স্টাফ রিপোর্টার: সংস্কার ছাড়া জাতীয় নির্বাচন করা যাবে না বলে নির্বাচন কমিশনকে জানিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। নির্বাচন করার জন্য যে সংস্কার লাগে সেটুকুর জন্য জামায়াতে ইসলাম সময় দিতে প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন দলটির সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার। তিনি বলেন, পুরো সংস্কার করতে অনেক সময় লাগবে এবং সেটি নির্বাচিত সরকারের কাজ। তবে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কার করে নির্বাচনের পক্ষে মতামত দিয়েছে জামায়াতে ইসলামী। এক্ষেত্রে কোন দিনক্ষন সময় নির্ধারণ করে দেয়া হয়নি বলে তিনি জানান।

গতকাল বৃহস্পতিবার আগারগাওস্থ নির্বাচন ভবনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পারওয়ার ইসির সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের কাছে তিনি এ কথা বলেন। এর আগে, অধ্যাপক মিয়া গোলাম পারওয়ারের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিন, চার নির্বাচন কমিশনার, ইসি সচিবের সাথে প্রায় দু’ঘণ্টা বৈঠক করেন। বৈঠকে জামায়াত সেক্রেটারি জেনারেল ছাড়াও সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক সংসদ সদস্য এএইচএম হামিদুর রহমান আযাদ, নির্বাহী পরিষদের সদস্য, প্রকাশনা ও মিডিয়া বিভাগের সেক্রেটারি এডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ, কর্মপরিষদ সদস্য ও ইসলামিক ল ইয়ার্স কাউন্সিলের সভাপতি অ্যাডভোকেট জসিম উদ্দিন সরকার, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ও মজলিশে সুরার সদস্য অ্যাডভোকেট ইউসূফ আলী, মহানগরী জামায়াতের কর্মপরিষদ সদস্য অ্যাডভোকেট কামাল উদ্দিন উপস্থিত ছিলেন।

অধ্যাপক মিয়া গোলাম পারওয়ারের বলেন, ‘অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করার লক্ষ্যে সুন্দর আলোচনা হয়েছে। আমরা লিখিত প্রস্তাবও দিয়েছি। আন্তরিকতা ও সৌহার্দপূর্ণ পরিবেশে আলোচনা করেছি। তারা সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। সক্ষমতা, সীমাবদ্ধতা নিয়েও আলোচনা করেছি। ২৩টি সুনির্দিষ্ট বিষয়ে আলোচনা করেছি।’

তিনি বলেন, আমরা বলেছি, নো ইলেকশান উইথআউট রির্ফম। নির্বাচন ব্যবস্থার সাথে যে অর্গান ও বিভাগ জড়িত সেগুলোকে সংস্কার করেই জাতীয় সংসদ নির্বাচন দিতে হবে। তা না হলে নির্বাচন অবাধ হবে না নিরপেক্ষ হবে না। পূর্বের যে তিনটি নির্বাচন হয়েছে সেগুলোতে জনগন ভোট দিতে পারে নাই। সেই নির্বাচনেরই পুনরাবৃত্তি ঘটবে। দুই হাজার ছাত্র জনতার জীবন ও ত্রিশ হাজার ছাত্র জনতার আহত ও রক্ত বৃথা যাবে। নির্বাচন প্রক্রিয়ার জন্য যে সংস্কার তা করে নির্বাচন করতে হবে। পুরো রাষ্ট্রের সংস্কার করতে হলে সময় লাগবে সেটি নির্বাচিত সরকারের দায়িত্ব। কিন্তু অর্ন্তবর্তী সরকারের দায়িত্ব যে নির্বাচনকেন্দ্রীক সংস্কার করে নির্বাচন দেয়া। তার জন্য যে সময়টুকু লাগবে তার সময় দিতে জামায়াতে ইসলামী প্রস্তুত। আমরা কোন দিন মাস সময় বেধে দেয়নি। প্রথম থেকে আমীরে জামায়াত নির্বাচনের বিষয়ে যে অবস্থান ব্যক্ত করেছেন একই অবস্থান আজকে ব্যক্ত করছি।

তিনি বলেন, জনগণ চায় স্থানীয় সরকার সচল হোক, তারা চায় জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন হোক। আমরাও জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন চাই। এছাড়া আমরা সংখ্যানুপাতিক নির্বাচনের পক্ষে বলেছি। বাংলাদেশের জন্য এটি প্রয়োজন, সংসদ কার্যকরের জন্য প্রয়োজন। বিশে^র ৭টি দেশে এটি চলমান আছে। পাশাপাশি প্রবাসী ভোটারদের ভোট দেওয়ার সুযোগ করে দিতে হবে বলেছি। আরপিওতে ৯১ (এ) সংশোধন করে ইসির ক্ষমতা খর্ব করা হয়েছিল। সেটা বহাল করতে হবে।’

নিবন্ধন নিয়ে আলোচনা হয়েছি কি না? জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা আদালতের বিষয়। আমরা আশা করি, ন্যায় বিচার পাবো। আশা করি, সুবিচার পাবো।

দলের প্রতীকের বিষয়টি নজরে আনলে তিনি বলেন, ‘আমাদের দলীয় প্রতীক তো আছেই। আশা করি, আমরা আদালত থেকে ন্যায় বিচার পাবো।’

তিনি আরো বলেন, ‘সংবিধানে প্রতিটি নাগরিকের দল করার অধিকার আছে। নিবন্ধন শর্ত কঠিন করে সেই অধিকার খর্ব করা হয়েছে। সেটা সহজ করার জন্য বলেছি। সরকারি চাকরি থেকে অবসরের তিন বছর পর নির্বাচনে অংশ নেয়ার বিধান আনতে বলেছি।’

ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের প্রস্তুতিতে একমত কি না? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মাস আমাদের কাছে বিষয় না। বিষয় হলো প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষ করতে হবে। এ সময়ে মধ্যে সংস্কার করে নির্বাচন করতে চাইলে আমাদের কোন আপত্তি নেই। মাস কোন ফ্যাক্টর নয়।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ৩০০ আসনে প্রার্থী দেয়ার সক্ষমতা জামাতের আছে। আমরা প্রস্তুত। ইতোমধ্যে ৩০০ আসনে প্রার্থী প্রস্তুত করা হয়েছে। বাছাই প্রক্রিয়া চলছে। কেন্দ্রীয়ভাবে এখনো ঘোষণা করা হয়নি।

জাতিসঙ্ঘের মানবাধিকার কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে তারা গুম, খুন নিয়ে যে তদন্ত করেছে সেখানে জামায়াতের পক্ষ থেকে তারা কোনো সহযোগিতা পায়নি। এই বিষয়ে আপনাদের দলের অবস্থান কি? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এটি নিয়ে গতকালকে আমরা গণমাধ্যমে কথা বলেছি। এই তথ্য সঠিক নয়। আমরা চেক করে দেখেছি। আমরা জাতিসঙ্ঘ হিউম্যান রাইটস কমিশনের সাথে তথ্য, যত ফ্যাক্স, যত মেইল সব আমরা রেসপন্স করেছি। এই তথ্যটা কিভাবে এসেছে আমরা চেক করবো। আমরা তথ্য যাচাই করেছি, তথ্যটা সঠিক নয়।’