বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমীর (ঢাকা-৮ আসনে জামায়াত মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী) অ্যাডভোকেট ড. হেলাল বলেছেন, আওয়ামী লীগকে আর কোনো ছাড় নয়। যেখানেই আওয়ামী লীগের নৈরাজ্য সেখানেই ছাত্র-জনতা প্রতিরোধ গড়ে তুলবে। কেউ যদি দেশের জনগণের জানমাল ও রাষ্ট্রীয় সম্পদ নষ্ট করার চেষ্টা করে তবে তাকে গণধোলাই দিয়ে প্রশাসনের হাতে তুলে দিতে হবে। তিনি বলেন, ‘৫ আগস্ট আওয়ামী লীগকে পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ দিয়ে জনগন উদারতার পরিচয় দিয়েছে’ কিন্তু এবার আর উদারতা দেখানো যাবে না। আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা যেখানেই জ্বালাও-পোড়াও এবং নৈরাজ্যের চেষ্টা করবে তাদেরকে শক্ত হাতে দমন করতে হবে। ‘আওয়ামী লীগ জাতির শত্রু, ভারতীয় আধিপাত্যবাদের দালাল।’

দেশব্যাপী ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের জ্বালাও-পোড়াও, আগুন-সন্ত্রাসের প্রতিবাদে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের উদ্যোগে গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর পল্টন-গুলিস্তান জিরো পয়েন্ট-জাতীয় প্রেস ক্লাব এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল শেষে বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর গেইটে অনুষ্ঠিত প্রতিবাদ সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠিত প্রতিবাদ সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সভাপতি আব্দুস সালাম, মহানগরীর অফিস সেক্রেটারি কামরুল আহসান হাসান। এসময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মহানগরীর সমাজ কল্যাণ সম্পাদক ও পল্টন থানা আমীর শাহীন আহমেদ খান, মহানগরীর সহকারী প্রচার সম্পাদক আবদুস সাত্তার সুমন, শাহবাগ পূর্ব থানা আমীর আহসান হাবীব, মতিঝিল দক্ষিণ থানা আমীর মুহাম্মদ মোতাছিম বিল্লাহসহ মহানগরীর সকল সাংগঠিক থানার বিভিন্ন পর্যায়ের দায়িত্বশীল নেতৃবৃন্দ। এছাড়াও ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের জ্বালাও-পোড়াও, সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের প্রতিবাদে জামায়াতে ইসলামীর আয়োজিত বিক্ষোভ মিছিলের সমর্থনে সহস্রাধিক জনসাধারণ জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে রাজপথে নেমে আসে।

এছাড়াও বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের উদ্যোগে সাইন্সল্যাব, ধানমন্ডি-৩২ নম্বর, শাহবাগ, বাহাদুর শাহ পার্ক, যাত্রাবাড়ী ও গুলিস্তান এলাকায় বিভিন্ন স্পটে দলীয় নেতাকর্মীরা শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন।

এদিকে বুধবার রাতে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী মতিঝিল দক্ষিণ থানার উদ্যোগে ঢাকা-৮ সংসদীয় এলাকায় নির্বাচনী গণসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘যারা শহীদদের রক্তের সাথে বেঈমানী করার চেষ্টা করছে জনগণ তাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলবে’। তিনি বলেন, যারা আওয়ামী লীগের অপরাধের সব মামলা তুলে নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে তারা শুধু জুলাই শহীদ ও আহদের রক্তের সাথেই বেঈমানী করেনি বরং তারা বেঈমানী করছে পুরো জাতির সাথে। জুলাই সনদের আইনি ভিত্তির জন্য গণভোট আয়োজনে তারা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে শুধু বেইমানি করছে না বরং তারা নিজ দলের ৪৩২ জন জুলাই আন্দোলন শহীদ হয়েছে বলে যেই দাবি করেছে সেই শহীদদের রক্তের সাথেও তারা বিশ্বাসঘাতকতা করছে। কারণ জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দিয়ে জুলাই বিপ্লবকে স্বীকৃতি দেওয়া না হলে জুলাই যোদ্ধাদের পরবর্তী সরকার বিচারের মুখোমুখি করবে। আবারও ফ্যাসিবাদ ফিরে আসবে। জুলাই যোদ্ধাদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষার পাশাপাশি জাতির ভবিষ্যৎ কল্যাণের জন্য জুলাই সনদের আইনি ভিত্তির বিকল্প নেই।

