বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, “দেশের জনগণ স্বাধীন রাষ্ট্রে মর্যাদার সাথে বসবাস করতে চায়। কিন্তু অর্ধশতাব্দীরও বেশি সময় ধরে আমরা সেই কাঙ্ক্ষিত পরিবেশ তৈরি করতে পারিনি। জনগণের সহযোগিতা ও আল্লাহর সাহায্যে আমরা এ পরিস্থিতি পরিবর্তন করতে চাই।”
আজ শনিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) সকালে ফোরাম অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশ (এফডিইবি)-এর উদ্যোগে কাকরাইলের আইডিইবি ভবনের মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি মিলনায়তনে আয়োজিত (এফডিইবি) এর বার্ষিক কাউন্সিল অধিবেশনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে আমীরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমান এসব কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, “আমার অসুস্থতার সময়ে দেশ-বিদেশ থেকে যারা খোঁজ নিয়েছেন এবং দোয়া করেছেন, আল্লাহ তাদের উত্তম প্রতিদান দান করুন। ফোরামের অন্যতম সংগঠক ইঞ্জিনিয়ার গিয়াস উদ্দিনের ইন্তেকালে আমি গভীর শোক প্রকাশ করছি এবং তাঁর রূহের মাগফিরাত কামনা করছি। গত ১৭ বছরে ফ্যাসিস্ট সরকারের দমনপীড়নে নিহতদের শহীদ হিসেবে কবুল করার জন্যও আমি দোয়া করছি। গুম-নির্যাতনের শিকার পরিবারগুলো এখনও দুঃসহ কষ্টে দিন কাটাচ্ছে।
আমীরে জামায়াত বলেন, দেশে কুখ্যাত ‘আয়নাঘর’সহ গোপন নির্যাতন কেন্দ্রের সংস্কৃতি প্রবর্তন করা হয়েছে, যা স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসে আগে কখনো ছিল না। তিনি বলেন, “অসংখ্য শহীদের ত্যাগের বিনিময়ে এ দেশ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। জনগণের প্রত্যাশা-তারা স্বাধীন নাগরিক হিসেবে মর্যাদা নিয়ে বসবাস করবে, তাদের জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তা থাকবে, যুবকেরা কাজ পাবে। কিন্তু আজও আমরা সে বাস্তবতা তৈরি করতে পারিনি। এখন আমাদের ব্যর্থতার ইতিহাস থেকে সফলতার ইতিহাস রচনা করতে হবে।
শিক্ষা ব্যবস্থার সমালোচনা করে আমীরে জামায়াত বলেন, বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থা নৈতিকতাহীন, অকার্যকর এবং মেধা, সময় ও অর্থের অপচয় ঘটাচ্ছে। যাদের হাতে শিক্ষা পরিকল্পনা করার দায়িত্ব, তাদের সন্তানরা দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় পড়ে না। এ কারণেই তারা জনকল্যাণমূলক পরিকল্পনা প্রণয়ন করে না।
তিনি প্রকৌশল ও কৃষি শিক্ষার গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, বুয়েট ও কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবীরা জাতির গর্ব। কৃষিবিদরা মৎস্য, পশুপালন ও খাদ্য উৎপাদনে যে অবদান রেখেছেন, তাতে দেশ সরাসরি উপকৃত হচ্ছে। পর্যাপ্ত গবেষণা তহবিল পেলে এই খাত আরও এগিয়ে যাবে। তিনি প্রশ্ন রাখেন, যারা সবচেয়ে মেধাবী, তারা প্রকৌশল খাতে কাজ করলেও জাতি কেন এর সুফল পাচ্ছে না? বাংলাদেশ প্রকৌশল খাত পিছিয়ে পড়ার কারণ হিসেবে তিনি পাঁচটি বিষয় উল্লেখ করেন- পরিকল্পনার অভাব, পৃষ্ঠপোষকতার অভাব, ভিশনের অভাব, সাহসের অভাব এবং প্রচেষ্টার অভাব। তিনি বলেন, আমরা চাই ঘুণে ধরা বাংলাদেশকে বদলে দিতে। পাঁচ বছরে হয়তো বুলেট ট্রেন চালাতে পারবো না, কিন্তু এক্সপ্রেস ট্রেন চালু করতে পারবো ইনশাআল্লাহ।
দুর্নীতির বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থান তুলে ধরে তিনি বলেন, আমাদের দ্বিতীয় অঙ্গীকার হল দুর্নীতির জোয়ার কেটে দেয়া। ইনসাফের ভিত্তিতে যার যা পাওনা, তা তার হাতে তুলে দেয়া হবে। ঘুষ ও অবৈধ সম্পদের অবসান ঘটাতে হবে। এতে জাতির অর্থনীতি শক্তিশালী হবে।
তিনি সাংবাদিকদের দায়িত্বশীল ভূমিকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, মিডিয়া জাতির দর্পণ, সাংবাদিকরা জাতির বিবেক। কালোকে কালো, সাদাকে সাদা বলতে হবে- সেটি আমাদের বিরুদ্ধে হলেও। রাজনীতিবিদদের দুটি আর সাংবাদিকদের তিনটি কলিজা লাগে। সত্য ও সাহসী সাংবাদিকতাই জাতিকে সঠিক পথে এগিয়ে নিতে পারে।
আমীরে জামায়াত আরও বলেন, রাজনীতিবিদ ও সাংবাদিকদের দায়িত্ববোধ মর্যাদার চেয়ে বড় হতে হবে। তিনি প্রতিশ্রুতি দেন যে, ক্ষমতায় গেলে জনগণকে অধিকার আদায়ে রাস্তায় নামতে হবে না; ইনসাফের ভিত্তিতে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা হবে।
তিনি সকলের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, নিজেদের দোষত্রুটি নিয়ে কামড়াকামড়ি না করে ইতিবাচক কর্মসূচি ও গঠনমূলক উদ্যোগের মাধ্যমে জাতিকে আশার আলো দেখাতে হবে। আমাদের তিনটি মৌলিক অঙ্গীকার হলো- শিক্ষা সংস্কার, দুর্নীতি দমন এবং ন্যায়ভিত্তিক সমাজ গঠন। আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে এ তৌফিক দান করুন।”