ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর শান্তিতে নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার এক বছর পূর্ণ করেছে গতকাল শুক্রবার। শুক্রবার জুলাইয়ের শহীদদের আকাক্সক্ষা অনুসারে সরকার নির্বাচনী ব্যবস্থা, শাসনব্যবস্থা, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, অর্থনীতি, বিচার ব্যবস্থা, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন এবং অভ্যুত্থানে নিহতদের ঘাতকদের বিচারসহ সব খাতে ইতিবাচক পরিবর্তন আনার লক্ষ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। অন্তর্বর্তী সরকার ৫ আগস্ট, যেদিন শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার মধ্য দিয়ে গণজাগরণ চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করে, সেদিন 'গণঅভ্যুত্থান দিবস' উপলক্ষে সরকার জাতির সামনে জুলাই ঘোষণাপত্র উপস্থাপন করে। 'জাতীয় ঐকমত্য কমিশন'-এর মাধ্যমে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দফায় দফায় আলোচনা শেষে 'জুলাই সনদ'-এর খসড়ার কাজ চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। ৫ আগস্ট প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ঘোষণা দেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত হবে। তিনি বলেন, 'অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পক্ষ থেকে আমি প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে চিঠি পাঠাব, যাতে নির্বাচন কমিশন ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে, পরবর্তী রমযানের আগেই, জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজন করে।
পরদিন, ৬ আগস্ট, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে নির্বাচন কমিশনে একটি চিঠি পাঠানো হয়, যেখানে আগামী ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে রমযান শুরু হওয়ার আগেই নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করার জন্য বলা হয়। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, এই চিঠির মাধ্যমে নির্বাচন আয়োজনের জন্য নির্বাচন কমিশনকে সরকারের অনুরোধ প্রক্রিয়াগতভাবে সম্পন্ন হয়েছে। সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের ফলে এ বছরের জুন মাসে দেশে সামগ্রিক মূল্যস্ফীতি কমে ৮.৪৮ শতাংশে নেমেছে, যা গত ৩৫ মাসে সর্বনিম্ন। প্রবাসী বাংলাদেশিদের সরকারের প্রতি গভীর আস্থার ফলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভেও স্থিতিশীলতা ফিরে এসেছে। গত ১১ মাসে বৈদেশিক ঋণদাতাদের কাছে ৪ বিলিয়ন ডলার সুদ ও মূলধন পরিশোধ করা হয়েছে, যা দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। এর পরেও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ছে।
