ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) এবং হল সংসদ নির্বাচনের মনোনয়ন ফরম বিতরণ শুরু করেছে নির্বাচন কমিশন। প্রথম দিনে মনোনয়ন ফর্ম সংগ্রহ করেছে ৭ জন্য প্রার্থী। এ দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনে ভাইস-প্রেসিডেন্ট (ভিপি) পদে প্রার্থী হয়েছিলেন নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের নেতা জুলিয়াস সিজার তালুকদার। এ নিয়ে বিক্ষোভ করেছে শিক্ষার্থীরা। তার বিরুদ্ধে শিক্ষার্থী নির্যাতনের অভিযোগ ওঠায় এবং শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের মুখে ভোটার তালিকা ও প্রার্থিতা থেকে তাকে বাদ দিচ্ছে নির্বাচন কমিশন।
গতকাল মঙ্গলবার সকাল ১০টা থেকে ফরম বিতরণ কার্যক্রম শুরু হয়ে বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে। বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনের তৃতীয় তলায় অবস্থিত চিফ রিটার্নিং অফিসার অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জসীম উদ্দিনের অফিস থেকে প্রার্থীরা মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করছেন।
সর্বপ্রথম ফরম সংগ্রহ করেছেন বিজয় একাত্তর হলের শিক্ষার্থী সজীব হোসেন, যিনি কেন্দ্রীয় সদস্য পদের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।
চিফ রিটার্নিং কর্মকর্তা অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন জানিয়েছেন, মনোনয়ন ফরম বিতরণের প্রথম দিনে মোট ৭ জন প্রার্থী মনোনয়ন ফরম কিনেছেন। এর মধ্যে দুজন কেন্দ্রীয় ভিপি এবং বাকি ৫ জন কেন্দ্রীয় সদস্য পদের জন্য মনোনয়ন নিয়েছেন।
উল্লেখ্য, হল সংসদের মনোনয়নপত্র সংশ্লিষ্ট হলের হল রিটার্নিং অফিসারদের নিকট থেকে প্রার্থীকে সশরীরে সংগ্রহ ও দাখিল করতে হবে।
ডাকসু ও হল সংসদ আচরণ বিধিমালা ২০২৫ অনুযায়ী মনোনয়নপত্র সংগ্রহ ও জমাদানের সময় কোনো মিছিল বা শোভাযাত্রা করা যাবে না এবং পাঁচজনের বেশি সমর্থক নিয়ে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ বা জমা দেওয়া যাবে না। প্রতিটি ডাকসুর মনোনয়ন ফরমের ফি ৩০০ (তিনশত) টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন ২০২৫-এর চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশের পরও তালিকায় বহিষ্কৃত ও মামলায় অভিযুক্ত কোনো শিক্ষার্থীর নাম অন্তর্ভুক্ত থাকলে উপযুক্ত তথ্য-প্রমাণ পাওয়া সাপেক্ষে তার নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হবে বলেও জানানো হয়।
ডাকসু ভোটার তালিকা প্রকাশ: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনের চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) প্রশাসন।
সোমবার চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হয়। শিক্ষার্থীরা ফঁপংঁ.ফঁ.ধপ.নফ ওয়েবসাইটে নিজেদের নাম যাচাই করতে পারবে।
খসড়া ভোটার তালিকার আপত্তিসমূহ নিষ্পত্তি কমিটির সুপারিশ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান এর অনুমোদনক্রমে চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হয়। মোট ৩৯ হাজার ৭৭৫ জন ভোটারের মধ্যে শতকরা ৪৭.৫২% অর্থাৎ ১৮ হাজার ৯০২ জন নারী শিক্ষার্থী এবং ৫২.৪৮% অর্থাৎ ২০ হাজার ৮৭৩ জন পুরুষ শিক্ষার্থী।
ওয়েবসাইটে ১৮টি হলের ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। যেখানে সবচেয়ে বেশি ভোটার রয়েছে রোকেয়া হলে। রোকেয়া হলে ভোটার সংখ্যা ৫ হাজার ৪৩২ জন। বিপরীতে সবচেয়ে কম এবং সমপরিমান ভোটার রয়েছে দুটি হলে। হল দুটি হলো সলিমুল্লাহ মুসলিম হল ও জগন্নাথ হল। হর দু’টির ভোটার সংখ্যা ৫৪০ জন করে।
