বিএনপি থেকে মনোনয়নপ্রাপ্ত ও মনোনয়নবঞ্চিত নেতাদের অনুসারীদের পালটাপালটি কর্মসূচি পালনে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। কেন্দ্র থেকে কোনো হস্তক্ষেপ না করায় কোথাও কোথাও পরিস্থিতি সংঘাতময় হয়ে উঠছে। জানা গেছে, শতাধিক আসনে প্রার্থী পরিবর্তনের দাবিতে বিক্ষোভ অব্যাহত রেখেছে বঞ্চিতরা। তবে মনোনীতদের কেউ কেউ বলছেন, মনোনয়নবঞ্চিতরা উদ্দেশ্যমূলকভাবে দলে বিভক্তি-বিভাজন সৃষ্টি করছে। দলীয় প্রার্থীর ক্ষতি করার ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। এসব বন্ধে দলীয় হস্তক্ষেপ প্রয়োজন। তা না হলে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা সুবিধা পেয়ে যাবেন। জানা গেছে, জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কিছু কিছু আসনে বিতর্কিত, অযোগ্য ও হাইব্রিড নেতাকে প্রার্থী হিসেবে বেছে নিয়ে চাপে পড়েছে বিএনপি। এ নিয়ে তৃণমূলে হতাশা আর ক্ষোভ ঝরছে। এরই মধ্যে বিতর্কিত এক নেতার প্রার্থিতা স্থগিত করতে বাধ্য হয়েছে দলটি। যদিও দলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এ তালিকা চূড়ান্ত নয়। দলের স্থায়ী কমিটি যদি মনে করে, পার্লামেন্টারি বোর্ডের কাছে প্রতীয়মান হয়, তারা কোনো আসনে প্রার্থী বদল করবে, সেটি নিঃসন্দেহে নিয়ম মেনে পরিবর্তন আসবে।
সূত্র মতে, রাজশাহী বিভাগের ৩৯টি আসনের মধ্যে ৩৪টিতে বিএনপি প্রার্থী ঘোষণা করেছে। দলীয় মনোনয়ন দেওয়ার পর থেকে প্রায় সব আসনেই নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশা দেখা দিয়েছে। প্রার্থী বদলের দাবিতে মনোনয়নবঞ্চিতদের অনুসারীরা বিক্ষোভ সমাবেশ করছেন। সড়ক অবরোধ, ভাংচুর, লুটপাটের মতো কর্মসূচিও তারা পালন করছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
জানা গেছে, রাজশাহী-৩ আসনের প্রার্থী শফিকুল হক মিলনের মনোনয়ন বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ অব্যাহত রেখেছে মনোনয়নবঞ্চিত রায়হানুল হক ও নাসির হোসেনের অনুসারীরা। রাজশাহী-৫ আসনে নজরুল ইসলাম মণ্ডলের মনোনয়ন বাতিলের দাবিতে সাংবাদিক সম্মেলন করেন মনোনয়নবঞ্চিত চার প্রার্থীর অনুসারীরা। চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ আসনে অধ্যাপক শাজাহান মিয়ার পরিবর্তে সৈয়দ শাহীন শওকতকে প্রার্থী করার দাবিতে দলের নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ-সমাবেশ করছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনে আমিনুল ইসলামের মনোনয়ন বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ করে বঞ্চিত ইঞ্জিনিয়ার ইমদাদুল হক মাসুদের সমর্থকরা। আমিনুলকে ফ্যাসিস্টের দোসর অ্যাখ্যা দিয়েছেন তারা। নওগাঁর ছয়টি আসনের মধ্যে ঘোষিত পাঁচটির মধ্যে তিনটিতে প্রার্থী পরিবর্তনের দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ ও সড়ক অবরোধ অব্যাহত রয়েছে। নওগাঁ-১ আসনে