নড়াইল সংবাদদাতা : আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নড়াইল-১ আসনে জামায়াতে ইসলামী, বিএনপি, ইসলামী আন্দোলনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সম্ভাব্য প্রার্থীরা প্রচার-প্রচারণায় নেমে পড়েছেন।মাঠে-ঘাটে চা ষ্টলে নির্বাচনী আমেজ বিরাজ করছে। নির্বাচনী দিন যতই ঘনিয়ে আসছে জনসাধারনের মাঝে ততই বাড়ছে নির্বাচনী উত্তাপ। ভোটারদের মাঝে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রার্থীদের নিয়ে চলছে নানা সমীকরণ। কালিয়া পৌরসভা, কালিয়া উপজেলার ১৪টি ইউনিয়ন ও নড়াইল সদর উপজেলার ৫টি ইউনিয়ন নিয়ে নড়াইল-১ সংসদীয় আসন গঠিত। দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগের দখলে থাকা এ আসনটিতে এবারের নির্বাচনে জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী। এ আসনে জামায়াতে ইসলামী ঘোষিত প্রার্থী হলেন জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি, সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মাওলানা ওবায়দুল্লাহ কায়সার। জামায়াতের একক প্রার্থীর জন্য নেতা-কর্মীরা ঐক্যবদ্ধভাবে প্রচার-প্রচারনা ও গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। উপজেলা সদর এলাকা থেকে শুরু করে ইউনিয়ন, ওয়ার্ড এমনকি গ্রাম পর্যায়ে জামায়াতের নেতা-কর্মীরা গণসংযোগ, উঠান বৈঠক শুরু করেছেন। জামায়াতের নারী কর্মীরা বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে তাদের দলীয় প্রার্থীর পক্ষে ভোট চাইছেন। এ আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীরা হলেন জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনর প্রধান উপদেষ্টা, হলি ফ্যামিলি হাসপাতালের সাবেক পরিচালক ডা: আহমেদ শফিকুল হায়দার পারভেজ, জেলা বিএনপির সভাপতি বিশ্বাস জাহাঙ্গীর আলম, অধ্যাপক বি.এম নাগিব হোসেন, লে. কর্নেল (অব.) সাজ্জাদ হোসেন, অধ্যক্ষ সুকেশ সাহা আনন্দ, যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস বিএনপির সেক্রেটারি শেখ জহিরুল ইসলাম। এছাড়া ইসলামী আন্দোলনের (চরমোনাই পীর) প্রার্থী হলেন মাওলানা আব্দুল আজিজ।
এ আসনটিতে এবার বিএনপির প্রার্থীর সঙ্গে জামায়াত প্রার্থীর মূল প্রতিদন্দ্বিতা হবে বলে রাজনীতিবিদ ও ভোটাররা মনে করছেন।তবে ইসলামী আন্দোলনের (হাতপাখা) প্রার্থীর নামও আলোচনায় রয়েছে। নির্বাচনকে সামনে রেখে কালিয়া পৌরসভা, উপজেলার ১৪টি ইউনিয়ন ও সদর উপজেলার ৫ ইউনিয়নের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে জামায়াতের একক প্রার্থীর এবং বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীদের ব্যানার-ফেস্টুন ও পোস্টার সবার চোখে পড়ছে। বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী ভোটারদের আস্থা ও স্বচ্ছতার প্রতীক মানবিক মূল্যবোধ সম্পন্ন নেতা ডা. পারভেজ বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ৩১ দফা বাস্তবায়নে এবং বিএনপির নীতি ও আদর্শ নিজ এলাকা কালিয়া তথা নড়াইলের তৃণমূল পর্যায়ে পৌঁছাতে অবিরামভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। নিজের রাজনৈতিক দক্ষতায় তৃণমূলের কর্মীবান্ধব প্রার্থী হিসেবে ইতোমধ্যে এলাকায় ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছেন তিনি। তিনি মনোনয়ন পেলে এলাকার রাস্তাঘাট, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়ন, দুর্নীতি নির্মূল, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা, স্বনির্ভরতা এবং মৌলিক অধিকার বাস্তবায়নে কাজ করবেন বলে জানান। এছাড়া বিএনপির সভাপতি বিশ্বাস জাহাঙ্গীর আলম, অধ্যাপক বি.এম নাগিব হোসেন, লে.কর্নেল (অব.) সাজ্জাদ হোসেন,অধ্যক্ষ সুকেশ সাহা আনন্দ, যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস বিএনপির সেক্রেটারি শেখ জহিরুল ইসলাম ভোটারদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন ও এলাকায় সভা-সমাবেশে যোগ দিচ্ছেন।
জানা গেছে, নড়াইল-১ আসনে ১৯৯৬ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আ’লীগের প্রার্থী ধীরেন্দ্র নাথ সাহা ৫১ হাজার ১১৬ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বি বিএনপির প্রার্থী বিশ্বাস জাহাঙ্গীর আলম ২৬হাজার ৯৪৮ ভোট পান। ২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আ’লীগের প্রার্থী শেখ হাসিনা ৭৮ হাজার ২১৬ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। বিএনপির প্রার্থী (আ’লীগ থেকে বিএনপিতে যোগদান) ধীরেন্দ্র নাথ সাহা ৬১ হাজার ৪১৩ ভোট পান। পরবর্তীতে উপ-নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে ধীরেন্দ্র নাথ সাহা বিজয়ী হন। ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী কবিরুল হক মুক্তি ৬৩ হাজার ৮২৬ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী ছিলেন বিএনপির বিশ্বাস জাহাঙ্গীর আলম। ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আ’লীগের প্রার্থী কবিরুল হক মুক্তি ১ লাখ ৮২ হাজার ৫২৯ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বি বিএনপির প্রার্থী বিশ^াস জাহাঙ্গীর আলম ৮ হাজার ৯১৯ ভোট পেয়ে জামানত হারান।
জেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে, নড়াইল-১ আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ৯০ হাজার ৩২৪ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার সংখ্যা ১ লাখ ৪৫ হাজার ৬১০ জন এবং নারী ভোটার সংখ্যা ১ লাখ ৪৪ হাজার ৭১৪ জন।