ড. হেলাল উদ্দিন বলেন, গণভোট দিয়ে জুলাই সনদের আইনি ভিত্তিতে ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন দিতে হবে। এছাড়া জনগণ কোনো নির্বাচন মেনে নেবে না। তিনি বলেন, সরকার জনগণের দাবি উপেক্ষা করে কোনো দলের প্রতি আনুগত্যশীল হয়ে জুলাই সনদ ব্যতীত জাতীয় নির্বাচনের আয়োজন করার সিদ্ধান্ত নিলে সেটি হবে আত্মঘাতী মূলক সিদ্ধান্ত। জুলাই সনদের ভিত্তিতে ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন করলে সেটি বৈধ হবে। কিন্তু জুলাই সনদ ব্যতীত বিদ্যমান সংবিধানে ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের কোনো সুযোগ নেই। যদি নির্বাচন করা হয় তবে সেটি হবে অবৈধ। তাই অনতিবিলম্বে জুলাই সনদের আদেশ জারি করে গণভোটের দিন-তারিখের ঘোষণা দিতে তিনি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।

জামায়াতে ইসলামী মতিঝিল দক্ষিণ থানা আমীর মুহাম্মদ মোতাছিম বিল্লাহ’র সভাপতিত্বে এবং থানা সেক্রেটারি মো. ইমাম হোসেনের পরিচালনায় ঝিলপাড় মসজিদ (বাফুফে মাঠ) সংলগ্ন স্থানে অনুষ্ঠিত গণসভায় মতিঝিল দক্ষিণ থানা শুরা ও কর্মপরিষদ সদস্যবৃন্দ সহ বিভিন্ন ওয়ার্ড ও ইউনিট দায়িত্বশীল নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। সভা শেষে, সাইমুম, অনুপম, জাগরণ, শাপলা ও মহানগর শিল্পী গোষ্ঠীর পরিবেশনায় এক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিচালিত হয়।

মিরপুর-১০ নং গোল চত্বরে জামায়াতের অবস্থান: দেশপ্রেমী ছাত্র-জনতা পতিত স্বৈরাচার ও ফ্যাসিবাদীদের দেশ ও জাতিস্বত্বাবিরোধী যেকোন অপতৎপরতা কোন ভাবেই মেনে নেবে না বরং ঐক্যবদ্ধভাবে সকল ষড়যন্ত্র রুখে দেবে বলে দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সেক্রেটারি ড. মুহাম্মদ রেজাউল করিম।

গতকাল রাজধানী মিরপুরের ১০ নং গোল চত্তরে পল্লবী জোন জামায়াত আয়োজিত কার্যক্রম স্থগিত ঘোষিত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের ডাকা লকডাউন কর্মসূচির প্রতিবাদে শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচিতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। জোন পরিচালক ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের কর্মপরিষদ সদস্য নাসির উদ্দীনের সভাপতিত্বে কর্মসূচিতে ঢাকা মহানগরী উত্তর মজলিসে শূরা সদস্য ও পল্লবী দক্ষিণ থানা আমীর আশরাফুল আলম, রূপনগর থানা আমীর মো. আবু হানিফ ও পল্লবী উত্তর থানা আমীর সাইফুল কাদের প্রমূখ।

ড. রেজাউল করিম বলেন, আওয়ামী ফ্যাসিবাদীরা গণতন্ত্র ও মানবতার শত্রু। তারা ২০০৮ সালে পাতানো ও সমঝোতার নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসে সম্পূর্ণ পরিকল্পিতভাবে দেশের গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ধ্বংস করে দিয়েছে। সে ধারাবাহিকতায় বাকশালীরা জাতীয় ঐক্যমতের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত কেয়ারটেকার সরকার পদ্ধতি বাতিল করে পর পর ৩ টি তামাশা ও ভাঁওতাবাজীর নির্বাচনের মাধ্যমে নিজেদের ক্ষমতা সম্পূর্ণ অবৈধভাবে নবায়ন করে নিয়ে দীর্ঘ প্রায় ১৬ বছর অপশাসন-দুঃশাসন চালিয়েছে। সে সময় দেশে কোন আইনের শাসন ছিল না। রাজনৈতিক বিরোধীদের দমনের জন্য নির্মম দলন-পীড়ন চালানো হয়েছে। কথিত বিচারের নামে প্রহসন করে জাতীয় নেতৃত্বকে হত্যা করে দেশের পবিত্র জমিনকে রক্তাক্ত ও কলক্সিক্ষত করা হয়েছে। কিন্তু তাদের শেষ রক্ষা হয়নি বরং ছাত্র-জনতার ঐক্যবদ্ধ বিপ্লবের মাধ্যমে তাদেরকে লজ্জাজনকভাবে ক্ষমতা থেকে বিদায় নিতে হয়েছে।

