আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে নিয়ে শহীদ মীর কাশেম আলীর মেয়ে সুমাইয়া রাবেয়া তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে বলেছেন, একবার আব্বু অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হলেন। ২০০৬ কি ২০০৭ সালের দিকের কথা। ইবনে সিনার একটি কেবিনে তাঁকে রাখা হলো। মানুষ তো টানা আসছেই, দেখা-শোনা করতে। আব্বুও তাঁর স্বভাবসুলভ ভারী গলায় সবার সাথে আলাপ-আলোচনা, পরামর্শ চালিয়ে যাচ্ছেন। রাত তখন প্রায় ৯টা ৩০। আমি সারাদিন বোরকা পরে থেকে হাঁপিয়ে উঠেছি, ঘুমের প্রস্তুতি নিচ্ছি, এমন সময় খবর এল, সায়েদী সাহেব আসছেন।
আব্বুকে আমি যতবার দেখেছি অন্যদের সাথে এক ধরনের ভারী ব্যক্তিত্ব নিয়ে অভ্যর্থনা করতে, এবার তাঁকে বেশ অস্থির হয়ে যেতে দেখলাম। অ্যাসিস্ট্যান্টকে বললেন, “হা, হা… প্লিজ আসতে বলো,” বলে নিজেই উঠে দাঁড়াবার চেষ্টা করলেন। ঠিক তখনই চাচু (সায়েদী সাহেব) ঢুকলেন। দরজার কাছে গলা মিলিয়ে সালাম দিলেন।
আব্বুর হাতে ক্যানুলা লাগানো অবস্থায় তাঁকে দাঁড়ানোর চেষ্টা করতে দেখে চাচু দ্রুত এগিয়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরে বললেন, “এই কাশেম, বসো, বসো।” আব্বুও ভালো ছেলের মতো চুপচাপ বসে চাচুকে কোমরের দিক দিয়ে জড়িয়ে ধরলেন। চাচুও নীচু হয়ে আব্বুকে জড়িয়ে ধরলেন… অনেকক্ষণ এভাবেই রইলেন। কেউ কথা বলছে না, সবাই চুপ। তারপর চাচু আস্তে করে উঠে আব্বুর মাথায় একটি চুমু খেলেন। পরে হাত ধরে পাশে বসে কথা বললেন। পুরো সময়টাতে আব্বুকে মনে হচ্ছিল—একটা শিশু যেন তার খুব প্রিয়, আদরের অভিভাবকের কাছে গেছে। মাথা নিচু করে শুনছেন, আর চাচু বকাঝকা করছেন—নিজের স্বাস্থ্যের দিকে খেয়াল না দেওয়ার জন্য।
আমার এখনো চোখের সামনে ভাসে সেই দৃশ্য, সেই কথোপকথন। কতো আপন, কতো গভীর আত্মার আত্মীয় ছিলেন তাঁরা। জীবনের পথে এই মানুষগুলো সত্যিই রক্তের থেকেও আপন ছিলেন।
সহযোদ্ধাদের প্রতি এই অকৃত্রিম ভালোবাসাগুলোই হয়তো ইসলামী আন্দোলনের বরকত নিয়ে এসেছিল। নিজের জন্য যা ভালো, আমার ভাইয়ের জন্যও তাই—বরং তার চেয়েও ভালো চাওয়া। এই প্রবণতা কি এখনো আছে? আমাদের ভেতরে কি ক্ষমতা আর দুনিয়ার মোহ ঢুকে যায়নি? মনে রাখতে হবে, দীন কায়েমের প্রতিশ্রুতি আল্লাহ দিয়েছেন, কিন্তু কারা সেই পতাকাবাহী হবেন, তা একেবারেই নির্দিষ্ট নয়। আমাদের কাজ ও নিয়তে যদি ত্রুটি থাকে, এই সম্মান আমাদের কাছে আসবে না। একটু ভালো সময়ের মুখ দেখেই অসুস্থ ভাগ-বাটোয়ারা আর কামড়াকামড়ি ঘুণে খাওয়ার মতো আমাদের আকীদা নষ্ট করে দেবে। তখন বাকি থাকবে এক ফাঁপা অবকাঠামো, যা হালকা ধাক্কাতেই ভেঙে পড়বে।
রাহবারদের ভালোবাসার প্রকৃত নিদর্শন হবে তাঁদের জন্য সঠিক পথে, সঠিক সংগ্রামে অবিচল থাকা।
আল্লাহ তাঁদের শাহাদাত কবুল করুন।