এবার আসি কি বলছেন অংশীজনেরা। জুলাই আন্দোলন এবং শেখ হাসিনার পলায়নের ক্ষেত্রে মূল স্টেক হোল্ডার বা অংশীজন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন। সংগঠনটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিতে সদ্যঘোষিত জুলাই ঘোষণাপত্র ছাত্র-জনতার আকাক্সক্ষার একটি অসম্পূর্ণ প্রতিচ্ছবি, যা সমৃদ্ধ ও সর্বজনীন হতে পারেনি এবং একই সঙ্গে যা ছাত্র-জনতার আকাক্সক্ষার বাস্তবায়নকে অনিশ্চিত করে তুলেছে বলে মনে করছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। জুলাই ঘোষণাপত্র পাঠ-পরবর্তী এক যৌথ বিবৃতিতে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সভাপতি রিফাত রশিদ ও সাধারণ সম্পাদক হাসান ইনাম এ প্রতিক্রিয়া জানান।
বৃহস্পতিবার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দপ্তর সম্পাদক শাহাদাত হোসেনের পাঠানো এক বিবৃতিতে বিষয়টি বলা হয়েছে। এতে বলা হয়, ’২৪-এর জুলাই ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান ছিল মূলত প্রায় দেড় দশক ধরে চলা ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ, তার দোসর ও গণহত্যাকারী শেখ হাসিনার দুঃশাসন, নিপীড়ন ও গুম-খুনের বিরুদ্ধে জমে ওঠা ঘনীভূত বিস্ফোরণ। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে সংঘটিত এই অভ্যুত্থানের আকাক্সক্ষা ছিল ফ্যাসিস্ট ও খুনি হাসিনার পতন, ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার সম্পূর্ণ বিলোপ এবং একটি নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত। কিন্তু জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিতে সদ্যঘোষিত বহুল প্রতীক্ষিত জুলাই ঘোষণাপত্রে অভ্যুত্থানপন্থি ছাত্র-জনতার আকাক্সক্ষা পুরোপুরি উপেক্ষিত হয়েছে এবং একই সঙ্গে এতে ইতিহাস বিকৃতির মতো ঘটনাও ঘটেছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, প্রথমত এতে উপনিবেশবিরোধী লড়াইয়ের কথা উল্লেখ থাকলেও উপনিবেশবিরোধী সংগ্রামের এক গুরুত্বপূর্ণ পর্ব ১৯৪৭-এর কথা অনুল্লেখিত রয়ে গেছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন মনে করে, ’৪৭, ’৭১ ও ’২৪ এই তিনটি পর্বই এই ভূখণ্ডের মুক্তিসংগ্রামের ধারাবাহিক ইতিহাস; যার প্রতিটিই আমাদের গৌরবের অংশ। তাই এই সবকিছুর একটি সম্মিলন এই ঘোষণাপত্রকে আরও সমৃদ্ধ, পরিপূর্ণ ও ঐতিহাসিকভাবে সংবেদনশীল করে তুলতে পারত। দ্বিতীয়ত, পিলখানা হত্যাকাণ্ড, শাপলা চত্বর গণহত্যা, কোটা সংস্কার আন্দোলন, নিরাপদ সড়ক আন্দোলন, আবরার ফাহাদ হত্যার প্রতিবাদ, মোদিবিরোধী আন্দোলন এবং ভ্যাটবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মতো গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাগুলো এই ঘোষণাপত্রে অনুপস্থিত।
তৃতীয়ত, এটি হওয়ার কথা ছিল একটি প্রোক্লেমেশন, কিন্তু বাস্তবে তা এখন কেবল একটি ডকুমেন্টস-এ পরিণত হয়েছে। কারণ, এটি নিজে থেকে নিজেকে বলবৎ করছে না; বরং পরবর্তী সরকারের কাছ থেকে বৈধতা আদায়ের প্রত্যাশায় ধর্না দিচ্ছে। চতুর্থত, এতে বিদ্যমান সংবিধানের সংস্কারের কথা বলা হয়েছে। বলা বাহুল্য, কার্যত তা অসম্ভব। হয় একটি সম্পূর্ণ নতুন সংবিধান প্রণয়ন করতে হবে অথবা মৌলিক সাংবিধানিক সংস্কার করতে হবে, যার অর্থ বিদ্যমান সংবিধানের ক্ষমতাকাঠামোর আমূল পরিবর্তন। কিন্তু সংসদে গিয়ে সংবিধান সংস্কারের প্রতিশ্রুতি মূলত বিদ্যমান সংবিধানকে ঘষামাজা করার শামিল।