তিনি বলেন, জুলাই বিপ্লব নির্মম ও নিষ্ঠুরভাবে দমন করার জন্য পতিত স্বৈরাচারীরা সারাদেশে ব্যাপক গণহত্যা চালিয়েছে। এজন্য প্রাণ দিতে হয়েছে প্রায় ২ হাজার মানুষকে। হাজার হাজার মানুষ আহত ও পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন। জনগণের কাছে দেওয়া প্রতিশ্রুতির অংশ হিসাবে অন্তর্বর্তী সরকার গণহত্যাকারীদের বিচারের মুখোমুখি করেছে। রায়ও প্রায় কাছাকাছি এসেছে। কিন্তু স্বৈরাচারীরা সে বিচার ভণ্ডুল করার জন্য কথিত লকডাউনের নামে সারাদেশেই ব্যাপক নাশকতার ছক এঁকেছে। কিন্তু সচেতন জনতা তাদের সে ষড়যন্ত্র কোনভাবেই বাস্তবায়ন হতে দেবে। জনগণ ফ্যাসিবাদমুক্ত একটি শান্তিপূর্ণ নতুন বাংলাদেশ দেখতে চায়। বাংলার মাটিতে আর কোনো স্বৈরাচার বা ফ্যাসিবাদী অপতৎপরতার স্থান হবে না। তিনি মাফিতন্ত্রীদের দেশ ও জাতিস্বত্ত্বাবিরোধী ষড়যন্ত্র মোকাবেলায় সকলকে ময়দানে আপোষহীন থাকার আহবান জানান।

মগবাজার বিশাল সেন্টারের সামনে অবস্থান: মগবাজার বিশাল সেন্টারের সামনে কার্যক্রম স্থগিত ঘোষিত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের ডাকা লকডাউন কর্মসূচির প্রতিবাদে শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে হাতিরঝিল জোন জামায়াত। কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও হাতিরঝিল অঞ্চল পরিচালক হেমায়েত হোসেনের নেতৃত্বে কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগরী কর্মপরিষদ সদস্য ও তেজগাঁও দক্ষিণ থানা আমীর ইঞ্জিনিয়ার নো’মান আহমেদী, হাতিরঝিল পূর্ব থানা আমীর অ্যাডভোকেট শেখ জিল্লুর রহমান আজমী, তেজগাঁও উত্তর থানা আমীর হাফেজ আহসান উল্লাহ, শেরে বাংলা দক্ষিণ থানা আমীর আবু সাঈদ মণ্ডল, শিল্পাঞ্চল থানা আমীর কলিম উল্লাহ, হাতিরঝিল পশ্চিমের ভারপ্রাপ্ত আমীর নূরুল ইসলাম আকন্দ, হাতিরঝিল পূর্ব থানা সেক্রেটারি খন্দকার রুহুল আমিন ও হাতিরঝিল পশ্চিম থানা সেক্রেটারি রাশেদুল ইসলাম প্রমুখ।

বিএনএস সেন্টার উত্তরা: উত্তরার বিএনএস সেন্টারের সামনে জামায়াতের উদ্যোগে অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হয়। কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের কর্মপরিষদ সদস্য জামাল উদ্দীনের নেতৃত্বে কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা-১৮ আসনে জামায়াত মনোনীত সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী অধ্যক্ষ আশরাফুল হক, উত্তরা পূর্ব থানা আমীর মাহফুজুর রহমান, উত্তরা পশ্চিম থানা আমীর মাজহারুল ইসলাম, তুরাগ মধ্য থানা আমীর গাজী মনির হোসাইন, তুরাগ দক্ষিণ থানা আমীর আবু বকর সিদ্দিক, উত্তরখান পূর্ব থানা আমীর ইসরাইল হোসেন, দক্ষিণ খান পূর্ব থানা আমীর আবু সাঈদ ও জামায়াত নেতা কামরুল হাসান প্রমুখ।