং ধর্মীয় শিক্ষায় সঠিক ব্যাখ্যা ও রীতিনীতি অনুসরণের প্রতি জোর দেন।

বিএনপি ক্ষমতায় গেলে মহানবীর আদর্শ অনুসরণে ইনসাফভিত্তিক বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার ব্যক্ত করে তারেক রহমান বলেন, আইয়ামে জাহেলিয়্যার সময়ে আমাদের মহানবী (সা.) কে যারা অপছন্দ করতো তারাও মহানবীকে ন্যায়পরায়ণ হিসেবে মানতো এবং বিশ্বাস করত। মহানবীর ন্যায় পরায়ণতা নিয়ে মুসলমান-অমুসলমান বিশ্বাসী-অবিশ্বাসী কারো মধ্যেই কোন সংশয় ছিল না। মহানবীর সেই ন্যায় পরায়ণতার আদর্শ সমুন্নত রেখে রাষ্ট্র এবং সরকার পরিচালনায় বিএনপির মূল মন্ত্র হবে ইনশাআল্লাহ ন্যায় পরায়নতা।

তারেক রহমান বলেন, দেশ এবং জনগণের কল্যাণে আল্লাহ যেন আমাকে এবং আমাদের দলকে প্রতিটি সৎকর্ম বাস্তবায়নের সুযোগ দেন। এজন্য আপনাদের দোয়া, সমর্থন এবং সহযোগিতা চাই। তিনি বলেন, আপনাদের উপস্থাপিত দাবির বেশ কয়েকটি অগ্রধিকার ভিত্তিতে পূরণ করার সব রকমের সুযোগ রয়েছে। ইমাম-খতিব-মুয়াজ্জিনদের জন্য সার্ভিস রুল প্রণয়নের দাবিটি অত্যন্ত যৌক্তিক।

তিনি বলেন, অনেক মসজিদে মসজিদ কমিটির ইচ্ছা-অনিচ্ছার উপরে ইমাম মুয়াজ্জিন চাকরি নির্ভর করে আমি মনে করি এটি হওয়া উচিত নয়, এটি হতে পারে না। এটিকে আমি ইমাম মুয়াজ্জিনদের বিরুদ্ধে অন্যায় আচরণ বলে মনে করি। বিএনপি রাষ্ট্র পরিচালনার সুযোগ পেলে আপনাদের সার্ভিস রুল প্রণয়নের ব্যাপারে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করবে ইনশাআল্লাহ। উপস্থাপিত অন্যান্য দাবিগুলো বাস্তবায়নের জন্য কার্যকর উদ্যোগও বিএনপি সরকার ইনশাল্লাহ গ্রহণ করবে। এব্যাপারে ইমাম-খতিবদের একাধিক কমিটি করে প্রতিটি দাবির সুনির্দিষ্ট সুপারিশ বিএনপিকে প্রদানের আহ্বানও জানান তিনি।

তারেক রহমান বলেন, বিএনপি এমন একটি কল্যাণমূলক সমাজ, সরকার এবং রাষ্ট্রব্যবস্থার পক্ষে, যে রাষ্ট্র সমাজে মুসলমানগণ নিঃসংকোচে কুরআন-সুন্নাহ অনুযায়ী নিজেদের জীবন পরিচালনা করতে সক্ষম হবেন, নির্ভয়ে নিরাপদে এবাদত বন্দেগী করতে পারবেন। একইভাবে অন্য ধর্মের মানুষেরাও নিরাপদে নিশ্চিন্তে যার যার ধর্ম ও সংস্কৃতি পালন করতে সক্ষম হবে। বিএনপি কখনোই ইসলামের মূলনীতি কিংবা মৌলিক বিশ্বাসের সঙ্গে আপোষ করেনি, ইনশাল্লাহ ভবিষ্যতেও করবে না।

তিনি বলেন, পতিত পরাজিত পলাতক স্বৈরাচারের স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশের রাষ্ট্র ক্ষমতায় বসে নিজেদের ইচ্ছেমতন সংবিধান রচনা করেছিল, সেই সংবিধানে দেশের অধিকাংশ জনগোষ্ঠীর আকাক্সক্ষার প্রতিফলন তখন ঘটেনি। পরবর্তীতে জিয়াউর রহমান রাষ্ট্র পরিচালনা দায়িত্ব পাবার পর সংবিধানে ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’ অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন, সংবিধানে সর্বশক্তিমান আল্লাহর উপরে আস্থা এবং বিশ্বাস অন্তর্ভুক্ত করেছেন। বর্তমানে ‘সর্বশক্তিমান আল্লাহর উপরে আস্থা এবং বিশ্বাস’ কথাটি এভাবে রাখা হয়নি। কেন এভাবে রাখা হয়নি? এই প্রশ্নটি আজ আমি আপনাদের সামনে দেখে গেলাম। বিএনপির অবস্থান তুলে ধরে তারেক বলেন, বিএনপি বরাবরই ইসলাম এবং মুসলমানদের স্বার্থবিরোধী যেকোন অপতৎপরতার বিরুদ্ধে সোচ্চার।