মোস্তাফিজুর রহমানের প্রার্থিতা বাতিলের দাবিতে মনোনয়নবঞ্চিত ছালেক চৌধুরীর অনুসারীরা বিক্ষোভ সমাবেশ ও সড়ক অবরোধ করে। নওগাঁ-৩ আসনে ফজলে হুদা বাবলুর মনোনয়ন বাতিলের দাবিতে পারভেজ আরেফিন সিদ্দিকী জনির অনুসারী নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ সমাবেশ করে। নওগাঁ-৪ আসনে ইকরামুল বারী টিপুর মনোনয়ন বাতিলের দাবিতে ঢাকা আব্দুল মতিনের সমর্থকরা নানা কর্মসূচি পালন করছে।
নাটোর-১ আসনে ফজলুর রহমান পটলের মেয়ে ব্যারিস্টার ফারজানা শারমিন পুতুলের বিরুদ্ধে মনোনয়নবঞ্চিত ডা. ইয়াসির আরশাদ রাজনের সমর্থকরা লালপুর-বনপাড়া আঞ্চলিক সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ সমাবেশ করে। স্থানীয়রা সংঘাতের আশঙ্কা করছে। পাবনা-৩ আসনে হাসান জাফির তুহিনের মনোনয়ন বাতিলের দাবিতে আনোয়ারুল ইসলাম ও হাসাদুল ইসলাম হীরার সমর্থক নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে। জয়পুরহাট-১ আসনে মাসুদ রানা প্রধানের মনোনয়ন বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ অব্যাহত রেখেছেন বঞ্চিত আব্দুল গফুর মন্ডলের সমর্থক নেতাকর্মীরা। জয়পুরহাট-২ আসনে সাবেক সচিব আব্দুল বারীর মনোনয়ন বাতিলের দাবিতে একাধিক বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন ইঞ্জিনিয়ার গোলাম মোস্তফার সমর্থকরা।
এদিকে চট্টগ্রাম-১৩ আসনে প্রার্থী পরিবর্তনের দাবিতে কাফনের কাপড় পরে মশাল মিছিল করেছে নেতাকর্মীদের একাংশ। এই আসনে মনোয়নপ্রত্যাশী ছিলেন আলী আব্বাস, হেলাল উদ্দিন, এস এম মামুন মিয়া ও জিয়া উদ্দীন চৌধুরী। কিন্তু সরোয়ার জামালকে প্রার্থী ঘোষণা করায় তা মেনে নিতে পারছেন না তাদের অনুসারীরা। মাগুরা-২ আসনে নিতাই রায় চৌধুরীর মনোনয়ন বাতিলের দাবিতে বক্ষোভ মিছিল চলছেই। বিক্ষোভে বক্তারা অভিযোগ করেন, নিতাই রায় চৌধুরী জনবিচ্ছিন্ন ও তৃণমূলের নেতাকর্মীদের কাছে অগ্রহণযোগ্য। কুমিল্লা-৯ সংসদীয় আসনে গৃহবিবাদে জর্জরিত বিএনপি। দলের মনোনীত প্রার্থী মো. আবুল কালাম গ্রুপ এবং মনোনয়ন বঞ্চিত সামিরা আজিম দোলা গ্রুপ মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছে। এরই মধ্যে একাধিকবার তারা সংঘর্ষে জড়িয়েছেন। সিলেট-৩ আসনে বিএনপির প্রার্থী পরিবর্তনের দাবি তুলেছেন স্থানীয় নেতা-কর্মীদের একটি অংশ। এ আসনে যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি এম এ মালিককে প্রাথমিক মনোনয়ন দেওয়া হয়।
এ ব্যাপারে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, বিএনপির পক্ষ থেকে স্পষ্ট করেই বলা হয়েছে, এটি সম্ভাব্য তালিকা। কোনো এলাকায় তেমন পরিবর্তন মনে করলে অবশ্যই সেটি করা হবে। আর বড় দল হিসেবে প্রতিটি আসনে একাধিক যোগ্য প্রার্থী আছে। সবকিছু বিশ্লেষণ করেই এ তালিকা করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম-২ আসনে বিএনপি ঋণখেলাপি সরওয়ার আলমগীরকে বেছে নিয়েছে। শিক্ষাগত