বাকি হলগুলোতে ভোটার সংখ্যা যথাক্রমে- ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ হলে ১৯৫৬ জন, ফজলুল হক মুসলিম হলে ২১৯১ জন, শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলে ১৮৯০ জন, সূর্যসেন হলে ১৪৫৪ জন, হাজী মুহম্মদ মুহসীন হল ১৩৬০ জন, শামসুন নাহার হলে ৪০২২ জন, কবি জসীম উদ্দীন হলে ১২৬৫ জন, স্যার এ এফ রহমান হলে ১৪৪৮ জন, মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলে ১৫১১ জন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে ১৫৬৫ জন, বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী হলে ২০৬৫ জন, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে ২৫৮০ জন, অমর একুশে হলে ১২৮০ জন, কবি সুফিয়া কামাল হলে ৪৩৮১ জন ও বিজয় একাত্তর হলে ১৯৬৩ জন।
বাদ পড়ছেন নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতা জুলিয়াস সিজার: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনে ভাইস-প্রেসিডেন্ট (ভিপি) পদে প্রার্থী হয়েছিলেন নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের নেতা জুলিয়াস সিজার তালুকদার। তার বিরুদ্ধে শিক্ষার্থী নির্যাতনের অভিযোগ ওঠায় এবং শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের মুখে ভোটার তালিকা ও প্রার্থিতা থেকে তাকে বাদ দিচ্ছে নির্বাচন কমিশন।
গতকাল বিকেলে সিজারের নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ দিতে চিফ রিটার্নিং অফিসার অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জসীম উদ্দিনের কাছে চিঠি দিয়েছেন সলিমুল্লাহ মুসলিম হল সংসদ নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার জাওয়াদ ইবনে ফরিদ। চিঠির অনুলিপি ঢাবির প্রক্টর সাইফুদ্দীন আহমদের কাছেও দেওয়া হয়েছে।
চিফ রিটার্নিং অফিসার ও প্রক্টরের কাছে পাঠানো চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, ‘আপনার অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে, মো. জুলিয়াস সিজার তালুকদার, অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগ, শিক্ষাবর্ষ-২০১৪-২০১৫, রেজিঃ নম্বর ২০১৪-৯১৫-৮৫৫। সম্প্রতি তার বিরুদ্ধে বিগত ফ্যাসিবাদী সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন শিক্ষার্থী নির্যাতনের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ অবস্থায় ডাকসু ভোটার তালিকা থেকে উক্ত শিক্ষার্থীর নাম বাদ দেওয়ার জন্য বিনীতভাবে অনুরোধ করছি।’
এর আগে মঙ্গলবার দুপুরে ডাকসুর ভিপি প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন ফরম জমা দেন সিজার, যা ছিল ওই পদে জমা দেওয়া প্রথম মনোনয়ন।
বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পরই শিক্ষার্থীরা বিকেল সাড়ে ৩টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ শুরু করেন। পরে তারা নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ে গিয়ে ‘ছাত্রলীগ ও সন্ত্রাসমুক্ত’ ভোটার তালিকা প্রকাশের দাবি জানান।
বিক্ষোভে শিক্ষার্থীরা ‘ডিম সিজারের মনোনয়ন, বাতিল করো করতে হবে’; ‘সন্ত্রাসী লীগারের মনোনয়ন, বাতিল করো করতে হবে’, ‘সফট লীগারের মনোনয়ন, বাতিল করো করতে হবে’; ‘ছি ছি, ভিসি সন্ত্রাসী সিজারের মনোনয়ন, মানি না মানবো না’; ‘গুপ্ত লীগের আস্তানা, ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও’; ‘সফট লীগার মনোনয়ন নেয়, প্রশাসন কী করে?’ ইত্যাদি স্লোগান দেন।
শিক্ষার্থীরা আজ দুপুর ১২টার মধ্যে সিজারের ভোটার ও প্রার্থিতা বাতিলের আল্টিমেটাম দেন। তা না হলে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারিও দেন তারা।