বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, ফ্যাসিবাদী অপশক্তি রাজনীতিতে পুনর্বাসনের সুযোগ নিতে ওতপেতে রয়েছে। এজন্য সবাইকে বিশেষ করে অন্তর্বর্তী সরকারকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছে তিনি। গতকাল বুধবার আশুলিয়ায় ঢাকা জেলা বিএনপির জনসভায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, শত শহীদের রক্তের বিনিময়ে পতিত ও পালাতক ফ্যাসিবাদী অপশক্তি রাজনীতিতে পুনর্বাসনের সুযোগ নিতে ওঁতপেতে রয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের যে কোনো ভুল সিদ্ধান্তে দেশে গণতন্ত্র উত্তরণের যাত্রা পথকে সংকটে ফেলে দিতে পারে। দেশে ফ্যাসিবাদ, উগ্রবাদ, চরমপন্থা মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে। ফলে এ বিষয়ে সবাই বিশেষ করে অন্তর্বর্তী সরকারকে সতর্ক থাকতে হবে।
ঢাকার সাভারের আশুলিয়ায় ‘নারকীয় জুলাই আশুলিয়া থানা সংলগ্ন লাশ পোড়ানো স্থানে’ ঢাকা জেলা বিএনপির উদ্যোগে ছাত্র-শ্রমিক-জনতার জুলাই অভ্যুত্থান-২০২৪ : নারকীয় আশুলিয়া স্মরণে এই প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। গত বছর ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার পতনের পূর্বক্ষনে ৫ আগস্ট আসুলিয়া পুলিশের গুলীতে নিহতদের লাশ ভ্যানে করে পুড়িয়ে ফেলা হয়। এদিনটিতে নারকীয় হত্যাযঞ্জের ঘটনার স্মরণে বিএনপি এই জনসভার আয়োজন করে।
তারেক রহমান বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে গণহত্যা চালানো হয়েছিল। সবচেয়ে বেশি মারা গেছেন শ্রমিক। বিশেষ করে সাভার আশুলিয়া শ্রমিকদের ওপর গণহত্যা চালানো হয়েছিল। হত্যা করে লাশগুলোকে পুড়িয়ে ফেলা হয়েছিল। লাশের সঙ্গে এমন বর্বরতা, এমন নির্মমতা কারবালার নৃশংসতাকেও হার মানিয়েছে।
তিনি বলেন, গত বছর জুলাইয়ের যে আন্দোলন শুরু হয়েছিল, সেই আন্দোলনে কিন্তু সরাসরি শ্রমজীবী মানুষের সরাসরি কোনো স্বার্থ জড়িত ছিল না। কারণ তারা কোনো সরকারি চাকরির আশা করেননি। তাহলে প্রশ্ন আসে, পোশাক কারখানার শ্রমিক-দিনমজুর, ভ্যানচালক, রেস্তোরাঁকর্মী, রিক্সাচালক কেন সেদিন রাস্তায় নেমে এসেছিলেন। কারণ একটা সেদিন ফ্যাস্টিস্ট যদি রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকে তাহলে কেউ তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার ফেরত পাবেন না। কোনো ন্যায্য দাবি আদায় হবে না। এ কারণে শ্রমিকরা রাস্তায় নেমে আসে।
তারেক রহমান আরও বলেন, ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্টদের পলায়নের দিন সাভার আশুলিয়ায় গণহত্যা চলছিল। তিনি বলেন, গত বছর জুলাইয়ের যে আন্দোলন শুরু হয়েছিল, সেই আন্দোলনে কিন্তু সরাসরি শ্রমজীবী মানুষের সরাসরি কোনো স্বার্থ জড়িত ছিল না। কারণ তারা কোনো সরকারি চাকরির আশা করেননি। তাহলে প্রশ্ন আসে, পোশাক কারখানার শ্রমিক-দিনমজুর, ভ্যানচালক, রেস্তোরাঁকর্মী, রিক্সাচালক কেন সেদিন রাস্তায় নেমে এসেছিলেন। কারণ একটা সেদিন ফ্যাস্টিস্ট যদি রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকে তাহলে কেউ তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার ফেরত পাবেন না। কোনো ন্যায্য দাবি আদায় হবে না। এ কারণে শ্রমিকরা রাস্তায় নেমে আসে।