পঞ্চমত, এতে ইতিহাস বিকৃতির ঘটনা ঘটেছে। কারণ, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ‘ডাকে’ না; বরং তারাই ছিল এই গণঅভ্যুত্থানের মূল নেতৃত্বদানকারী প্ল্যাটফর্ম, যা এতে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। ষষ্ঠত, এতে শহীদদের ‘জাতীয় বীর’ ঘোষণা দেওয়া হলেও তাদের হত্যাকারীদের বিচার সম্পন্ন করার বিষয়টি স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়নি। একই সঙ্গে এতে শহীদদের প্রকৃতসংখ্যা তুলে ধরতে না পারা হাজারও শহীদের রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে থাকা অন্তর্বর্তী সরকারে ব্যর্থতা, যা জুলাই অভ্যুত্থানের আকাক্সক্ষার পরিপন্থি। সপ্তমত, এতে পরিস্কারভাবে পরবর্তী সংসদের হাতে সংস্কারের দায়িত্ব এবং জুলাই গণঅভ্যুত্থানের স্বীকৃতি তুলে দেওয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে একদিকে সংস্কারকে অনিশ্চিত করা হয়েছে, অন্যদিকে সংস্কারকে বিদ্যমান সংবিধানের সংশোধনীতে সংকুচিত করা হয়েছে। কারণ, রাষ্ট্রের গঠনতন্ত্র (সংবিধান) রাষ্ট্রের একটা অর্গান (সংসদ) পরিবর্তন করতে পারে না। ফলে এই প্রক্রিয়ায় যা হবে, তাকে আর 'সংস্কার' বলা যাবে না। এই ডকুমেন্ট মূলত সংস্কারকে বিলীন করারই শামিল। তাই পরবর্তী সংসদ নয়; নির্বাচিত গণপরিষদ অথবা গণভোটের মাধ্যমে সংবিধানের মৌলিক সংস্কার সাধন করতে হবে। বিবৃতিতে বলা হয়, জুলাই ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের আকাক্সক্ষা ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ এবং নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের ভবিষ্যৎ রূপরেখার বহু গুরুত্বপূর্ণ উপাদানই এতে অনুপস্থিত; পাশাপাশি সংস্কার বাস্তবায়নের ভুল পদ্ধতি চয়ন, গোটা সংস্কার প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ ও অনিশ্চিত করে তুলেছে। সংস্কার বাস্তবায়নের সঠিক পথ নির্ধারণ করে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের স্পিরিটের প্রতি ইনসাফ কায়েম করতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
একই বিষয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেছেন, এক বছর অতিক্রম শেষে আমরা এখনো আমাদের কাক্সিক্ষত বাংলাদেশ পাইনি। হয়তো এক বছরে পাওয়া সম্ভবও নয়। কিন্তু এক বছরে যতটুকু পাওয়া সম্ভব ছিল ততটুকুও আমরা পাইনি।
নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে এক পোস্টে তিনি এসব কথা লেখেন। ফেসবুক পোস্টে সারজিস লেখেন, স্বৈরাচারী খুনি শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের আপামর ছাত্র জনতার রক্তক্ষয়ী গণঅভ্যুত্থান! লুকিয়ে দেশ ছেড়ে পালালো শেখ হাসিনা। বছরের পর বছর ধরে বিভিন্নভাবে বিভিন্ন ক্ষেত্রে নির্যাতিত হয়ে আসা মানুষগুলো স্বপ্ন দেখতে লাগলো কাক্সিক্ষত বাংলাদেশের।
