পার্বত্য অঞ্চল নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র চলছে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। বলেছেন, এই ষড়যন্ত্র যাতে সফল না হয় সেজন্য সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। অখন্ড বাংলাদেশ ও সবাই বাংলাদেশি এই পরিচয়কে ধারণ করতে হবে।
রাজধানীর সিরডাপে শনিবার (৯ আগস্ট) দুপুরে আদিবাসী, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠি এবং জাতীয় নিরাপত্তা শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকে তিনি এ আহ্বান জানান।
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, দেশকে একটি শক্তিশালী রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তুলতে সব নৃ-গোষ্ঠী, উপজাতি, আধা উপজাতিসহ সবাইকে বাংলাদেশি হতে হবে। ভাষা, একক সংস্কৃতি ও ধর্ম কোনো জাতিকে গঠন করে না। সব ভাষাভাষী, ধর্মালম্বী, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠি, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠি মিলেই একটি জাতি গঠন হয়।
তিনি বলেন, পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে সমাজের মূল স্রোতে আনতে কোটা ব্যবস্থা রয়েছে। যাতে তারা প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে না পড়ে। এটি বিশ্বের প্রায় সব দেশেই রয়েছে। আগামী ৫০-১০০ বছর পর তা হয়তো প্রয়োজন নাও হতে পাড়ে।
বিগত সময়ে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে এই জাতিকে বিভক্ত করার মানসিকতা দেখা গেছে উল্লেখ করে বিএনপির এই নেতা বলেন, স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পরেও পক্ষ-বিপক্ষের কথা বলে আমাদের বিভক্ত করা হয়েছে। যাদের মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে ছিল বলে আলাদা করতে চাই তারাও বিজয়ের পর তা অস্বীকার করেনি।
এ সময় ফ্যাসিবাদবিরোধী ঐক্য যাতে নষ্ট না হয় সেদিকে খেয়াল রাখার কথাও বলেন তিনি।
কু-কিচিনের কয়েকটি ঘটনা আমাদের চিন্তিত করেছে
সালাহ উদ্দিন আহমেদ বলেছেন, এখানে আমাদের পার্বত্য অঞ্চল, ভারতের একটি অঞ্চল এবং মিয়ানমারের একটি অঞ্চল নিয়ে বৈশ্বিক কোন কোন শক্তির পরিকল্পনা আছে। সেই পরিকল্পনাকে বাস্তবায়নের জন্য এই ভূখণ্ডকে হয়তোবা তারা অন্যভাবে সাজাতে চায়।
তিনি বলেন, সাম্প্রতিককালে কয়েকটি ঘটনা আমাদের চিন্তিত করেছে। কু-কিচিনের ঘটনা আমাদের চিন্তিত করেছে, নিরাপত্তাবাহিনীকে চিন্তিত করেছে। এর পেছনে অনেক কারণ আছে। যেটা আমরা সাদা চোখে দেখছি, সেটার পেছনে পর্দার আড়ালে অনেক কারণ থাকে।
সালাহউদ্দিন বলেন, আমরা আগে থেকেই জানি যে, আমাদের হিল ট্র্যাকস নিয়ে আন্তর্জাতিক পরিকল্পনা বিভিন্ন সময় থেকেই চালু আছে। সেটি অনেক পুরোনো। সেই বিষয়ে আমাদের সজাগ থাকতে হবে। আমরা সবাই যদি অখণ্ড বাংলাদেশে বিশ্বাস করি, একই সংবিধানে বিশ্বাস করি, স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব এবং ভৌগোলিক অখণ্ডকতাকে বজায় রাখতে চাই। তাহলে সবাইকে বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে সেই অধিকারকে সাংবিধানিকভাবে ধারণ করতে হবে।
সবাইকে সজাগ থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, যেন আমাদের মধ্যে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে কোনো রকম ষড়যন্ত্র কার্যকর না হতে পারে, সেজন্য যারা সচেতন আমাদের সবাইকে চেষ্টা চালাতে হবে। আমাদের সজাগ থাকতে হবে। যেন আন্তর্জাতিক কোনো পরিকল্পনা কেউ সফল করতে না পারে। এজন্য আমাদের জাতীয় নিরাপত্তাবাহিনী, বুদ্ধিজীবী, গবেষক, সাংবাদিক সবাইকে সমন্বিতভাবে প্রচেষ্ট থাকতে হবে। যেন স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব এবং ভৌগোলিক অখণ্ডতা আমরা বজায় রাখতে পারি।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সিএইচটিআরএফ এর চেয়ারম্যান মেহেদী হাসান পলাশ। তিনি তার বক্তব্যে ‘আদিবাসী’, ‘ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী’ ইত্যাদি বিষয়ে বিস্তারিত ধারণা দেন। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) ড. মো. নাঈম আশফাক চৌধুরী।
এছাড়াও বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোলের অধ্যাপক ড. আব্দুর রব, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. কাজী মোহাম্মদ বরকতুল্লাহ, খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান বাবু রুইথি কারবারি, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তারেক ফজল, লেবার পার্টির সভাপতি ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান প্রমুখ।