রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী হয়ে যারা চাঁদাবাজি করে, তারা মানবতার দুশমন বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমীর মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন। তিনি বলেন, তারা কিছু রাজনৈতিক দলের গুণ্ডা-পাণ্ডা। এরা মানবতার বিরোধী, মানবতার দুশমন। রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী হয়ে যারা চাঁদাবাজি করে-তাদের চাইতে বড় মানবতার দুশমন আল্লাহর জমিনে আর নেই।’ রাজনীতির নামে জনগণকে ভোগান্তি দেওয়ার সমালোচনাও করেন তিনি।
গতকাল রোববার দুপুর ১২টায় রাজধানীর উত্তরায় পবিত্র রমযান মাস উপলক্ষে ন্যায্যমূল্যে নিত্যপণ্য বিক্রি কার্যক্রম উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। মহানগরী মজলিসে শূরা সদস্য ও উত্তরা মডেল থানা আমীর অ্যাডভোকেট মো. ইব্রাহিম খলিলের সভাপতিত্বে এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন অধ্যক্ষ আশরাফুল হক, উপস্থিত ছিলেন, ১ নম্বর ওয়ার্ডের কমিশনার প্রার্থী মাহফুজুর রহমান, উত্তরা মডেল থানার নায়েবে আমীর হারুনুর রশীদ তারেক, তুরাগ মধ্য থানা নায়েবে আমীর কামরুল হাসান প্রমুখ।
রমযান মাসে যে ব্যবসায়ীরা ভোজ্যতেল বাজার থেকে সরিয়েছেন, যে ব্যবসায়ীরা জিনিসপত্রের দাম বাড়ানোর জন্য সিন্ডিকেট করে বসে আছেনÑতাদেরকে আল্লাহর জাহান্নামের আগুনকে ভয় করার কথা স্মরণ করিয়ে দেন সেলিম উদ্দিন।
সিন্ডিকেটকারীদের মহানগরী আমীর সতর্ক করে বলেন, রোজাদারদের প্রতিটি নিঃশ্বাস গজব হয়ে নাজিল হবে। আল্লাহর গজবে অতল গহ্বরে চলে যাবেন। আল্লাহকে ভয় করুন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে কোনো জিনিসের উৎপাদন সংকট নেই। যেসব পণ্যে দাম বাড়ানো হচ্ছে-একটিরও উৎপাদনে সংকট নেই। আপনারা সিন্ডিকেট করে সংকট তৈরি করছেন।
সেলিম উদ্দিন বলেন, শেখ হাসিনা ও তার দল স্বীকার করেছে, বাজার আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারবো না। তারা এমন চোরদেরকে দিয়ে এমন ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট বানিয়েছিল, যাদেরকে তারা নিয়ন্ত্রণ করতে পারেননি।
তিনি বলেন, হাসিনা পারে নাই, এর আগের সরকার পারে নাই। আমরা আশা করেছিলাম। অধ্যাপক ড. ইউনূস আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন একজন ব্যক্তিত্ব। তার ওপর আমরা এখনো আস্থা রাখি। কিন্তু তিনি যাকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দিয়েছেন দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে তিনি কী উদ্যোগ নিয়েছেনÑজাতির সামনে সেটি পরিষ্কার নয়। সেলিম উদ্দিন বলেন, এই সরকার রাজনৈতিক নয়, বহুল সমর্থিত সরকার। তারাও দ্রব্যম্ল্যূ নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেনা। আল্লাহর ভয় আছে এমন রাজনৈতিক নেতৃত্ব ও দল-কর্মী ছাড়া আর কেউ দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না।
সেলিম উদ্দিন বলেন, বিগত ৫৩ বছর যারা দেশ শাসন করেছেনÑতারা মানুষের মস্তিষ্কপ্রসূত আইন দিয়ে দেশ শাসন করার চেষ্টা করেছেন। আল্লাহ প্রদত্ত ও মুহাম্মদ সা. প্রদর্শিত বিধি বিধান দিয়ে তারা শাসন করেননি। তিনি বলেন, জামায়াতে ইসলামী এই ৫৩ বছরে ষড়যন্ত্র ও নির্যাতনের শিকার ছিল। দেশ পরিচালনাকারী তিনটি সরকার কেউই বলতে পারবে না, যে জামায়াতের ওপর খড়গ চালায়নি, নির্যাতন, নিপীড়ন করেনিÑগলাকেটে লাশ পুকুড়ে ফেলে দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে।
মহানগরী আমীর বলেন, বিগত সরকারগুলোর এতো অত্যাচারের পরও জামায়াতে ইসলামী সরকারে না থেকেও এদেশের মানুষকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য নানা ইন্সটিটিউশন প্রতিষ্ঠা করেছে। ইসলামিক পদ্ধতিতে অর্থনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা করে ব্যাংক, বীমা ও বিভিন্ন কলকারাখানা গড়ে তোলার ক্ষেত্রে জামায়াত যে অবদান রেখেছে। বিগত সরকারগুলো আয়নায় নিজেদের চেহারা দেখুক, নিজেদের খতিয়ান নিকÑতারা সরকারে গিয়েও দেশের জন্য কতটুকু করেছেন।