তারেক রহমান বলেন, দেশের জনগণ কয়েকজন মানুষের হাতে ক্ষমতা তুলে দেওয়ার জন্য গত দেড় দশক ধরে আন্দোলন অব্যহত রাখেনি। কিংবা জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানে শহীদ হয়নি। জনগণ রাষ্ট্র এবং সরকারে নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করার জন্যই স্বৈরাচারকে হটিয়েছে, জীবন উৎসর্গ করেছে। সুতরাং সরকারে যখন যারাই থাকুক, সরকার পরিচালনা করতে চাইলে অবশ্যই নাগরিকদের কথা শুনতে হবে।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, একজন রাজনৈতিক কর্মী, একজন নাগরিক হিসেবে আমি মনে করি একজন নাগরিকের রাজনৈতিক ক্ষমতা প্রয়োগের অন্যতম প্রধান উপায় হচ্ছে নির্বাচন। প্রতিটি নাগরিক যাতে নিজের কথা নিজেই বলতে পারে, সেটা নিশ্চিত করার স্বার্থেই একটি দায়িত্বশীল দল হিসেবে বিএনপি বার বার একটি অবাধ ও সুষ্ঠ নির্বাচনকে অগ্রাধিকার দেয়। আমি বিশ্বাস করি স্থানীয় সরকার থেকে শুরু করে জাতীয় সরকার পর্যন্ত প্রতিটি স্তরে জনগণ সরাসরি ভোটের মাধ্যমে নিজেদের পছন্দের প্রতিনিধি নির্বাচনের সুযোগ পেলে রাষ্ট্র এবং সরকারে জনগণের ইচ্ছা প্রাধান্য পাবে। রাষ্ট্রে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় থাকবে। তিনি বলেন, রাষ্ট্র ও রাজনীতির মূল ভিত্তি হচ্ছে জনগণ। জনগণকে দুর্বল রেখে রাষ্ট্র, রাজনীতি, সরকার কিংবা সংস্কার কোনো কিছুকেই শক্তিশালী এবং টেকসই করা সম্ভব নয়, করা যাবে না। তারেক রহমান বলেন, সরকার এবং রাজনৈতিক নেতৃত্বকে জনগণের মুখাপেক্ষী করা গেলে রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন আনা সম্ভব। একই সঙ্গে জনগণের রাজনৈতিক ক্ষমতা নিশ্চিত করাও সম্ভব হবে।
অনুষ্ঠারে ছোট-খাটো বিষয়গুলো নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোকে বিভেদ সৃষ্টি না করার আহ্বান জানিয়েছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, আজকে অনেক রকম কথা হচ্ছে, রাজনৈতিকানুবাদ হচ্ছে, হবেই, গণতন্ত্রের সেটা স্বাভাবিক। কিন্তু এমন কোন কিছু করবেন না যাতে আবার গণতন্ত্র ব্যহত হয়। রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে আমাদের সেটাই আহবান থাকবে। আমাদের আহবান থাকবে যে, ছোটখাট বিষয়গুলো নিয়ে এমন অবস্থা তৈরি করবেন না যে অবস্থায় আবার সেই ফ্যাসিস্ট হাসিনা কোন সুযোগ পায় দেশে ফিরে আসার।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা অনুরোধ করব সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে যে, আসুন আমরা অতি দ্রুত আমাদের সমস্যাগুলো আছে সেগুলোকে মিটিয়ে ফেলে আমরা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ফিরে যাই। একটা নিরপেক্ষ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আমরা একটা জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠিত করি। তিনি বলেন,আমি বিশ্বাস করি তারেক রহমানের নেতৃত্বে আজকে গোটা জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে আমরা অবশ্যই গণতন্ত্রে ফিরে যেতে সক্ষম হব এবং আজকে যারা বিচার পাচ্ছেন না তাদের বিচার নিশ্চিত করতে সক্ষম হব, তাদের জীবনের ব্যবস্থা করতে আমরা সক্ষম হব।