যোগ্যতায় অষ্টম শ্রেণি পাস এই নেতা রাজনৈতিক পালাবদলের পর দলে সক্রিয় হন। ২০১৮ সালে এই আসনে বিএনপির প্রার্থী ছিলেন কর্নেল (অব.) আজিম উল্লাহ বাহার চৌধুরী। নেতাকর্মীরা বলছেন, সরওয়ার অঢেল টাকার মালিক। সেখানে আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে তাঁর মতো নেতাকে প্রার্থী করা হয়েছে। চট্টগ্রাম-৪ আসনে ‘হেভিওয়েট’ নেতা লায়ন আসলাম চৌধুরীর বদলে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির বিলুপ্ত কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক ও উপজেলা যুবদলের সাবেক সভাপাতি কাজী সালাহউদ্দিনকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। আসলামের অনুসারী হিসেবে পরিচিত সালাহউদ্দিন। এতে বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা আন্দোলনের পাশাপাশি গণপদত্যাগের ঘোষণাও দিয়েছেন। গাজীপুর-৩ আসনে বিএনপি বেছে নিয়েছে দলের কেন্দ্রীয় সহস্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডা. এস এম রফিকুল ইসলাম বাচ্চুকে। বিগত দিনে এই এলাকায় তিনি সক্রিয় ছিলেন না। সুনামগঞ্জ-৫ আসনে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে কেন্দ্রীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক কলিমউদ্দিন মিলনকে। তিনি ওয়ান-ইলেভেনের সংস্কারপন্থি নেতা ছিলেন। নেত্রকোনা-৩ আসন নিয়েও জটিলতা বাড়ছে। সেখানে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে রফিকুল ইসলাম হিলালীকে। তার বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ ঘনিষ্ঠতার অভিযোগ তুলেছেন অন্য মনোনয়নপ্রত্যাশী নেতারা। চাঁদপুর-২ আসনে মো. জালাল উদ্দিনকে প্রার্থী করা হয়েছে। অথচ আন্দোলনের সময়ে স্থানীয় নেতাকর্মী নিয়ে তিনি বনভোজন করায় বিতর্ক সৃষ্টি হয়। চাঁদপুর-৪ আসনে মনোনয়নবঞ্চিত বিএনপি নেতা এম এ হান্নানের অনুসারীরা কয়েকদিন ধরে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করছে। গোপালগঞ্জ-২ আসনে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে ডা. এ কে এম বাবরকে। অথচ গত ১৭ বছরে এলাকায় তার কোনো অবদান ছিল না।
অভিযোগ উঠেছে, বিতর্কিত ব্যবসায়ী ও হাজার হাজার কোটি টাকা পাচারকারী এস আলম গ্রুপের সঙ্গে ঘনিষ্ঠদেরও মূল্যায়ন করেছে বিএনপি। এর মধ্যে নোয়াখালী-৫ আসনে প্রার্থী করা হয়েছে মোহাম্মদ ফখরুল ইসলামকে। তিনি এস আলম ঘনিষ্ঠ হওয়ার পাশাপাশি তার বিরুদ্ধে নানা দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। চট্টগ্রাম-১২ আসনে গত বছর ৫ আগস্টের পর এস আলম গ্রুপের গাড়িকাণ্ডে দল থেকে বহিষ্কৃত নেতা এনামুল হককে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। নেতাকর্মীরা জানান, এস আলম পরিবারের তদবিরেই এনামুলকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।
