জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, নদী, মাটি বা বালিতে নয় আমাদের মগজেই দূষণ রয়ে গেছে। যতক্ষণ পর্যন্ত না মগজের এই দূষণ দূর হবে ততক্ষণ দূষণমুক্ত দেশ বা সমাজ গঠন করা অসম্ভব।
গতকাল রোববার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স (বিআইপি) এর উদ্যোগে আয়োজিত “সুষম ও টেকসই বাংলাদেশ বিনির্মাণে আগামীর করণীয় ও প্রত্যাশা” শীর্ষক আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। বিআইপি সভাপতি আদিল মো: খানের সঞ্চালনায় আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, ইসলামী আন্দোলনের যুগ্ম মহাসচিব আশরাফুল আলম, গণসংহতি আন্দোলনের মুখ্য সমন্বয়ক জুনায়েদ সাকী, এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব আরিফুজ্জামান, এবি পার্টির সভাপতি মুজিবুর রহমান মঞ্জু, বিআইপি সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর নির্বাহী কমিটির সদস্য মোবারক হোসাইনসহ বিভিন্ন নেতৃবৃন্দ।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, দেশটা আমাদের ছোট, কিন্তু জনসংখ্যা অনেক। এই ছোট দেশটাকে দূষণ করে প্রায় শেষ করে দিচ্ছি। আমাদের নদীমার্তৃক দেশে এখন আর নদী নেই, ভরাট হয়ে গেছে। নদীতে এখন হালচাষ হয়, পাট জন্মায়, ধান চাষ হয়। একসময় তো এরকম ছিল না।
তিনি বলেন, আমরা নদীগুলোকে দূষণের মাধ্যমে শেষ করে দিচ্ছি। অনেক শিল্প কোন নিয়ম না মেনে নদী দূষণ করে। তারা নদীতে বিষ ছড়ায়। এতে মাছ পালিয়ে যাচ্ছে। এভাবে একটা একটা করে বৈচিত্র সর্বনাশে মেতে উঠছি। কেউ না কেউ তো এতদিন সরকারে ছিল। তাদের কি কিছুই করার ছিল না। চোখের সামনে আমরা বৈচিত্রকে হত্যা করছি।
জামায়াত আমীর বলেন, কিছু দুর্বৃত্ত নিজের শক্তিতে এসব কাজ করে আবার কিছু করে তাদের গডফাদারের শক্তিতে। আর সেই গডফাদার হলো রাজনীতিক। তারা দুর্বৃত্তদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দাতা। যারা এসব ধ্বংসযজ্ঞ চালায়, রাজনীতিকরা এর অংশ পায়। এতে তাদের শাসন করার কোন নৈতিক অধিকার থাকে না। তাই দূষণ আমাদের মাটি, বালি বা নদীতে নয়, দূষণ হলো আমাদের মগজে।
তিনি বৈচিত্র ও পরিবেশের উন্নয়নে যাদের জ্ঞান আছে, তাদেরকেই এ বিষয়ে পরিকল্পনার কাজে লাগানোর আহ্বান জানান। এতে পরিকল্পনা টেকসই হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
তিনি আরো বলেন, কিছু লোকজন আছে তারা শুধু নিজেকে নিয়ে চিন্তা করে। আমি কী পাব? এই চিন্তা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। সবার জন্য চিন্তা করতে হবে। দেশের জন্য চিন্তা করতে হবে। দেশের সবাই সরকারকে ট্যাক্স দেয়, এটি সবাই জানে না। আজকে যে শিশু জন্ম নিয়েছে, তার জন্য যেসব জামা কাপড় জিনিসপত্র কেনা হয়, এ সবের সাথে ভ্যাট জড়িত। একজন ভিক্ষুকও ট্যাক্স দেয়। তারা যদি তা জানতো তাহলে তাদের অধিকারের বিষয়ে সচেতন হতো। তিনি প্ল্যানার্সদের রাষ্ট্রীয় সেবায় সুযোগ দেয়ার ক্ষেত্রে সার্বিক সহযোগিতা করবেন বলে আশ্বাস প্রদান করেন।
মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, আপনাদের সকল দাবির প্রতি সমর্থন জানাচ্ছি। দেশ গঠনের ক্ষেত্রে স্থানীয় পরিকল্পনা জরুরি। স্থানীয়ভাবে পরিকল্পনা আসলে প্রকৃত সমস্যা সমাধানে পরিকল্পনা নেয়া সহজ হয়।
জুনায়েদ সাকী বলেন, দেশের প্রতি ইঞ্চি মাটি পরিকল্পনায় নিয়ে আসতে হবে। তাহলে দেশের উন্নয়ন নিশ্চিত হবে।
সাইফুল হক বলেন, প্রতি ইঞ্চি মাটির পাশাপাশি ১৮ কোটি মানুষকে পরিকল্পনায় নিয়ে আসতে হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।