বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, কেউ যদি দেশকে ভালোবাসে, দেশের জনগণকে ভালোবাসে, তাহলে সে দেশ ছেড়ে পালাতে পারে না। তিনি বলেন, জামায়াতে ইসলামীর নেতারা দেশ ছেড়ে পালাননি। বরং বিদেশ থেকে ফিরে এসেছেন। এসময় তিনি একটা মানবিক বাংলাদেশ গড়ার জন্য দলমতের ঊর্ধ্বে উঠে জাতির স্বার্থে জাতীয় ব্যাপারে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন তাহলে এ জাতি বিজয়ী হবে।

গতকাল সোমবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে মাওলানা আব্দুস সুবহান (রহ.) ফাউন্ডেশন আয়োজিত আলী আহমদ মাবরুর রচিত ‘মাওলানা আব্দুস সুবহান রহ: তৃণমূল থেকে শীর্ষে বইয়ের মোড়ক উন্মোচনের আগে দেওয়া প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

মাওলানা সোবহানের ব্যক্তিত্ব সমুদ্রের মতো বিশাল ছিল জানিয়ে জামায়াতের আমীর বলেন, তার পাশে বসলে সিনিয়র মনে হতো না। মনে হতো তিনি ক্লাস আমার ক্লাসমেইট। তিনি কিছু বললে ভেতর থেকে বলতেন। সব সময় কৃত্রিমতা পরিহার করতেন। তিনি মানুষকে ভালবাসতেন। তিনি পাবনাবাসীর কারো চাচা কারো মামা কারো দাদা ছিলেন। তিনি তার তিন পুরুষকে চিনতেন। তার ছিল অপূর্ব কোয়ালিটি। আজকের সমাজে মাওলানা সোবহানের মতো নেতাকে বড় প্রয়োজন ছিল উল্লেখ করে ডা. শফিুকর রহমান বলেন, চরম ক্রিটিক্যাল অবস্থাও তিনি আবেগতাড়িত হয়ে সিদ্ধান্ত নিতেন না। আবেগী পরিবেশ দ্বারা প্রভাবিত হতেন না। জেলখানাতেও সালিশ করতেন বলে জানান জামায়াতের আমীর।

মাওলানা সুবহানের সাহসিকতার প্রশংসা করে জামায়াতের আমীর আরো বলেন, জেলখানাতে তাকে দেখলে মনেই হতো না তার বিরুদ্ধে ফাঁসির আদেশ হয়ে আছে।

আওয়ামী লীগের সমালোচনা করে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, যারা মাওলানা সুবহানদের অপমান করেছে; তারা পালিয়ে গিয়ে আজ তাদের পরিণতি ভোগ করছে উল্লেখ করে বলেন, যারা দেশ ও দেশের মানুষকে ভালবাসে তারা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যায় না।

দলের সাবেক নেতা মীর কাসেম আলীর উদাহরণ দিয়ে জামায়াতের আমীর বলেন, তিনি আমেরিকায় ছিলেন। তার কিছু বন্ধু তাকে বাংলাদেশে আসতে নিষেধ করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, বাংলাদেশে গেলে কী হবে? তার বন্ধুরা বলেছিলেন, আপনারও একই অবস্থা হতে পারে। তখন তিনি বলেছিলেন, মৃত্যুর কাছাকাছি দাঁড়িয়ে বলবো আমার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ রয়েছে, সেসব মিথ্যা।

ডা. শফিকুর রহমান বলেন, মীর কাসেম আলী দেশকে ভালোবাসতেন। দেশের মানুষকে ভালোবাসতে। আর দেশকে ভালোবাসতেন বলেই দেশে ফিরে এসেছিলেন। মাওলানা সুবহানরা কখনো হারিয়ে যান না উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমার যারা সহকর্মী রাজনৈতিক মাঠে আছেন, তাদের বলবো তাদের (সুবহানরা) কাছ থেকে শিক্ষা অর্জন করতে হবে।

নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আমাদের মাওলানা আব্দুস সুবহানের মতো উদারতা ও সাহসিকতা অর্জন করতে হবে। জাতির স্বার্থে দল-মত নির্বিশেষে আমরা ঐক্যবদ্ধ। ব্যক্তিগতভাবে কেউ পরাজিত হতে পারে, কিন্তু সবাই ঐক্যবদ্ধ হলে এ জাতি বিজয়ী হবে।

এ সময় জামায়াত আমীর বলেন, মাওলানা আব্দুস সুবহানের ব্যক্তিত্ব দলমত নির্বিশেষে সকলকে মুগ্ধ করতো। আওয়ামী লীগ সরকারের জুলুমের শিকার হয়ে কনডেম সেলে মৃত্যু অপেক্ষায় থেকেও তিনি কখনও ভয় পাননি। জেলে থাকা অবস্থায় ও তিনি কারাগারের সকলের খোঁজ খবর রাখতেন।

ঢাকা মহানগর উত্তর জামায়াতের আমীর মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন বলেন, মাওলানা আব্দুস সুবহান ছিলেন প্রথিতযশা আলেম, জাতীয় রাজনীতিবিদ ও তুখোড় পার্লামেন্টারিয়ান। তিনি গায়ে খেটে ঘাম ঝরিয়ে রাজনীতি শিখেছেন। রাজনীতি শিখতে হলে তাকে স্টাডি করার আহ্বান জানিয়ে সেলিম উদ্দিন বলেন, ফ্যাসিস্ট আমলে ইসলামী রাজনীতি করার কারণে নেতাদের হত্যা করা হয়েছে। এগুলো ছিলো জুডিশিয়াল কিলিং। এরসাথে জড়িত সবাইকে আইনের আওতায় আনার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, এদের বিচার না হলে এই দেশ থেকে ফ্যাসিবাদ দূর হবে না। এজন্য শিগগিরই তদন্ত কমিশন গঠনের আহ্বান জানান তিনি।

ঢাকা মহানগর দক্ষিনের নায়েবে আমীর ড. হেলাল উদ্দিন বলেন, আওয়ামী লীগ আমলে জামায়াত নেতাদের অন্যায়ভাবে দুনিয়া থেকে বিদায় করা হয়েছে। এই দেশে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে হবে।

জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমীর মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর ছেলে ব্যারিস্টার নাজিব মোমেন বলেন, মাওলানা সুবহান একটি জীবন একটি ইতিহাস। জামায়াতে ইসলামীর নেতা না হলে তিনি যে পরিমাণ সামাজিক কাজ করেছেন তাতে নোবেল পেয়ে যেতেন।

আল্লামা দেলাওয়ার হোসেন সাঈদীর ছেলে শামীম সাঈদী বলেন, মানুষকে কুরআনের দাওয়াত দেওয়ার কারণেই তাদের রাজাকার, মানবতাবিরোধী এবং ধর্ষক বানানো হয়েছে। তারা জামায়াতে ইসলামীকে বাংলাদেশ থেকে মুছে দিতে চেয়েছিল। এজন্য জামায়াত নেতাদের ফাঁসি দিয়ে নিষিদ্ধ পর্যন্ত করেছে। এসব মিথ্যা হওয়ার কারণে মানুষ আমাদের সম্মান করে, শ্রদ্ধা করে।

ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন ডিইউজের সভাপতি শহিদুল ইসলাম বলেন, মাওলানা সুহবান বাস্তব জীবনের সাথে মিলিয়ে কথা বলতেন। জাতীয় সংসদে তার ভাষণগুলোকে একত্রিত করে তা প্রকাশের কথা বলেন তিনি।

অনুষ্ঠানে বিএনপির চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস বলেন, জুলাই বিপ্লবের বিতাড়িত সরকার আব্দুস সুবহানকে অপমানিত করতেই মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আসামী করেছিল। তবে আজ সেই আওয়ামী লীগই অপমানিত হয়ে দেশ থেকে পালিয়েছে।

অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সাপ্তাহিক সোনার বাংলার চেয়ারম্যান একেএম রফিকুন্নবী, লেখক আলী আহমদ মাবরুর প্রমুখ।