সূত্র মতে, এখনও ৬৩ আসন খালি রেখেছে বিএনপি। এসব আসনের বেশির ভাগে মিত্র দলের প্রার্থীকে মূল্যায়ন করতে পারে দলটি। তবে কিছু আসনে দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের তীব্রতায় দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করতে গিয়ে জটিলতায় পড়েছে তারা। এর মধ্যে সিলেট-৪ আসনে বিভাগীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক মিফতা সিদ্দিকী মনোনয়ন চাইছেন। এ আসনে সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীকে মনোনয়ন দিতে চাইছে বিএনপি। তবে স্থানীয় কোন্দলের কারণে আরিফুল হক সিলেট-১ আসন চাইছেন। সেখানে খন্দকার আব্দুল মোক্তাদির চৌধুরীকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। মুন্সীগঞ্জ-৩ আসনে কাউকে মনোনয়ন দেয়নি বিএনপি। এই আসনে বিএনপির কেন্দ্রীয় সমাজসেবাবিষয়ক সম্পাদক কামরুজ্জামান রতনের বাইরে সাবেক এমপি ও মন্ত্রী আব্দুল হাইয়ের ছোট ভাই এবং জেলা বিএনপির সদস্য সচিব মহিউদ্দিন আহমেদ মনোনয়ন চাইছেন। সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়ার ছেলে রেজা কিবরিয়া হবিগঞ্জ-১ আসন থেকে সংসদ নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করতে চান।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৫ আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন মো. আবদুল মান্নান। সেখানে বিএনপির প্রার্থী ছিলেন কাজী নাজমুল হোসেন। মনোনয়ন না পাওয়ায় তার অনুসারীরা বিক্ষোভ ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে মনোনয়ন পরিবর্তনের দাবি জানিয়েছে। ঢাকা-১৮ আসনে বিএনপি প্রার্থী না দিলেও জুলাই আন্দোলনে নিহত মুগ্ধর ভাই স্নিগ্ধ মনোনয়ন পেতে পারে ধারণা করে সেখানকার নেতা এসএম জাহাঙ্গীরের অনুসারীরা বিশাল মিছিল করে। ফেনী-২ আসনের প্রার্থী পরিবর্তনের জন্য ক্রিকেটীয় স্টাইলে ‘রিভিউ’ আবেদন করে আলোচনায় এসেছেন ফেনী জেলা বিএনপির সদস্যসচিব আলাল উদ্দিন আলাল। কুষ্টিয়া ও বরিশালের দুজন প্রার্থী বয়স জনিত অসুস্থতায় ভুগছেন দাবি করা হচ্ছে দলের ভেতর থেকেই।
সূত্র মতে, সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপির ঘোষিত প্রার্থী তালিকাকে কেন্দ্র করে সারাদেশে দলের মধ্যে তৈরি হওয়া বিরোধ গত কয়েকদিনে আরো প্রকাশ্যে এসেছে। পরিস্থিতি সামাল দেয়ার অংশ হিসেবে যারা মনোনয়ন পেয়েছে মাঠপর্যায়ে তাদের অবস্থান নিরপেক্ষ প্রতিষ্ঠান দিয়ে যাচাই করা হচ্ছে বলে দলটির সূত্রে জানা যাচ্ছে। আনুষ্ঠানিকভাবে এ বিষয়ে কেউ কোনো মন্তব্য না করলেও, যাচাই বাছাইয়ের পর ঘোষিত ‘প্রাথমিক প্রার্থী তালিকাতে’ কিছু পরিবর্তন আসতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন দলটির নেতারা।
