শহীদের রক্ত নিয়ে অন্যদের মতো জামায়াতে ইসলামী রাজনীতি করে না এবং করবে না উল্লেখ করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, শহীদের রক্ত নিয়ে যারা রাজনীতি করে করুক, জামায়াতে ইসলামী শহীদ ও আহত-পঙ্গুত্ব বরণকারীদের নিয়ে রাজনীতি করবে না। জামায়াতে ইসলামী শহীদ ও আহত-পঙ্গুত্ব বরণকারীদের জাতীয় সম্পদ হিসেবেই মূল্যায়ন করে এবং করবে। জামায়াতে ইসলামী শহীদ ও জীবন্ত শহীদ পরিবারের সদস্য। তিনি দেশবাসীকে অনুরোধ করেন যাতে কেউ এমন কাজ না করে যার মাধ্যমে শহীদের রক্তের সঙ্গে বেইমানি হয়।
গতকাল সোমবার বিকেলে রাজধানীর ইস্কাটনের লেডিস ক্লাবে জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের উদ্যোগে জুলাই অভ্যুত্থানে আহত, পঙ্গু ও শহীদ পরিবারের সম্মানে ইফতার অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর মো. নূরুল ইসলাম বুলবুলের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য মোবারক হোসাইন। আরো বক্তব্য রাখেন বুয়েটের অধ্যাপক প্রকৌশলী ফখরুল ইসলাম, সাবেক সমাজ কল্যাণমন্ত্রী শহীদ আলী আহসান মুজাহিদের ছেলে আলী আহম্মদ তহকীক প্রমুখ।
ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদের পরিচালনায় আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমীর আব্দুস সবুর ফকির, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমীর এডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিন, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি যথাক্রমে মুহাম্মদ দেলাওয়ার হোসাইন, অধ্যাপক ড. আব্দুল মান্নান, মোহাম্মদ কামাল হোসাইন ও মো. শামসুর রহমান, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের কর্মপরিষদের সদস্য এডভোকেট এস. এম কামাল উদ্দিন, অধ্যাপক মোকাররম হোসাইন, আবদুস সালাম, অধ্যাপক মোবারক হোসাইন, কামরুল আহসান হাসান সহ মহানগরীর দক্ষিণের নেতৃবৃন্দ। এছাড়াও শহীদ পরিবারের সদস্য ও আহত-পঙ্গুত্ব বরণকারী ৩ হাজারের অধিক সদস্য ইফতার মাহফিলে অংশগ্রহণ করেন।
ডা. শফিকুর রহমান শহীদ পরিবারের বেদনা তুলে ধরে বলেন, যেই মা-বাবা সন্তান হারিয়েছে, যে বোন স্বামী হারিয়েছে, যেই সন্তান পিতা-মাতা হারিয়েছে তারা গত বছর রমযানে একত্রে সেহরি ও ইফতার করেছে। এবছর সেই স্মৃতি মনে করে সেহরি ও ইফতার তৃপ্তিতে করতে পারে না। এই বেদনা সহ্য করার নয়। এসময় তিনি এবারের ঈদ শহীদ পরিবারের সদস্য ও আহত-পঙ্গুত্ব বরণকারীদের সাথে পালনের ঘোষণা দেন। আমীরে জামায়াত বলেন, শহীদদের নিয়ে প্রকাশিত শহীদ স্মরণিকা ঈদের পরপরই প্রত্যেক শহীদ পরিবারে পৌঁছানো হবে।
মোবারক হোসাইন বলেন, যাদের রক্তের বিনিময়ে এই দেশ স্বাধীন হয়েছে এখন পর্যন্ত কারো ভাবনা চোখে পড়েনি। একমাত্র জামায়াতে ইসলামীর আমীরের নির্দেশে প্রত্যেক শহীদ পরিবারকে ২ লাখ টাকা করে এবং আহতদের খুঁজে-খুঁজে চিকিৎসা ও পুনবার্সনের উদ্যোগ নিয়েছেন। এর সাক্ষী উপস্থিত শহীদ পরিবারের সদস্য ও আহত-পঙ্গুত্ব বরণকারী ভাই-বোন। এছাড়াও আমীরে জামায়াত বলেছেন, ১৯৫২, ১৯৬৯, ১৯৭১, ১৯৯০ সহ আমাদের সকল আন্দোলন সংগ্রামের ইতিহাস বিকৃত হয়েছে। ২০২৪ এর ইতিহাস বিকৃত করা যাবে না। এজন্য শহীদদের স্মরণে ১০ খন্ডে ২৫০০ পৃষ্ঠার একটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয়েছে। এই বইতে শহীদদের পরিচয়, গণঅভ্যুত্থানে ভূমিকা ও শহীদ হওয়ার ঘটনা এবং স্থান সংরক্ষণ করা হয়েছে। এই গণ-অভ্যুত্থানের ইতিহাস মুছে যেতে দিবে না জামায়াতে ইসলামী। তিনি উপস্থিত শহীদ পরিবারের সদস্য ও আহত-পঙ্গুত্ব বরণকারীদের উদ্দেশ্যে বলেন, নতুন বাংলাদেশ আপনাদের। আপনারাই গণঅভ্যুত্থানের অর্জন ধরে রাখতে পারবেন।
সভাপতির বক্তব্যে মো. নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, যারা ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের হাত থেকে জাতিকে মুক্ত করতে গিয়ে আহত-পঙ্গুত্ব বরণ করেছে তারা ইসলামের দৃষ্টিতে গাজী এবং গণহত্যার শিকার সকলে শহীদ। তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা- সার্বভৌমত্ব রক্ষায় রাজপথে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান।
সভা শেষে গণহত্যার শিকার পরিবারকে হত্যাকারীদের বিচার দেখার সুযোগ দান এবং বাংলাদেশের জন্য আগামীতে ন্যায়পরায়ণ শাসক কামনায় বিশেষ মোনাজাত করেন আমীরে জামায়াত। এসব উপস্থিত শহীদ পরিবারের সদস্য ও আহত-পঙ্গুত্ব বরণকারীরা আমীন কন্ঠে কান্নায় ভেঙে পড়েন।