বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর মো. নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেছেন, গণহত্যার বিচার ও সংস্কার ছাড়া নির্বাচন হলে আবারো ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠা হবে। রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কার না করে নির্বাচন দিলে রাজনৈতিক সরকার দলীয় স্বার্থে রাষ্ট্রের সংস্কার করবে না।
বৃহস্পতিবার (২০ মার্চ) দুপুরে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ কার্যালয়ের সামনে শতাধিক আহত-পঙ্গুত্ব বরণকারীদের চিকিৎসা সহযোগিতা প্রদান অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ইতিহাস বিকৃত করা বন্ধে জামায়াতে ইসলামী ঐতিহাসিক পদক্ষেপ নিয়েছে উল্লেখ করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর মো. নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, বাংলাদেশের সকল আন্দোলন-সংগ্রামের ইতিহাস বিকৃত হয়েছে। স্বাধীনতা অর্জনের মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত করার কারণেই আজও জাতি সঠিক ইতিহাস জানে না। ছাত্র-জনতার অর্জিত জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ইতিহাস বিকৃত করার ষড়যন্ত্রের এখনই আভাস পাওয়া যাচ্ছে। তবে এই ইতিহাস বিকৃত করা যাবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, জামায়াতে ইসলামী শহীদের নিয়ে ১০ খন্ডে আড়াই হাজার পৃষ্ঠায় বই প্রকাশ করেছে। এই বইতে শহীদদের পরিচয় ও শহীদ হওয়ার ঘটনা এবং আন্দোলনে ভূমিকা লিপিবদ্ধ আছে। আগামীতে আহত-পঙ্গুত্ব বরণকারীদের পরিচয় এবং আন্দোলনে তাদের ভূমিকা নিয়ে বই প্রকাশ করা হবে। যাতে করে কোন অপশক্তি জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ইতিহাস বিকৃত করতে না পারে।
এসময় তিনি আরো বলেন, রাষ্ট্রের সূর্য সন্তানদের রাষ্ট্র যথাযথ সম্মান করেনি। রাষ্ট্র যদি প্রত্যেক শহীদ পরিবারকে এক কোটি টাকা করে সম্মানজনক সহায়তা করে তবে ২ হাজার কোটি টাকার প্রয়োজন হবে। রাষ্ট্রের হাজার হাজার কোটি টাকা আওয়ামী লীগ পাচার করেছে, সেই টাকার তুলনায় এই টাকা কিছুই না। জাতির সূর্য সন্তানদের সম্মান করতে রাষ্ট্রের স্বদিচ্ছা আর আন্তরিকতার প্রয়োজন। তিনি বলেন, জামায়াতে ইসলামী একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে রাষ্ট্রের আগে শহীদ ও আহত-পঙ্গুত্ব বরণকারীদের তালিকা করেছে, শহীদ পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছে, আহত-পঙ্গুত্ব বরণকারীদের পাশে রয়েছে। কিন্তু এটি রাষ্ট্র করার কথা থাকলেও রাষ্ট্র সেটি এখনো করতে পারেনি। ৫ আগস্ট পূর্ববর্তী রাষ্ট্রীয় বাহিনীকে ব্যবহার করে আওয়ামী লীগ যেই গণহত্যা চালিয়েছে এই গনহত্যার শিকার প্রত্যেক শহীদ পরিবারকে ২ লাখ টাকা করে আর্থিক সহায়তা করেছে জামায়াতে ইসলামী। আহতদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে- হাসপাতালে জামায়াতে ইসলামীর নেতৃবৃন্দ গিয়ে ঘোষণা দিয়েছে, আহতদের পূর্ণ চিকিৎসার দায়িত্ব জামায়াতে ইসলামীর। কোন আহত বীর যাতে চিকিৎসার অভাবে কষ্ট না পায়। আমরা আমাদের ঘোষণা অনুযায়ী এখনো আহতদের চিকিৎসা চালিয়ে আসার পাশাপাশি পারিবারিক খরচের জন্যও সহায়তা করা হচ্ছে। ঢাকা মহানগরী দক্ষিণে ১৫৫ জন শহীদ পরিবারের প্রত্যেককে ২ লাখ টাকা করে প্রদান করা হয়েছে। এভাবে সারাদেশে শহীদ পরিবারের কাছে ২ লাখ টাকা করে পৌঁছানো হয়েছে।
গণহত্যার বিচার ও সংস্কার ছাড়া নির্বাচন হলে আবারো ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠা হবে মন্তব্য করে মো. নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কার না করে নির্বাচন দিলে রাজনৈতিক সরকার দলীয় স্বার্থে রাষ্ট্রের সংস্কার করবে না। যারা বিগত সময়ে আগে-পরে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় ছিল তারাই রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান গুলো ধ্বংস করেছে। তাহলে আগামীতে তারা ক্ষমতায় গিয়ে সংস্কার করবে না আরো বেশি ধ্বংস করবে সেটি ভেবে দেখতে তিনি জনগণের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি আরো বলেন, গণহত্যার বিচার ছাড়া নির্বাচন দিলে রাজনৈতিক সরকার রাজনৈতিক স্বার্থে গণহত্যার সাথে জড়িতদের বিচার করবে না। ফলে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের শহীদ ও আহত-পঙ্গুত্ব বরণকারীদের জীবন ও রক্তের সাথে বেঈমানী করা হবে। এই বেঈমানী অন্তবর্তীকালীন সরকারের হাত ধরে আসতে পারে না মন্তব্য করে তিনি, গণহত্যার সাথে জড়িতদের অবিলম্বে বিচার করতে অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রতি দাবি জানান। গণহত্যার বিচার ও সংস্কার ছাড়া কোন নির্বাচন জনগণ মেনে নিবে না, রাষ্ট্রের জন্য মঙ্গল হবে না বলেও তিনি হুশিয়ার করেন।
অনুষ্ঠানের পৃষ্ঠপোষক বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আক্তার হোসেন বলেন, ত্যাগের কোন বিনিময় হয় না। যারা আল্লাহকে অস্বীকার করে তারা মানুষের ত্যাগও অস্বীকার করে। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বীরদের কারণেই সকল রাজনৈতিক দল ও প্রতিটি মানুষ বাকস্বাধীনতা ফিরে পেয়েছে। কিন্তু দেখা যায়, কোন কোন রাজনৈতিক দল জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বীরদের অবদান স্বীকার করছে না। গণ-অভ্যুত্থানের মাষ্টার মাইন্ড নিজেদের নেতাদের বলে প্রচার চালাচ্ছে। গণ-অভ্যুত্থানের শুরু থেকে অদ্যাবধি জামায়াতে ইসলামীর মতো আর কোন দল জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বীরদের পাশে দাঁড়ায়নি। এসময় তিনি বলেন, আমি জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের আহত বীরদের সহযোগিতা করতে আসিনি। বরং আমি মনে করি আমার কাছে এই বীরদের আমানত ছিল। সেই আমানত বুঝিয়ে দিতে আসছি।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারী ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমীর আব্দুস সবুর ফকির, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারী অধ্যাপক ড. আব্দুল মান্নান, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের অফিস সেক্রেটারী কামরুল আহসান হাসান, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের কর্মপরিষদের সদস্য ও পল্টন থানা আমীর শাহীন আহমেদ খান, প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের সহকারী সম্পাদক আবদুস সাত্তার সুমন, সহকারী অফিস সেক্রেটারী মুজিবুর রহমান সহ মহানগরী দক্ষিণের দায়িত্বশীল নেতৃবৃন্দ।