জুলাই গণঅভ্যুত্থানের এক বছর পূর্তির বিশেষ দিনে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) পাঁচ শীর্ষস্থানীয় নেতা হঠাৎ কক্সবাজারে যাওয়ার ঘটনায় গতকাল মঙ্গলবার দিনভর ছিল নানা গুঞ্জন। সামাজিক মাধ্যম ছাড়াও কয়েকটি গণমাধ্যমেও সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাসের সঙ্গে এনসিপির শীর্ষ নেতাদের বৈঠকের খবর ছড়িয়ে পড়ে। তবে এ বিষয়ে এনসিপির পক্ষ থেকে বিষয়টিকে গুজব বলে দাবি করা হয়েছে।
এনসিপি নেতাদের সঙ্গে পিটার হাসের বৈঠক নিয়ে গুঞ্জনে বলা হয়, কক্সবাজারে হাসনাত আব্দুল্লাহ, সারজিস আলম, নাসিরু উদ্দীন পাটোয়ারীসহ এনসিপির বেশ কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা একটি হোটেলে বৈঠক করছেন। সেখানে আছেন সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। কক্সবাজার বিমানবন্দর সূত্র জানায়, মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ঢাকা থেকে বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটে এই পাঁচ নেতা কক্সবাজার বিমানবন্দরে অবতরণ করেন। তারা হলেন-এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম, মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আবদুল্লাহ ও জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব তাসনিম জারা। সঙ্গে তাসনিম জারার স্বামী খালেদ সাইফুল্লাহও রয়েছেন। তিনি এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক। তবে এনসিপির পাঁচ নেতার হঠাৎ কক্সবাজার আগমন রাজনৈতিক মহলে নানা গুঞ্জন ও আলোচনা তৈরি করে।
বিমানবন্দর ও সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বাংলাদেশ বিমান থেকে অন্যান্য যাত্রীদের সঙ্গে নেমে এনসিপির পাঁচ নেতা প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে উখিয়ার ইনানী সৈকতের পাঁচ তারকা হোটেল সি পার্ল বিচ রিসোর্ট অ্যান্ড স্পা-তে (আগের নাম রয়েল টিউলিপ) যান। হোটেলের মাইক্রোবাসে তাদের বিমানবন্দর থেকে নেওয়া হয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এনসিপির পাঁচ নেতার হঠাৎ কক্সবাজার আগমনের বিষয়টি প্রশাসন কিংবা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে অবগত করা হয়নি। রাজনৈতিক মহলে গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়েছে যে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক বাংলাদেশস্থ রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের সঙ্গে বৈঠক করতে কক্সবাজারে গিয়েছেন এই পাঁচ নেতা। বিশেষ করে তাঁদের সঙ্গে পিটার হাসের বৈঠকের কথা শুনে লোকজনের মধ্যে সন্দেহ আরও বাড়ছে। পিটার হাস বর্তমানে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) রপ্তানিতে যুক্ত মার্কিন বহুজাতিক কোম্পানি এক্সিলারেট এনার্জির কৌশলগত উপদেষ্টা হিসেবে কর্মরত। এর আগে তিনি ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের ১৭তম রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের জুলাই পর্যন্ত তিনি রাষ্ট্রদূত ছিলেন।
এদিকে কক্সবাজারে সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের সঙ্গে এনসিপির শীর্ষ নেতাদের বৈঠকের গুঞ্জনকে গুজব বলে দাবি করেছন দলটির মুখ্য সমন্বয়ক নাসির উদ্দীন পাটওয়ারী। গতকাল দুপুর ২টার দিকে তিনি এ দাবি করেন। এ বিষয়ে নাসির উদ্দীন পাটোয়ারী বলেন, এটা সম্পূর্ণ গুজব। আমরা এখানে ঘুরতে এসেছিলাম। হোটেলে চেকইন করে এরকম একটা নিউজ দেখতে পেলাম। এটা সম্পূর্ণ গুজব। আমরা জাস্ট ঘুরতে এসেছিলাম। অন্য একটি সূত্র জানায়, কক্সবাজারে নয়, বর্তমানে ওয়াশিংটন ডিসিতে অবস্থান করছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। গতকাল সন্ধ্যা ৭টার দিকে একাধিক মাধ্যমে নিশ্চিত হয়েছে পিটার হাস ওয়াশিংটন ডিসিতে অবস্থান করছেন। এছাড়া হোটেল সি পার্লের প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা কামরুজ্জামান জানিয়েছেন, আমাদের হোটেলে পিটার হাস তো দূরের কথা, কোনও বিদেশী অতিথি নেই। বৈঠকের প্রশ্নই ওঠে না।
জানা নেই মার্কিন দূতাবাসের: পিটার ডি হাসের ব্যাপারে ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাস অবগত নয় মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্র আশা বে এমনটিই জানিয়েছেন। তিনি বলেন, সাবেক রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের সঙ্গে আমার কোনো যোগাযোগ নেই। পিটার হাস এখন একজন বেসরকারি নাগরিক উল্লেখ করে আশা বে বলেন, তিনি কোনো বৈঠকে অংশ নিচ্ছেন কি না, সে বিষয়ে আমার কাছে কোনো তথ্য নেই।