ঝালকাঠি-২ আসনে (ঝালকাঠি সদর-নলছিটি) মনোনয়ন পাওয়ায় ইসরাত সুলতানা ইলেন ভুট্টোর বিরুদ্ধে বিগত ১৫ বছরে আন্দোলন-সংগ্রামে মাঠে না থাকার অভিযোগ তুলেছেন জেলা-উপজেলা নেতারা। ঢাকার উপকণ্ঠ নারায়ণগঞ্জের ৫টি আসনের ৪টিতেই দিয়েছে একেবারে নতুন প্রার্থী। নারায়ণগঞ্জ-০১ আসনে মোস্তাফিজুর রহমান দিপু, নারায়ণগঞ্জ-০২ আসনে নজরুল ইসলাম আযাদ, নারায়ণগঞ্জ-০৩ আসনে আজহারুল ইসলাম মান্নান আর নারায়ণগঞ্জ-০৫ আসনে দেওয়া হয়েছে ব্যবসায়ী মাসুদুজ্জানকে। নারায়ণগঞ্জ-০৪ এখনো খালি থাকলেও সেটি গুঞ্জন আছে জোটের শরিক নুর হোসেন কাসেমিকে দেওয়া হতে পারে। সুনামগঞ্জ-৫ আসনে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে কলিমউদ্দিন মিলনকে। এই আসনে ২০১৮ সালে মনোনয়ন পেয়েছিলেন মিজানুর রহমান চৌধুরী। রাজবাড়ী-২ আসনে বিএনপির প্রার্থী ঘোষণার দাবিতে পাংশা শহরের দরগাতলায় আমরণ অনশনে বসেছে রিয়াজুল ইসলাম নামের এক যুবক। যশোর-৪ আসনে মনোনয়ন পুনর্বিবেচনার দাবিতে মানববন্ধন হয়েছে। কুমিল্লা-৬ আসনে আমিন উর রশিদ ইয়াছিনকে মনোনয়ন দেওয়ার দাবিতে কর্মসূচি পালন করছে নেতাকর্মীরা। মেহেরপুর-২ আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী পরিবর্তন করে জেলা বিএনপির সভাপতি জাভেদ মাসুদ মিল্টনকে মনোনয়ন দেওয়ার দাবিতে মশাল মিছিল করেছে নেতাকর্মীরা। খুলনা-২ আসনে মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জুকে প্রার্থী ঘোষণার সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার দাবি জানিয়েছেন সদর ও সোনাডাঙ্গা থানা বিএনপি এবং ১৬টি ওয়ার্ড কমিটির নেতারা। এ আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন শফিকুল আলম মনা ও শফিকুল আলম তুহিন। রংপুর-৩ আসনে সামসুজ্জামান সামুর মনোনয়নের বিরুদ্ধে গণমিছিল করেছে মাহফুজ উন নবীর সমর্থকরা। কক্সবাজার-৪ আসনে শাহজাহান চৌধুরীর পরিবর্তে আবদুল্লাহকে প্রার্থী করার দাবিতে বিক্ষোভ চলছে।
সিনিয়র একাধিক নেতা জানান, বিএনপির হাইকমান্ড মনোনীত প্রার্থীদের মাঠপর্যায়ের কর্মকাণ্ড নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। বিশেষত, মনোনীত প্রার্থীরা মনোনয়নবঞ্চিত ও ত্যাগী নেতাকর্মীদের সঙ্গে কেমন আচরণ করছেন, তা যাচাই করা হচ্ছে। দলীয় সূত্র জানায়, যারা মনোনয়ন পেয়েছেন, তাদের প্রথম ও প্রধান দায়িত্ব হলো বঞ্চিতদের মান ভাঙিয়ে দলীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠা করা। যদি কোনো প্রার্থী এতে ব্যর্থ হন বা ঐক্য তৈরিতে বাধা দেন, তবে ‘ধানের শীষের বিজয়ের স্বার্থে’ হাইকমান্ড প্রার্থী পরিবর্তনের মতো কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে পারে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কেএম মহিউদ্দিন বলেন, মনোনয়ন ঘোষণার ক্ষেত্রে বিএনপি নিজেও যথাযথ পদ্ধতি অনুসরণ করেনি, আবার দলটি ক্ষমতায় আসবে মনে করে প্রতিটি আসনেই একাধিক প্রার্থী মরিয়া হয়ে উঠেছে বলে সহিংসতা হচ্ছে। তিনি বলেন, সবাই জানে আওয়ামী লীগ নির্বাচনে থাকবে না এবং সে কারণেই দল ক্ষমতায় যাচ্ছে নিশ্চিত মনে করেই বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীরা অনেকটা মরিয়া হয়ে উঠেছে।