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমি হতবাক হয়ে গেছি, এই দৃশ্য দেখা যায় না। আমরা কোন দেশে আছি, একমাত্র মুসোলিনি সেই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে হিটলার গ্যাস চেম্বারে দিয়ে মানুষকে হত্যা করেছিল। এরপর দেখলাম আমাদের দেশে হাসিনা ছাত্রদেরকে পুঁড়িয়ে মেরেছে। এখানে যারা শহীদ হয়েছেন তাদের স্বজনদের বক্তব্যের পরে বক্তব্য রাখার খুব একটা মানসিক অবস্থা থাকে না, আজকে সেটা নেই। আমি নিজেকে ধিক্কার দিতে ইচ্ছা করে যে, আমরা কেমন একটা জাতি যে জাতি আমরা আমাদের ছেলেদেরকে পুঁড়িয়ে মারি। কেমন একটা জাতি যে, আমাদের রাষ্ট্রের যারা কর্মচারি-কর্মকর্তা তারা সন্তানদেরকে হত্যা করে এবং পরে পুঁড়িয়ে হত্যা করে। একজন মা বক্তব্য রাখছিলেন, তার ছেলে বেঁচে ছিলো, সেই অবস্থায় তাদেরকে পুঁড়িয়ে মারা হয়েছে।
জুলাই অভ্যুত্থানের শহীদ পরিবার একজনের অভিযোগ তুলে ধরে তিনি বলেন, এখানে একজন বললেন, তার কেউ খোঁজ নিচ্ছে না। তিনি বলেন, আমি মাত্র দুজনকে এখানে পেয়েছি যারা সেই টাকাটা পেয়েছেন বন্ড হিসেবে। বাকিদের আমি জানি না। একটা ছোট বাচ্চা ছেলে আট বছর বয়স। তার মাথার খুলিটা উড়ে গিয়েছিল। সেটাকে আর্টিফিশিয়াল প্লাস্টিক দিয়ে জোড়া লাগানো হয়েছিলো।
হাসিনা ভারত থেকে উস্কানি দিচ্ছে মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল ক্ষোভের সুরে বলেন, আমরা এমন একটা জাতি ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য আমাদের নেতা যারা আমাদের নেতৃত্ব করে, যাদেরকে দেশের মানুষ নেতা বলে মনে করে। তারা ক্ষমতায় চিরদিন টিকে থাকার জন্য এইভাবে গুলী করে মানুষকে হত্যা করে যেটা হাসিনা করেছে। এখনও তীব্র স্বরে হাসিনার বিচার চায়, গোটা জাতি হাসিনার বিচার চায়। হাসিনা পালিয়ে গেছে ভারতে। সে সেখান থেকে অডিও ভার্সনে কথায় ভিডিওতে এখানে আবার বাংলাদেশের নৈরাজ্য সৃষ্টি করবার জন্য বিভিন্ন রকম সেই প্রভোকেশন উত্তেজনা ছড়ানোর চেষ্টা করছে এবং চেষ্টা করেও গোপালগঞ্জ ইতিমধ্যে তারা সেই অবস্থা তৈরি করেছে।
অনুষ্ঠানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, আমি বলব একটি কথা, ফ্যাসিবাদের পতন হয়েছে কিন্তু এনজিওবাদ আজকে দেশ চালাচ্ছে। এখান থেকে কিভাবে মুক্তি নেবেন সেই পথ নির্দেশনা দেবেন আমাদের নেতা এটাই প্রত্যাশা করি।
চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান বলেন, যেভাবে এই আশুলিয়াতে নারকীয় হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে ফ্যাসিস্টরা, সেই ফ্যাসিস্টদের প্রধান শেখ হাসিনার বিচার এদেশের মাটিতে হতেই হবে।
ঢাকা জেলা বিএনপির সভাপতি খন্দকার আবু আশফাকের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক নিপুণ রায় চৌধুরীর সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, গণশিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক অধ্যাপক মোর্শেদ হাসান খান, সহ-পরিবার কল্যাণ বিষয়ক দেওয়ান মো. সালাউদ্দিন বাবু, ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আমিনুল হক প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
শহীদ পরিবারের মধ্যে বাবুল হোসেনের স্ত্রী লাকি আখতার, আরাফাত মুন্সির বাবা স্বপন মুন্সি, বায়েজিদ মুস্তাফিজের স্ত্রী রিনা আখতার, শ্রাবন গাজীর বাবা আবদুল মান্নান গাজী, মামুন খন্দকার বিপ্লবের স্ত্রী খন্দকার সাথী, সাজ্জাদ হোসেন সজলের মা শাহিনা বেগম, আরাফুর রহমান রাসেলের ভাই সায়েদুর রহমান বাবু, জুলাই অভ্যুত্থানে পুলিশের গুলীতে পঙ্গু শান্ত তাদের কষ্টের কথা তুলে ধরতে গিয়ে পুরো সমাবেশ স্থলকে আবেগময় করে তুলেন।