চারপাশে সুপ্ত আকাক্সক্ষায় গুপ্ত স্বৈরাচার ওৎ পেতে আছে উল্লেখ করে দলের চূড়ান্ত হওয়া একক প্রার্থীকে বিজয়ে নেতা-কর্মী ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন তারেক রহমান। গতকাল রোববার রাতে দলের এক অনুষ্ঠানে শিগগিরই দলীয় একক প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হবে জানিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এই আহ্বান জানান। তিনি বলেন, শিগগিরই পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন আসনে বিএনপির মনোনীত দলীয় প্রার্থীদের নাম আমরা জানিয়ে দিব দলের পক্ষ থেকে। দল যাকে যে আসনে নমিনেশন দেবে বা দেয় অনুগ্রহপূর্বক তাকে বিজয়ী করে আনার জন্য ঐক্যবদ্ধভাবে প্রত্যেকে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী শক্তিতে বিশ্বাসী প্রতিটি মানুষ দয়া করে কাজ করবেন। মনে রাখবেন আপনাদের চারপাশে সুপ্ত আকাক্সক্ষা নিয়ে গুপ্ত স্বৈরাচার কিন্তু ওত পেতে রয়েছে। সুতরাং আপনাদের নিজেদের মধ্যে রেশারেশি, বিবাদ, বিরোধ এমন পর্যায়ে নেওয়া ঠিক হবে না যাতে করে প্রতিপক্ষ আপনাদের মধ্যেকার বিরোধের সুযোগ নিতে পারে।

গুলশানে হোটেল লেকশোরে বিএনপির প্রবাসে দলের নেতা-কর্মীদের প্রাথমিক সদস্যপদ নবায়ন ও নতুন সদস্যপদ গ্রহনের কর্মসূচি হিসেবে বিএনপির ওয়েবসাইটে অনলাইন পেমেন্ট গেটওয়ের কার্য্ক্রম উদ্বোধন উপলক্ষ্যে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। লন্ডন থেকে তারেক রহমান ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে এই পেমেন্ট গেটওয়ের উদ্বোধন করেন। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন দলের কোষাধ্যক্ষ রশিদুজ্জামান মিল্লাত।

নেতাকর্মীদের প্রতি আহবান জানিয়ে তারেক রহমান বলেন, এমন কিছু করবেন না যাতে স্বাধীনতার ঘোষকের প্রতি অমর্যাদা হয়, দেশ এবং জনগণের জন্য মাদার অফ ডেমোক্রেসির অবদান প্রশ্নবিদ্ধ হয়। আপনারা জনগণের সঙ্গে থাকুন। জনগণকে সঙ্গে রাখুন।

তারেক রহমান বলেন, জনসমর্থিত এবং জনপ্রিয় দল হওয়ার কারণে প্রতিটি নির্বাচনি আসনে বিএনপির একাধিক যোগ্য প্রার্থী মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন, করাটাই স্বাভাবিক। একটি রাজনৈতিক দলের জন্য এটি অবশ্যই গৌরব এবং সম্মানের। দেশের প্রতিটি সংসদীয় আসনে বিএনপির একাধিক যোগ্য এবং জনপ্রিয় প্রার্থী থাকা সত্ত্বেও প্রত্যেককে প্রতিটি মানুষকে নিশ্চয়ই মনোনয়ন দেওয়া সম্ভব নয়। তিনি বলেন, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের যারা ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনে আমাদের সঙ্গে রাজপথের সঙ্গী ছিলেন এমন প্রার্থীকেও বিএনপি সমর্থন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই বাস্তবতার কারণে হয়তো কিছু সংসদীয় সংসদীয় আসনে বিএনপি দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন বঞ্চিত হবেন। নেতাকর্মী সমর্থকদের কাছে আমাদের প্রত্যাশা, দেশ এবং জনগণের বৃহত্তর স্বার্থে, গণতন্ত্রের স্বার্থে আপনারা এই বাস্তবতাটিকে মেনে নিবেন দয়া করে। দলের সিদ্ধান্তকেই চূড়ান্ত হিসেবে গণ্য করবেন।

তিনি বলেন, শুধুমাত্র বিএনপির বিজয় ঠেকাতে গিয়ে পতিত পরাজিত পলাতক স্বৈরাচার দেশে ফাসিবাদ কায়েম করেছিল। দেশের নির্বাচনী ব্যবস্থাকে বিগত ১৫ বছরে সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করে দিয়েছিল। উদ্বেগ এবং আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে ফ্যাসিবাদ মুক্ত বাংলাদেশেও বর্তমানে বিএনপির বিজয় ঠাকাতে সঙ্গবদ্ধ অপপ্রচার এবং অপকৌশল দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে। তবে আমি বিশ্বাস করি,বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদী শক্তিতে বিশ্বাসী প্রতিটি মানুষ যদি ঐক্যবদ্ধ থাকেন তাহলে কোন ষড়যন্ত্রই বিএনপিকে জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন করতে পারবে না ইনশাআল্লাহ।

তারেক রহমান বলেন, একটি দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি শুরু থেকেই ফ্যাসিবাদ বিরোধী জাতীয় ঐক্য বজায় রাখার স্বার্থে সর্বোচ্চ ছাড় দিয়ে একদিকে গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সমঝোতার পথ বেছে নিয়েছে। অপরদিকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকেও যতটুকু সম্ভব যতটুকু যথাসাধ্য সম্ভব আমাদের অবস্থান থেকে আমরা সহযোগিতা করে আসছি। অথচ আমরা দেখছি, সমগ্র দেশবাসী দেখেছেন, প্রতিনিয়ত একের পর এক নিত্য নতুন শর্ত জুড়ে দিয়ে যেভাবে গণতন্ত্র উত্তোরণের পথকে কেমন যেন সংকটাপূর্ণ করে তোলা হচ্ছে। এর পরিণীতি সম্পর্কেও আমাদেরকে সতর্ক থাকা অবশ্যই প্রয়োজন।

তিনি বলেন, প্রবাস থেকে এবারই প্রথমবার এর মতো ভোট দেওয়ার সুযোগ সৃষ্টির কারণে ভোট গ্রহণ প্রক্রিয়াটি কারো কারো কাছে কিছুটা জটিল মনে হতে পারে। তবুও প্রবাসীদের ভোটের অধিকার প্রয়োগের সুযোগ চালু করার জন্য আমি নির্বাচন কমিশনকে আমাদের দলের পক্ষ থেকে আন্তরিক অভিনন্দন এবং সাধুবাদ জানাই। জনগণের রায় ইনশআল্লাহ বিএনপি রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেলে ভবিষ্যতে প্রবাসী বাংলাদেশীদের ভোট গ্রহণ প্রক্রিয়াটি আরো কিভাবে সহজ করা সম্ভব হয় সে পদক্ষেপ আমরা অবশ্যই ইনশাল্লাহ নেব।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে ও নির্বাহী কমিটির সদস্য আবদুস সাত্তার পাটোয়ারির সঞ্চালনায় সভায় গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, অধ্যাপক জাহিদ হোসেন, হুমায়ুন কবির প্রমূখ বক্তব্য রাখেন।