তিনি বলেন, ২০১৩ সালে রাজধানীর শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের হাজার হাজার নেতাকর্মী-সমর্থকদের উপরে হানাদার বাহিনীর মতন ক্র্যাকডাউন চালানো হয়েছিল। গণহত্যার প্রতিবাদে এবং হেফাজতে ইসলামের সমর্থনে বিএনপি সারাদেশে দুইদিন হরতালসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছিল তখন। তিনি বলেন, যেকোনো পেশা কিংবা চাকরি ক্ষেত্রে সার্টিফিকেটের গুরুত্ব বিবেচনা করে কাওমি মাদরাসা শিক্ষার্থীদের সর্বোচ্চ ডিগ্রি দাওরা হাদিস অর্থাৎ তাকমিল সনদকে মাস্টার্স সমমানের স্বীকৃতি দেওয়ার উদ্যোগ ২০০৬ সালে বেগম খালেদা জিয়া সরকারের আমলেই নেওয়া হয়েছিল। লক্ষ লক্ষ মসজিদ মাদরাসায় ইমাম মুয়াজ্জিন মাদরাসা শিক্ষার্থীদের রাষ্ট্রীয় অগ্রগতিমূলক কার্যক্রমের বাইরে রেখে দেশ কখনোই টেকশই উন্নয়ন করা সম্ভব নয়। এই বাস্তবতা থেকে বিএনপি আগামী দিনের কর্মসূচিতে এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে।

তারেক রহমান বলেন, বিএনপি বিশ্বাস করে সারাদেশে ইমাম-খতিব-মোয়াজ্জিনগণ প্রত্যেকেই সমাজ সংস্কারকের ভূমিকায় অবতীর্ণ। নানা সীমাবদ্ধতার মধ্যেও আপনারা মানুষের নৈতিক এবং আত্মিক শুদ্ধির জন্য নিজেদের সময় ব্যয় করেছেন বা করছেন। ধর্মীয় মূল্যবোধে উজ্জীবিত একটি নৈতিক সমাজ গঠনের জন্য গঠনের জন্য এটি আপনাদের একটি প্রশংসনীয় অবদান। বিএনপি মনে করে সমাজ সংস্কারকের ভূমিকায় বা ভূমিকা পালনকারী ইমাম-খতিব- মুয়াজ্জিনগণ যারা আর্থিকভাবে পিছিয়ে রয়েছেন তাদেরকে অবশ্যই প্রয়োজনীয় আর্থিক সহায়তা প্রদান রাষ্ট্রের দায়িত্ব। এমন বাস্তবতায় ইমাম-খতিব- মুয়াজ্জিনদের মধ্যে যারা আতিক আলাপনের রয়েছেন তাদেরকে প্রতিমাসে রাষ্ট্রীয় তহবিল থেকে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ সম্মানি ভাতা দেবার ব্যাপারে বিএনপির একটি পরিকল্পনা রয়েছে। একই সঙ্গে ইমাম-মুয়াজ্জিনদেরকে আর্থিকভাবে আরো স্বাবলম্বী করার লক্ষ্যে ইমাম মুয়াজ্জিন কল্যাণ ট্রাস্টকে শক্তিশালী করে আরো বহুমুখী প্রকল্প গ্রহণ, দুযোর্গ প্রতিরোধে ইমাম-মুয়াজ্জিনদের সম্পৃক্ত করার বিভিন্ন চিন্তাভাবনা বিএনপির রয়েছে বলে জানান তারেক রহমান।

ইসলামী আন্দোলন, বাংলাদেশ এর আমীর মাওলানা সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম বলেন, গণঅভ্যুত্থানের পরে সারাদেশে ওলামা কেরামের যে মাঠ তৈরি হয়েছে তাকে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। আর এদেশে নাস্তিকতা, ফ্যাসিবাদের কোনো স্থান থাকবে না। এদেশে আলেম-ওলামাদেরর নেতৃত্ব থাকতে হবে। আমি বিশ্বাস করি, আগামীতে ইসলাম যদি রাষ্ট্রীয়ভাবে ক্ষমতায় যায় তাহলে ইমাম খতিবদের দাবি পুরন মাত্র ১/২ মিনিটের মধ্যে বাস্তবায়িত হবে। বিগত সময়ে রাজনৈতিক দলগুলো যারা ক্ষমতায় গেছে তারা ধোকা দিয়েছে এটা আর কেউকে করতে দেয়া হবে না।

এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, বাংলাদেশে বিগত ১৬ বছর ইসলাম বিরোধীদের প্রশ্রয় দেওয়া হয়েছে, আওয়ামী লীগ ইসলাম বিরোধী রাজনীতি করেছে, আওয়ামী লীগ ভারতের দালালি করেছে। আমরা এবার কারো দালালি নয়, নিজেদের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষায় নিজের পায়ে বাংলাদেশ গড়ে তুলব এবং সেই বাংলাদেশ হবে ইনসাফের বাংলাদেশ ইনশাল্লাহ। সেই নতুন রাষ্ট্র বিনির্মাণের লড়া, সেই নতুন সমাজ বিনির্মাণের লড়াই জুলাই গণঅভুত্থানে যেভাবে আপনারা-আমরা কাঁধে কাধ মিলিয়ে লড়াই করছি, আমরা সামনেও কাঁধে কাঁধ মিলে লড়াই করব। আমরা আপনাদের সাথে থাকবো আপনারা জনগণের পাশে থাকবেন।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমদ বলেন, আপনারা যে ৭ দফা দাবি দিয়েছেন সে সম্পর্কে বলতে চাই, আমরা আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের যে ধারনা সকল নাগরিক ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল নাগরিকদের অধিকার আচার-অনুষ্ঠান নিশ্চিত করার বিধান সংবিধান আছে। আমরা এটার নিশ্চিত করব ইনশাল্লাহ। বিএনপি ক্ষমতায় গেলে কুরআন ও সুন্নাহ বিপরীতে কোন কানুন করা হবেৃ যদি থাকে সেটা বাতিল করা হবে। সংবিধানের মূলনীতিতে শহীদ জিয়াউর রহমান বিসমিল্লাহ হির রাহমানির রাহিম’ সন্নিবেশিত করেছিলেনৃ এখন সেটা নেই। আমরা আগামীতে এটা সংবিধানে পুনবর্হাল করব।

সম্মিলিত ইমাম খতিব পরিষদের আহ্বায়ক বায়তুল মোকাররম মসজিদের সিনিয়র পেশ ইমাম মুফতি মুহিবুল্লাহির বাকী নদভীর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় হেফাজতে মাওলানা জোনায়েদ আল হাবিব, মুফতি সাখাওয়াত হোসাইন রাজী, মুফতি হাবিবুর রহমান কাশেমী, মুফতি বশির উল্লাহ, গণঅধিকার পরিষদের নুরুল হক নুর, খেলাফত আন্দোলনের মাওলানা আতাউল্লাহ হাফেজ্জী, মাওলানা হাবিবুল্লাহ মিয়াজী, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মাওলানা মনজুরুল ইসলাম আফেন্দী, মুফতি মহিউদ্দিন ইকরাম, নেজামী ইসলাম পার্টি মুফতি মুসা বিন ইজহার, শায়খ আহমদুল্লাহ, মাওলানা মুনির হোসাইন কাশেমী, মাওলানা খলিলুর রহমান মাদানী,মাওলানা আবদুল্লাহ বিন আবদুর রাজ্জাক,মাওলানা গোলাম রাব্বানীসহ বিভিন্ন স্থান থেকে আসা ইমাম-খতিবগণ বক্তব্য রাখেন।

ঢাকায় প্রথমবারের মতো দেশের বিভিন্ন মসজিদের ইমাম–খতিবদের নিয়ে বৃহৎ পরিসরে অনুষ্ঠিত হয়েছে সম্মিলিত ইমাম–খতিব জাতীয় সম্মেলন ২০২৫। ইমাম–খতিবদের দ্বীনি দায়িত্ব স্বাধীনভাবে পালন, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয়ভাবে তাদের মর্যাদা সমুন্নত রাখা এবং সামগ্রিকভাবে খতিব সমাজের ৭ দফা দাবি তুলে ধরার লক্ষ্যে এই সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। পুরো অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন মুফতী আজহারুল ইসলাম ও মুফতী শরিফুল্লাহ।

সম্মেলনে উপস্থাপিত ৭ দফা দাবিনামা হ”েছ, রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে সব ধর্মের অধিকার সংরক্ষণ করে ইসলামী শরিয়াহকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। রাষ্ট্রীয় জনকল্যাণমূলক কর্মকা-ে ইমাম–খতিবদের সম্পৃক্তকরণ। মসজিদ-মাদরাসার বিদ্যুৎ ও পানির বিল বিষয়ে বিশেষ সুবিধা প্রদান। ইমাম–খতিব, মুয়াজ্জিন ও খাদেমদের চাকরি বিধি প্রণয়ন। অনিয়ন্ত্রিত গ্রেফতার ও হয়রানি নিষিদ্ধকরণ। নিয়োগে যোগ্য আলেমদের অগ্রাধিকার প্রদান এবং ওয়াকফ প্রশাসন, শিক্ষানীতিতে শরিয়াহসম্মত সংস্কার ও আলেম সম্পৃক্তকরণ।