রাজনীতি সমাজসেবা ও নেতৃত্বের আলোকিত পথচলা
বাংলাদেশের রাজনীতিতে সুপরিচিত ও প্রভাবশালী নেতৃত্বের অন্যতম নাম বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান। চিকিৎসক থেকে জাতীয় রাজনীতির শীর্ষ পর্যায়Ñএই দীর্ঘ পথচলায় তিনি রেখে গেছেন সততা, যোগ্যতা ও সাংগঠনিক দক্ষতার স্পষ্ট ছাপ। দেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলন, নাগরিক অধিকারের প্রশ্ন এবং মানবিক মূল্যবোধ ও ইনসাফপূর্ণ সমাজ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে তিনি রয়েছেন প্রথম সারির নেতৃত্বে।
গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় রাজধানীর মগবাজারের আল-ফালাহ মিলনায়তনে ২০২৬-২০২৮ কার্যকালের জন্য তৃতীয়বারের মতো আমির হিসেবে তিনি শপথ গ্রহণ করেন।
জন্ম ও পারিবারিক পটভূমি
১৯৫৮ সালের ৩১ অক্টোবর মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলার এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন ডা. শফিকুর রহমান। পিতা মোহাম্মদ আবরু মিয়া ও মাতা খতিবুন্নেছার পাঁচ সন্তানের মধ্যে তিনি তৃতীয়।
শিক্ষাজীবন ও পেশাগত ক্যারিয়ার
বরমচাল উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি (১৯৭৪) ও সিলেট এমসি কলেজ থেকে এইচএসসি (১৯৭৬) পাস করেন তিনি। পরবর্তীতে এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ থেকে ১৯৮৩ সালে এমবিবিএস ডিগ্রি অর্জন করেন। তারপর পেশাগত দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি সক্রিয় হন রাজনীতিতে।
রাজনৈতিক জীবন
ডা. শফিকুর রহমানের রাজনৈতিক যাত্রা শুরু হয় জাসদ ছাত্রলীগের মাধ্যমে। ১৯৭৭ সালে তিনি যোগ দেন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরে এবং সিলেট মেডিকেল কলেজ ও সিলেট শহর শাখার সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৮৪ সালে জামায়াতে ইসলামীতে যোগদানের পর তিনি দায়িত্বশীল ও দক্ষ নেতৃত্বের পরিচয় দিতে থাকেন একে একে সিলেট জেলা সেক্রেটারি, নায়েবে আমীর, জেলা আমীর, মহানগর আমীর, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্যসহ বিভিন্ন পদে।
২০১৬-২০১৯ মেয়াদে তিনি দলের সেক্রেটারি জেনারেল হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে ২০১৯ সালের ১২ নভেম্বর রুকনদের প্রত্যক্ষ ভোটে আমীর নির্বাচিত হন এবং ২০২০ সাল থেকে বর্তমান পর্যন্ত আমীরে জামায়াত হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন।
জামায়াতে ইসলামীতে উল্লেখযোগ্য দায়িত্বসমূহ (সংক্ষেপে)
কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্য (১৯৮৫), সিলেট জেলা সেক্রেটারি (১৯৮৬-৮৮), সিলেট জেলা নায়েবে আমীর (১৯৮৯-৯১), জেলা আমীর (১৯৯১-৯৮), কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য (১৯৯৮), সিলেট মহানগর আমীর (১৯৯৮-২০০৭), সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল (২০১০), নির্বাহী পরিষদ সদস্য (২০১১), ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল (২০১১-১৬), সেক্রেটারি জেনারেল (২০১৭-১৯)
আমীরে জামায়াত (২০২০-অদ্যাবধি)।
পারিবারিক জীবন
১৯৮৫ সালে তিনি ডা. আমিনা বেগমকে বিয়ে করেন, যিনি অষ্টম জাতীয় সংসদের সদস্য ছিলেন। তাদের দুই মেয়ে ও এক ছেলে। বড় মেয়ে এফসিপিএস (কার্ডিওলোজি) প্রশিক্ষণরত, ছোট মেয়ে এমবিবিএস ও এমপিএইচ শেষে সহকারী অধ্যাপক, এবং ছেলে এমবিবিএস।
সামাজিক কর্মকাণ্ড
শুধু রাজনৈতিক নেতা নয়, তিনি একজন প্রতিষ্ঠাতা উদ্যোক্তা ও সমাজসেবী হিসেবেও সমানভাবে পরিচিত।
তিনি প্রতিষ্ঠা করেছেন একটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল। এছাড়াও বিভিন্ন হাইস্কুল-কলেজ, মাদরাসা, দাতব্য হাসপাতাল, পাঠাগার, ইয়াতিমখানা ও মসজিদ প্রতিষ্ঠায় রেখেছেন গুরুত্বপূর্ণ অবদান।
রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি, বিএমএ, চেম্বার অব কমার্সসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের আজীবন সদস্য তিনি।
আন্তর্জাতিক ভ্রমণ
রাজনৈতিক ও সামাজিক কার্যক্রমে অংশ নিতে তিনি যুক্তরাজ্য, জার্মানি, ইটালি, অস্ট্রিয়া, তুরস্ক, সৌদি আরব, মালয়েশিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ বিশ্বের বহু দেশ সফর করেছেন।
জাতীয় রাজনীতির অঙ্গনে ডা. শফিকুর রহমান এক স্বচ্ছ, সৎ ও দৃঢ়চেতা নেতৃত্বের প্রতীক। চিকিৎসা, সংগঠন গঠন, সামাজিক উন্নয়ন এবং রাজনৈতিক নেতৃত্বÑসব ক্ষেত্রেই তিনি রেখে চলেছেন অমলিন পদচিহ্ন। ফ্যাসিস্ট আওয়ামী দুঃশাসনের সময় তার অকুতভয় নেতৃত্ব সংগঠনকে নিয়ে গেছে বিশেষ উচ্চতায়। তিনি এমন এক সময় পুনরায় আমীর হিসেবে দায়িত্ব নিলেন, যখন শোষণমুক্ত, বৈষম্যহীন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখছে দেশের জনগণ। ধর্মবর্ণ নিবিশেষে সবাইকে সাথে নিয়ে ‘ইনক্লুসিভ বাংলাদেশ’ গড়া তার মাধ্যমেই সম্ভব বলে মনে করে জনতা।