স্টাফ রিপোর্টার : যুক্তরাজ্যের(ইউকে) ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস-এনএইচসি আদলে ‘সার্বজনীন স্বাস্থ্য ব্যবস্থা’ গড়ে তোলার লক্ষ্যে জাতীয় স্বাস্থ্যখাত সংস্কারের রূপরেখা ঘোষণা করেছে বিএনপি। গতকাল মঙ্গলবার সকালে গুলশানে চেয়ারপার্সনের কার্যালয়ে এক সাংবাদিক সম্মেলনে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক স্বাস্থ্য মন্ত্রী ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন এই রূপরেখা উপস্থাপন করেন।

তিনি বলেন, প্রান্তিক জনগোষ্ঠর জন্য মানসম্পন্ন স্বাস্থ্য সেবা যেমন আজও নিশ্চিত হয়নি, তেমনি চিকিৎসা বিজ্ঞানের শিক্ষা আজ পরিকল্পিত নয়। আমাদের চিকিৎসা ব্যবস্থা আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কাক্সিক্ষত প্রতিযোগিতায় সক্ষমতা অর্জন করেনি। সাধারণ জনগোষ্ঠীর চিকিসা সেবা প্রাপ্তির জন্য বিদেশ গমন প্রবণতায় এখনো রয়েছে উচ্চ হার। বেসরকারি স্বাস্থ্য সেবা ব্যবস্থা অদ্যাবধি সার্বজনীন জনবাস্তব হয়ে ওঠেনি। স্বাস্থ্য সেবা প্রাপ্তি দেশের জনগনের অন্যতম মৌলিক অধিকার এই কথাটির বাস্তব প্রতিফলন আজও প্রত্যাশিত মাত্রায় উপনীতি হতে পারেনি।

স্বাস্থ্য খাতের প্রস্তাবনা তুলে ধরে খন্দকার মোশাররফ বলেন, বিএনপি আগামীতে ক্ষমতায় আসলে দারিদ্র বিমোচন না হওয়া পর্যন্ত সুবিধাবঞ্চিত হতদরিদ্র জনগণের জন্য সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনি আরও সম্প্রসারিত করব। জাতীয় বাজেটে স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ জিডিপি ৫% এর কম হবে না। প্রাথমিক ও প্রতিরোধমূলক স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে পর্যাপ্ত সংখ্যাক প্রশিক্ষিত নারী ও পুরুষ, পল্লী স্বাস্থ্য কর্মীর ব্যবস্থা করা হবে। সংক্রামক ও অসংক্রামক রোগের চিকিৎসা, শিক্ষা ও গবেষণা সুবিধা নিশ্চিত করা হবে।

বিগত ১৫ বছর আওয়ামী লীগের শাসনামলে অনিয়ম, আর্থিক দুর্নীতি, প্রশাসনিক দুর্বৃত্তায়ন, দলীয়করণের মাধ্যমে স্বাস্থ্যখাতকে কুক্ষিগত করার ফলে ‘চিকিৎসক ও রোগী সম্পর্কের অবণতি, বিদেশমুখী চিকিৎসার বিস্তার’ ঘটেছে বলে অভিযোগও করেন সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী।

বিএনপির প্রস্তাবনায় স্বাস্থ্যখাতের ব্যাপক উন্নয়নে তিন ধাপে ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ তুলে ধরে খন্দকার মোশাররফ বলেন, আমাদের প্রস্তাবনায় স্বল্প মেয়াদি (এক থেকে তিন বছর) পরিকল্পনা রয়েছে। এতে আমরা গ্রামীণ স্বাস্থ্য সহকারী নিয়োগের ওপর আমরা গুরুত্ব দিয়েছি। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্ষে সেবার গুণগত মান উন্নয়ন এবং কার্যকরী প্রাথমিক রেফারেন্স সেন্টার হিসেবে রূপান্তর, প্রয়োজনীয় বিশেষায়িত সেবা নিশ্চিত করা, পরিকল্পিত পরিবার ও জনসংখ্যার ব্যবস্থাপনার কথা আমরা বলেছি। এছাড়া ‘মধ্য মেয়াদি’ (এক থেকে পাঁচ বছর) এবং ‘দীর্ঘ মেয়াদি’ (১০ বছর পর্যন্ত) পরিকল্পনার মাধ্যমে গোটা স্বাস্থ্যখাতে আমুল পরিবর্তনের কথা তুলে ধরেন তিনি।

বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য অধ্যাপক ফরহাদ হালিম ডোনার এক প্রশ্রের জবাবে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও বেগম খালেদা জিয়ার শাসনামলে স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়নে বিভিন্ন হাসপাতাল ও ইন্সটিটিউট প্রতিষ্ঠার কথা উল্লেখ করে বলেন, বিগত সরকারের মূল লক্ষ্য ছিলো আমাদের স্বাস্থ্যখাত নষ্ট করে পার্শ্ববর্তী দেশের আমাদের লোকদের চিকিৎসার জন্য পাঠানো। তার জন্য আপনার ১০ বিলিয়র ডলার প্রতিবছর আমাদের এখান থেকে চলে যাচ্ছে পার্শ্ববর্তীদেশে। এটাই বাস্তবতা।

সাংবাদিক সম্মেলনে স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম এবং বিএনপির মিডিয়া সেলের সমন্বয়ক অধ্যাপক মওদুদ হোসেন আলমগীর পাভেল উপস্থিত ছিলেন।