এরপর তিনি লেখেন, এক বছর অতিক্রম শেষে আমরা এখনো আমাদের কাক্সিক্ষত বাংলাদেশ পাইনি। হয়তো এক বছরে পাওয়া সম্ভবও নয়। কিন্তু ১ বছরে যতটুকু পাওয়া সম্ভব ছিল ততটুকুও আমরা পাইনি। এক্ষেত্রে কারো দায় হয়তো কম, কারো হয়তো বেশি। কিন্তু এককভাবে কাউকে দায়ী করার সুযোগ নেই। একটা কাক্সিক্ষত রাষ্ট্রের জন্য রাষ্ট্রীয় বিদ্যমান গুরুত্বপূর্ণ অংশগুলোর একই সঙ্গে এগিয়ে যাওয়া গুরুত্বপূর্ণ। কাক্সিক্ষত রাষ্ট্র বিনির্মাণে এই প্রত্যেকটি অংশ একে অপরের পরিপূরক। রাজনীতিবিদ, আমলাতন্ত্র, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, সিভিল সোসাইটি, মিডিয়া, ব্যবসায়ী, শ্রমজীবী মানুষ থেকে শুরু করে সাধারণ জনগণ বলতে আমরা যাদের বোঝাই, তাদের প্রত্যেকের অবদান গুরুত্বপূর্ণ। এর মধ্যে একটা অংশ সহযোগিতা না করলে অন্য অংশগুলোর ওপরে এর বিরূপ প্রভাব পড়ে। সফলতা সম্ভব হয় না। অনেকটা চক্রের মতো।
সারজিস লেখেন, ব্যক্তি হাসিনা পালিয়েছে। কিন্তু বছরের পর বছর ধরে যে অসুস্থ এবং অপকর্মের চর্চাগুলো ক্ষমতায় থেকে তিনি ও তার বন্দোবস্ত অধিকাংশ মানুষের মননে, মগজে, চিন্তায়, অস্থিমজ্জায়, ভাবনায়, আচরণে সন্নিবেশিত করেছেন সেগুলো চাইলেই একটা ব্যক্তির মতো পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই।
এই নষ্ট সিস্টেম, চিন্তা আর ব্যক্তিদের সঙ্গে আমাদের প্রতিনিয়ত ফাইট করতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সুযোগ পেলে যে রিকশাচালক ভাড়া বাড়িয়ে দেয়, যে সবজি বিক্রেতা সবজির দাম বাড়িয়ে দেয়, যে ব্যবসায়ী অসৎ উদ্দেশে পণ্য মজুদ করে রাখে, যে সাধারণ জনগণ ব্যক্তিস্বার্থে অর্থের বিনিময়ে হলেও সুপারিশ প্রত্যাশা করে, যে রাজনীতিবিদ ক্ষমতার অপব্যবহার করে, যে আমলা ক্ষমতার দালালি করে, যে সিভিল সোসাইটি স্বার্থের কাছে অন্ধ হয়ে যায়, যে মিডিয়া ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর উদ্দেশ্য সার্ভ করে, যে রাজনৈতিক দল দেশের আগে দলের স্বার্থকে প্রাধান্য দেয়; তাদের কারও মধ্যে খুব একটা পার্থক্য নেই। যার যতটুকু সামর্থ্য সে ততটুকু ক্ষমতার অপব্যবহার করে। আমাদের লড়াইটা ইন্ডিভিজ্যুয়াল জায়গা থেকে। প্রত্যেককে প্রত্যেকের কাজটা করতে হবে।
এনসিপির এই নেতা ফেসবুকে আরও লেখেন, আমি বিশ্বাস করি, আমরা যদি আমাদের লড়াইটা চালিয়ে যেতে পারি, তাহলে কিছুটা বিলম্ব হলেও আমাদের কাক্সিক্ষত বাংলাদেশ অর্জন সম্ভব। যে প্রজন্ম একটা অভ্যুত্থান করে শেখ হাসিনার মতো ফ্যাসিস্টের পতন ঘটাতে পারে সেই প্রজন্মের সামনে আগামীতে অন্য কেউ যে কোনো কিছু করে অন্তত পার পেয়ে যাবে না। এই পথচলায় ষড়যন্ত্র হবে, ফাঁদ থাকবে, পিছুটান থাকবে, মিডিয়া প্রোপাগান্ডা করা হবে, মনোবল ভেঙে ফেলার চেষ্টা করা হবে। কিন্তু দমে যাওয়ার সুযোগ নেই। করাপটেড সিস্টেমের ফলে সুবিধাভোগী যে অল্প কিছু কালো হাত আছে, তাদের কাছে রয়েছে অঢেল অবৈধ অর্থ। তারা সর্বোচ্চটা ব্যবহার করে আমাদের মধ্যে বিভাজন তৈরি করবে, বিশ্বাস ভাঙবে, একজনকে আরেকজনের প্রতিপক্ষ হিসেবে প্রতীয়মান করবে। আমাদের এসব মোকাবিলা করেই দাঁতে দাঁত কামড়ে সামনে এগিয়ে যেতে হবে।