তিনি বলেন, সরকারে না গিয়েও আমরা দেশের জন্য কী করেছি তা দেশের জনগণই সাক্ষী। কোথাও আগুন লাগলে সবার আগে আমীরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমান বা তার প্রতিনিধি সেখানে চলে যায়। কোথাও বন্যা হয়েছে সবার আগে জামায়াত সহায়তা নিয়ে এগিয়ে যায়।
তিনি বলেন, যখন আমাদেরকে মেরে ভর্তা বানানো হয়েছে, কোথাও দাঁড়াতে পারি নাই, তখনো কোথাও শিলাবৃষ্টি, বন্যা, হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকের মৃত্যু হলে আমরা সবার আগে সেখানে গিয়েছিÑএগুলো ভোটের জন্য নয়, আল্লাহর পক্ষ থেকে দায়িত্ব পালন করার জন্য করা হয়েছে।
সেলিম উদ্দিন বলেন, জামায়াত ভোট পাওয়ার জন্য এগুলো করে না। মানুষের কল্যাণের জন্য এগুলো করে। আর যারা ভোট পাওয়ার জন্য এগুলো করে, তারা এখনো হাজার হাজার বিলিয়ন বিলিয়ন টাকা কামাই করতেছেÑভোট করার জন্য। চাঁদ রাতে এসে তারা চাঁদাবাজির টাকা বিলায়। নির্বাচনে পাস করে আসার পর আবার জনগণকে শোষণ করেন তারা।
মহানগরী আমীর বলেন, জামায়াতের কর্মীরা ত্যাগী, পরিশ্রমী ও সৎ। তারা আল্লাহকে খুশি করার জন্য যেকোন কষ্টা স্বীকার করে। জামায়াত মানুষের কষ্টের কথা চিন্তা করে পবিত্র রমযান মাসে ন্যায্যমূলে পণ্য বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
তিনি বলেন, দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ পেতে হলে আগামী নির্বাচনে কাকে ভোট দিতে হবে, কাকে ভোট দিলে দুর্নীতি দূর করতে পারবেনÑতা জনগণকে ভাবতে হবে। যারা আজন্ম দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত, চাঁদাবাজির সাথে জড়িতÑতাদের যদি আবার এমপি বানানÑতাহলে তার সমস্ত দুর্নীতির দায় ভোট দাতার বলেও সতর্ক করেন তিনি।
শেখ হাসিনার দুঃশাসনের কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, আমাদের দেশে সবচেয়ে দানবীয় সরকার ছিল হাসিনার সরকার। এই হাসিনার ভাবখানা এমন ছিল দিনকে রাত ও রাতকে দিন বানাবে। সে যা বলবে তাই হবে।
এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন, জামায়াতের উত্তরা মডেল থানার শূরা ও কর্মপরিষদ সদস্য আতিয়ার রহমান আতিক, তারবিয়াত সেক্রেটারি উসমান গনী জুয়েল, থানার প্রচার- মিডিয়া সম্পাদক রাজিবুল হাসান নাঈম প্রমুখ।
শ্রমজীবী মানুষের জন্য ইফতার সামগ্রী বিতরণ: আমীরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমানের পক্ষ থেকে সুবিধা বঞ্চিতদের মাঝে রমযান ফুড প্যাকেট বিতরণ সম্পন্ন হয়েছে।
গত শনিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর মিরপুরের একটি মিলনায়তনে শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন, ঢাকা মহানগরী উত্তর আয়োজিত পবিত্র মাহে রমযান উপলক্ষে শ্রমজীবী মানুষের মধ্যে ইফতার সামগ্রী বিতরণ কার্যক্রম উদ্বোধন করেন জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমীর মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন। ফেডারেশনের ঢাকা মহানগরী উত্তর এর সভাপতি মাওলানা মো. মুহিব্বুল্লাহর সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক এইচ এম আতিকুর রহমানের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সেক্রেটারি ড. মুহাম্মদ রেজাউল করিম ও বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি লস্কর মোহাম্মদ তসলিম। আরো বক্তব্য রাখেন মহানগরীর সহ-সভাপতি মো. মিজানুল হক, গাজী মাহবুব উল আলম, সহসাধারণ সম্পাদক মো. আবদুল মান্নান পান্না, আবুল কালাম পাঠান, মিজানুর রহমান প্রমুখ। প্রেসবিজ্ঞপ্তি।