পোস্টে তিনি লেখেন, আমাদের যেই সহযোদ্ধারা নিজের জীবন বিলিয়ে দিয়েছেন, যারা হাত-পা-চোখ হারিয়েছেন, শরীরে এখনো বুলেট নিয়ে ঘুরছেন, তাদের সামনে রেখে আমাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। তাদের এই ত্যাগ যে কোনো মূল্যে বৃথা যেতে দেওয়া যাবে না। ৫ ই আগস্ট আমাদের সবার কাছে সৃষ্টিকর্তার পক্ষ থেকে আমানত স্বরুপ। আমৃত্যু সেই পরম আমানতের খেয়ানত না করার প্রতিজ্ঞাই আমাদের কাক্সিক্ষত বাংলাদেশ এনে দিতে পারে। ইনশাআল্লাহ আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে সেটা করবো। ইনক্বিলাব জিন্দাবাদ।
অভ’্যত্থানের পর প্রতিবিপ্লব ঠেকাতে শাহবাগে মঞ্চ তৈরি করে ইনকিলাব মঞ্চ। সংগঠনটির মুখপাত্র শরিফ ওসমান বিন হাদি প্রধান উপদেষ্টাকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আপনি কিছু বিপ্লবী সিদ্ধান্ত নেন। সেই বিপ্লবী সিদ্ধান্তের মধ্যে আপনি এক নম্বরে বলেন, যে ক্ষমতায় আসবে তাকে ওয়াদা করতে হবে ‘বাহাত্তরের সংবিধান’ বাতিল করতে হবে। যে বাহাত্তরের সংবিধানের মধ্য দিয়ে বাকশাল হয়েছে, বিচারিক হত্যাকাণ্ড হয়েছে; সেই সংবিধানকে নতুন সংসদে বাতিল করে, জুলাইয়ের ঘোষণাপত্রের আলোকে এবং জুলাই সনদের আলোকে নতুন সংবিধান রচনা করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে হাদি ড. ইউনূসের কাছে কিছু সুনির্দিষ্ট দাবি তুলে ধরে তিনি দাবি করেন, প্রতিনিধিত্বশীল স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠন করতে হবে। কমিশনে যদি দশজনের মেম্বার হয়; দুইজন বিরোধী দল, দুইজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, একজন শহীদ পরিবার থেকে থাকবে। আর এই পাঁচজনই সরকারের সদস্য বলে বিবেচিত হবে। এছাড়া বাকি পাঁচজন থাকবে অন্য স্টেক থেকে।
তিনি দাবি করেন, জনপ্রশাসন সংস্কার করতে হবে। সবকিছুতে একমাত্র বিসিএস প্রশাসন ছড়ি ঘুরাবে এটা হতে পারে না। আপনি ( প্রধান উপদেষ্টা) ক্ষমতার ডিসেন্ট্রালাইজেশন (বিকেন্দ্রীকরণ) করেন। অন্যান্য ক্যাডারগুলোকে আরেকটু এমপাওয়ার করেন। এই যে প্রশাসকরা নিজেদের প্যারালাল রাষ্ট্র ভাবে, এটাকে ভেঙে দিতে না পারলে আবার সে আমলাতান্ত্রিক দেশ হয়ে যাবে। এছাড়াও তিনি জুডিসিয়াল রিফর্ম ও নির্বাচন কমিশনের বর্তমান প্যাটার্ন ভেঙে দেওয়ার দাবিও জানান ।
ওসমান হাদি বলেন, জুলাই ঘোষণাপত্রে সাতচল্লিশকে বাদ দিয়ে, এই অঞ্চলের দুইশ বছরের রাজনৈতিক সংগ্রামকে বাদ দিয়ে মূলত বাঙালি জাতীয়তাবাদের বয়ান রাখা হয়েছে। শাহবাগের জঘন্যতম মত দিয়ে এই বাঙালি জাতীয়তাবাদের নামে আমাদের দেশে বিচারিক হত্যাকাণ্ডকে সব থেকে বড় লেজিটিমিসি দেওয়া হয়েছে।
সাতচল্লিশ, একাত্তর আর চব্বিশকে মুখোমুখি দাঁড় করানো বাংলাদেশ বিরোধী ষড়যন্ত্র উল্লেখ করে তিনি বলেন, সাতচল্লিশের ধারাবাহিকতা হলো একাত্তর; আর একাত্তরের চূড়ান্ত ধারাবাহিকতা আমাদের ২০২৪। সুতরাং সাতচল্লিশ, একাত্তর আর চব্বিশকে একটার বিপরীতে আরেকটা দাঁড় করানোর চেষ্টা বাংলাদেশ বিরোধী ষড়যন্ত্র।
জুলাই ঘোষণাপত্রে পিলখানা হত্যাকাণ্ড ও শাপলা গণহত্যার মতো গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাগুলোর উল্লেখ না থাকায় তিনি প্রধান উপদেষ্টার সমালোচনা করেন। তিনি প্রশ্ন তোলেন, আপনারা এত হীনম্মন্যতা কীসের? শাপলাই হীনম্মন্যতা, পিলখানায় হীনম্মন্যতা; তাহলে তাদের রক্তের বিনিময়ে যে সরকারে আছেন সেখানে থাকতে আপনাদের লজ্জা করে না?